একুশে পদক ২০২৪: প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় অঙ্গীকার
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:২৪
বিগত ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ২১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে ‘একুশে পদক ২০২৪’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি বলেন একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করা- আর আমরা মাথা নত করে চলব না। এখানে উল্লেখ্য যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসাবে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার এই ‘একুশে পদক’ প্রাপ্তদেরসহ মরণোত্তর পদকে ভূষিতদের পরিবারের হাতে হস্তান্তর করেন। ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মরণে ১৯৭৬ সাল থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য এ পদক দিয়ে আসছে সরকার। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, এককালীন চার লাখ টাকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এ বছর একুশে পদকের জন্য মনোনীত ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিকের নাম ঘোষণা করা হয়। এ বছর ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে দুইজন, শিল্পকলায় ১২ জন, সমাজসেবায় দুইজন, ভাষা ও সাহিত্যে চারজন এবং শিক্ষায় একজন বিশিষ্ট নাগরিক এ পুরস্কার পান।
ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে মরণোত্তর একুশে পদক পেয়েছেন মৌ. আশরাফুদ্দীন আহমদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া। শিল্পকলার বিভিন্ন শ্রেণিতে যারা একুশে পদক পেয়েছেন তারা হলেন— সংগীতে জালাল উদ্দীন খাঁ (মরণোত্তর), বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ, বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর) ও শুভ্র দেব; অভিনয়ে ডলি জহর ও এমএ আলমগীর; আবৃত্তিতে খান মো. মুস্তাফা ওয়ালীদ (শিমুল মুস্তাফা) ও রূপা চক্রবর্তী; নৃত্যকলায় শিবলী মোহাম্মদ; চিত্রকলায় শাহজাহান আহমেদ বিকাশ; এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিংয়ে কাওসার চৌধুরী। এ ছাড়া সমাজসেবায় মো. জিয়াউল হক ও আলহাজ রফিক আহামদ এবং শিক্ষায় অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু পেয়েছেন একুশে পদক। এ বছর ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক পেয়েছেন চারজন। তারা হলেন-মুহাম্মদ সামাদ, লুৎফর রহমান রিটন, মিনার মনসুর ও রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (মরণোত্তর)।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষকে শিক্ষিত দক্ষ বিজ্ঞান প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন একটি জনশক্তি হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে চাই। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি সামনে লক্ষ্য হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। কেউ অশিক্ষার অন্ধকারে থাকবে না এবং সবাই যেন যুগের সাথে তাল মিলিযে শিক্ষায শিক্ষিত হযে দক্ষতা ও কর্মশক্তি বিকশিত করতে পারে সেদিকেই আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি। আগামী দিনের পথ চলায় ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব সেই ঘোষণাও দিয়েছি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদের শুধু স্বাধীনতাই দিয যাননি। সাথে তিনি আমাদের একটা মর্যাদাবোধ দিয়ে গেছেন। আমরা বিজযী জাতি হিসেবে সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। এই কথাটা সকলকে মনে রাখতে হবে।’এ সময প্রধানমন্ত্রী ১৯৭২ সালে একুশে ফেব্রুযারির প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্যের একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বলে গেছেন, আমাদের সামাজিক অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন হচ্ছে ৫২’র সেই রক্তের অক্ষরে মাতৃভাষার যে আন্দোলন।’ ‘তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। ৭৫’র পর বিজযী জাতি বাংলাদেশ সেই মর্যাদা হারিয়েছে ফেলেছিল। কিন্তু অন্তত আমি এইটুকু দাবি করতে পারি, আবার বাঙালি বিশ্ব দরবারে এখন মাথা উঁচু করে চলতে পারে। সেই মর্যাদা আমরা ফিরিয়ে এনেছি। আর এই মর্যাদা আমাদেরকে সমুন্নত রেখেই আগামী দিনে এগিয়ে যেতে হবে। কারো কাছে হাত পেতে নয়, ভিক্ষা করে নয়। আমরা আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলব।’
প্রধানমন্ত্রীর এই উক্তিগুলো তার দীর্ঘ্য দিনের সৃজনশীল কাজের ফসল মাত্র এবং এবারের একুশে পদকে যেমন চমক আছে, তেমননি আছে স্মার্ট বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি যা তার দল নির্বাচনী ইসতেহারে ঘোষনা দিয়েছিলেন । প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট কেবিনেট গঠন করেছেন, একি ভাবে স্মার্ট পদক দিয়েছেন গ্রামের দধি বিক্রেতা থেকে শুরু করে মরমী শিল্পী পর্যন্ত যাদের কথা কেহ কোন সময় আলোতে নিয়ে আসেনা চিরাচরিত ভাবে যা কেবল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার হাতেই সম্ভয় হয়েছে । বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতার কন্যা। নির্মম, নিষ্ঠুর, হৃদয়বিদারক স্বজন হারানোর বেদনা বহন করা এক অকুতোভয় যোদ্ধা। নিজেও মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন বার বার। পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৫২ বছর বয়সে জাতির পিতা হয়েছিলেন আর মাত্র ৫৬ বছর বয়সে ঘাতকের নির্মম বুলেটে শাহাদত বরন করেন। নিজেকেও ৫৬ বছর বয়সে মৃত্যু প্রায় গ্রাস করেছিল ২০০৪’র গ্রেনেড হামলায়। পিতার বয়স পার করেছেন কুড়ি বছর আগে সাথে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের বয়সও কুড়ি। চতুর্থবার সফলতার শেষে পঞ্চম বারের মতো দায়িত্ব নিয়েছেন। মানুষের দোয়া ও ভালবাসায় বেঁচে আছেন পিতার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য। ছাত্র রাজনীতি দিয়ে রাজনৈতিক জীবনের হাতে খড়ি। অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময়ের রাজনৈতিক উত্থান পতনের নীরব সাক্ষী, কখনো দর্শক আবার কখনো বা পথ প্রদর্শক। আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্থপতি, স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, উপমহাদেশ তথা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নারী পার্লামেন্টারিয়ান ও আট বারের নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য গনতন্ত্রের মানসকন্যা দেশরতœ জননেত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চম বারের মত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।শখ হাসিনা এমন একজন প্রধানমন্ত্রী তিনি যা ভাবেন বা করেন তা অনেক সময় তার প্রতিপক্ষ আন্দাজও করতে পারেন না। তিনি তার কাজ শতভাগ বিশ্বাস ও আস্থার সাথে করেন বলেই হয়তো সব বাধা বিপত্তি সফলভাবে উতরে যেতে পারেন। তিনি আবেগী তাতে কোন সন্দেহ নাই কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে আবেগের চাইতে বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন বলেই প্রতিয়মান হয। তিনি যেমন সাহসী তেমনি দূরদর্শী। কখন কোথায কাকে কাজে লাগালে দেশের জন্য ভালো হবে তিনি তা ভালো করে জানেন এবং তা করেন। তিনি যেমন তরুণকে হাত ধরে টেনে তুলে নেন ঠিক একইভাবে প্রবীণকেও যথাযথ সম্মান দেন। দল ও সরকার পরিচালনায় তার যে সকল রাজনৈতিক সহকর্মী ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন এবং আনুগত্য থেকেছেন তারা কোন না কোন সময় মূল্যয়িত হয়েছেন, হযত সরকারে না হয় দলে।
গত ৫ বছরে দেশ পেয়েছে পদ্মা সেতু, রেল সেতু। নৌকার হাত ধরেই এসেছে ঢাকায় মেট্রোরেল, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অত্যাধুনিক তৃতীয় টার্মিনাল, পারমাণবিক চুল্লি থেকে কর্ণফুলী টানেল, প্রায় কোনো প্রতিশ্্রুতিই অপূর্ণ রাখেননি তিনি। নৌকার হাত ধরে বাংলাদেশে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য এসেছে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে ।তার হাত ধরে আরও আলোকিত হয়েছে বাংলাদেশ।শেখ হাসিনার সরকার শিক্ষার্থীদের বিনা পয়সায় বই দিচ্ছে। বৃত্তি পাচ্ছে দুস্থ ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা। প্রতি জেলায় প্রচুর স্কুল ও কলেজ সরকারিকরণ করে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিকভাবেই চাইছেন শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে শুধু পড়াশোনা করুক, বাকি দায়িত্ব সরকারের। তাই পডাশোনা করতে গিয়ে পডুয়াদের পয়সার চিন্ত আর করতে হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী চান, বাংলাদেশে ছেলেমেয়েরা পডাাশোনায় মন দিয়ে শিক্ষাদীক্ষায়, জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশ্বের সঙ্গে যেন তাল মিলিয়ে চলতে পারে। উপযুক্ত শিক্ষার পরিকাঠামো গডতে তিনি সবাইকে প্রকৃত অর্থেই শিক্ষিত ছেলেমেয়ে তৈরি করার সুযোগ করে দিচ্ছেন।শেখ হাসিনার হাত ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তব। এখন এগিয়ে যাচ্ছি আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে। যেখানে সব নাগরিক সেবা মিলবে হাতের মুঠোয় । মানুষই বলছে, ‘সাফল্যের কান্ডারি শেখ হাসিনা’। তিনি একজন ভালো লেখকও বটে। ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনা প্রযুক্তি, সংগীত, বই পড়া এবং রান্নার কাজেও বেশ আগ্রহী। তিনি কৃষক ও প্রকৃতিপ্রেমিক মানুষ। তাই গণভবনে গড়ে তুলেছেন কৃষি খামার তার উপর প্রমাণ্যচিত্র তৈরি হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ফসলি ভাবনায় গণভবনে বাংলার মুখ । প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বই জ্ঞানে প্রতিক,আনন্দের প্রতিক ও ভালবাসার প্রতিক । একুশের বই মেলা ও একুশে পদক আবার আমাদেও নতুন করে শিখিয়েছে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে আগলে ধরে মানব কল্যাণে কাজ করছেন তিনি। প্রতিবেশীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখেই বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে ভারতকেও টেক্কা দিচ্ছে বাংলাদেশ। তলাবিহীন ঝুড়িই আজ উন্নত দেশ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরার স্বপ্ন দেখছে। দেশবাসীর সেই স্বপ্নকেই সঠিক দিশায় পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের নৌকায় চেপেই দেশের মানুষ আজ সুখ ও সমৃদ্ধির নতুন দিগন্তে প্রবেশ করেছে। একুশে পদক বিতরন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উচ্ছাস তারি প্রতিফলন মাত্র ।
লেখক: গবেষক ও অর্থনীতিবিদ
সারাবাংলা/এসবিডিই
একুশে পদক ২০২৪: প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় অঙ্গীকার ড. মিহির কুমার রায় মুক্তমত