পরিবর্তিত বিশ্বপরিস্থিতি ও বাংলাদেশ: খেলাপি ঋণ ও ব্যাংকিং খাত
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:৫৭
আশঙ্কাজনক হারে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বিশেষ করে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তালিকা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জিরো টলারেন্স নীতির কথা জানান। পদক্ষেপের অংশ হিসেবে খেলাপির ওপর নিয়ন্ত্রণ ও ব্যাংকে সুশাসন ফেরাতে ইতোমধ্যে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের কথা জানানো হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তালিকা তৈরির প্রতিশ্র্ুিত দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে সব খেলাপির জন্য নতুন ঋণ অনুমোদন বন্ধ ও বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও জানিয়েছে। পাশাপাশি খেলাপিদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধনকে (আরজেএসসি) নতুন করে তালিকাভুক্তির সুযোগ বন্ধ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে ।
সম্প্রতি খেলাপি ঋণ নিয়ে যত আলোচনা চলছে, তাতে সমাধানের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। নানা ধরনের ছাড় দিয়েও খেলাপি ঋণ কমাতে সফল হয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। গত এপ্রিল-জুনে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। ফলে, জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। অথচ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন দেশে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এখন তা দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়াল। অর্থাৎ ১৪ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৭ গুণ। এই সময়টা ছিল ঋণ খেলাপিদের জন্য সুবর্ণ সময়।
বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে হিসাব দিচ্ছে, তা প্রকৃত তথ্য নয়। কারণ, প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরও অনেক বেশি। মামলার কারণে অনেক ঋণকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। আবার অবলোপন করা ঋণও খেলাপির হিসাবে নেই। কিছু কিছু ব্যাংক ঋণ পুনঃ তফসিল করতে পারেনি। আবার কিছু ব্যাংকের ঋণ পুনঃ তফসিল করার পর আবার খেলাপি হয়েছে। মূলত সরকার ২০১৫ সাল থেকে ঋণ খেলাপিদের জন্য বড় বড় ছাড় দিয়ে আসছে। ফলে, খেলাপিরা বারবার ঋণ পুনঃ তফসিল করে নিয়মিত দেখাচ্ছেন। এর মাধ্যমে তারা নতুন করে ঋণও নিচ্ছেন এবং নতুন করে খেলাপি হচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক গত আগস্টে আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপির চেয়ে পুনঃ তফসিল ঋণের পরিমাণ বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংক-আইএমএফ বৈঠক
আইএমএফের পরামর্শে ১৯৮৯ সাল থেকে মুক্তবাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ব্যাংক ঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে শেষ পর্যন্ত তা আর ধরে রাখতে পারেনি। আইএমএফ অনেক বিষয়ে নির্দিষ্ট শর্ত দিয়ে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে চলতি বছরের ২০২৩ জানুয়ারিতে। এই ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ফেব্রুয়ারিতে পায় বাংলাদেশ। দেশে এখন ডলার সংকট চলছে। এই সময়ে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নভেম্বরে এই কিস্তি পাওয়ার কথা। তবে তা নির্ভর করছে ঋণের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া শর্ত পরিপালনের ওপর। তাই সরকারি বিভাগগুলো শর্ত পূরণে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, সে সব বিষয় নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছে আইএমএফ। আর্থিক খাতের স্থায়িত্ব, ব্যাংক খাতের সংস্কার, তারল্য ব্যবস্থাপনা, ডলারের বাজারভিত্তিক লেনদেন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন, ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ গণনা পদ্ধতি, সুদের হার ও মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার নামিয়ে আনতে একটি ‘সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা’ চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। পাশাপাশি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সংস্থাটি। তবে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ‘সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন’ পাশ হওয়ায় । আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বরাবরই খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে একটি সমঝোতা স্বাক্ষর (এমওইউ) করার পরামর্শ দিয়েছে এ দাতা সংস্থাটি।
এরই অংশ হিসেবে প্রথমদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় বসে সংস্থাটির বিশেষ প্রতিনিধি দল। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আইএমএফের ঋণের যেসব শর্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের পূরণ করার কথা, তার মধ্যে বেশিরভাগ পূরণ হয়েছে। তবে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখার শর্ত দেওয়া হয়েছিল, সেই পরিমাণ রিজার্ভ রাখতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। আইএমএফের শর্তের মধ্যে অন্যতম ছিল জুনে প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার রাখা, সেপ্টেম্বরে তা ২ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার এবং ডিসেম্বরে ২ হাজার ৬৮০ কোটি ডলার রাখতে হবে। এখন রিজার্ভের তিন ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যেমন- মোট রিজার্ভ, বিপিএম ৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ও প্রকৃত রিজার্ভ। দুই ধরনের হিসাব (মোট রিজার্ভ, বিপিএম ৬) বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করলেও প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে না। তবে প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য নিয়মিত আইএমএফকে জানাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য বলছে, জুনে দেশের মোট (গ্রস) রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ১২০ কোটি ডলার। আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ (ব্যাল্যান্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) অনুযায়ী জুনে রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৪৭৫ কোটি ডলার। সর্বশেষ ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৭০৫ কোটি ডলার আর বিপিএম ৬ অনুযায়ী আছে ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার। এর বাইরেও প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি তথ্য আছে, যা প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই হিসাব অনুযায়ী এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আছে ২০ বিলিয়ন ২ হাজার কোটি ডলারের মতো, যা আইএমএফকে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রকৃত এ রিজার্ভ দিয়ে এখন ৩ মাসের আমদানি দায় পরিশোধ করতে পারবে বাংলাদেশ।
যেভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণ
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিগত ২০২০ ও ২০২১ সালে কোনো ঋণ পরিশোধ না করেও খেলাপিমুক্ত ছিলেন গ্রাহকরা। ২০২২ সালে এসব নীতি ছাড় তুলে দেওয়ার পর ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ার প্রবণতা দেখা দেয় চলতি বছরের শুরু থেকেই। এ অবস্থায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুনে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে আবার ছাড় দেয়। ওই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগামী জুন মাসের মধ্যে ঋণের কিস্তির অর্ধেক টাকা জমা দিলেই একজন গ্রাহককে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের ফলে যেসব ঋণ গ্রাহক খেলাপি হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়েছিলেন, তারা অর্ধেক টাকা জমা দিয়েই নিয়মিত গ্রাহক হিসেবে থাকার সুযোগ পান। এই সুবিধা দেওয়া হয় শুধু মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে। ব্যাংক খাতের ১৫ লাখ কোটি টাকা ঋণের প্রায় অর্ধেকই মেয়াদি ঋণ। এত সুবিধা দেওয়ার পরও খেলাপি কেবল বাড়ছেই। বারবার ছাড় দেওয়ার কারণে ভালো গ্রাহকরাও ঋণ পরিশোধে আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে মনে করেন ব্যাংকাররা। তাদের মতে, এতে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে পড়ছে এবং নতুন ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা হারাচ্ছে।
খেলাপি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন
বাংলাদেশ ব্যাংক গত আগস্টে আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপির চেয়ে পুনঃ তফসিল ঋণের পরিমাণ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সাল শেষে দেশে পুনঃ তফসিল করা ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। সুতরাং বাংলাদেশ ব্যাংক এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১০ দশমিক ১১ শতাংশ দেখালেও প্রকৃত খেলাপির পরিমাণ অনেক বেশি। এর বাইরেও মামলার কারণে আটকা আছে আরও প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ হবে ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি, শতাংশ হারে যা প্রায় ৩০ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পুনঃ তফসিল করা ঋণ ও আদালতের স্থগিতাদেশ দেওয়া ঋণকে খেলাপি হিসেবে দেখানোর পক্ষে। আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার শর্ত দিয়ে রেখেছে। এ শর্তও আপাতত: পূরণ হচ্ছে না বলেই দেখা যাচ্ছে।
কেন খেলাপি
সরকার উদার হস্তে ঋণ খেলাপিদের ছাড় দেওয়া শুরুকরে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর। নতুন করে ক্ষমতায় এসে ২০১৫ সালে সরকার প্রভাবশালী ঋণ খেলাপিদের জন্য ঋণ পুনঃ তফসিলের বিশেষ এক স্কিম হাতে নেয়। তখন তিনবারের বেশি ঋণ পুনঃ তফসিল করা যেত না। কিন্তু বেশিরভাগ প্রভাবশালী উদ্যোক্তাই তিনবার সুযোগটি নিয়েও খেলাপি হয়ে পড়েছিলেন। ফলে, ঋণ পুনর্গঠন নামে নতুন এক সুবিধা দেওয়া হয়। ওই সুবিধার আওতায় দেশের বড় ১১টি শিল্প গ্রুপের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠন করা হয়েছিল। তার পরও এসব গ্রুপের বেশিরভাগই ঋণের কিস্তি আর পরিশোধ করেনি। আবার বড় ছাড় দেওয়া হয় ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর। ২০১৯ সালে অর্থমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে ঋণ খেলাপিদের জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধাটি দেন। সে সময় ২ শতাংশ কিস্তি দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ রাখা হয়। নতুন নিয়মে ঋণ পরিশোধের জন্য ১০ বছর সময় দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রথম এক বছর কোনো কিস্তি দিতে হয়নি। সুযোগ নেওয়া বেশিরভাগই পরে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। অথচ অর্থমন্ত্রী ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসেই এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আর এক টাকাও খেলাপি ঋণ বাড়বে না। তখন দেশে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। সেই খেলাপি বেড়ে এখন দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। কেবল পরিমাণে নয়, শতাংশ হারেও বেড়েছে খেলাপি ঋণ। আইএমএফের দেওয়া পদ্ধতি অনুযায়ী পুনঃ তফসিল ও মামলায় আটকে থাকা ঋণের হিসাব নিলে পরিমাণ ও শতাংশ হারে খেলাপি ঋণ বেড়েছে বহুগুণ।
আইএমএফ ও এনবিআর
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সফররত প্রতিনিধি দলের কাছে ঋণের শর্ত অনুযায়ী রাজস্ব আয় বাড়ানোর কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেছে এনবিআর। তবে আইএমএফের কর্মকর্তারা উদ্ভাবনী পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটিয়ে এনবিআরকে আরও তৎপর হওয়ার সুপারিশ করেছেন। ঋণ কর্মসূচির আওতায় আইএমএফের অন্যতম শর্ত হচ্ছে চলতি অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। এ শর্ত পূরণে এনবিআরকে চলতি অর্থবছরে ৪ লাখ ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করতে হবে, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। এক বছরের ব্যবধানে এত বড় প্রবৃদ্ধি কীভাবে হবে তার কর্মপরিকল্পনা এনবিআরের সদস্যরাা পৃথক তিনটি বৈঠকে ঢাকায় সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সামনে তুলে ধরেছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে কর অব্যাহতি কমানো, আমদানি পর্যায়ের শুল্কহার ধীরে ধীরে কমানো ও করের আওতা বাড়ানোর পরামর্শ ছিল আইএমএফের। কিন্তু এগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। এ ছাড়া আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমসের অটোমেশনে ধীরগতি নিয়ে মিশন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বৈঠকে বলা হয়, কাস্টমস থেকে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকার রাজস্ব এসেছে। শর্ত অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে এই উৎস থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা আহরণ করতে হবে। এ ছাড়া বেশ কিছু পণ্য আমদানিতে শুল্ক পরিবর্তন করা হয়েছে। এর ফলে বাড়তি ১ হাজার ২৪৫ কোটি টাকার রাজস্ব আসবে। এ ছাড়া গত অর্থবছর পর্যন্ত Íপেট্রোবাংলার মাধ্যমে পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানি বাবদ শুল্ক বকেয়া রয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে পেট্রোবাংলা থেকে ৩ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট উইং সভায় জানায়, এ খাত থেকে গত অর্থবছর রাজস্ব এসেছে ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। শর্ত অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে এ খাতে রাজস্বের প্রয়োজন ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে ভ্যাটের আওতা বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে প্রায় ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বাড়তি ভ্যাট আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ইএফডিএমএস) চালু করেছে জাতীয রাজস্ব বোর্ড। এসব উদ্যোগের কারণে চলতি অর্থবছরে কাঙ্কিত রাজস্ব আসবে আশা করা যাচ্ছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয়কর খাত থেকে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকার। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে রাজস্বের প্রয়োজন রয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এ খাত থেকে বাড়তি কর আহরণে পাঁচটি উপখাত নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভূমি নিবন্ধন থেকে বাড়তি ৩ হাজার কোটি, জলবায়ু সংক্রান্ত সারচার্জ ও ন্যূনমত কর থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করছাড় কমিয়ে ২৫০ কোটি, তামাক কর থেকে ৩০০ কোটি এবং ভ্রমণ কর থেকে বাড়তি ৫০০ কোটি টাকা আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।গত ২০২২-২৩ অর্থবছর এনবিআরের জন্য ৩ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল আইএমএফ। কিন্তু এনবিআর আহরণ করেছে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এনবিআরের পক্ষ থেকে বৈঠকে জানানো হয়েছে, ডলার সংকটের কারণে কিছু কড়াকড়ি আরোপ করায় তুলনামূলক আমদানি কমেছে। তাছাড়া কভিড ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে শ্লথগতি থাকায় কাঙ্ক্ষিত হারেও শুল্ক-কর আদায় সম্ভব হয়নি। পরিকল্পনা কমিশনের বা¯বÍাযন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যাযন বিভাগের (আইএমইডি) সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) মহাপরিচালকের সঙ্গেও বৈঠক করে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। এ সময় তারা সাসটেইনেবল পাবলিক প্রকিউরমেন্ট পলিসি তৈরির অগ্রগতি জানতে চান। এ প্রসঙ্গে মিশনকে জানানো হয়, সাসটেইনেবল পাবলিক প্রকিউরমেন্ট পলিসির খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। সেটা এখন কেবিনেটে আছে। এ নীতি বাস্তবায়ন হলে সরকারি কেনাকাটায় যেমন স্বচ্ছতা বাড়বে, তেমনি পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো কিছু কেনার অনুমতি দেওয়া হবে না।
আইএমএফ, ভর্তুকি, আমদানি রফতানি বানিজ্য
এদিকে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের বৈঠকে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের নতুন ফর্মুলা কার্যকরের বিষয়ে জানতে চেয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটির শর্ত অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ে নতুন কার্যকর ফর্মুলা চালু করার কথা প্রসঙ্গত, বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণের বিপরীতে আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে, তার একটি হচ্ছে জ্বালানি তেলের ওপর থেকে ভর্তুকি কমিয়ে আনা। জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া। এতে জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দেওয়ার প্রবণতা কমে আসবে। এর আগে গত মে মাসে আইএমএফ প্রতিনিধিদল জ্বালানি বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে মূল্য সমন্বয় করার তাগিদও দিয়ে গেছে। এদিকে আইএমএফ মিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেছে। আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে ডলারের বিনিময় মূল্য ‘এক রেট’ এবং বৈশ্বিক সংকটের মুখে রপ্তানি আয় বাড়াতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সে ব্যাপারে জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, নানাভাবে রপ্তানিকারকদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন নীতিগত সহায়তা দিয়ে ব্যবসার খরচ কমানো হচ্ছে। এভাবে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) বাংলাদেশ থেকে বিশ্ববাজারে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি ডলারের। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ ড্যাশবোর্ডের হিসাবে দেখা যায়, রপ্তানিকারকরা গত অর্থবছরে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানির ঘোষণা (ইএক্সপি) দিয়েছেন ৪ হাজার ৬৩১ কোটি ডলারের। এ অনুযায়ী দুই সংস্থার গত অর্থবছরের রপ্তানি তথ্যে গরমিল রয়েছে ৯২৪ কোটি (৯ দশমিক ২৪ বিলিয়ন) ডলারের। ইপিবি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রপ্তানি তথ্যে বরাবরই গরমিল থাকলেও গত অর্থবছরেই তা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। এটা কেন হচ্ছে? কারণ ব্যবসায়ীরা কিছু আঁচ করতে পারছেন। তারা শঙ্কিত, তাদের অর্জিত অর্থ রক্ষা করতে পারবেন? আর আগামী দিনগুলোতে এই পাচারের সুযোগটি থাকবে কিনা। ব্যবসায়ীরা দেশ ও জনগণের প্রতি যে প্রেম দেখান, তা যে বিত্ত আর বৈভব গড়ে নিজেদের গণমানুষের থেকে অনেক দূরে মহানগরে বসবাসের লক্ষ্যে, এমনকি সিঙ্গাপুরে, লসএঞ্জেলেস, নিউইয়র্ক, লন্ডনে বসবাসের জন্য তা বলাইবাহুল্য। পাচারের ঋণাত্মক ফাটল তাই বাড়ছেই।
খেলাপি ঋণ ও অর্থনৈতিক সংস্কার
খেলাপি ঋণ ঠেকাতে বড় ছাড় দিয়ে নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে ঋণ আদায় না বাড়লেও সাময়িকভাবে কমবে খেলাপি ঋণ। আর বিশৃঙ্খল হয়ে পড়বে ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এই নীতিমালা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত। গণহারে এমন সুবিধা কখনোই ভালো ফল দেয় না। খেলাপি ঋণ আদায়ে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। নতুন নীতিমালার ফলে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে এখন আড়াই থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ অর্থ জমা দিলেই চলবে। আগে যা ছিল ১০-৩০ শতাংশ। পাশাপাশি এসব ঋণ ৫-৮ বছরে পরিশোধ করা যাবে। আগে এসব ঋণ শোধ করতে সর্বোচ্চ ২ বছর সময় দেওয়া হতো। আবার নতুন করে ঋণও পাওয়া যাবে।পাশাপাশি খেলাপি ঋণে কী সুবিধা দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করার পুরো ক্ষমতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যাংক মালিকরাই ঠিক করবেন, কী সুবিধা পাবেন ঋণ খেলাপিরা। আগে বিশেষ সুবিধায় ঋণ নিয়মিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগত, যা স্বয়ং গভর্নর অনুমোদন করতেন। নতুন গভর্নর দায়িত্ব নিয়ে সেই ক্ষমতার পুরোটাই ব্যাংকগুলোর হাতে তুলে দিয়েছেন। নতুন নীতিমালার ফলে ব্যাংকের ঋণ আদায় আরও কঠিন হয়ে পড়বে। ঋণ নিয়মিত করার আগে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই ও খেলাপি হওয়ার কারণ পরীক্ষা করতে হবে। কেউ অভ্যাসগত খেলাপি হলে তার ঋণ নিয়মিত করা যাবে না। এসব গ্রাহকের ঋণ আদায়ে ব্যাংককে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যবসায়ীদের চাপে এ সিদ্ধান্তহয়েছে, তাই ব্যবসায়ীরা এতে লাভবান হবেন। তবে ব্যাংকের জন্য বড় চাপ তৈরি করবে। ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে পড়বে। এতে নতুন ঋণ কমে যাবে, নতুন উদ্যোক্তারাও ঋণ পাবেন না। বিদেশী ব্যাংক ও ঋণদাতা সংস্থাগুলো এসব ছাড় ভালোভাবে নেয় না। এর ফলে দেশীয় ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক ব্যবসায় কোনো প্রভাব পড়ে কিনা, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনঃ তফসিল করতে বিভিন্ন তদবির আসত। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর সেই সুবিধা দেওয়ার ক্ষমতা ব্যাংকগুলোকে দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনার দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব, বহির্বিশ্বে সম্প্রতি যুদ্ধাবস্থা প্রলম্বিত হওয়ার কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে। আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও শ্রেণিকৃত ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে ঋণ পুনঃ তফসিলীকরণ সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা জারি করা হলো।
শেষ কথা
বাংলাদেশের অর্থনীতি নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আর্থিক লেনদেনের ভারসাম্যে চাপ পড়েছে, যা রিজার্ভ কমিয়েছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। একই সময়ে একাধিক বিনিময় হার, সুদের হারের সীমা ঠিক করে দেয়া, ব্যাংক খাতে অপর্যাপ্ত তদারকি অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। মানুষের আয় বৃদ্ধির চেয়ে খাবারের দাম বেশি বেড়েছে, যা এ দেশের বহু পরিবারের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়েছে। নানা অনিশ্চয়তায় বেসরকারি বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধির গতি কমেছে। এ ছাড়া জ্বালানির উচ্চমূল্য, কাঁচামালের বাড়তি দাম এবং গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের অভাবে শিল্পোৎপাদন কমেছে। অর্থনীতির এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় কিছু স্বল্পমেয়াদি সংস্কার লাগবে। যেমন, নমনীয় বিনিময় হার প্রবাসী শ্রমিকদের বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোয় সহায়তা করবে, আবার প্রবাসী আয়ও বাড়বে। এছাড়া সুদহারের সীমা তুলে দেয়া ও মুদ্রানীতি শক্তিশালী করার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। একই সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ আর্থিক খাতের সংস্কারে ব্যাংক খাতে শক্তিশালী তদারকি প্রয়োজন। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তিনটি দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। প্রথমত: বাংলাদেশের রপ্তানি খাত একক পণ্যের ওপর বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল। তাই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে রপ্তানি খাতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। কারণ, রপ্তানি ও প্রবৃদ্ধির নতুন নতুন চালিকা শক্তি লাগবে। দ্বিতীয়ত: অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জনে কার্যকর বিনিয়োগ আনতে হবে। এজন্য আর্থিক খাতের সংস্কার করতে হবে। ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। শেয়ারবাজারকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের উৎস হিসেবে পরিণত করা উচিত। তৃতীয়ত,: যানজট ও পরিবেশের দুর্বল পরিস্থিতির কারণে নগরায়ণের সুবিধা নেয়া যাচ্ছে না। এছাড়া অবকাঠামো দুর্বলতা ও মানবসম্পদ নিম্নমানের কারণে প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্থহচ্ছে। এছাড়া কর্মসংস্থান তৈরি, লিঙ্গবৈষম্য কমানো, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এসব বিষয়ে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন চাপে পড়লেও আমরা বেশ আশাবাদী। কারণ, এ দেশের অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তি বেশ শক্তিশালী। যেমন, জনসংখ্যা বোনাস, তৈরি পোশাকের রপ্তানি বৃদ্ধি, বিশাল প্রবাসী গোষ্ঠী ইত্যাদি। সময়মতো সঠিক নীতি সংস্কার করতে পারলে আকাক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে।
লেখক: গবেষক ও অর্থনীতিবিদ
সারাবাংলা/এসবিডিই
ড. মিহির কুমার রায় পরিবর্তিত বিশ্বপরিস্থিতি ও বাংলাদেশ: খেলাপি ঋণ ও ব্যাংকিং খাত মুক্তমত