আসছে অগ্নিকাণ্ডের মৌসুম; থাকতে হবে সাবধান
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:২৮
বর্তমানে আমাদের দেশে প্রতিনিয়তই বহু ধরনের দুঘটনায় মানুষের প্রাণহানিসহ ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এর মধ্যে অগ্নি জনিত দুর্ঘটনা অন্যতম। গত কয়েক বছরে এই দুঘর্টনায় প্রাণহানি সহ সম্পদের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুড়ে ছাই হয়েছে অগণিত মানুষের স্বপ্ন। প্রাণহানি যেমন ক্ষতিকর তেমনি একজনের সম্পদ পুড়ে যখন তার তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্ন ছাই হয়ে যায় তার খোঁজ কে রাখে। প্রাণহানির সংখ্যা আমরা গণমাধ্যমে দেখতে পাই। কিন্তু স্বপ্ন ভঙ্গের খবর রাখি না। অথচ কতদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে সেই স্বপ্ন জমা হয়। তারপর একদিন হঠাৎ আচমকাই সব পুড়ে ছাই হয়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। অসাবধানতাবশতঃ যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু যখন কোনো দুর্ঘটনার পেছনে কারণ খুঁজে পাওয়া যায় তা থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়। আমাদের দেশে দুর্ঘটনার প্রকারে অগ্নিকান্ড জনিত দুর্ঘটনা তাই বর্তমানে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। বিষয়টি আমাদের গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করছে এবং কিভাবে এই দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যায় বা কমিয়ে আনা যায় তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। কারণ একমাত্র সচেতনতা এই দুর্ঘটনা বহুলাংশে কমিয়ে আনতে সক্ষম। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এসব সংঘটিত অগ্নিকান্ড হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে, সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বা অসাবধানতার ফলে। এসব অগ্নিকান্ড এবং এর পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ক দুর্ঘটনায় প্রায়ই প্রাণহানি এবং মালামাল বিনষ্ট হচ্ছে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে গত বছর আগুনে প্রায় ৮শ কোটি টাকার সম্পদ পুড়েছে। প্রতিদিন হড়ে ৭৭টি করে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত বছর সাড়ে ২৭ হাজারেরও বেশি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৯ হাজার ৮১৩টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে। এছাড়াও গ্যাস ও লাকড়ির আগুন থেকে বেশি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। আর সবচেয়ে বেশি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বাসাবাড়ি ও আবাসিক ভবনে। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আমাদের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে। নিন্মমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার না করে মানসম্পন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করা উচিত। এতে শর্ট সার্কিটের ঘটনা কমানো সম্ভব। সামনেই অগ্নিকান্ডের মৌসুম। অর্থাৎ এই গরমের সময়েই সারাদেশে আগুন লাগার ঘটনা বেশি ঘটে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তীব্র গরম পরে। সে কারণে অগ্নিকান্ডগুলো আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। গত বছরের হিসেবে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে প্রায় আড়াই হাজারের বেশি, ফেব্রুয়ারিতে প্রায় তিন হাজার, মার্চে সাড়ে তিন হাজার এবং এপ্রিলে তিন হাজারের বেশি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
দেশে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছেই। ছাই হচ্ছে মানুষের স্বপ্ন। আমাদের অগ্নি নির্বাপক কর্মীরা দক্ষ হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। সবসময় আমরা দেখি ঘটনার পর যতদ্রুত সম্ভব তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। আস্থা রাখি সেই মানুষগুলোর ওপর। অনেক সময় বিভিন্ন সিমাবদ্ধতার কারণে অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা দ্রুত কাজ করতে পারেন না। কাজ করতে গিয়ে সেইসব সাহসী মানুষগুলোও হতাহত হয়। তাদেরও ঝুঁকি থাকে। সেই ঝুঁকি উপেক্ষা করেও তারা দায়িত্ব পালন করেন। যারা এই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে তাদের চোখের জল মুছতেই বহু বছর পার হয়ে যাচ্ছে। অগ্নিকান্ডের পর একের পর এক মৃহদেহ, পোড়া, আধপোড়া দেহ বের হয়। কত মানুষের স্বপ্ন নিমেষেই ছাই হয়ে যায়।
নিমতলীর ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ১২৪ জন মারা যায়। কোন ঘটনা থেকে কেবল শিক্ষা নিয়ে বসে থাকলেই পরবর্তী ঘটনা আটকানো যায় না। ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে তা যেন আর না ঘটে বা ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায় তা বাস্তবায়ন করাই আসল কাজ। গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণে মৃত্যুর ঘটনা আমাদের দেশে একেবারেই সাধারণ। যানবাহনে মেয়াদ উত্তীর্ণ সিলিন্ডার নিয়ে ঘুরে বেড়ানোও খুব সাধারণ একটি ঘটনা। বলা হয় মেয়াদ উত্তীর্ণ একটি সিলিন্ডার একটি বোমার মত মারাত্বক। চলন্ত গাড়িতে এরকম বোমা নিয়ে দেশের অনেক স্থানেই ঘুরে বেরাচ্ছি আমরা। যে কোন সময় আমি বা আপনি যে গাড়িতে চড়ে বসে আছেন নিশ্চিন্তে গন্তব্যে যাবার জন্য হয়তো সেটিতেই কোন দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। এরকম বহু ঘটেছে আমাদের দেশে। এই বিষয়টি নিয়ে বহু কথা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এই না হওয়াতেই আমাদের যত অপারগতা। গাড়িতে মেয়াদ উত্তীর্ণ সিলিন্ডার আছে কি না তা সাধারণ যাত্রীর জানার কথা নয়। জনগণের জীবন নিয়ে যারা ছেলেখেলা করে তাদের বিরুদ্ধে জোরদার পদক্ষেপ কেন নেয়া হয় না। দুর্ঘটনা ঘটার পর অনেক কিছু করার প্রতিশ্রুতি দেয়ার চেয়ে আগেভাগেই প্রতিরোধমূলক ব্যাবস্থা নিলে সেই দিনটাই হয়তো আর দেখতে হয় না। বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বহু অগ্নিাকান্ডের ঘটনা এবং তার ফলশ্রুতিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধেও ব্যাবস্থা গ্রহণ করা যায়। আমাদের চোখের সামনেই যেকোন দোকানে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি করতে দেখা যায়। অথচ আইন অনুযায়ী এই গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির জন্য অনুমতির প্রয়োজন এবং সব ধরনের দোকানে বা যত্রতত্র বিক্রি করা যায় না। আবার এই সিলিন্ডারগুলোর মেয়াদ কতটা সতকর্তার সাথে নির্ণয় করা হয় তাই বা কতজন ব্যাবহারকারী জানে। সিলিন্ডার ব্যবহারেও সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। পত্রিকার পাতায় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়। সেগুলো জানতে হবে। প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা না নিলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর সতর্কতা আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারে। অগ্নি জনিত দুর্ঘটনা রোধে আপাতত নিয়ম কানুন মেনে চলা এবং সতর্ক থাকা প্রয়োজন। না হলে প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতি বাড়তেই থাকবে। সেটা কারোই কাম্য নয়।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক
সারাবাংলা/এসবিডিই
অলোক আচার্য আসছে অগ্নিকান্ডের মৌসুম; থাকতে হবে সাবধান মুক্তমত