Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সবাই এগিয়ে এলে আমরাও পাব এমন মানুষদের যাদের কথা বলতে গর্ববোধ করব

ফিরোজ মুহাম্মদ জাহিদুর রহমান
১৩ মার্চ ২০২৪ ১০:১০

আমরা যখন ছোট, ৯০ এর গণ আন্দোলনের সময়, তখন সবাই বলা শুরু করল ছাত্ররাজনীতি খারাপ। ভালো ছেলেরা ছাত্ররাজনীতি করে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরপর শুরু হলো সরকারি চাকরি খারাপ, ভালো কেউ সরকারি চাকরিতে যাওয়া ঠিক না। এরকম হতে হতে বলা শুরু হলো ইঞ্জিনিয়াররা চোর, ডাক্তার কসাই আরও অনেক কিছু।

ব্যবসায়ীদের কথা নাই বললাম। বাংলাদেশে ব্যবসা করা প্রায় পাপের পর্যায়ে পড়ে। আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে বুক ফুলিয়ে বলবে কত বড় চাকরি করে, কিন্তু আপনি ব্যবসা করেন শুনে নাক সিটকাবে। আর এই পরিবেশে কেউ তো ভাবতেই পারেন না তার ছেলে বা মেয়েকে ব্যবসায়ী বানাবেন।

বিজ্ঞাপন

এভাবেই চলে আসছে, হয়ত চলে যাবে। কিন্তু একটা সময় দেয়ালে তো পিঠ ঠেকে যাবেই। আপনার মেধাবী ছেলেটা বা মেয়েটা যখন রাজনীতি, সরকারী চাকরি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা ব্যবসায়ী হবেন না, তখন তাদের থেকে তুলনামূলকভাবে কম মেধাবীরা সেই জায়গায় যাবেন এবং তারাই নেতৃত্ব দেবেন। আপনার এবং আর সবার ভালোমন্দের ভার তখন তাদের হাতেই থাকবে।

তখন হয়ত গালি দেবেন, আমাদের লিডারশিপ ভালো না। একটা ভালো নেতা থাকলে আমরা অনেক উন্নত হতে পারতাম। দিন আমাদের আরও অনেক সোনালি হত, শুধু একজন ভালো নেতা থাকলেই।

কিন্তু সেই সোনালি দিনের নেতাও আসে না, আফসোসও শেষ হয় না। হয়ত কোনোদিন শেষও হবে না যদি না নিজেদের দায়িত্ব আমরা নিজেরা না নেই। আমার মেধাবী সন্তানকে বা ভাইকে বা বন্ধুকে যদি উপযুক্ত নেতৃত্বে যেতে অনুপ্রাণিত না করি, নিজে যোগ্য হয়ে যদি সামনে এগিয়ে না আসি নেতৃত্ব দিতে, তাহলে আমাদের থেকে কম যোগ্য মানুষই আমাদের নেতা হবে।

হয়ত ভাবছেন, আমার কী? আমি এত চিন্তা করে কী করব। এরপর যখন দেখবেন দুর্নীতি বা লুটপাটের কারণে অথবা অপারদর্শিতা থেকে সমস্যা এবং ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দেশের বা নিজের প্রফেশনাল সেক্টরের, তখন কিন্তু সেই দাগ নিজের উপরও লাগে। আফসোস বা আক্ষেপ করা সহজ। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনার পলায়নপর মনোভাব আপনার উপরই আসবে, এবং আপনার পরের প্রজন্ম আরও কঠিন সময়ের ভেতর দিয়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন

আমি অনেক বড় কোনো পরিসরে কাজ করি না। বাংলাদেশ থেকে সফটওয়্যার তৈরি করি, পৃথিবীর বিভিন্ন যায়গায় বিক্রি করি। পৃথিবীর অনেক নামীদামী প্রতিষ্ঠান, সরকার, ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন আমাদের সফটওয়্যার এবং সার্ভিস নেয়। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির সংগঠন বেসিস আমাদেরই সংগঠন। সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেতে বেসিসের সদস্যপদ প্রয়োজন।

আইটি ইন্ডাস্ট্রির নেতৃত্বে থাকা ফাহিম ভাই, শোয়েব ভাই, মিতুল ভাই আমার বড় ভাইয়ের আসনে। উনাদের সঙ্গে সম্পর্ক একদমই ছোট ভাই ধরনের, আবদারের। কোনোদিন মাথাও ঘামাইনি।

রাসেল ভাই বা আলমাস ভাইদের খুব ভালো চিনি না। এমনিতেও কম টেকনিক্যাল মানুষের সঙ্গে আমার খুব ভালো বনে না। আর যারা শুধু মার্কেটিং বা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কথা বলেন, তাদের ব্যাপারে আমার আগ্রহ অনেক কম। তাই বেসিসের ব্যাপারেও আমার আগ্রহ প্রয়োজন অনুযায়ী বাড়ে বা কমে।

এখন হঠাৎ করে, বেসিস সফট এক্সপোর বিল এবং অডিট নিয়ে অনেক আপত্তি, কথা চলছে দেখছি। পরিচিত পরিসরে কথা বলতে গিয়ে একদিন বলছিলাম, আমরা যদি নিজেদের রিপ্রেজেন্টেশন নিজেদের মত মানুষকে না করতে দেই, তার বদলে ইভেন্ট স্পেশালিস্ট, ফাইনান্স স্পেশালিস্ট, দারুণ মার্কেটিয়ার শুধু এদেরই আমাদের রিপ্রেজেন্ট করতে দেই, তখন এসব নিয়েই চিনবে আমাদের সবাই। আর উনাদের থেকে এর বেশি কী আশা করতে পারি আমরা?

অন্য সবার মত আমিও হয়ত পলায়নপর, মালয়েশিয়ায় বসে এসব বলা হয়ত সহজ। কাজে নেমে করা হয়ত অনেক কঠিন। সবকিছুর পর এখন মাঝে মাঝে মনে হয়, অনেকের থেকে হয়ত টেকনলজি এবং এই রিলেটেড পলিসি বা স্ট্র‍্যাটেজি হয়ত আমি ভালোই বুঝি। কিন্তু সামনে এসে বলা হয়ে ওঠে না। আমার মত হয়ত আরও অনেকেই আছেন। সবাই যদি একটু একটু করে এগুই, হয়ত পরিবর্তন হবে নেতৃত্বেরও। আমরাও পাব এমন মানুষদের যাদের কথা বলতে আমরাও গর্ব বোধ করব।

সামনে বেসিসের নির্বাচন। খুব ভালো লাগত যদি কিছু সলিড টেকনোলজিস্ট মানুষ নেতৃত্বে আসত। যারা শুধু অন্য দেশকে কপি করেন না বরং অন্য সব কিছু দেখে, শিখে আমাদের জন্য যা ভালো তা প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। বাংলাদেশ আমেরিকা বা ভারত কোনোটাই না। আমরা আমাদেরই মত। তাই আমাদের ভালো থাকা ভালো হওয়ার জার্নি আমাদের মতই হবে। আশা করি এবার সাহসী কিছু মানুষ আসবেন যারা সেই পথ তৈরির কথা বলবেন।

অনেক তো হলো। এবার শুরু হোক নিজেদের জন্য নিজেদেরই এগিয়ে চলা।

লেখক: সিইও এবং চিফ সল্যুশন আর্কিটেক্ট, লুজলি কাপলড টেকনোলজিস

সারাবাংলা/আইই

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর