Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অদম্য বাংলাদেশের রূপকার তোমায় অভিবাদন

হাসিবুর রহমান
৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:২২

আধুনিক গণতান্ত্রিক বিশ্বে সরকার কিংবা রাষ্ট্র প্রধান যেসব নারী নেত্রীকে শ্রদ্ধার সঙ্গে বিবেচনা করা হয় তাদের মধ্যে মার্গারেট থ্যাচার, এঙ্গেলা মের্কেল, ইন্দিরা গান্ধী, চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার নাম অন্যতম। তবে পঞ্চম বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়া শেখ হাসিনা একেবারেই অনন্য। শুধু নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশকে নেতৃত্বই দেননি; তিনি আত্মমর্যাদাশীল এক নতুন বাংলাদেশের রূপকার। সততা, দৃঢ়তা, দক্ষতা, প্রজ্ঞা আর দূরদর্শী নেতৃত্ব গুণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের গন্ডি পেরিয়ে স্থান করে নিয়েছেন বিশ্ব নেতৃত্বের কাতারে৷ সামাজিক কর্মকাণ্ড, শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা বহুবার সম্মানিত করেছে। এমনকি বিশ্বের প্রভাবশালী সব রাষ্ট্রই একবাক্যে বলছেন, বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বের সামনে উন্নয়নের রোল মডেল৷

বিজ্ঞাপন

তলাবিহীন ঝুড়ি বলে সদ্যোজাত বাংলাদেশকে অবজ্ঞা করা সেসব দেশের মাথা হেট করে দিয়ে এগিয়ে চলা দেখে অবাক বিস্ময় লাগে। পনের বছর আগের বাংলাদেশ আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বের আজকের বাংলাদেশে ব্যবধান আকাশ পাতাল না হলেও অকল্পনীয় উন্নতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছে। দু দুবেলা দুমুঠো ভাতের কথা ভেবে আর কেউ দিন পার করে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, প্রযুক্তির ব্যবহার সব ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের অভিগম্যতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত বছরগুলোতে দেশের জিডিপি, মাথাপিছু আয়, দারিদ্র্যের হার, গড় আয়ু, শিক্ষার হার, স্বাস্থ্যসেবায় উন্নতির যে পরিসংখ্যান তা লিখে কাগজের পাতা ভারী করা একেবারেই অর্থহীন। স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন একাধিক বিদ্যুতকেন্দ্র, মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট স্থাপন প্রভৃতি দৃশ্যমান অবকাঠামোর ফিরিস্তি দেয়াও আমাদের উদ্দেশ্য নয়।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনার মানবিক কিছু বিশেষ কাজের কথা একেবারে না বললেই নয়। ‘শেখ হাসিনা মডেল’ খ্যাত আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ২ লাখ ১৫ হাজার এর বেশি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমির মালিকানাসহ আধাপাকা ঘর প্রদান। শুধু ঘরই নয় এসব পরিবারের সমৃদ্ধির দেশের প্রান্তিক মানুষদের জন্য ১৪ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছেন। যে উদ্যোগকে জাতিসংঘ ‘দ্যা শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আখ্যা দিয়ে রেজুলেশন পাশ করেছে। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সেবায় সাম্য আনতে বাংলাদেশের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। ২০১০ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণে করে আসছে। শুধু বিনামূল্যে বই বিতরণই নয় ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪ কোটি মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত এবং ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের মধ্যে দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশকে কলঙ্ক মুক্ত করতেও তিনি পিছপা হননি। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না শহীদদের রক্তে অর্জিত এ দেশে রাজাকারদের হাতে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা তুলে দিয়েছিল সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান।

বিশ্বের দরবারে আজকের বাংলাদেশ অদম্য, সাহসী বাংলাদেশ। কাল্পনিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পশ্চিমারা পদ্মা সেতু নির্মাণে সহায়তা দিতে অস্বীকৃতি জানানো এবং দেশের মানুষের উন্নয়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আত্ম প্রত্যয়ী বাংলাদেশকে তুলে ধরেছিল। প্রধানমন্ত্রীর সেই আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলই আজকের বাংলাদেশ। ২০২৩ এর শেষ দিনে দ্বাদশ নির্বাচনকে ‘ওয়ান উইমেন শো’ আখ্যা দিয়ে বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিএনপি-জামায়াত ও তাদের মিত্ররা নির্বাচন বর্জন এবং প্রতিহতের ঘোষনা দিয়ে সহিংস কর্মসূচী পালনের পরেও এ ধরণের শিরোনাম একেবারেই অযৌক্তিক, বেমানান। তবে হ্যাঁ, শেখ হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শীতা ও প্রজ্ঞার একক শো-ই দেখিয়েছেন বলা যায়। আমরা দেখেছি বিএনপির হয়ে ঢোল বাজানো কূটনৈতিকেরা নির্বাচনের আগেই সেই ঢোল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এবং ছুটি কাটিয়ে এসে নিজের কাজে মনযোগী হয়েছেন। আবার আঞ্চলিক দুই বৈরি শক্তি ভারত-চীন শেখ হাসিনার পাশে থাকার জন্য প্রতিযোগিতায় লেগে পড়েছেন। ইউরোপ-আমেরিকার স্যাংশনের হুমকী ধামকিও শেখ হাসিনা ম্যাজিকে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। সকলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কবি সুকান্ত ভটাচার্যের সাথে সুর মিলিয়ে বলতে ইচ্ছে হয়- সাবাশ, শেখ হাসিনা এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়।

তবে দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার এ পথটা মোটেই মসৃণ ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পরিবারের সদস্যরা নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। সে সময় ইউরোপে অবস্থানের কারণে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক শেখ হাসিনা ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে যুক্ত হন। ৭৫ এর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দিল্লিতে নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের রক্তচক্ষু উপেক্ষা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন। ওই বছরই তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সামরিক শাসক এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৬ সালে প্রথম সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯৬ সালের অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রথম বারের মতো শপথ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গভীর ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতায় ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতাসীন হয়। গঠিত হয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। শেখ হাসিনার পরাজয় বাংলাদেশের পরাজয়ে পরিণত হয়, কার্যত বাংলাদেশ পাকিস্তানি ধারায় চলে যায়। বিএনপি জামায়াতের নেতা-কর্মী সারাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় এবং আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার নির্যাতন চালায়। নির্বাচন পরবর্তী প্রথম ১০০ দিনে শত শত সংখ্যালঘু নারীকে ধর্ষন এবং কয়েকশ আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীকে হত্যা করে ক্ষমতাসীন বিএনপি জামায়াতের সন্ত্রাসীরা। বিএনপি সরকারের নেতাদের সরাসরি ছত্রছায়ায় সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে জঙ্গিবাদ। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও ২৪ জন নেতা কর্মী নিহত হন। ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত তাঁর ওপর ১৮ বার হামলা হয়। ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তাকে দেশান্তরিত করার চক্রান্ত এবং রাজনীতি থেকে সরিয়া দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়। ব্যর্থ হলে তারা জনতার নেত্রীকে গ্রেপ্তার করে। তাঁকে দীর্ঘদিন কারাবন্দি করে রাখা হয়। শেখ হাসিনার রাজনীতির পথ কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। জীবনের ওপর হামলাসহ নানাবিধ ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবিলা করেই অভাগা জাতির স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে চলেছেন।

এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ এ বছর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন শেখ হাসিনা। টানা ১৫ বছর জননেত্রী শেখ হাসিনার অনবদ্য নেতৃত্ব মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার৷ তিনি উন্নত-সমৃদ্ধের মহাসোপানে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশকে৷ শেখ হাসিনা বদলে দিয়েছেন বাংলাদেশকে৷ এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট ‘সোনার বাংলা’য় পরিণত করতে দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে মৃত্যুঞ্জয়ী এগিয়ে চলেছেন দৃঢ় প্রত্যয়ে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশনের দিনে বাংলার মানুষের স্বপ্ন পূরণের রূপকার তোমায় অভিবাদন।

লেখক: মানবাধিকার কর্মী

সারাবাংলা/এসবিডিই

অদম্য বাংলাদেশের রূপকার তোমায় অভিবাদন মুক্তমত হাসিবুর রহমান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর