নারী দিবসের ভাবনা
৮ মার্চ ২০২৪ ১৯:১৬
ফিনফিনে কাপড়ের ভাজেঁ, খোঁজে ফেরো নারী।কখনও মানুষ ভেবে সুযোগ দিও! দেখবে আমিও পারি। আজ ৮ ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস।সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হয় । নারীর কাজের স্বীকৃতি প্রদান, নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, নারীর সাফল্য উদযাপন ও নারীদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতি বছর দিনটি পালিত হয় বিশ্বজুড়ে। কোনও কোনও দেশে নারী শ্রমিক দিবস হিসেবেও দিনটি পালিত হয়।
নারী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ।’ নারীর উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নানাবিধ উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাতে এই প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিপাদ্যটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে জাতিসংঘ বলছে, কোভিড মহামারী এবং সংঘাতের কারণে ২০২০ সাল থেকে আরও ৭৫ মিলিয়ন মানুষ গুরুতর দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের সীমারেখায় থাকা ৩৪২ মিলিয়নেরও বেশি নারীর ভাগ্য পরিবর্তন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে অবলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতাহীনতা মোকাবিলায় নজর দেওয়ার জন্যই এবারের নারী দিবসের থিম নির্বাচন করা হয়েছে। এছাড়া নারীদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধেও বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ যথেষ্ট নয়। অথচ নারীদের জন্য সঠিক বিনিয়োগ উন্নত ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য অপরিহার্য।
নারীদের ওপর হওয়া বৈষম্য, নির্যাতনের বিরুদ্ধে করা প্রতিবাদে নারীদের জাগ্রত করাই নারী দিবস পালনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। নারী দিবসের রং নির্ধারিত হয়েছে বেগুনি ও সাদা। এ দুটি রং নির্দেশ করে সুবিচার ও মর্যাদা, যা দৃঢ়ভাবে নারীর সমতায়ন।
এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলো। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়: ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। বাংলাদেশেও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। অতঃপর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে।
একজন নারী কে প্রতিটি পরিবারের স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। নারীদের ভূমিকা ছাড়া কোনো পরিবার সুসংগঠিত হতে পারে না।
কিন্তু নারীরা কি সব পরিবার ও বাইরে যাথার্থ্য সম্মান পায়। নারীদের অধিকার আদায়ে প্রতিটি দেশেই এই দিবস পালন করা হলেও তা সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে কতটুকু প্রভাব ফেলে?
এসব বিষয়ে শুধু যে নারী রা হস্তক্ষেপ করলে হবে না তা স্পষ্ট। সবার আগে পুরুষদের মনুষ্যত্ব বিকাশ করা জরুরি। সমাজ ও রাষ্ট্রের লোকজনের যখন বিবেক শক্তি জাগ্রত হবে তখন তা প্রতিহত করা সম্ভব। নারী–পুরুষ ঐক্য প্রচেষ্টায় সুশীল সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। অসমতার চিন্তা থেকে সমতার ভাবনায় আসতে নারী-পুরুষ উভয়ের আত্ম-সচেতন হতে হবে।
একজন নারী কোনো প্রত্যাশা ছাড়াই সারা জীবন সংসারের কর্তব্য পালন করে। আপনি যখন একজন পুরুষকে শিক্ষিত করেন, শুধুমাত্র তিনি শিক্ষিত হন কিন্তু আপনি যখন একজন নারীকে শিক্ষিত করেন, তখন পুরো প্রজন্ম শিক্ষিত হয়। তাই সকল নারীকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ এর শুভেচ্ছা।
লেখক: শিক্ষার্থী
সারাবাংলা/এজেডএস