লোভী ও মিথ্যাবাদীরা মানুষ নামের ক্ষতিকর প্রাণী
২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:১৬
লোভ আর মিথ্যা মানুষের জীবনে একটা মারাত্মক ব্যাধি। যেটি ওষুধ দিয়ে কখনো সাড়ানো যায় না। এটি চরিত্রের একটি অপরিহার্য অংশ। পরিশুদ্ধ হতে হলে নিজেকে বদলাতে হবে। লোভ ও মিথ্যা হচ্ছে মহাবড় পাপ! পাপাচার কর্ম থেকে থেকে নিজেকে মুক্ত করতে না পারলে জীবনের চলার পথে নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, অপদস্থ হতে হয়। লোভী মানুষ কখনো কারো উপকারে আসে না, স্বার্থই হচ্ছে তাদের একমাত্র সম্বল। অপকার করতে করতে এ জাতীয় লোকেরা একসময় নিজেই নিজের ক্ষতি করে। স্বার্থের জন্য এরা সবকিছু বিসর্জন দিতেও কোনোরকম কার্পণ্য করেনা। প্রত্যেক পরিবার ও সমাজে লোভী মানুষ থাকে, কেউ কিছুটা কম আবার কেউ একটু বেশি। লোভহীন মানুষ এই সমাজে বিরল। যার মধ্যে সামন্যতমও লোভ নেই, হিংসা-বিদ্বেষ নেই, সে হচ্ছে সত্যবাদী। সত্যবাদীরা অকপটে সত্যকথা প্রকাশ করার কারণে বিভিন্নভাবে ছাপে থাকেন কিন্তু মনে মনে তারা সুখ অনুভব করে। এই অনুভবটাই সুখী হওয়ার পথ প্রশস্থ করে। লোভ মানুষকে অসুখী ও দুঃখী করে তোলে। এ শ্রেণির লোকদের কেউ পছন্দ করেনা। লোভ থেকে যে যত দূরে থাকতে পারে সে ততটাই সুখী।
আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাই, মিথ্যাবাদী আর লোভীরা বেশি ধর্মের আশ্রিত হয়। ধর্ম দিয়ে তারা লোভ আর মিথ্যাকে আড়াল করার চেষ্টা চালায়। অপরকে দুঃখ আর কষ্টে ফেলে মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে এ জাতীয় লোকেরা ধার্মিক সাজে। যাদের মধ্যে মনের উর্বরতা দুর্বল তারা ধর্মের উর্বরতা দিয়ে বাঁচতে চায়, নিজেকে মানুষের সামনে সৎ এবং নির্দোষ মানুষ হিসেবে প্রকাশ করতে চায়। লোভী ব্যক্তিরা অন্যের অর্থ ও সম্পদ হরণ করে, ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এই দৃশ্য আমরা অহরহ দেখতে পাই। চিরসত্য যে, সেই অর্থ আর সম্পদ একসময় তার সর্বনাশের মূল টার্গেট হয়ে দাঁড়ায়।
অর্থগত দিক থেকে লোভী, মিথ্যাবাদী এবং স্বার্থপর এই শব্দগুলো একই সুত্রে গাঁথা এবং একে অন্যের পরিপুরক। এই জাতীয় তকমা যাদের গায়ে একবার লাগে তা আর কোনোভাবে মুছা যায় না। এরা হচ্ছে খুবই ক্ষতিকারক। তাদের থেকে যতবেশি দূরে থাকা যায় ততই মঙ্গল। এরা একথায় ঠকবাজ, প্রতারক। লোভী মানুষ দরিদ্র হয়, ইতর হয়, ভয়ে তটস্থ থাকে। অর্থ বিত্তে বড় হলেও মনের দিকে তারা সবসময় ছোট হয়, অপদস্ত হয়, ভীতু থাকে । নষ্টামীর কারণে তারা মানুষের ঘৃনার পাত্র হয়। যদিও বা লোভ করে, মানুষকে ঠকিয়ে সহায় সম্পদের মালিক সাজেন কিন্তু প্রকৃত পক্ষে লোভী মানুষ সবসময় দুর্বল প্রকৃতির হয়। লোভ হচ্ছে এক ধরনের চুরি তাদের মধ্যে চোর চোর ভাব থাকে! যেকোন কিছুতে লোভী প্রকৃতির লোকরা মাথা উঁচু করে চলতে পারেনা। সৎ মানুষের সামনে কাচুমাচু করে। লোভীরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে যতই সম্পদের পাহাড় গড়–ক বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ির মালিক হোক একদিন না একদিন তাদেরকে নীচু হতে হয়। সৎ মানুষ বরাবর সাহসী হয়, সততাই তাদের অলংকার। সে কখনো বঞ্চিত হয় না। মিথ্যাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে না। তাই সুখী হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে থাকে।
ব্যক্তিজীবনে লোভী মানুষরা কখনো সুখী হয় না। সে নিজে অসুখী হয় পরিবারকেও অসুখী করে। ফলে পরিবারের সদস্যরা বিপথে পরিচালিত হয়। অঢেল বিত্ত বৈভবে ডুবে থাকলেও তারা শান্তির নাগাল পায় না। প্রত্যেকের আশেপাশে অসংখ্য মানুষকে দেখবেন একটু সুখ-শান্তির জন্য মরিয়া হয়ে উঠতে কিন্তু লোভ-লালসা, অন্যের সুখ, পরশ্রীকাতরতা, হিংসা-বিদ্বেষের কারণে দুঃখ কষ্টকে বরণ করতে হয়।
লোভী এবং মিথ্যাবাদীদের সাথে সহজে কথা আর পেশী শক্তিতে পেরে ওঠা যায় না। তারা খুব ধুর্ত হয়। মিথ্যুকরা সত্যকে মিথ্যার আবরণে ঢেকে রাখতে চায়। তাদের গলার জোর সবসময় বেশি থাকে, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার প্রচেষ্টা চালায়। মিথ্যুকরা ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। মানুষের সামনে সাধুতার ঢোল পিঠায়। তারা মনেকরে ধর্ম তাদেরকে বাঁচিয়ে দেবে। না, কোনো ধর্ম গ্রন্থেই মিথ্যাবাদীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের কথা বলা নেই। কারণ মিথ্যার আশ্রয় যারা নেয় তারা দেশ ও সমাজের শত্রু। তারা পাপী, নিকৃষ্ট মানুষ, ঘৃনিত মানুষ। লোভের বশবর্তী হয়ে নষ্ট কাজ করতে সামান্যতম দ্¦িধাবোধ করে না। রক্ত মাংসের মানুষ হিসেবে দেখা গেলেও তাদের মধ্যে যে পশুত্ব আচরণ সেটি হচ্ছে অমানুষের চরিত্র। মনুষ্যত্ববিহীন মানুষ নর্দমার পানির চেয়ে খারাপ।
বাংলাদেশ হচ্ছে ধর্মভীরুর দেশ প্রত্যেক ধর্মগুরুরা যদি তাদের ধর্মকথা বর্ণনায় লোভ আর মিথ্যার পরিণাম কী হয় এ নিয়ে যদি ব্যাখা দেন তাহলে দেশ থেকে চিরতরে নির্মল হয়ে যেতো। কিন্তু সে জাতীয় কথা কেউ বলছে কী? এই না বলার কারণে দিন দিন ভয়াবহ বিস্তার লাভ করছে। প্রতিটি পদে পদে সুন্দর মানব সমাজ বিনির্মাণে পরাভূত হচ্ছি।
লোভী ও মিথ্যুক মানুষদের হাত থেকে বাঁচতে হলে একমাত্র বুদ্ধিমান ও কৌশলী হওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প পথ নেই। কৌশলের কাছে মিথ্যুক-লোভীরা একসময় পরাস্ত হয়। মিথ্যাবাদীদের হাত থেকে সত্যবাদীদের সুরক্ষিত রাখতে হলে জ্ঞান হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা, জ্ঞানই হচ্ছে প্রধানতম অস্ত্র। তাই লোভী জীবন থেকে মুক্ত হয়ে সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে না পারলে সে জীবন বৃথা হয়ে য়ায়, মনুষ্য জীবন ব্যর্থ হয়। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণীর নাম হচ্ছে মানুষ। প্রাণী জগতের সবার উর্ধ্বে মানুষের স্থান হলেও মানুষই আজ মানুষের কাছে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, হয়রানীর শিকার হচ্ছে, প্রতারণা শিকার হচ্ছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। অথচ আমাদের এই ছোট্ট জীবনকে একটু সাজাতে পারলে পৃথিবীটা সুন্দর হয়ে যেতো। বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন এর একটি উক্তি তুলে ধরে শেষ করতে চাই- এই পৃথিবী কখনো খারাপ মানুষের খারাপ কর্মের জন্য ধ্বংস হবে না। যারা খারাপ মানুষের খারাপ কর্ম দেখেও কিছু করেনা তাদের জন্যই পৃথিবী ধ্বংস হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক
সারাবাংলা/এসবিডিই
বিপ্লব বড়ুয়া মুক্তমত লোভী ও মিথ্যাবাদীরা মানুষ নামের ক্ষতিকর প্রাণী