বিএনপির ‘কালো পতাকা’ মিছিল কিসের ইঙ্গিত
২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:২৭
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার দুই সপ্তাহ পর আবারও সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামছে বিএনপি। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, দ্বাদশ সংসদ বাতিল এবং দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে দলটি। বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এতোদিন আন্দোলন করে আসছিল। এখন কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়কে ইস্যু হিসেবে যুক্ত করেছে। শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) জেলায় জেলায় ও পরের দিন শনিবার (২৭ জানুয়ারি) মহানগরগুলোয় ‘কালো পতাকা’ মিছিল করবে দলটি। এই কর্মসূচিতে অনেকগুলো দাবি থাকলেও বিএনপি বলছে এই আন্দোলন ‘এক দফা’র দাবি।
‘কালো পতাকা’ মিছিলের কর্মসূচি এর আগেও পালন করেছিল বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ‘এক দফা’ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত বছরের ২৫ আগস্ট কালো পতাকা মিছিল করেছিল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আলাদাভাবে এ মিছিল করে। বিএনপির পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোও একই দাবিতে কালো পতাকা মিছিল করে। এসময় বিএনপি নেতারা বলেছিলেন, ‘এ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেশের জনগণ মানে না। বিনা ভোটের নির্বাচনের স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না।’
তবে বিএনপি ছাড়াই ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ৩০০টি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আশায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছ থেকে মোট ২ হাজার ৭১৬টি মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। তবে যাচাই-বাছাই শেষে ৭৩১ প্রার্থী বা মোট ২৭% প্রার্থীকে বাতিল করেছে ইসি। আর দ্বৈত নাগরিকত্বের দায়ে আওয়ামী লীগ নেতা শাম্মী আহমেদের (বরিশাল-৪ আসনে) প্রার্থিতা বাতিল করে ইসি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২৩টিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি পায় ১১টি আসন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটি ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আসন পায়। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন ৬২ আসনে। স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হকের মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনে ভোট হয়নি।
বড় ধরনের সহিংসতা ছাড়া বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। গত ১১ জানুয়ারি পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বঙ্গভবনে নতুন সরকারের ২৫ মন্ত্রী এবং ১১ প্রতিমন্ত্রীও শপথ নেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাদের শপথ পাঠ করান।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় ভারত, চীন, রাশিয়া, জাপান, বেলারুশে, চেক প্রজাতন্ত্র, ইন্দোনেশিয়া, নিকারাগুয়াসহ অর্ধ শত রাষ্ট্রের সরকার প্রধান অভিনন্দন জানিয়েছে। এছাড়াও জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)সহ বেসকিছু আন্তর্জাতিক সংগঠনের শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। শেখ হাসিনাকে কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড অভিনন্দন জানিয়ে লিখেন, ‘কমনওয়েলথ সচিবালয় আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনাকে সমর্থন দিতে প্রস্তুত রয়েছে।’এমনকি যে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগকে বাগড়া দিয়েছে তারাও সরকারের সাথে কাজ করতে আগ্রহী। সোমবার (২২ জানুয়ারি) ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রিন্সিপাল ডেপুটি মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গভীর করার ক্ষেত্রে আমাদের অনেকগুলো পদক্ষেপ রয়েছে এবং পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দু’সপ্তাহ পর কয়েকটি দাবি সংযুক্ত করে এখন ‘এক দফা’ দাবির নামে ‘কালো পতাকা মিছিল’করবে বিএনপি। ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা হাতে কালো পতাকা নিয়ে সরকারকে ফের বার্তা দিতে চাচ্ছে দলটি। এখন প্রশ্ন উঠছে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে তৈরি দল বিএনপি কালো পতাকা হাতে নিয়ে আবারও কেন মিছিল করবে? কালো পতাকা মিছিল আসলে কিসের ইঙ্গিত করে?
কালো রং, কালো পতাকা আর মিছিল এই তিনটি শব্দের একটি বাক্য। প্রথমে আলোচনা করা যাক কালো রং নিয়ে। রাত মানেই কালো। মেঘ কালো। তাই কালো রং দিয়ে- অন্ধকার, শোক, দুঃখ, নিরাশা, হতাশা বোঝানো হয়। কালো রং শোকের প্রতীক হওয়ার কারণে শোক দিবসে বা শোক পালনে কালো রং ধারণ করা হয়।
আর পতাকা হলো এক খণ্ড বস্ত্র বিশেষ যা কোন গোষ্ঠী, দল, জাতি, দেশ বা সংগঠনের, এমনকী বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতীক। সচরাচর চারকোণা এক টুকরো কাপড় পতাকা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ব্যবহারকালে পতাকার এক প্রান্ত একটি দণ্ডে বাঁধা হয়। আর মিছিল হলো কোনো উদ্দেশ্যে বহু লোকের কোনো এক দিকে যাওয়া।
বিএনপির কালো পতাকা মিছিলের আভিধানিক অর্থ দাঁড়ায়- হতাশা মাঝে, হাতে পতাকা নিয়ে, এক দল মানুষের অন্ধকার পথের যাত্রা। এর আগে আন্দোলনের নামে বিএনপি পেট্রোল বোমা মেরে, আগুনে পুড়িয়ে শত শত মানুষকে অন্তিম পথে পাঠিয়েছিল। কিন্তু দ্বাদশ নির্বাচন প্রতিহত করতে পারেনি। বর্তমান সরকারকে অন্তিম পথে পাঠাতে আবারও কালো পতাকা হাতে তুলে নিয়েছে বিএনপি। গেল ১৫ বছরের আন্দোলেন দেখে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে- বিএনপি কী আওয়ামী লীগ সরকারকে অন্তিম পথে পাঠাতে পারবে? নাকি নিজেরাই অন্তিম পথে যাত্রা করবে? কথায় আছে- ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ যে বড়ই নিষ্ঠুর।’
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
সারাবাংলা/এসবিডিই
বিএনপির ‘কালো পতাকা’ মিছিল কিসের ইঙ্গিত বিপ্লব কুমার পাল মুক্তমত