Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমাদের ৭ই মার্চের ভাষণ কীভাবে বিশ্বের হলো

ইমরান ইমন
৭ মার্চ ২০২৪ ১৪:২৪

বাঙালির জাতীয়জীবনে অনেকগুলো স্মরণীয় দিন রয়েছে–এর মধ্যে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ অন্যতম একটি দিন। ৭ই মার্চকে ঐতিহাসিক বলা হয়েছে এ কারণে যে, ৭ই মার্চ আমাদের জাতীয় জীবনে এক অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সে ইতিহাস মুক্তির ইতিহাস, সে ইতিহাস স্বাধীনতার ইতিহাস। আর যে মহানায়ক সেই ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন তিনি হলেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বিজ্ঞাপন

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন ঢাকার রেসকোর্স ময়দান বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বিশাল সমাবেশে প্রায় ১০ লক্ষাধিক জনতার সামনে ভাষণ দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের পথ দেখিয়ে দিয়েছিলেন। ৭ই মার্চের ভাষণই ছিল মূলত মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা। কেননা এ ভাষণে উজ্জীবিত হয়েই এদেশের আপামর জনসাধারণ দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

১৯৭১ সালে ৭ই মার্চ এসেছিল এক ধারাবাহিক রাজনৈতিক আন্দোলনের পটভূমির ভিত্তিতে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দীর্ঘ ২৪ বছরের ইতিহাস ছিলো শোষণ-বঞ্চনা আর নির্যাতনের করুণ ইতিহাস। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সবসময় বাঙালিকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করতো। অবাক করার মতো বিষয় হলো- দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার ২৩ বছরের মধ্যে এখানে কোনো সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। নানা আন্দোলন সংগ্রামের মুখে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী অবশেষে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭০-এর ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ আসনের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পায় ১৬৭টি আসন বাকি ২টি আসন পায় পিডিপি। ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনে পশ্চিম পাকিস্তানের ভরাডুবি হয়। তারা নির্বাচনে জয়ী হওয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে অর্থাৎ আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে নানা টালবাহানা শুরু করে। উল্টো ক্ষমতা হস্তান্তর না করে তারা পূর্ব পাকিস্তান তথা বাঙালি নিধনে ষড়যন্ত্র শুরু করে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর এসব ষড়যন্ত্র বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তিনি তার বিচক্ষণতা দিয়ে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন কঠোর আন্দোলন ব্যতিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিকে তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিবে না। একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ও মুক্তির প্রতীক। তাই তিনি ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করেন, অধিকার আদায়ের আন্দোলনে মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশনা দেন।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ লক্ষাধিক মুক্তিকামী জনতার সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রায় ১৯ মিনিট ধরে দেওয়া কালজয়ী এই ভাষণ বিশ্বের অন্যতম সেরা রাজনৈতিক ভাষণ। পৃথিবীর অন্য সব সেরা ভাষণ ছিলো লিখিত ভাষণ। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণটি লিখিত ছিলো না। প্রায় ১৮ মিনিটের সেই কালজয়ী ভাষণটি বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন জনতাকে ‘আপনি’ সম্বোধনের মাধ্যমে। বলেছিলেন- ‘আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন’। এর দ্বারা ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধু ও জনতা উভয়ের দুঃখ-বেদনা আশা-আকাঙ্ক্ষা এক, কেউ কারোর চেয়ে কম জানেন না বা বোঝেন না। তিনি শুধু জনতার হয়ে তাদের দীর্ঘদিনের দুঃখ-বেদনা আশা-আকাঙ্ক্ষা অধিকারের কথা নিজের আপোসহীন কন্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন।

ভাষণটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভাষণের শুরুতে বঙ্গবন্ধু জনতাকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করলেও একপর্যায়ে জনতার সাথে এতটাই একাত্ম হয়ে পড়েন, জনতাকে এতটাই আপন করে নেন যে- তিনি জনতাকে ‘তুমি’ করে বলতে শুরু করেন। জনতাকে আপন করে নিতে পারাই তো একজন মহৎ নেতার বৈশিষ্ট্য। ভাষণের একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু বলেছেন- ‘তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইলো, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই দিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সব কিছু আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে।’

বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষকে চারটি শর্ত দিয়ে ভাষণের শেষাংশে বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিনি সেদিন মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা যেমন পরোক্ষাভাবে প্রদান করেন, আবার যুদ্ধে কীভাবে জয়ী হতে হবে সে ব্যাপারেও দিকনির্দেশনা দেন। স্বাধীন রাষ্ট্রের বৈধ সরকারপ্রধানের মতো এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘২৮ তারিখে কর্মচারীরা গিয়ে বেতন নিয়ে আসবেন। … যে পর্যন্ত আমার এই দেশের মুক্তি না হবে, খাজনা ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া হলো–কেউ দেবে না!’ অনেকের মনে আশঙ্কা ছিল, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা কিংবা গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এ আশঙ্কা হয়তো বঙ্গবন্ধুর নিজের মধ্যেও ছিলো। তাই তিনি আগাম সতর্কতার অংশ হিসেবে বলেন, ‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি তোমরা রাস্তাঘাট সবকিছু বন্ধ করে দেবে।’ অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বাঙালি যেন শত্রু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর প্রতি কোনোভাবেই নমনীয়তা প্রদর্শন না করে। জয় ছাড়া আর কিছু নয়–এটাই ছিলো ৭ মার্চের ভাষণের মূল সুর।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে ৭ই মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন। সামরিক আইন প্রত্যাহার, সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফেরত নেওয়া, নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা এবং যে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা- এ চারটি শর্ত দিয়ে একদিকে আলোচনার পথ উন্মুক্ত রাখলেন, অপরদিকে বক্তৃতা শেষ করলেন এই কথা বলে যে, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তিনি পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জনতাকে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করার আহ্বান জানালেন। একদিকে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, অন্যদিকে তাকে যেন বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে অভিহিত করা না হয়, সেদিকেও তার সতর্ক দৃষ্টি ছিলো। তিনি পাকিস্তান ভাঙার দায়িত্ব নেননি। তার এই কৌশলের কারণেই ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সেদিনের জনসভার ওপর হামলা করার প্রস্ততি নিলেও তা করতে পারেনি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও শেখ মুজিবকে ‘চতুর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে এক গোয়েন্দা কর্মকতা বলেন, শেখ মুজিব কৌশলে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে চলে গেল, কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারলাম না (ডয়েচে ভেলে, ৩১ অক্টোবর ২০১৭)।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিভিন্ন মন্তব্য করেছে। কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো বলেছেন, ‘৭ মার্চের শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুধু ভাষণ নয়, এটি একটি অনন্য রণকৌশলের দলিল।’ ‘আমি হিমালয় দেখিনি, তবে আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি হিমালয়ের সমতুল্য। আর এভাবেই আমি হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।’

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথ বলেছেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে যতদিন পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম থাকবে, ততদিন শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণটি মুক্তিকামী মানুষের মনে চির জাগ্রত থাকবে। এ ভাষণ শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণা।’

‘নিউজউইক’ সাময়িকীর বিখ্যাত রিপোর্টে বঙ্গবন্ধুকে অভিহিত করা হয়েছিলো ‘পোয়েট অব পলিটিক্স’ হিসেবে। ‘৭ মার্চের ভাষণ কেবল একটি ভাষণ নয় এটি একটি মহাকাব্য । এই মহাকাব্যের মাধ্যমে তিনি ‘রাজনীতির কবি হিসেবে স্বীকৃতি পান।’ ১৯৯৭ সালে টাইম ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘শেখ মুজিব ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমেই আসলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন’। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট ১৯৭১-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়- ‘শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণই হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার মৌলিক ঘোষণা। পরবর্তীকালে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে ঐ ভাষণেরই আলোকে।’

তাছাড়া আমাদের এই ৭ই মার্চের ভাষণ বৈশ্বিকভাবে একাডেমিক স্বীকৃতি পায়। খ্রিস্টপূর্ব ৪৩১ থেকে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার বছরের সেরা ভাষণ নিয়ে ২০১৪ সালে যুক্তরাজ্য থেকে ২২৩ পৃষ্ঠার একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস- দ্য স্পিচেস দ্যাট ইন্সপায়ার্ড হিস্টোরি’ নামের ওই গ্রন্থ সংকলন করেছেন জ্যাকব এফ ফিল্ড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার উইনস্টন চার্চিলের ভাষণ দিয়ে শুরু করা সংকলনের শেষ ভাষণটি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের। বইটির ২০১ পৃষ্ঠায় ‘দ্য স্ট্রাগল দিস টাইম ইজ দ্য স্ট্রাগল ফর ইন্ডিপেন্ডেন্স’ শিরোনামে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর এই ৭ই মার্চের ভাষণ। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ অন্তর্ভুক্ত করেছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ১২টি ভাষায় এই ভাষণ অনুদিত হয়েছে। তাই এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের প্রজন্মের পর প্রজন্ম জানতে পারছে দেশের দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে কীভাবে বঙ্গবন্ধু একটি ভাষণের মাধ্যমে ভারসাম্য রক্ষা করেছিলেন, কীভাবে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না দিয়ে, উস্কানিমূলক বক্তব্য না দিয়ে কীভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয় সেই শিক্ষা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। আর দেশে এখন এর উল্টো চিত্রটাই লক্ষ্য করা যায়। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ এখন শুধু ঘাপটি মেরে বসে থাকেন কখন একে অপরের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলবেন, কখন একে অপরকে কাঁদা ছোড়াছুড়ি করবেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে এখন রাজনৈতিক সহনশীলতা নেই বললেই চলে।

৭ই মার্চের ভাষণ বর্তমান প্রজন্মকে শেখায় কীভাবে অন্যায়-অবিচার, শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে হয়, কীভাবে মাথানত না করে অবিচল থাকতে হয়, কীভাবে এগিয়ে যেতে হয়, কীভাবে অধিকার আদায় করে নিতে হয়। এ ভাষণ আমাদের শিক্ষা দেয় কীভাবে গণতান্ত্রিক উপায়ে সামনে এগিয়ে যেতে হয়, অন্যের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হয়। ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও একজন যদিও সে হয়, তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব।’ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবিকতা আর অসাম্প্রদায়িকতার এক যুগান্তকারী দলিল এই ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর অবদান অপরিসীম। তিনি বলেছিলেন-‘তোমরা রক্ত দাও, আমি ভারতের স্বাধীনতা দেব’। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন-‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।’ হ্যাঁ, এটাই বঙ্গবন্ধু। অবশেষে তিনি এদেশকে শত্রু মুক্ত করতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর মতো এমন মহৎ নেতা এখনকার রাজনীতিতে আর দেখা যায় না।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ থেকে, তার রাজনৈতিক জীবনদর্শন থেকে আমরা কি শিক্ষা পেলাম? স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অতিক্রম করেও আমরা কেন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবিকতা ও অসাম্প্রদায়িকতার চর্চা করতে পারছি না? এর পেছনে কারণ কি? এখনই সময় আমাদের স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে ফিরে আসার।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু সশস্ত্র স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেও প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা হয়ে যায় ১৯৭১ এর ৭ই মার্চের ভাষণে। এদেশের আপামর জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে, স্বাধীন করে দেশকে। আমরা পাই লাল-সবুজের মানচিত্র খচিত অপার সম্ভাবনার একটি দেশ। ৭ই মার্চের জ্বালাময়ী ভাষণ আমাদের আন্দোলিত করে, আমাদের অনুপ্রাণিত করে। অন্যায়-অবিচার-অত্যাচার, জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এ ভাষণ আমাদের মাঝে শক্তি জোগায়।

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

আমাদের ৭ই মার্চের ভাষণ কীভাবে বিশ্বের হলো ইমরান ইমন মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

নতুন বার্সেলোনায় মুগ্ধ মেসি
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫৫

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর