Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা

আদনান কাদির
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:৫৩

একুশে ফেব্রুয়ারি এক অবিনশ্বর কিংবদন্তী, যার দীপ্তি স্বাধিকার ও মুক্তির স্ফুলিঙ্গকে দাবানলে পরিণত করে। কেননা বসন্তের এক অতিসাধারণ দিনে বাংলা ভাষাপ্রেমী জনসাধারণ তার মায়ের ভাষাকে রক্ষার উদ্দেশ্যে বুলেটের সামনে নিজেকে উজাড় করে দেয়। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘মোদের গরব মোদের আশা আমরই বাংলা ভাষা’-এর মতো স্লোগানে সেদিন পুরো পূর্ব বাংলা উত্তাল হয়ে ওঠে। রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার নিজের রক্ত দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন বাঙালিরা অধিকার ও সম্মানের জন্য নিজের জীবনও দিতে পারে। এদিন বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সার্থক সূচনা করে, যে অধ্যায় চিরতরে বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতির অবস্থান, পরিচয় ও মর্যাদাকে এক অনন্য উজ্জ্বল রূপ দান করে। এজন্য ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি নিছক কোনো সাধারণ দিন নয়।

বিজ্ঞাপন

২১শে ফেব্রুয়ারির প্রেক্ষাপট একদিনে রচনা হয়নি বরং বহু বছরের শোষণের এক সম্মিলিত ফসল। নানাবিধ নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে অবশেষে ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ ব্রিটিশ শাসনের শৃঙখল থেকে মুক্তি লাভ করে। দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। একবুক স্বপ্ন নিয়ে পূর্ব বাংলার জনগণ পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয়। স্বপ্ন ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় সংখ্যালঘুদের উপর পাশবিক অত্যাচার চালাবে না, স্বপ্ন ছিল এক দেশের সকলে ভাই ভাই হিসেবে অবস্থান করবে, স্বপ্ন ছিল দুইশ বছরের জাঁতাকল থেকে মুক্তি পেয়ে এবার বাঙালিরা নতুন করে বাঁচতে পারবে। আরো বহু স্বপ্ন ছিল স্বপ্নবাজ এই মানুষদের হৃদয়ে। কিন্তু কে জানত যে স্বাধীন হতে না হতেই কর্পূরের মতো উড়ে যাবে সব স্বপ্ন?কে জানত যে ধর্মের নামে অধর্ম করে এক শ্রেণির শোষক সাধারণ মানুষকে ভাগ করতে চাইবে?কেউ জানত না। বাস্তবিক অর্থে পাকিস্তানের জন্ম ছিল মালিকের পরিবর্তন মাত্র। কেননা ব্রিটিশ রাজ বা পাকিস্তানের পাঞ্জাবী যেই হোক না কেন, আদর্শে তারা অকৃত্রিম উপনিবেশবাদী। নতুন অজুহাত হিসেবে কেবল ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব ঘটে, যার সাহায্যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের একসূত্রে গাঁথা হয়। কিন্তু এ যে ছিল এক ভয়াবহ বিসমিল্লাহে গলদ, তা বুঝতে বেশি বেগ পেতে হয়নি।

বিজ্ঞাপন

বস্তুত পাকিস্তান জন্মেরও আগে থেকে ভাষা নিয়ে এ বিতর্ক বিদ্যমান ছিল যা স্বাধীন পাকিস্তানে জাতীয় পর্যায়ে আসীন হয়। এ বিতর্কের এক পর্যায়ে ১৯৪৭ সালেরই সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তমুদ্দিন মজলিস গড়ে ওঠে। ডিসেম্বর মাসে গড়ে ওঠে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসজুড়ে বিক্ষোভ, ধর্মঘটসহ নানাবিধ কর্মসূচী চলতে থাকে। যার এক পর্যায়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন ছাত্রদের সাথে ৮ দফা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই ৮ দফা দাবির প্রধান কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই বাংলা ভাষা। তবে রাষ্ট্রভাষা বিতর্ক এক নতুন মাত্রা লাভ করে প্রধানত পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর একটি বক্তৃতাকে কেন্দ্র করে। ২১ শে মার্চ তিনি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা করেন, ‘উর্দু এবং শুধু উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। ‘২৪ শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে একই ঘোষণার পুনরাবৃত্তি ঘটলে ছাত্ররা ‘না না’ করে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তোলে। এক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান সমাপ্ত হলেও সেদিন যে আগুন জ্বালানো হয় তা নেভানোর কোনো উপায় কারো জানা ছিল না। পাকিস্তানের প্রতি যে অকৃত্রিম মোহ ছিল তা ধীরে ধীরে কেটে যেতে থাকে এবং বাঙালিরা স্বাধিকারের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করে। অধিকারসচেতন, ত্যাগী, সংগ্রামী বাঙালিদের এক উল্লেখযোগ্য অংশ জাতির বৃহত্তর কল্যাণার্থে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গঠনে উদ্যোগী হয়। এসব রাজনৈতিক দলের বেশিরভাগই ছিল দ্বি-জাতিতত্ত্বের পরিপন্থী আদর্শে বিশ্বাসীদের দল। ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে পূর্ব পাকিস্তানে জন্ম হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, কম্যুনিস্ট পার্টি ইত্যাদি বৃহৎ দলের। এসব দলই পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দান করে এবং মুক্তিযুদ্ধকে পরিপূর্ণ সফলতা অর্জনে সর্বাধিক ভূমিকা পালন করে।

পাঞ্জাবী শাসকরা কোনোদিনই বাঙালিদের এ ন্যায্য দাবি মন থেকে মেনে নেননি। অথচ বাঙালিদের এ দাবি কোনোভাবেই একচেটিয়া কিংবা অন্যায্য ছিল না। প্রথমত, সমগ্র পাকিস্তানের ৫৬ ভাগ জনসংখ্যা ছিল পূর্ব পাকিস্তানে, যেখানে ৯০ ভাগ জনগোষ্ঠি ছিল বাঙালি। ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীরাও বাঙালিকেই সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়েছেন। এছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানের বেশিরভাগের ভাষা উর্দুও ছিল না। উর্দুকে সবসময়ই অভিজাত শ্রেণির ভাষা হিসেবে গণ্য করা হত, যার সাথে বাস্তবিক অর্থে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক ছিল না বললেই চলে। এরপরও গায়ের জোরে মুল্লুক দখলের চেষ্টায় বাঙালিদের ন্যায্য দাবিকে অস্বীকার করা হয়। দ্বিতীয়ত, বাংলা ভাষা পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা হওয়া সত্ত্বেও বাঙালিরা বাংলাকে শুধু অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার আবেদন করেছিলেন। অতএব একচেটিয়া হওয়ারও প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু জোরের কথাই যেখানে হক কথা, সেখানে যুক্তির কথা আশা করাটাও অমূলক। পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে সংস্কৃতি, ঐতিহ্য কোনোকিছুর সঙ্গেই মিল ছিল না পূর্ব পাকিস্তানের। আর পাঞ্জাবী শাসকদের মধ্যে এক অপ্রশম্য জাতগৌরব ছিল, যেজন্য বাঙালিদের তারা মানুষ হিসেবে গণ্য করেনি। এই কারণেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের অস্তিত্বসংকট ছিল এক অনিবার্য বাস্তবতা। ভাষার প্রশ্নে বাঙালিদের এ সংগ্রাম তুঙ্গে ওঠে ১৯৫২ সালে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পুনরায় মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর বক্তব্যকে অনুকরণ করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন। ১৯৫২ সালের ২০ শে ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে সভা-সমাবেশ, মিছিল, মিটিং এক মাসের জন্য স্থগিত করা হয় এবং ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ২১ শে ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভাষা আন্দোলন তার চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। সেদিন কেউ হয়ত কল্পনাও করেননি যে এই একটিমাত্র দিন বাঙালি জাতিসত্তার জন্য কতটা তাৎপর্যপূর্ণ হতে যাচ্ছিল।

পুলিশ তার সর্বশক্তি নিয়োগ করে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করলেও পানি গড়ায় বহুদূর। ভাষার প্রশ্নে সেদিন শহীদ হন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা অগণিত ভাষাসৈনিক। এ ঘটনা সমগ্র পাকিস্তানের জাতিসত্তার ভিত্তিমূলে সজোরে আঘাত করে। কিছুক্ষণ আগেও বসন্তের যে দিন ছিল কোকিলের সুললিত কণ্ঠে সিক্ত এবং পলাশ, শিমুল, বেলীর স্বর্গীয় মাধুর্যে সুশোভিত, সেই একই দিনে ক্ষণিকের ব্যবধানে রক্তের সাগর বয়ে যায়। সেদিন প্রত্যেক রক্তবিন্দু ছিল পাশবিকতার বিরুদ্ধে, প্রত্যেক হৃদয় ছিল উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে এবং প্রত্যেক মৃত্যু ছিল এক অমানবিক আঘাতের বিরুদ্ধে।

২১ শে ফেব্রুয়ারি বাঙালির বিবেককে যেভাবে নাড়া দেয় তা ছিল বাঙালি জাতির ইতিহাসে অভূতপূর্ব এক ঘটনা, যার ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। ২১-পরবর্তী প্রতিবাদের বহি:প্রকাশস্বরূপ মুনীর চৌধুরী, জহির রায়হান, মাহবুবুল আলম চৌধুরীসহ অজস্র কবিসাহিত্যিকগণ সাহিত্য রচনা করেন। জেলবন্দি অবস্থায় শেখ মুজিব ও মহিউদ্দীন আহমদ আমরণ অনশন করলে প্রতিবাদ আরো তীব্র হয়ে ওঠে। অনেক কষ্টে তাঁদের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়। এই শেখ মুজিবুর রহমানই পরবর্তীকালে বাঙালিদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে হয়ে ওঠেন অপোসহীন কেন্দ্রীয় নেতা ও জাতির পিতা। পরবর্তীকালে বাঙালির অধিকার বিষয়ক যত আন্দোলন গড়ে ওঠে তার অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল ২১শে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে মর্যাদা দেওয়া। ১৯৫৩ সাল থেকে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ এই দিনকে শহীদ দিবস হিসেবে শ্রদ্ধাভরে পালন করেন। জাতীয় ঐক্যের মুখে অবশেষে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আড়াই হাজার বছরের দীর্ঘ ইতিহাসের ঐতিহ্যময় ভাষা, চর্যাপদের ভাষা, নজরুল, রবীন্দ্রনাথের ভাষা বাংলা। এক কালজয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষা সসম্মানে তার অমলিন মর্যাদায় আসীন হয়। তবে যে আগুন বাঙালির হৃদয়ে জ্বালানো হয়েছে, তা আর নেভানো যায়নি। কারণ এ অনির্বাণ অগ্নিশিখা বাংলার বুকে অবতীর্ণই হয়েছিল উপনিবেশবাদের বেড়াজালকে গ্রাস করে বাংলাকে মুক্ত করার জন্য। একে একে ঘটতে থাকে শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থান এবং সবশেষে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। এজন্য একুশ কোনো সংগ্রামের ইতি ছিল না। একুশ ছিল এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা:বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান ও বাংলাদেশের জন্ম।

স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যেক বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বোচ্চ মর্যাদার সাথে সর্বস্তরের মানু্ষ একুশে ফেব্রুয়ারিকে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করেন। ভোরবেলা খালি পায়ে প্রভাতফেরিতে অংশগ্রহণ করে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে আজ আমরা একুশের চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। তবে একুশের এই তাৎপর্যকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করার পথও মসৃণ ছিল না। ১৯৯৮ সালে কানাডাপ্রবাসী বাঙালী বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানের কাছে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। কফি আনানের পরামর্শক্রমে তাঁরা ইউনেস্কোয় একই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল বাধা উপেক্ষা করে জাতিসংঘের কাছে রাষ্ট্রীয়ভাবে এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। অবশেষে নানা অনিশ্চয়তা ও নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। এ ছিল ভাষাসৈনিকদের অবিস্মরণীয় ত্যাগের পক্ষে বিশ্ববিবেকের নৈতিক সমর্থন। নতুন সহস্রাব্দের পূর্বে এক অনবদ্য মর্যাদা ও স্বীকৃতি ছিল সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য এক শুভ ইঙ্গিত ও নবউদ্যমের সূচনাকারী। ২০০০ সালে সর্বপ্রথম ইউনেস্কোর সদর দপ্তর প্যারিসে দিনটি সসম্মানে পালিত হয়। আজ বিশ্বের ১৮৮টি দেশ দিনটিকে পালন করার মাধ্যমে নিজ মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে উদ্বুদ্ধ হয়। এক কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করে আমরা আমাদের প্রাণের মাতৃভাষার মর্যাদা বিশ্বদরবারে উন্নীত করতে সক্ষম হই।

রক্তের কালিতে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত এক কালজয়ী মহাকাব্যের ভূমিকাপর্ব মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। আজ স্বাধীনতার ৫৩ বছরে যারা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে তাজা রক্তের বিছানায় শায়িত হলেন, তাদের এই সর্বোচ্চ ত্যাগের প্রতিদান কেবল তাদের বুকে লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সম্ভব। প্রতিবছর একুশের আগমন শুধু শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের জন্য হয় না। বরং এর আগমন ঘটে আমাদেরকে মনে করানোর জন্য যে কতটা ত্যাগের বিনিময়ে আমরা মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জন করেছি। এ ত্যাগের কথা স্মরণ করে আমাদেরকে নিজ মাতৃভাষার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। দু:খজনকভাবে আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে আমাদের পূর্বপুরুষদের এ দু:সাহসী সংগ্রামের কথা সঠিকভাবে পৌঁছানো হচ্ছে না। এজন্য বাংলা ভাষাকে বিকৃত করে কথা বলাটা এক প্রকার অপসংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটি আজ সবাই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করলেও এই শ্রদ্ধা কেবল একটি নির্দিষ্ট দিনব্যাপী বিদ্যমান থাকছে। কিন্তু যে অদম্য চেতনার জায়গা থেকে ১৯৫২ সালে ভাষাশহীদগণ নিজেদেরকে পাঞ্জাবী শাসকদের রক্তচক্ষুর সামনে ঠেলে দিয়েছিলেন, তার জন্ম কিংবা বিকাশ কোনোটাই একদিনে হয়নি। বস্তুত তা ছিল হাজার বছরের বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতি এক অকৃত্রিম শ্রদ্ধারই সার্থক ফসল। এ শ্রদ্ধাকে সদাসর্বদা উজ্জীবিত রাখা জাতি হিসেবে প্রত্যেক বাঙালিরই নৈতিক দায়িত্ব। আজ দিন এসেছে শ্রদ্ধার সঙ্গে আমাদের অতীতের দিকে ফিরে তাকানোর। শ্রদ্ধার সঙ্গে বাঙালি জাতির সূর্যসন্তানদের স্মরণ করার। জাতি হিসেবে বহু পথ আমাদের পাড়ি দিতে হবে। আর সে সুদীর্ঘ পাড়ি দিতে হলে আমাদেরকে দৃষ্টিপাত করতে হবে আমাদের সুদীর্ঘ, ঐতিহ্যময় ও সংগ্রামী অতীতের দিকে। কারণ যে জাতি তার অতীত সম্পর্কে অজ্ঞ, তার বর্তমান অনুপস্থিত, ভবিষ্যত অনিশ্চিত। এজন্য স্বপ্রণোদিত হয়ে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির মহান চেতনা সম্পর্কে জানতে হবে। এ দায়িত্ব কোনো ব্যক্তির বা রাষ্ট্রের একার নয়। এ দায়িত্ব জাতি হিসেবে প্রত্যেক বাঙালির। আর যেদিন আমরা এ চিরসত্য বিষয়টি উপলব্ধি করতে সক্ষম হব, সেদিনই জাতি হিসেবে পরিপূর্ণ সার্থকতা অর্জন করতে সক্ষম হব। কেননা কেবল তখনি আমরা ইতিহাসের মৃত্যুঞ্জয়ী মহানায়কগণের রক্তের ঋণ শোধ করতে পারব।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ

সারাবাংলা/এসবিডিই

আদনান কাদির মুক্তমত শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা

বিজ্ঞাপন

বরবাদের আইটেম গানে নুসরাত
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:২৬

কলকাতায় অভিষেক হচ্ছে অপূর্ব’র
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:২৮

আরো

সম্পর্কিত খবর