Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলাদেশের দুগ্ধ শিল্পের গতি প্রকৃতি

ড. মিহির কুমার রায়
২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:১০

বাংলাদেশের ডেইরী শিল্প দেশের মানুষের পুষ্টি, খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র বিমোচনে অবদান রাখছে যা অনস্বীকার্য্য। আমাদের জনসংখ্যা রাড়ছে যার সাথে দুগ্ধ সামগ্রির চাহিদা সহ উৎপাদন রাড়ছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর (২০২০) এর তথ্য মতে দেশে প্রতি বছর ৯০ লাখ ২৪ হাজার টন দুধ উৎপাদন হচ্ছে কিন্তুু চাহিদা রয়েছে ১ কোটি ৫৮ লাখ টন অর্থ্যাৎ চাহিদার তুলনায় ঘাটতির পরিমান প্রায় ১০ লাখ টনের কিছু বেশি। এর মানে হলো বাংলাদেশ তার মোট প্রয়োজনের মাত্র ৬৩ শতাংশ উৎপাদন করছে এবং বাকি ৩৭ শতাংশ ঘাটতি পূরনের জন্য প্রতি বছর প্রায় এক হাজার পাঁঁচশত কোটি টাকার দুধ আমদানি করছে। বিজ্ঞজনসহ সমাজ বিশ্লেষকগন মনে করছেন যে পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা গুড়ো দুধ আমদানীতে ব্যয়িত হয় তা যদি স্থানীয় দুগ্ধ উন্নয়নে ঋন কিংবা প্রনোদনা হিসাবে ব্যবহৃত হতো তা হলে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে চাহিদার ঘাটতি পূরনের করা সম্ভব হতো। কিন্তুু দেশে দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির পথে প্রধান অন্তবায় গুলো হলো জমির দুশপ্রাপ্যতা, গবাদি পশুর পর্যাপ্ত খাাবরের স্বল্পতা ও গরুর উৎপাদন ক্ষমতা। সাবির্ক ব্যবস্থাপনা তথা নীতি সহায়তা পেলে বাংলাদেশ যে দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ংসর্ম্পূনতা অর্জন করবে এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা বলছে প্রতি জনের প্রতিদিন ২৫০ মিলিলিটার দুধ পান করা প্রয়োজন অথচ সেখানে একজন মানুষের প্রাপ্তি মাত্রা ৪০ মিলিমিটার। সেই হিসাবে বাংলাদেশ প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মতে সারাদেশে প্রতিদিন মাথা পিছু দুধের চাহিদা ১৪.৪৮ মিলিয়ন টন এবং একি সময়ে উৎপাদন হয় ৬.৯৭ মিলিয়ন টন অর্থ্যাৎ প্রতিদিনের ঘাটতি দাড়ায় ৭.৫১ মিলিয়ন টন। এই বিশাল ঘাটতি পুরনের জন্য এখন আমদানী বানিজ্যই একমাত্র ভরসা অথচ এই সকল পণ্যে যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে তা নিয়ে কেহ কোন কথা বলছে না অথচ এই শিল্পের বিকাশে বাংলাদেশে যে অপার সম্ভবনা রয়েছে তা বাস্তবায়িত করা গেলে দেশ পুষ্টিতে স্বয়ম্ভর হবে।

বাংলাদেশের বর্তমান গনতান্ত্রিক সরকারের লক্ষ্য ভোক্তার কাছে মানসম্মত ও গ্রহন যোগ্য মানের দুদ্ধ উৎপাদন বাড়িয়ে স্বয়ংসর্ম্পনতা অর্জন এবং এ ব্যাপারে প্রানী সম্পদ অধিদপ্তর প্রানী সম্পদ ও দুগ্ধ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দুধকে একটি আদর্শ খাদ্য বলা হয় যেখানে পুষ্টি সকল গুনাবলী গুলো রয়েছে যা বিশেষ করে শিশুদের শারীরিক গঠনে বিশেষ ভুমিকা রাখে। তাই দুধের পবিত্রতা রক্ষা করা সকলেরই দায়িত্ব বিশেষ করে উৎপাদক ( চাষী), ব্যবসায়ী( ঘোষ) ও প্রক্রিয়াজাত করন (কোম্পানী) পর্যায়ে যার সাথে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা/ খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত রয়েছে। বর্তমান সময়ে খাদ্যে নিরাপত্তায় ভেজাল একটি বহুল আলোচিত বিষয় এবং পত্রিকার পাতায় কিংবা টেলিভিশনের টকশোতে একটি জনপ্রিয় ফিচার বলে আলোচিত।বর্তমান সময়ে মানুষ খুবি স্বাস্থ্য সচেতন বিশেষত ভোজাল মুক্ত খাদ্য গ্রহনের ব্যাপারে। এই প্রসংগে আমার বক্তব্য হলো- পুষ্টিকর খাদ্য হিসাবে দুধের অবদান অনস্বীকার্য এবং পুষ্টি বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষনায় এটি প্রমান করে দেখিয়েছেন। বাংলাদেশ দুগ্ধ শিল্পের উপর শিক্ষা ও গবেষনা সুযোগ খুবি সীমিত যদিও দেশে একটি ভেটেরাইনারী ও এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় সহ দুটি- তিনটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় কিংবা পশু পালন অণুষদে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা কার্য্যক্রমে কিছু গবেষনা পরিচালিত হয়ে থাকে। এই সকল গবেষনার ফল দেশের দুগ্ধ শিল্পের বিকাশে কতটুকু অবদান রাখছে তার সম্প্রসারন ও প্রচারের দায়িত্ব সরকারের প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের উপর ন্যাস্ত। এই সংস্থাটি দেশের বিভিন্ন জেলায় বেশ কয়েকটি ডেইরি ফার্ম সরকারি কাঠামোতে পরিচালনা করছে যার মধ্যে সাভার ডেইরি র্ফাম উল্লেখযোগ্য যার উদ্দেশ্য প্রজনন, উৎপাদন, গবেষনা ও সম্প্রসারন। এই খামারের উৎপাদিত দুগ্ধ প্রক্রায়াকরনের মাধ্যমে ঢাকা শহরে বিপনন করা হয় যা সাভার ডেইরি হিসাবে পরিচিত। তাছাড়া মিল্ক ভিটা দুগ্ধ প্রক্রিয়াজত করনের ও দুগ্ধ সামগ্রী বিতরনের সাথে জড়িত রয়েছে। দেশে সরকারের পাশাপাশি ১৪ সরকারি কোম্পানী দুগ্ধ উৎপাদন প্রক্রিয়াজাত করন ও বিপননের সাথ জড়িত যাদের পন্য সামগ্রী মুলত তরল দুধ, মিল্ক পাউডার, ঘি, ছানা, পনির, মাখন ইত্যাদি। দেশীয় কোম্পানী গুলো মনে করে বর্তমানে প্রচলিত দেশীয় শিল্পনীতিকে সহায়তা দিলে দেশে গ্রামে গঙ্গে অবস্থিত দুগ্ধ খামারি ও শহর কেন্দ্রীক কোম্পানীগুলো তরল কিংবা গুড়ো দুধের চাহিদা মেটাতে পারবে। আবার দুধ আমদানিতে বছরে যে পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে তা যদি দেশীয় শিল্পে বিনিয়োগ করা যেত তা হলে এই শিল্পে বাংলাদেশ ঘুড়ে দাড়াতে পারত।

বিভিন্ন তথ্যে দেখা যায় যেখানে মাথাপিছু প্রতিদিন ২৫০ মিলি লিটার দুধ পান করা প্রয়োজন সেখানে প্রাপ্তি মাত্র ৪০ মিলি মিটার। প্রানী সম্পদ বিভাগের হিসাব মতে যেখানে দেশে বছরে ১৪.৪৮ মিলিয়ন টন দুধ চাহিদা রয়েছে সেখানে উৎপাদন হয় মাত্র ৬.৯৭ মিলিয়ন টন এবং এই বিশাল ঘাটতি পূরনের জন্য আমদানী বানিজ্য প্রধান অবলম্বন অথচ এই সকল সামগ্রীর গুনগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে যা জনগনের স্বাস্থ্য ঝুকি বাড়ছে। এই্ সকল বিষয়গুলো বিষেশত পবিত্র রমাজান মাসে দুধ, ডিম, মাংস, মাছ, তরিতকারি শাক সবাজি ইত্যাদি চাহিদা যেহেতু বেড়ে যায় তাই সেই সময়ে ভেজালভড়া খাদ্য সামগ্রীতে কাবাইড, ফরমালিন, তুতে হলোফেন ও বিষাক্ত রাসয়নিকের উপস্তিতি এই পবিত্র মাসের আমজেকে অনেকাংশে কলুষতি করছে ।

তাই সবার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর দুধ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থকর ভাবে দুধ দোহান, সংগ্রহ সংরক্ষন ও পাস্তরিত করার বিষয়ে যত্নবান হতে হবে। এছাড়াও পাণের জন্য দুধ কে নিরাপদ রাখতে উৎপাদন স্থান থেকে ভোাক্তার টেবিল পর্যন্ত প্রাত্যেকটি পর্যায়ে পাস্তারিত দুধকে নিরাবচ্ছিন্ন ভাবে শীতল রাখার পদ্ধতি অনুসরন করতে হবে। এখন যে সকল পতিষ্ঠান এই কাজটির সাথে জড়িত তাদের ব্যবসায়িক নৈতিকতা এখন সবচেয়ে বড় বিষয়। অথচ এই বিষয়টি ব্যবসায়িক মুনাফার কাছে প্রতিনিয়তই হার মানছে যা মানুষ সৃষ্টি সম্যসা। কারন পুষ্টি মানের বিচারে দুগ্ধ পন্যের প্রয়জোনীয়তা অনস্বীকার্য হলেও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে এই স্থুবিরতা কাটিয়ে উঠার কোন লক্ষ্য দেখা যাচ্ছে না। এখন সরকার তাদের অষ্ঠম বার্ষিক পরিকল্পনায় প্রানী সম্পদদের সংখ্যা উল্লেখ্য করেছেন যথক্রমে- দুগ্ধবতী গাভী ২৩.৬৪ মিলিয়ন ,মহিষ ১.৪৬ মিলিয়ন এবং ছাগল ২৫.৬০ মিলিয়ন। এই সকল প্রাণী থেকে বৎসরে দুগ্ধ উৎপাদন হয় ৬.৯৭ মিলিয়ন টন যা চাহিদার তুলনায় কম। এর প্রধান কারন বাজেটে অপযাপ্ত অর্থ বরাদ্দ ও বেসরকারি খাতে উদ্যোগক্তার অভাব। তাই পরিকল্পনা মেয়াদে বেশ কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হচ্ছে যেমন ডেইরি খাতে সমবায়ের উপস্থিতি, ডেইরী চাষীদের উন্নত প্রযুক্তি সরবরাহ,গবাদি পশুর খাদ্য উৎপাদন, প্রাণী স্বাস্থ্য রক্ষায় ভেটেরাইনারী সেবা বৃদ্ধি করন ও ক্ষুদ্রকায় খামারীদের লোন সুবিধা প্রদান সহ বিপণন ব্যবস্থা জোরধারকরন। এই বিষয় গুলোর সুষ্ট বাস্তবায়নে প্রয়োজন সরকারের নিরবিচ্ছিন্ন সহযোগিতা ও বাজেট বরাদ্ধ। দুগ্ধ থেকে তৈরী বিভিন্ন সামগ্রীর বিশাল বাজার সারাদেশ জুড়ে ছরিয়ে রয়েছে যার চাহিদা অফুরন্ত যদি তা ভেজালমুক্ত হয়। তাই আসুন আমরা সবাইমিলে এই ভেজাল বিরোধী অন্দোলনের শরিক হই এবং একটি পুষ্টিকর জাতীর বিনির্মানে এগিয়ে আসি। আমাদের শ্লোগান হউক ভেজালহীন পুষ্ঠি সমমৃদ্ধ বাংলাদেশ আর দুগ্ধশিল্প হউক তার প্রথম সারির কান্ডারী কি কর্মহীনের কর্মসংন্থানে, আয় বৃদ্ধিতে ও অর্থৃনেতিক প্রবৃদ্ধিতে।

লেখক: কৃষি অর্থনীতিবিদ

সারাবাংলা/এসবিডিই

ড. মিহির কুমার রায় বাংলাদেশের দুগ্ধ শিল্পের গতি প্রকৃতি মুক্তমত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর