৭৫ বছরে নটরডেম কলেজ: একটি অনুপ্রেরণার বাতিঘর
২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:২২
কলেজ জীবনে মাত্র দুই বছর পড়ার পর দেশ ও দেশের বাইরে অনেক প্রতিষ্ঠানে পড়লেও নটরডেম কলেজ আমাদের কাছে একটি বিশেষ অনুভূতির জায়গা, একটি অনুপ্রেরণার নাম। নটরডেম কলেজ নিয়ে এ ধরনের মূল্যায়ন শুধু আমার একার নয়, আমার মতো হাজার হাজার প্রাক্তন ছাত্রদেরও। আর এজন্যই হয়তো বলা হয় ‘ওয়ানস এ নটরডেমিয়ান, অলওয়েজ এ নটরডেমিয়ান।’
ছাত্রদের আদর্শ শিক্ষাদান ও চরিত্র গঠনের কাজে নিবেদিত এক এবং একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম নটরডেম কলেজ। এখানে শিক্ষার মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে ছাত্রদের যথাযথ বিদ্যা ও জ্ঞান অর্জনসহ সামগ্রিক বিকাশ যেমন: আত্মনিবেদিত, সৃজনশীল, সেবাব্রতী হওয়ার পাশাপাশি অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগে এবং যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ ও দায়িত্বশীল করে গড়ে তোলা। শুধুমাত্র নটরডেম কলেজে পড়লেই শৃঙ্খলাবোধ, নৈতিকতা, সৃজনশীলতা, দক্ষ ও দায়িত্বশীল মানুষ হওয়ার বাস্তবিক সুযোগ পাওয়া যায়। কারণ নটরডেম কলেজই ছাত্রদের মেধা ও মননের উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে পূর্ণ মানবিক গুণাবলীসমৃদ্ধ মানুষরূপে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। বিগত ৭৫ বছরে নটরডেম কলেজ একটুকুও পথ হারায়নি বরং সগৌরবে এগিয়ে চলছে আপন মহিমায়।
নটরডেম কলেজে সম্পর্কে কাউকে যখন কিছু বলি তখন খুব গর্ব হয়। এখানকার শিক্ষকদের আন্তরিকতা, পড়ানোর পদ্ধতি, ল্যাব. ক্লাস, এটেন্ডেন্স সিস্টেম প্রভৃতি এতটাই ইউনিক যা বাংলাদেশের অন্যান্য কলেজে বিরল। এখানে একজন ছাত্রের রোল নম্বর তার নিজস্ব সম্পদের মতো। এই ইউনিক রোল নম্বরটা সারাজীবনই তার নিজের। এই রোল নাম্বারের মাধ্যমেই একজন ছাত্রের সঠিক আইডেন্টিটি পাওয়া যায়। যেমন: আমার রোল নম্বর ছিল ৯৮৬০১০। এখানে, ৯৮ মানে এইচএসসি ১৯৯৮ ব্যাচ, ৬ মানে বিজ্ঞান বিভাগের ছয় নম্বর গ্রুপ, ০১০ হলো ক্লাস রোল নম্বর। আমার এই রোল নাম্বার বললেই কলেজ কর্তৃপক্ষ বা প্রাক্তন কোনো নটরডেমিয়ান সহজেই বুঝতে পারে যে আমি কোন ব্যাচের, কোন গ্রুপের। বাংলাদেশে আরও অনেক কলেজ রয়েছে যারা খুব ভালো ফলাফল করছে কিন্তু নটরডেম অন্যরকম।
সৃষ্টির শুরু থেকেই নটরডেম কলেজ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি ছাত্রদের নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ এবং বিশ্বনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এখানে এর কোনো ব্যত্যয় নেই। এখানকার প্রাক্তন ছাত্ররা যার যার অবস্থানে থেকে দেশ ও বিশ্বকে স্বমহিমায় আলোকিত করে যাচ্ছে। নটরডেম কলেজ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছেই এটি একটি বতিঘরস্বরূপ, যার আলোয় আমরা আলোকিত হই, মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাঁচার শক্তি পাই এবং আমৃত্যু অনুপ্রেরণা পাই। এ কলেজ আমাদের মানবিক হতে শিখিয়েছে, সৎসাহস নিয়ে মেরুদণ্ড সোজা রেখে জীবনযুদ্ধে লড়াই করতে শিখিয়েছে। নটরডেম কলেজ মেধা, মননে, চিন্তাশীলতায় সুন্দর ও আগামী বাংলাদেশ গঠনে আলোর দিশারী হয়ে পথ দেখিয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে এই প্রত্যাশা করি। অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে থাকা প্রাণের নটরডেম কলেজ এগিয়ে যাক বহুদূর। অনুপ্রেরণার বাতিঘর হিসেবে নিরন্তর দ্যুতি ছড়িয়ে দিক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
লেখক: প্রাক্তন নটরডেমিয়ান; সাধারণ সম্পাদক, শিক্ষক সমিতি, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/আইই