Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বঙ্গবন্ধুর চলচ্চিত্র ভাবনায় দেশপ্রেম

ড. মিহির কুমার রায়
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:৪৯

চলচ্চিত্র নিয়ে ভাবনা কিংবা গবেষনা তেমন গুরুত্ব পায়নি কোন আমলেই বিশেষত: শিক্ষার উপকরন হিসাবে যদিও বিনোদনের উপকরন হিসাবে এর কদর সবসময়ই ছিল। ইতিহাস থেকে দেখা যায়, প্রথম সিনেমা প্রদর্শিত হয়েছিল ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ২৮ ডিসেম্বর ১৮৯৫ খৃষ্ঠাব্দে ইন্ডিয়ান ব্যালন অব গ্রান্ড কেফি, প্যারিসে যার উদ্যোগক্তা ছিলেন আগষ্ঠা লুইমিরী। লুইমিরী বিশ্বের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এই দিনটি একটি স্মরনীয় ঘটনা এবং এই কোম্পানি পরবর্তিতে সিনেমাটোগ্রাফির মাধ্যমে সিনেমা প্রদর্শন করেন মুম্বাইয়ে ওয়াটশন হোটেলে ৭ জুলাই, ১৮৯৬ সালে যা অবিভক্ত ভারতের একজন উদ্যোক্তা এইচ, জে, প্যানেওয়ালার মাধ্যমে। তার পরপরই জে, জে, স্টিফেনশন প্রথম সিনেমা প্রদর্শন করেন কলকাতার হাতিবাগান স্টার থিয়েটারে ২৯ অক্টোবর ১৮৯৮ সালে, যা ছিল অবিভক্ত বাংলায় প্রথম সিনেমা প্রদর্শন যার সংগঠক ছিলেন ল্যানফও, মরিনও এবং অমৃত লাল সেন।

বিজ্ঞাপন

আবার দেখা যায়, বাংলাদেশের মানিকগঞ্জের কৃতিপুরুষ হিরালাল সেন বাংলার চলচ্চিত্রের ইতিহাসের প্রথম পথ প্রদর্শক এবং তিনি ১৮৯৮ সালে রয়্যাল বাইস্কোপ নামে একটি কোম্পানি গঠন করেন। তারপর তিনি বাংলাদেশের ভোলা জেলায় ৪ঠা এপ্রিল ১৮৯৮ সালে একটি প্রদর্শনির আয়োজন করেন মহকোমা প্রশাশকের ডাক বাংলোতে এবং এর পরপরি ঢাকার সদরঘাটে আবস্থিত ক্রাউন থিয়েটারে ১৭ এপ্রিল ১৮৯৮ সালে বর্ডফোর্ড সিনেমাটোগ্রাফ কোম্পানির আয়োজনে একটি সিনেমার প্রদর্শনির আয়োজন করেছিলেন। আবার ১৮৯৯ সালে হিরালাল সেন লন্ডনের উইক ট্রেডিং কম্পানির কাছ থেকে রয়্যাল বাইস্কোপ কম্পানী ক্রয় করে ফিল্ম এর কাজ শুরু করেছিলেন এবং ১৯০১ সালে তিনি চলমান ক্যামেরার মাধ্যমে তিনটি ড্রামা সিরিয়ালের কাজ শুরু করেছিলেন যেমন বঙ্কিমচন্দ্রের সীতা রাম, তারকানাথের সুবলা ও আলী বাবা আবার ২১ আগস্ট ১৯০৩ কলকাতা থেকে প্রকাশিত বাংলাভাষি পত্রিকায় মন্তব্য করা হয়েছিল যে৷ রয়্যাল বাইস্কোপ কম্পানী জবা কুসুম অয়েল নামে একটি ফটোগ্রাফির গ্রুপ নেয়, যা হিরা লাল সেনের প্রথম প্রচারমূলক ফ্লিম। শ্রী সেন তার জীবন দশায় ১২টি ক্ষুদ্রকায় ফিল্ম, ১০টি ডকোমেন্টারি ফিল্ম এবং ৩টি এডভারটাইজমেন্ট ফিল্ম তৈরি করেছিলেন। সময়ের আবর্তে মুম্বাই, কলকাতা ও মাদ্রাজে অনেকেই ফিল্ম ব্যবসায় আসেন এবং আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সত্যেন্দ্র নাথদের সঙ্গে ধরব নামে একটি সিনেমা তৈরী করেছিলেন যার পরিচালক, সংলাপ, সংগীত ইত্যাদি নিজ হাতে করেছিলেন, যা ছিল বাঙ্গালি মুসলমানদের কর্তৃক নির্মিত প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি।

বিজ্ঞাপন

এর পরপরই আসে ঢাকাইয়া চলচ্চিত্র যেখানে ঢাকার নবাব পরিবার ঢাকা ইষ্ঠ বেঙ্গল সিনেমাটোগ্রাফ সুসাইটি নামে একটি প্রোডাকশন হাউজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই প্রতিষ্ঠান দুটি ফিল্ম তেরী করে প্রদর্শন করেছিলেন যার নাম হলো যথাক্রমে: সুকুমারী (স্বল্প দৈর্ঘ্য ৪ রিল,১৯২৭-২৮ সাল) ও দি লাষ্ঠ কিস( র্দৈর্ঘ্য ১২ রিল,১৯৩১ সাল)। এ দুটিই ছিল শব্দ ও কথোপকথনবিহীন ছবি যার পরিচালক ছিলেন জগন্নাথ কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক অম্বোজ গুপ্ত। তখনকার সময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রখ্যাত ইতিহাসবিক অধ্যাপক রমেশ চন্দ্র মজুমদার দি লাষ্ঠ কিস শোটির শুভ উদ্বেদন করেছিলেন মুকুল সিনেমা হলে (যা বর্তমানে আজাদ সিনেমা হল) যা প্রায় একমাস ব্যাপি প্রদর্শিত হয়েছিল। এই নবাব পরিবার ১৯২৯ সালে অস্থায়ি ভাবে আজিমপুরে নবাব গার্ডেন নামে এবটি ষটুডিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারগর ১৯৪৭ এর ভারত বিভক্তি এবং পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের রাজধানী ঢাকা হওয়ায় নুতন করে সাংস্কৃতিক চর্চা শুরু হয় বিশেষ করে ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত মুসলিম উদ্যোগক্তা দের সহযোগিতায়। জনাব নাজির আহম্মদ কলকাতার অরোরা ফিল্ম ষ্টুডিও থেকে কারিগর ও যন্ত্রপাতি এনে মোহাম্মদ আলী জিন্নার উপর একটি ডকুমেন্টারী ছবি তৈরী করেছিলেন যা এপ্রিল-মে ১৯৪৮ সালে মুক্তি পায় যাকে বলা হয় প্রথম মুক্তি প্রাপ্ত ছবি পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশে)। জনাব আব্দুল জব্বার খান, জনাব মোদাব্বের ও জনাব মহিউদ্দিন ১৯৫৪ সালে ইকবাল ফিল্ম গঠন করেছিলেন এবং কাজ শুরু করেছিলেন কোন স্টুডিও কিংবা কোন ল্যাবরেটরি ছাড়াই। জনাব আব্দুল জব্বার খান ১৯৫৪ সালে মুখ ও মুখোশ ছবির কাজ শুরু করেছিলেন যা মুক্তি পায় ৩রা আগষ্ঠ,১৯৫৬ সালে যা বাংলা সিনেমার জগতে একটি উজ্জলতম পদক্ষেপ বলে বিবেচিত। সবাক চলচ্চিত্র হিসাবে যদি এটিকে ভিত্তি ধরা হয় তবে ৬০ বছর পাড় করেছে এ দেলের চলচ্চিত্র শিল্প া সেই সময় প্রয়োজন দেখা দিল একটি প্রাতিষ্টানিক কাঠামোর এবং যুক্ত ফ্রন্ট তখন পুর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকারের ক্ষমতায় আসিন যার বানিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী ছিলেন জাতীর জনক বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবর রহমান। এটি ১৯৫৭ সালরে কথা। যখন এ েেদেশ মাত্র যে কয়কেজন মানুষ চলচ্চিত্র নর্মিাণে চন্তিা-ভাবনা শুুর করছলিনে বঙ্গবন্ধুও তাদরে সহযাত্রী ছিলেনে। পাকিস্তান শাসনামলে চলচ্চিত্র সচেতন কয়েকজন ব্যক্তি এ দশেরে চলচ্চিত্র সর্ম্পর্কে নানা সমস্যার প্রসঙ্গ উত্থাপন র্পূবক বঙ্গবন্ধুর কাছে চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা প্রতষ্ঠিার অনুরোধ করছেলিনে। ইতোমধ্যে ১৯৫৬ সালে আবদুল জব্বার খাঁন নির্র্মিত এ দেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ র্দশকদের কাছে সমাদৃত হয়োিছল। ফলে চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা প্রতষ্ঠিাও অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু এই অনবারর্্িযকতাকে উপলব্ধি করেই চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা প্রতষ্ঠিার ব্যাপারে তৎকালীন আগ্রহী অনদের মতোই উৎসাহী হয়ছিলেন। যারা বঙ্গবন্ধুর কাছে চলচ্চত্রি উন্নয়ন সংস্থা প্রতিষ্ঠার তদবির করতে গিয়েছিলেন তাদের অবাক করে দ্রত সংশ্লিষ্টদের বসিয়ে ওর্য়াকংি পেপার প্রস্তুত করে দিতে বলেছিলেন। চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে এই উত্তেজনায় তারা দ্রুতই ওর্য়াকিং পেপার বঙ্গবন্ধুর কাছে জমা দেন। এফডিসি প্রতষ্ঠিার জন্য যাদের অদম্য আগ্রহ ছলি তাদরে অন্যতম ছলিনে নাজির আহমদ। তিনি লিখেছিলেন- আমার স্পষ্ট মনে আছে অধিবেশনের শেষ দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুিজবর রহমান ইপিএফডিসি ও ইপসিকি প্রতিষ্ঠার জন্য এক হাতে দুটি বিল পরিষদে অনুমোদনের জন্য পেশ করেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে বিনা বাধায় বিলটি পাস হয়ে যায়। তখন উৎফুিল্লত শেখ সাহেব বলেছিলেন ‘এফডিসি তো হয়ে গলে, আসগর আলী শাহকে চেয়ারম্যান বানিয়ে দিয়েছিও আবুল খায়েরকে এমডি। এখন চলচ্চিত্রেরে জন্য কাজ করেন গিয়ে।’ তার উৎসাহ না থাকলে বোধ হয় এদেশ এফডিসির জন্ম হতো না। আর হলেও হতো অনকে দেরিতে। বর্তমান বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রীও চলচ্চত্রি ভালোবাসেন। বঙ্গবন্ধুও ভালোবাসতেনে। জাতির পতিার হাতেই এফডিসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বাঙালির নিজস্ব শিল্প সংস্কৃতি র্চচায় তাঁর বৈচিত্রময় উদ্যোগরে একটি এফডিসি প্রতিষ্ঠা। যখন এদেশ  মাত্র কয়কেজন মানুষ চলচ্চিত্র নির্মাণে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছিলেনে বঙ্গবন্ধুও তাদরে সহযাত্রী ছিলনে। এফিিডিস প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এদেশ চলচ্চত্র নির্মাণ শুরু হলেও এই শিল্পটি র্সবদা সঠিক পথে চলতে পারেনি। স্বাধীন দেশেরে চলচ্চিত্র শিল্প নিয়েও বঙ্গবন্ধুর উদ্বিগ্নতা আমরা দেখেছি। পরিচালক আমজাদ হোসেন বলেছিলেন: ‘একদনি আমরা কয়েক জন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দখো করলাম। তাকে জানালাম, এই সময়ে কলকাতার কিছু ক্ল্যসিক বাংলা ছবি পেলে যেমন সত্যজৎি রায়, ঋত্বকিকুমার ঘটক, মৃণাল সনে- এ ধরনরে পরিচালকদের কিছু ছবি যদি আমরা দেখি তাহলে এ দেশের ছবির মান আরো উন্নত হবে। বঙ্গবন্ধু পাইপ টেনে বললেন, ওরা কি শুধু বাংলা ছবি দেবে? মনে হয় না, ঠকি আছে, আমি চষ্টো করে দেখছি। সাত দিনের মতো আমরা অপেক্ষা করলাম। দুই সপ্তাহ পর উনি ডাকলেন আমাদরে। আমরা গিয়ে দেখি উনি উত্তপ্ত। ঘন ঘন পাইপ টানছেন। একটা চিঠি আমাদের হাতে দিয়ে বললেন, ‘পড়ো’। নীরবেই আমরা চিঠিটিা পড়লাম। চিেিঠিত লেখা আছে, শুধু বাংলা ছবি নয়, হন্দি ছবিও নিতে হবে। হঠাৎ করে টান মেরেই চিঠিটিা আমাদের হাত থেকে নিয়ে গেলেন বঙ্গবন্ধু। তারপর ছিড়ে কুচি কুচি করে চিঠিটা ফেলে দিয়ে বললেন, কী বলছিলাম? শুধু বাংলা ছবি ওরা দেবে না। আমি এই বিধ্বস্ত বাংলাদেশ টাকে নতুন ভাবে গড়ার চষ্টো করছি, আর তোমরা একটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে নতুনভাবে তৈরি করতে পারবা না! যও যাও, যা আছে তাই দিয়ে শুরু করো। দুষ্ট ব্যবসায় বুদ্ধির বিপরীতে স্বাধীন দেশের চলচ্চিত্র শিল্পটাও স্বাধীনভাবে বিকশিত হতে পারেনি।

এফ,ডি,সি প্রতিষ্ঠার পর ফাতেহ লোহানী পরিচালিত প্রথম ছবি আকাশ আর মাটি(১৯৫৯)ও দ্বিতীয় ছবি আসিয়া মুক্তি পায় ১৯৬০ সালে যা তনানীন্তন পাকিস্তানে শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি হিসাবে পুরস্কিৃত হয়েছিল। তার পর ১৯৫৯ সাালে আরও মুক্তিপ্রাপ্ত চবি গুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল এ দেশ তোমার আামার, মাটির পৃথিবি ইত্যাদি। তারপর একে একে রাজধানীর বুকে (১৯৬০), হারানো সুর (১৯৬১), যে নদী মরু পথে (১৯৬১), কখনও আসেনি (১৯৬১), তোমার আমার (১৯৬১), জোয়ার এলো (১৯৬২), নতুন সুর (১৯৬২), সোনার কাজল (১৯৬২), সূর্য স্মান (১৯৬২), ধারাপাত (১৯৬৩), কাঁচের দেয়াল (১৯৬৩), নাচ ঘর (১৯৬৩), তালাশ (১৯৬৩), বন্দন (১৯৬৪), মেঘ ভাঙ্গা রোদ (১৯৬৪), মিলন (১৯৬৪), অনেক দিনের চেনা (১৯৬৪), সংগম (১৯৬৪), সুতরাং (১৯৬৪), আখেরিষ্টেশন (১৯৬৫), বাহানা (১৯৬৫), একালের রুপকথা (১৯৬৫), গুধুলিরপ্রেম (১৯৬৫), জানাজাানি (১৯৬৫), কাজল (১৯৬৫), মালা (১৯৬৫), নদী ও নারী (১৯৬৫), সাগর (১৯৬৫), সাত রং (১৯৬৫), ডাক বাবু (১৯৬৬), কাগজের নৌকা (১৯৬৬), কার বউ (১৯৭৬৬), মহুয়া (১৯৬৬), আয়না ও অবশিষ্ঠ (১৯৬৭), আনোয়ারা (১৯৬৭), আলীবাবা (১৯৬৭), চাওয়া পাওয়া (১৯৬৭), চকুরী (১৯৬৭), নবাব সিরাজদৌল্লা (১৯৬৭) ইত্যাদি। বিশিষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হান ১৯৬৪ সালে প্রথম একটি উর্ধু ছবি সংগম তৈরী করেছিলেন এবং পর্যায় ক্রমে তারই পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০), ষ্টপ জেনুসাইড (১৯৭২) ইত্যাদি মুক্তি পেয়েছিল। সেই সময়ে বাংলার লোকগাথা ভিত্তিক চলািচ্চত্র মনমুগ্ধকর ছিল। এর পরও ষাটের দশকে এদেশে অনেক ভাল ছবি তৈরৗী হয়েছিল যা প্রেক্ষাগৃহে বসে পরিবার নিয়ে দেখার মত। সেই সকল ছবির নায়ক নায়িকারার জুটি হিসাবে ছিলেন শবনম-রহমান, নাদিন-সাবানা, সুভাস দত্ত-কবরি, আজিম-সুজাতা, রাজ্জাক-সুচন্দা, সুলতানা জামান-আমীর হোসেন প্রমুখ।

স্বাধীনতত্তোর বাংলাদেমের চলচ্চিত্রকে যদি আমরা বিশ্লেষন করি তা হলে একটি মিশ্র ফলাফল লক্ষ্যকরি এবং বিচার বিশ্লেষনে সত্তরের দশকটি ছিল এই শিল্পের সোনালী যুগ যদিও এর পওে অনেক ভার ভাল ছবি তৈলী হয়েছে যেমন আদম সুরত, মাটির ময়না, আগুনের পরশমনি, শ্রাবন মেঘের দিন, ওরা এগার জন, গেরিলা, সংশপ্তক, নীল আকাশের নিচে, গোলাপী এখন ট্রেনে, বিন্দু থেকে বৃত্ত, ইত্যাদি। তারপর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রজোজনায় অনেক ভাল ছবি তৈরী হয়েছে যেমন পালঙ্ক, তিতাস একটি নদীর নাম, পদ্মা নদীর মাঝি, মনের মানুষ, শঙ্কচীল, দহন ইত্যাদি। তার পরপরও এখনও সঙ্কট কাটেনি বিভিন্ন পলিসি গত কারনে যা কোন ভাবেই আমাদের শিল্প সংস্কৃতির সাথে সহায়ক ছিল না। যার ফলে দর্শক বৃন্দ সিনেমা হল ভিত্তিক না হয়ে ঘর মুখী হয়েছে ভাল ছবির আসায় যা তারা টিবি সিরিয়েলের মাধ্যমে উপভোক করছে পরিবার নিয়ে বিশেষত কলকাতা ভিত্তিক বাংলা সিনেমাগুলোর বিষয়ে।

এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তন যুদ্ধের সময় তৎকালীন সরকার ভারতীয় হিন্দি/বাংলা সিনেমা পাকিস্তানে প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছিল যা এখনও বলবৎ রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫বছর পাড় হয়ে গেলেও এই নিষেধাগ্গার কোন সমাধান হয়নি অথচ উদার বাজার অর্থনীতির যুগে ভারতীয় পণ্য দেশের বাজার দখল করে রেখেছে কেবল শুধু চলচ্চিত্র বাদে যা বাংলাদেশের অগনিত দর্শকদের হতাশ করেছে। প্রটেকশনের নামে চলচ্চিত্রের শৈশবকে আমরা প্রলম্বিত করছি মাত্র, সাবালক হতে দেইনি এবং অগনিত দর্শকের অধিকার রয়েছে সিনেমা হলে গিয়ে বিভিন্ন ভাষার বিভিন্ন স্বাদেও চলচ্চিত্র উপভোগ করার জন্য যেখানে সুদুর আমেরিকা থেবে ছবি আমদানী হলে প্রতিবেশী বন্ধু প্রতীম রাষ্ট ভারতের ছবি কেন আসতে পারবে না। ২০০৬ সাল থেকেই খুদ পাকিস্তানে ভরতীয় চলাচ্চিত্র প্রদর্শন শুরু হয়েছে এবং ২০০৫ সালে যেখানে সারা পাকিস্তনে ২০টি সিনেমা হল ছিল, বর্তমানে তা দুশের অধিক অতিক্রান্ত করেছে,বড় বড় শহরে তৈরী হয়েছে মাল্টিপে¬কস,স্থানীয় চলচ্চিত্র নির্মানে এসেছে পরিবর্তন, যা পরোক্ষভাবে ভুমিকা রেখেছে ভারতীয় চলচ্চিত্র বাংলাদেশের ছেয়ে দুর্বল অর্থনীতির দেশ নেপালেও ১৮০টি সিনেমা হলের মধ্যে ৫৮টি সিনেপ্লেকস রয়েছে। বাংলাদেশে ১৯৯০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত যেখানে ১২০০ সিনেমা হল ছিল যা ২০২০ সালে দাড়িয়েছে ১৯৪টিতে ( সুত্র:ইউ,এন,বি নিউজ, সেপ্টেম্বর,২০২০) ।সরকার ২০১২ সালের ২ শে এপ্রিল এক নির্বাহি আদেশে চলািচ্চত্রকে শিল্প ঘোষনা করেছে যাতে উল্লেখ আছে অন্নান্য শিল্পের মতই যাবতীয় সুযোগ সুবিধা পাবে এই শিল্প। কিন্তু এই শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ঠ যন্ত্রপাতি আমদানীকাররা কোন সুযোগ সুবিধাই পাচ্ছেনা। চলচ্চিত্র শিক্ষায় সংকট এই শিল্পের বড় দূর্বলতা। সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে পাঠদান ও গবেষণা মাত্র শুু হয়েছে, যার সুফল পেতে আমাদর আরও অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে। কারন এই সকল শিক্ষার্থীরা কত জনই বা এই শিল্পের সাথে যুক্ত থাববে তা এখনও ভেবে দেখার বিষয়। সরকারের ফিল্ম আরকাইভ ও এ ইনষ্ঠিটিউট কি কাজ করছে তা বুঝা যায় না। দেশের নায়ক নায়িকারা যারা বর্তমানে এই শিল্পে কাজ করছে তাদের অনেকেরই প্রাতিষ্ঠানিক কোন প্রশিক্ষন নেই বললেই চলে। ঢাকার কবিরপুরে বঙ্গবন্ধু ফিল্ম ইনষ্ঠিটিউট করার কথ সরকারের রয়েছে যেখানে ভারতের পুনা ফিল্ম ইনষ্ঠিটিউট এর আদলে যদি করা যায় তা হলে চলচ্চিত্র শিক্ষা ও গবেষণা অনেক গতি পাবে। কারন চলচ্চিত্র হচ্ছে সংগীত, সাহিত্য, চিত্রকলা, আলোকচিত্র ইত্যাদির মৌলিক শিল্প মাধ্যমের একটি রূপ।

এখন দেশ কােনায় আক্রান্ত যার ফলে১৮ মার্চ,২০২০ থেকে সিনেমা হল বন্ধের সরকারি নির্দেশনা জারি হয়েছিল এবং প্রায় আট মাস পর খুলছে সিনেমা হল যা শুক্রবার ১৬ অক্টোবর,২০২১ থেকে হলগুলোতে সিনেমা প্রদর্শনীর অনুমতি দিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়। তবে অনুমতি মিললেও আশানুরূপ দর্শক না হওয়ার আশঙ্কায় ছবি মুক্তি দিতে চান না প্রযোজকেরা। আর নতুন ছবি না হলে অনেক মালিকই হল খুলবেন না। তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে সিনেমা হলের আসনসংখ্যা কমপক্ষে অর্ধেক খালি রাখার শর্তে এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’ কয়েক মাস ধরেই চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সরকারের কাছে আবেদন করে আসছেন সিনেমা হল খোলার জন্য হল খোলার অনুমতি মিললেও সিনেমা প্রদর্শনীর জন্য কতটা প্রস্তুত হল মালিকেরা কিংবা সিনেমা মুক্তি দিতে প্রযোজকেরা কতটা আগ্রহী, এ প্রশ্ন এখন চলচ্চিত্রাঙ্গনে। এখন প্রধানমন্ত্রী এই শিল্পের জন্য যে প্রনোদনা ঘোষনা দিয়েছেন তার সফল বাস্তবায়ন হউক- এই প্রত্যাশা রইল।

লেখক: অধ্যাপক ও গবেষক

সারাবাংলা/এসবিডিই

ড. মিহির কুমার রায় বঙ্গবন্ধুর চলচ্চিত্র ভাবনায় দেশপ্রেম মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর