তরমুজ কেন প্রতি কেজি ৮০ টাকা?
১৪ মার্চ ২০২৪ ১৫:০৮
তরমুজ মোটামুটি সকলেরই পছন্দের একটি রসালো ফল। পবিত্র মাহে রমজানের ইফতার সূচিতে ওয়াটারমেলন (তরমুজ) জুস কমবেশি সবাই রাখতে পছন্দ করেন।
বর্তমানে দেশের অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থায় মোটামুটি সব রকমের ফলের দাম নাগালের বাইরে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তরমুজ কেন কেজি দরে বিক্রি হবে? বছর তিনেক ধরে দেশের বাজারগুলোতে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রায়ই ফলমূল কেজি দরে বিক্রির অবৈধ প্রথা চালু করে বসেছে। যা খুবই দুঃখজনক।
ক’দিন পর হয়তো শোনা যাবে– কলা, ডাব, কাঁঠাল, আনারস এসব ফলও কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এখন কথা হচ্ছে– কৃষক (চাষী) যেসব ফলমূল উৎপাদন করেন, তারা ব্যবসায়ীদের কাছে তা কেজি দরে বিক্রি করছেন কি? উত্তর অবশ্যই নাহ্। তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীরা কেজি দরে বিক্রি করবার দুঃসাহস পান কোথা থেকে?
তরমুজ ব্যবসায়ীরা কিনছেন শ হিসাবে (প্রতি পিস ১০০ টাকা দরে)। যেখানে তরমুজের প্রতি কেজির রোষানলে দেশের সর্বস্তরের ক্রেতারাই পিষ্ট হচ্ছে নিয়ম করে।
পবিত্র মাহে রমজান মাসে দেশের ফলমূলের বাজারগুলোতে রোজাদার ক্রেতারা ভীড় জমিয়েছে। এদিকে ধর্মপ্রাণ মানুষের সেই আবেগের সুযোগ লুপে নিচ্ছে দেশের অসাধু ব্যবসায়ী শ্রেণি। তরমুজ প্রতি কেজি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক দাম ৮০ টাকা প্রতি কেজি, কোনো নড়চড় নেই। এনিয়ে দেশের বাজারগুলোতে ক্রেতা, বিক্রেতা এবং আড়তদার বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে।
প্রতি কেজি ৮০ টাকা দরে, ১ পিস তরমুজ কিনতে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। দেশের ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ– সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা দামের তরমুজ ১০০০ টাকায় বিক্রির কোনো মানে হয় না। যেখানে তরমুজ চাষি প্রতি পিসে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পাচ্ছেন। অসাধু ব্যবসায়ীরা কেজি দরে বিক্রি করতে পারলে, চাষিরা কেন প্রতি কেজির দাম পাবেন নাহ্?
বাজারের এমন বেহাল দশায় হতাশ ক্রেতা সাধারণ। তরমুজ বাজারের এমন নাজুক পরিস্থিতিতে একজন সচেতন ক্রেতা সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৪০ বছরের উপরে আমার জীবনে বিগত ২-৩ বছর ধরে দেখতেছি তরমুজ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অনেক ছোট বেলায় হুজুরদের কাছে শুনছিলাম, ফেরাউন যে ছিলেন একজন, তিনি পেশায় তরমুজ ব্যবসায়ী ছিলেন। সে নাকি এরকম ওজন দিয়ে তরমুজ বিক্রি করতো। বর্তমানে আমাদের দেশের তরমুজ ব্যবসায়ীরাও কিন্তু ফেরাউনের মতো ওজন দিয়ে বিক্রি করছে। তাদের সাথে তো ফেরাউনের কোনো পার্থক্য দেখি না।
সম্প্রতি বাংলাদেশের এক মন্ত্রী বলেন– বরই দিয়ে ইফতার করেন, আপেল-আঙ্গুর লাগবে কেন? জনাব মন্ত্রী মহোদয়ের পরামর্শ মোতাবেক, দেশি বরই দিয়ে ইফতারের প্লেট সাজাতে গিয়েও এদেশের ৮০ ভাগ মানুষের রীতিমতো নাভিশ্বাস বেড়েছে। কারণ মন্ত্রী মহোদয়ের সিলেক্ট করে দেওয়া বরই নামক বস্তুটি কিনতেও ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে (প্রতি কেজি)। পেয়ারার দামও কাছাকাছি। দেশি কলার কথা বাদই দিলাম, সরু সাগর কলা কিনতেও কমপক্ষে ১২০ টাকা গুনতে হচ্ছে (ডজন প্রতি)।
তরমুজ কেজি ৮০ টাকা। তাই দেশের ৮০ ভাগ মানুষের ভাগ্যে তরমুজের শরবত মিলবে না, এটা সবাই স্বীকার করি এবং মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। ওই ৮০ ভাগ মানুষেরও তো শরবত খাওয়ার অধিকার আছে। তারা লেবুর শরবত খেতে চান, মন্ত্রী মহোদয়। কিন্তু লেবুর শরবত খেতেও যে দেশের ৮০ ভাগ মানুষের কপাল পুড়ছে। এদিকে লেবুর হালি কিনতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা গুনতে হচ্ছে। যা ক’দিন আগেও ছিল হালি ২০ টাকা। অন্যদিকে শসা-খিরা কেজি ১০০ টাকা, পাকা পেঁপে কেজি ২০০ টাকা।
মন্ত্রী মহোদয়ের পরামর্শ মোতাবেক, আপেল-আঙ্গুর বাদই দিলাম। কিন্তু আমার ইফতারের প্লেট সাজাতে বরই চাই। চাই লেবু শরবত ও খিরা-শসা। মাননীয় পরামর্শদাতা মন্ত্রী মহোদয়ের নিকট বিনীত আবেদন– অন্তত বরই, লেবু ও খিরা-শসা দিয়ে ইফতারের প্লেট সাজানোর সুযোগ করে দিলে এদেশের ৮০ ভাগ মানুষ আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।
সর্বোপরি– দেশের বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সরকারি সংস্থাগুলোর যথাযথ নজরদারি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে পরে দেশের সাধারণ মানুষ স্বস্তি ফিরবে। দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা– মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের নিত্যপণ্যের বাজারগুলোতে স্বস্তি ফেরাতে অচিরেই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করবেন।
লেখক: শিক্ষার্থী
সারাবাংলা/এসবিডিই