Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উত্তরাঞ্চলে যমুনা নামে নতুন বিভাগ চাই

মো. আসাদ উল্লাহ তুষার
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:০৪

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিক ক্ষমতায় থাকার কারণে অভূতপূর্ব উন্নয়নের সাথে সাথে প্রশাসনিক কাজকর্মকে রাজধানীর বাইরে ছড়িয়ে দিতে নতুন নতুন প্রশাসনিক বিভাগ গঠন করেছে। দেশ একসময় চারটি বিভাগে বিভক্ত থাকলেও বর্তমানে আটটি বিভাগে বিভক্ত। আরো দুটি নতুন প্রশাসনিক বিভাগ বাস্তবায়নাধীন আছে। ফরিদপুর অঞ্চল ও কুমিল্লা অঞ্চলকে নিয়ে আলাদাভাবে গঠিত দুটি বিভাগ যথাক্রমে পদ্মা ও মেঘনা নামে তার যাত্রা শুরু করার অপেক্ষায় আছে। যদিও কুমিল্লাবাসির দাবি তাদের নিজ জেলা কুমিল্লার নামেই বিভাগ করার। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দেশের অন্যতম প্রধান নদী মেঘনা নামে বিভাগ করতে চান। আশা করা যায় খুব অচিরেই পদ্মা এবং মেঘনা নামের দুটি নতুন প্রশাসনিক বিভাগের কার্যক্রম শুরু হবে।

বিজ্ঞাপন

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে অঞ্চলভিত্তিক সুবিধা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ অপরিহার্য। প্রস্তাবিত দুটি বিভাগ বাস্তবায়িত হলে উত্তরাঞ্চল বাদে দেশের বিভাগীয় শহরগুলি থেকে জেলা শহর গুলির দূরত্ব তুলনামূলক কমে আসবে। যার কারনে ওইসব অঞ্চলে উন্নয়ন কার্যক্রম আরো জোরদার হবে, প্রশাসনিক কার্যক্রম সহজ হবে, মানুষের ভোগান্তি কম হবে। স্বাস্থ্য শিক্ষাসহ ওই বিভাগের জেলাগুলি নতুন বিভাগীয় শহরেই সব সেবা পাবে বলে আশা করা যায়। নতুন বিভাগ হওয়ার কারণে ওই বিভাগে প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় কার্যক্রম সেবা দ্রুত মানুষের কাছে চলে আসবে। এক কথায় নতুন বিভাগ হওয়ার কারণে ঐ বিভাগকে কেন্দ্র করে ঐ এলাকায় নতুনভাবে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। সেদিক বিবেচনায় দেশে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে নতুন আরেকটি বিভাগ করা খুবই জরুরী।

বিজ্ঞাপন

উত্তরাঞ্চলে ১৬টি জেলা নিয়ে মাত্র দুটি বিভাগ। সর্ব উত্তরে ৮টি জেলা নিয়ে বিভাগীয় শহর রংপুর ঐ বিভাগের মাঝামাঝিতে অবস্থিত। যে কারণে রংপুর বিভাগীয় শহরে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ করতে বিভাগের প্রতিটা জেলার মানুষের অনেকটা সুবিধা হয়। এক সময় রাজশাহী বিভাগ ভেঙ্গে এই নতুন রংপুর বিভাগ গঠিত হয়েছিল এবং এই অঞ্চলের মানুষের বিভাগীয় কার্যক্রম করতে এখন অনেক সহজ হয়েছে। রংপুর বিভাগ হওয়ার আগে উত্তরের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও দিনাজপুর এইসব দূরবর্তী জেলার মানুষকে উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগীয় শহর গিয়ে কাজ করতে অনেক অসুবিধা হতো। নতুন রংপুর বিভাগ হয়ে সে অসুবিধা দূর হয়েছে। প্রশাসনিক কার্যক্রমের সুবিধার জন্য চারটি জেলা নিয়েও বিভাগ হয়েছে। যেমন ঢাকা বিভাগ ভেঙ্গে ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগ ভেঙ্গে সিলেট। পূর্বের বিভাগীয় শহর থেকে দূরত্ব বিবেচনায় এই দুইটি বিভাগ করা অপরিহার্য ছিল। ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনায় নতুন নতুন বিভাগ সৃষ্টি করতে হলে বিভাগের সদর দপ্তর কোথায় হবে তা নিয়ে এক ধরনের মনমালিন্য চলে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যেও এক ধরনের অঞ্চল প্রীতি জেগে উঠে। সেদিক বিবেচনা করেই হয়তো প্রধানমন্ত্রী দেশের অন্যতম প্রধান দুটি নদী পদ্মা এবং মেঘনার নামে দুটি নতুন বিভাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন।

উত্তরাঞ্চলের দুটি বিভাগের একটি বিভাগ রাজশাহী মোট আটটি জেলা নিয়ে গঠিত। কিন্তু ভৌগলিকভাবে পুরনো এই বিভাগীয় শহরটি সবকটি জেলার এক কোনায় অবস্থিত। যেহেতু বর্তমান সরকার প্রশাসনিক কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে বদ্ধ পরিকর। সে কারণেই রাজশাহী বিভাগীয় শহরের বেশ দূরে জয়পুরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলা নিয়ে আরেকটি নতুন বিভাগ করা প্রয়োজন বলে এ অঞ্চলের মানুষ মনে করে। বিশেষ করে যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু ও নতুন করে নির্মিত রেল সেতুর কারণে যমুনা নদীর তীর ঘেঁষে নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা জেগেছে। ইতিমধ্যে যমুনার তীর ঘেঁষে একটি ইকোনমিক জোন গড়ে উঠছে। আছে শিল্প পার্ক। এছাড়াও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্থিত বাঘাবাড়ি নৌ বন্দরকে আরো যুগোপযোগী করতে প্রয়োজনীয় ড্রেজিং করে আরো কার্যকর ও উন্নত করে সরাসরি বিদেশি জাহাজ আসার ব্যবস্থা করলে এই অঞ্চলে নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। এছাড়াও উল্লাপাড়া রেলস্টেশন থেকে বাঘাবাড়ি হয়ে পাবনা জেলার ঢালারচর পর্যন্ত নতুন রেললাইন সংযোগ করলে এলাকাটি একটি সর্বাধিক সুযোগ সুবিধা সম্মত এলাকায় পরিণত হবে। যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রধানতম দুটি নদীর নামে দুটি বিভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেখানে এই অঞ্চলের মানুষের দাবি দেশের প্রধানতম নদী এবং জাতীয় নদী যমুনা নদীর নামেও উল্লেখিত চারটি জেলাকে নিয়ে নতুন একটি বিভাগ বাস্তবায়ন করতে পারেন। যা এই এলাকার অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করবে। পাশাপাশি দেশের প্রধান তিনটি নদীর নামেই তিনটি নতুন বিভাগ গড়ে উঠবে।

দেশকে এগিয়ে নিতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নতুন নতুন প্রশাসনিক অঞ্চল গড়ে ওঠা সময়ের দাবি। তাতে যেমন মানুষ যেমন সেবা পাবে সাথে সাথে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং দৈনন্দিন ভোগান্তিও অনেক কমবে। বিশেষ করে যমুনা নদীর তীর ঘেঁষে এই বিভাগীয় সদর দপ্তরটি প্রতিষ্ঠা করে এই এলাকাটিকে স্বতন্ত্র একটি নতুন শহরে পরিণত করা যেতে পারে যা দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করা যায়। বঙ্গবন্ধু ব্রিজের পশ্চিম পাশটি হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার। ঐ চারটি জেলার লোকজনও এখান দিয়েই রাজধানী ঢাকাতে যাওয়া আসা করে। এই চার জেলার মানুষকে বিভাগীয় কার্যক্রম সম্পাদন করতে উল্টো রাজশাহী না গিয়ে রাজধানীর পথেই যদি বিভাগীয় সদর দপ্তর পরে তাহলে কাজকর্মের সুবিধাই হবে বলে প্রতিয়মান হয়। এছাড়াও এক বিভাগীয় শহর থেকে অন্য বিভাগীয় শহরের দূরত্বও যথাযথ হবে । বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং উত্তরাঞ্চলের দিকে নজর দিচ্ছেন সেই বিবেচনায় আরেকটি বিভাগ খুবই জরুরী। সবদিক বিবেচনায় সময়ের দাবি অনুযায়ী উত্তরাঞ্চলে যমুনা নামে নতুন একটি বিভাগ করা হোক।

লেখক: সদস্য, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ

সারাবাংলা/এসবিডিই

উত্তরাঞ্চলে যমুনা নামে নতুন বিভাগ চাই মুক্তমত মো. আসাদ উল্লাহ তুষার

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর