Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে ভারসাম্যহীন সমাজ

মো. আবদুল্লাহ আলমামুন
১৪ মার্চ ২০২৪ ১৬:১৬

শিল্প বিপ্লব হলো মূলত শিল্প ভিত্তিক অর্থনীতি। এটি ছিল এমন এক সময় যখন অধিক দক্ষ এবং স্থিতিশীল উৎপাদন প্রক্রিয়ার দিকে মানব অর্থনীতির বৈশ্বিক রূপান্তর ঘটেছিল। তার আগে কৃষি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। তারপর গ্রেট ব্রিটেন, ইউরোপ মহাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৭৬০ থেকে ১৮৪০ সালের মধ্যে ঘটেছিল প্রথম শিল্প বিল্পব। এর মাধ্যমে মানুষের কায়িক শ্রম হ্রাস পায়। উৎপাদন ব্যবস্থা সবকিছুতে যান্ত্রিক নির্ভর হয়ে যায়। ফলে নতুন রাসায়নিক শিল্প এবং লৌহ উৎপাদন প্রক্রিয়া, জল শক্তি এবং বাষ্প শক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার; মেশিন টুলস উন্নয়ন এবং যান্ত্রিক কারখানা ব্যবস্থার ব্যবহার শুরু হয়। এতে অল্প সময়ে উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। যার ফলে জনসংখ্যা এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উভয়ই বৃদ্ধি পায়। ধীরে ধীরে ১৮৭০ সালের পর থেকে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটতে শুরু করে, যাকে দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব বলা হয়। সে সময়কার উদ্ভাবনের মধ্যে নতুন ইস্পাত তৈরির প্রক্রিয়া, গণ-উৎপাদন, অ্যাসেম্বলি লাইন, বৈদ্যুতিক গ্রিড সিস্টেম, বড় আকারের মেশিন টুলস এবং বাষ্পচালিত কারখানায় ক্রমবর্ধমান উন্নত যন্ত্রপাতির ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

বিজ্ঞাপন

১৯৮০-র দশকের শুরুতে এসে সারা বিশ্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামে এনালগ প্রযুক্তির পরিবর্তে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহৃত হওয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে ২১শ শতকের প্রথম দুই দশকে অব্যাহত থাকে। এটি তৃতীয় শিল্প বিল্পব নামে পরিচিত। তবে এটাকেও ডিজিটাল বিপ্লব ও বলে। এসময় ডিজিটাল কম্পিউটারের সংখ্যা (বহুমুখী-উদ্দেশ্যে ব্যবহারযোগ্য ব্যক্তিগত কম্পিউটার এবং একই সাথে ব্যবসা ও শিল্পখাতে ব্যবহৃত বিশেষ কম্পিউটার) ও ডিজিটাল উপায়ে তথ্য নথিভুক্তকরণ অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব হলো একটি তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি, যা বুদ্ধিমত্তা, নানোবিজ্ঞান, কৌশলগত উন্নতি এবং ফিজিক্যাল সিস্টেমসে উত্তরাধিকার ধারণ করে। এই বিপ্লবে ডিজিটাল প্রযুক্তি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবোটিক্স, ইউনিভার্সাল কনেক্টিভিটি, ব্যক্তিগতোত্তর ডিজাইন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এই বিপ্লবে প্রযুক্তির অভ্যন্তরে আমাদের জীবন এবং কাজে পরিবর্তন হয়েছে। ডিজিটাল বিপ্লবকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব প্রথম সংজ্ঞায়িত করেন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের চেয়ারম্যান ক্লাউস সোয়াব তার লেখা ‘দ্য ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুলেশন’ গ্রন্থে। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এ গ্রন্থে তিনি চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। পরবর্তী সময়ে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এ ধারণার ব্যাপক প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেয়। যেখানে কম জনবল দিয়ে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে পণ্য উৎপাদন সহজ হবে। সেখান থেকেই মূলত চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ধারণাটির উদ্ভব।

বিজ্ঞাপন

এখন চতুর্থ শিল্প বিল্পব মানুষের জীবনে প্রভাবিত করছে। একটি দেশের সমাজ ব্যবস্থার অর্থনৈতিক পরিবর্তন দ্রুততর হচ্ছে। মানুষের কায়িক শ্রমের বিকল্প যান্ত্রিক শ্রম বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন, সংবাদের মাধ্যমে আমরা বিশ্বের নানা প্রান্তের খবর জানতে পারি। আর চতুর্থ বিপ্লবের যুগে মানুষ টেলিভিশনে খবর দেখে। আর সংবাদ পাঠিকা সুন্দর উপস্থাপনার মাধ্যমে খবর পরিবেশন করে। ফলে দর্শক বিমোহিত হয়ে উপভোগ করত। কিন্তু এখন সংবাদ পাঠ করছে অপরাজিতা নামক রোবট। এতে দৈহিক পরিশ্রম তো কমে যাচ্ছে, পাশাপাশি বেকারত্ব সৃষ্টি করছে। এখানেই শেষ নয়, পুঁজিবাদ আরো শক্তিশালী হচ্ছে। তারা অধিক পুঁজি উপার্জন করে কেন্দ্রীভূত করছে। এতে সমাজের খেটে খাওয়া মানুষ আরো শোষিত হচ্ছে। তারা উপযুক্ত কর্মক্ষেত্র পাচ্ছে না। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকার যুবক অনেক রয়েছে। শুধু নেই তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। ফলে নানা রকম অপরাধ বাড়ছে। উদাহরণস্বরুপ ঢাকা শহরে প্রতিনিয়ত চুরি, ছিনতাই, পকেটমার, চাঁদাবাজির মত অপরাধ বাড়ছে। কিন্তু তাদের যদি উপযুক্ত কর্মক্ষেত্র থাকলে তারা এমন অপরাধ করত না।

পক্ষান্তরে চতুর্থ বিপ্লবের ফলে মানুষের রুচি, আদর্শ ও মূল্যবোধেরও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। এখন সবাই আধুনিক চিন্তাভাবনা করছে। এতে তাদের জীবন, চিন্তাধারা ও মূল্যবোধও ছিলো সেভাবেই গড়ে ওঠে। শুধু ব্যক্তি জীবন নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনেও এমন প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে। এখন অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে শিল্পপতিরা কৃষিভিত্তিক জীবন ব্যবস্থা উপেক্ষা করে শিল্প প্রযুক্তির বিকাশে প্রভাবিত করেছে। তারা কৃষি জমিতে শিল্পকারখানা গড়ে তুলেছে। তৃতীয় শিল্প বিল্পবের পরে ঢাকার ধানমন্ডিতে শহরায়ন করা হয়। কিন্তু তার আগে ধানমন্ডিতে কৃষিকাজ করা হতো। তবে চতুর্থ বিপ্লবের যুগে মানুষের জীবনাচরণ ও মূল্যবোধের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান লক্ষ্য করা যায়। বর্তমান পৃথিবীর নিম্ন আয়ের মানুষ এখন এক ধরনের মানসিক চিন্তায় ভুগছে। এটা এমন মানসিক অবসাদ যে নিজের কাজেও নৈতিক সমর্থন পাচ্ছে না সব সময়। নিজেদের চোখের সামনে ইচ্ছার বিরুদ্ধেই ঘটে যাচ্ছে অনৈতিক কিছু। মূল্যবোধ নিয়ে তৈরি হচ্ছে বড় ধরনের নৈতিক সংকট। বড় বড় অফিসে দুর্নীতি বাড়ছে। ট্রানসপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর মতে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে ১০ নং। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের একটি বড় শঙ্কার দিক কর্মবাজারে সাধারণ মানুষের চাকরি হারানোর শঙ্কা।

একটি গবেষণায় বলা হয়েছে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মানুষ রোবট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তির কারণে চাকরি হারাতে পারে। এসব চাকরির বেশির ভাগই শ্রমনির্ভর। কর্মবাজারের এই পরিবর্তনের কারণে সব থেকে বড় ঝুঁকির মুখে পড়বে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলো। ফলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব পূর্ববর্তী বিপ্লবের মত জন্ম দেবে বৈশ্বিক বৈষম্য। তবে এই বৈষম্য হবে পুঁজিবাদ কেন্দ্র করে। এতে ধনীরা শোষণ করে আরো অর্থ উপার্জন করছে। কিন্তু নিম্ন শ্রেণির মানুষ আরো শোষিত হচ্ছে। তাদের আর্থিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না। বিশ্বের বিভিন্ন এনজিও চতুর্থ বিপ্লবের ২৯টি সমস্যাকে চিহ্নিত করেছে। যার ভেতরে রয়েছে বেকারত্ব, অর্ধ-বেকারত্ব, আয়ের বৈষম্য, নৈতিকতার সংকট, সামাজিক ভারসাম্যের বিনাশ ইত্যাদি। সুতরাং মানুষের কায়িক শ্রমের উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে ভারসাম্যহীন সমাজ মুক্তমত মো. আবদুল্লাহ আলমামুন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর