Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘কালচার’ সংকটে জর্জরিত ফেনী

ইমরান ইমন
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৪৯

ফেনীতে রীতিমতো সব প্রকার উৎসব হয়, সব ধরনের মেলা হয়, কিন্তু কয়েকবছর যাবৎ বইমেলা হয় না। এ থেকে সহজেই অনুমেয় সাংস্কৃতিকভাবে দিনদিন ফেনী কোন রসাতলে যাচ্ছে!

শহরের দিকে তাকালে শুধু খাওয়ার হোটেল-রেস্তোরাঁ আর সারি সারি চমৎকারভাবে সাজানো পোশাকের দোকান দেখা যায়। আর দেখা যায়, হাসপাতাল আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অর্থাৎ, ‘ফেনীর মানুষ খায় আর হাসপাতালে যায়’।

এককালের ফেনী আর বর্তমানের ফেনীর মধ্যে বিস্তর তফাৎ রয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে ফেনী দেশের মধ্যে অন্যতম অগ্রসর একটি জেলা। ফেনীকে বলা হয় ‘বাজারের শহর’, এখানকার মানুষ ‘নগদ নারায়ণে’ বিশ্বাসী। কিন্তু সাংস্কৃতিকভাবে ফেনী এখনও অনেক পিছিয়ে। ফেনীর অবকাঠামোগত ঝকঝকে উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু মানুষের আত্মিক উন্নয়ন নেই। এখানকার মানুষের মধ্যে টাকা হলেও ‘কালচার’ গড়ে ওঠেনি। আর একটা জাতির মধ্যে যখন কালচার গড়ে উঠবে না তখন তার অর্থনৈতিক মুক্তি কোনো কাজে আসবে না। ফেনীর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তাই ফেনীর মানুষের কাছে লাইব্রেরির চেয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ আর পোশাকের দোকানের গুরুত্ব বেশি বা বইমেলার চাইতে বাণিজ্য মেলা বা পিঠা-লতাপাতা-ফুল-পাখি-বৌ-জামাই মেলার গুরুত্ব বেশি।

এখানে অনেক কিছু রয়েছে কিন্তু কালচার নেই, নেই সাংস্কৃতিক জাগরণ। তাছাড়া এখানে দলাদলি কিংবা পারস্পরিক ঈর্ষার মাত্রাটা বেশি। কেউ কাউকে সাইড দিতে চায় না, অযোগ্যদের দৌরাত্ম্য বেশি, গুণীদের কদর নেই বললেই চলে। গুণীদের অনেক ক্ষেত্রে কোণঠাসা করে রাখা হয়।

এখানে একটি সরকারি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি রয়েছে। লাইব্রেরিতে একদিন অনুসন্ধান করতে গিয়ে দুর্লভ কিছু বই আবিষ্কার করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, লাইব্রেরিটি যে জায়গায় রয়েছে সেখানে পাঠক যেতে পারেন না। অর্থাৎ, সেটি ওভাবে কাজে আসছে না। শহরের প্রাণকেন্দ্রে সাংস্কৃতিকচর্চার জন্য ‘জহির রায়হান হল’ ছিল কিন্তু সেটি এখন আর নেই। নতুন করে নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে যে সেটি ভেঙে ফেলা হয়েছিল এরপর থেকে আশ্বাস আর এখন অবধি আলোর মুখ দেখেনি।

বিজ্ঞাপন

ফেনীর বর্তমান প্রজন্ম জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ফেনীর কৃতীসন্তানদের নাম জানে না, তাদের গৌরবগাঁথা সম্পর্কে তারা অবগত নয়। কিছুদিন আগে এক অনুষ্ঠানে জেলার শ্রেষ্ঠ এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞেস করলাম, ফেনীর দুইজন বুদ্ধিজীবীর নাম বলতে। তারা বলতে পারলো না। এমন প্রজন্ম দিয়ে আমাদের কী হবে? আর এর দায়ভার কে নেবে?

অথচ এককালের ফেনী সাংস্কৃতিকভাবে ছিল এক সমৃদ্ধ জনপদ। এখান থেকে দেশ ও দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আলো ছড়াচ্ছেন স্যার এএফ রহমান, হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী, খাজা আহমদ, জহির রায়হান, শহীদুল্লা কায়সার, ড. সেলিম আল দীন, ভাষাশহীদ আব্দুস সালাম, শহীদ বুদ্ধিজীবী সেলিমা পারভীন, শামসুন নাহার, শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. আনম ফজলুল হক মহী, ডা. ক্যাপ্টেন বদিউল আলম চৌধুরী, সাংবাদিক ও কলামিস্ট এবিএম মূসা, সাংবাদিক আবদুস সালাম, গিয়াস কামাল চৌধুরী, ওবায়েদ উল হক, কবি বেলাল চৌধুরী প্রমুখের মতো আলোকিত মানুষরা।

আমাদের আবার সমৃদ্ধির পথে যেতে হলে সবাইকে সম্মিলিতভাবে দায়িত্বশীল হতে হবে। এক্ষেত্রে নাগরিক সচেতনতা জরুরি। এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, ‘ফেনী আমার আপনার আমাদের সবার’।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

‘কালচার’ সংকটে জর্জরিত ফেনী ইমরান ইমন মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর