Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাজার ব্যবস্থাপনায় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব

ড. মিহির কুমার রায়
১৬ মার্চ ২০২৪ ১৮:০২

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার বিড়াল গল্পে লিখেছেন, ‘আমি যদি খাইতে না পাইলাম, তবে সমাজের উন্নতি লইয়া কী করিব?’ আসলেও বিষয়টি তাই। উন্নতি যদি আমার না খেয়ে থাকার কারণ হয় অথবা উন্নতি যদি আমার দুবেলা পেটে ভাত পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হয়, তবে সে উন্নতি দিয়ে কী হবে? কয়েক বছর ধরে দেশের নিত্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বগামী। পেঁয়াজ থেকে শুরং করে চাল, ডাল, তেল, আটাসহ এমন কোনো পণ্য খুঁজে পাওয়া যাবে না যার দাম বাড়েনি। প্রকৃতপক্ষে পণ্যের দাম বাড়লেও মানুষের আয় বাড়েনি যদিও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে দেশের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। এক ব্যক্তি বলছিল সে জীবনে দুবার কেঁদেছিল- একদিন যেদিন সে তার বাবাকে কবরে রেখে এসেছিল এবংআর একবার যখন ত্রা ছেলে ১০ টাকা চেয়েছিল সে তা দিতে পারিনি ।সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি এর গাড়ির পেছনে সাধারণ মানুষের দৌড়ানো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সাধারণ মানুষের কষ্ঠের কথা া দেশের মাথাপিছু আয় বাড়লেও সাধারণ মানুষের আয় যে বাড়েনি সেটা সকলের জানা। প্রকৃতপক্ষে কতটুকু ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে তা টিসিবির গাড়ির পেছনে ছুটে চলা মানুষদের দেখলেই খুব সহজেই প্রতীয়মান হয়। এবারই প্রথম দেখা যাচ্ছে শহরের চাকরিজীবী পরিবারের গৃহিণী ও অন্যান্য সদস্যকে ট্রাক থেকে পণ্য নিতে লাইন দিতে। অর্থনীতির হিসাবে গড় আয় ও প্রবৃদ্ধি বাড়লেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে মানুষের আয় বাড়েনি, ক্রয়ক্ষমতা বরং হ্রাস পেয়েছে। যেহেতু দ্রব্যমূল্য বাড়তি, টাকার মান কমছে, ফলে মানুষের প্রকৃত আয়ও কমতির দিকে। এ অবস্থায় কেবল পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতেই হিমশিম খাচ্ছে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত মানুষ। করোনাকালে দরিদ্রের সংখ্যা বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

এই ধরনের একটি সামাজিক প্রেক্ষাপটে বর্তমান সরকার পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। সরকার গঠনের পরই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন।পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ একাধিক মন্ত্রণালয় পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এক হয়ে কাজ করছে। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, আসন্ন রমজান মাসের আগে সব নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। রমজান উপলক্ষ্যে যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য মজুত আছে। আগে শুল্ক বেশি ছিল এখন সেটা কমিয়ে আনা হবে। এছাড়া ব্রাজিল ও বিভিন্ন দেশ থেকে চিনিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য সামগ্রী আমদানি করা হবে। টিসিবির মাধ্যমেও রোজায় সারা দেশে খাদ্যপণ্য বিতরণ করা হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে রমজানের সময় বাড়তি চাহিদাকে সামনে রেখে ৬টি নিত্যপণ্য আমদানিতে পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, এখনও ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে, এর থেকে উত্তরণে অন্তত ৬টি পণ্য যেমন ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, চিনি, মশুর ডাল, ছোলা ও খেজুর আমদানিতে যেন পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ করা হয় তা চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে। পণ্যগুলো হলো– ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, চিনি, মশুর ডাল, ছোলা ও খেজুর। গত বছর ৮টি পণ্যের ক্ষেত্রে এই অনুরোধ করা হয়েছিল। ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ডলারের কোনো কোটা চাওয়া হবে না। তবে এলসি খুলতে ডলার সরবরাহ বাড়ানোর বিষয়ে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব ভোগ্যপণ্য আমদানিতে বেসরকারি ব্যাংকগুলো যেন কম বা শূন্য মার্জিনে এলসি খোলে সে বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। রমজান উপলক্ষে সাধারণ সময়ে কিছু পণ্যের যে চাহিদা থাকে, তখন সেটা দ্বিগুণ হয়ে যায়। বেশির ভাগ পণ্যই দেড় থেকে দ্বিগুণ বেশি চাহিদা থাকে। আর সারা বছরে খেজুরের যে চাহিদা তার অর্ধেকটাই লাগে রমজানে। শুল্ক বাড়ার কারণে খেজুর আমদানিতে সমস্যা হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন । বিষয়টি নিয়ে এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিনিয়র সচিব বলেন আমদানিমূল্যের ওপর নির্ভর করে পণ্যের দাম। জাহাজে আনতে কত খরচ হয়, বীমায় কত দিতে হয় ইত্যাদি হিসাবনিকাশ করে দাম নির্ধারণ হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি থাকলে এখানেও দাম বেশি হবে, কম হলে কম হবে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভোজ্যতেল ও চিনির দাম আন্তর্জাতিক বাজারে স্থিতিশীল আছে। ডাল, ছোলার দামও স্থিতিশীল। রমজানের প্রথম সাত দিন ভোক্তারা একটু বেশি কেনাকাটা করেন। এ কারণে তখন দাম একটু বেশি হয়ে যায়। ভোক্তাদেরও এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। রোজানির্ভর পণ্যের এলসি খুলতে এরি মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ঋণ যেমন সরবরাহ ঋণ বা সায়াপ্লায়ার্স ক্রেডিট, ট্রেড ক্রেডিট বা বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় রোজানির্ভর পণ্য আমদানির এলসি খোলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছে।ওই সময়ের মধ্যে এসব পণ্য আমদানিতে ঋণনির্ভর এলসি খোলা যাবে। এছাড়া যেসব নিত্য বা রোজানির্ভর পণ্য ইতোমধ্যে আমদানি হয়েছে বা এলসির দায় পরিশোধের সময় এসেছে সেগুলোর দেনা ব্যাংক বা উদ্যোক্তারা পরিশোধের জন্য ডলারের সংস্থান করতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে জোগান দিচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যে দেশে উৎসব হোক কিংবা দুর্যোগ; জিনিসপত্রের দাম অন্য সময় অপেক্ষা বাড়বে; এটা একদম অবধারিত। মালিক পক্ষ দয়াপরবশ হয়ে যে পর্যন্ত বাড়াতে চান সেই পর্যন্তই তা বাড়বে। কমানোর সাধ্যি কারো নাই। ঘোষণা দিয়ে, না দিয়ে; এবং এমনকি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা উপেক্ষা করেও আগে থেকেও বাড়ানোর এক অন্তিম ক্ষমতা তাদের। নিয়ন্ত্রণের কোনো ক্ষমতা নেই কারোর। দেখা যায়, যে সময়টাতে মানুষের সংকট প্রকট, সে সময়ে যে যে পণ্য অপরিহার্য, সেগুলোর দাম হাতের নাগালের বাইরে যাবেই। দাম তার নিজের ইচ্ছার বাইরে কারো কথায় কমে না। দ্রব্যমূল্যের র্র্ঊধ্বগতি এখন এমন স্বাভাবিক ও সহনীয় পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, এটার প্রতিকার অপেক্ষা, কোনো পণ্যের দাম কত এবং কোন পণ্য কতটুকু কেনা যাবে সেদিকেই মানুষের মূল আগ্রহ। বলার অপেক্ষা রাখে না, মূল্যস্ফীতি ইতোমধ্যে জনজীবনে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করেছে, নিত্যপণ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির প্রভাব নিম্নআয়ের মানুষকে চরম দুর্দশায় ফেলেছে। এমনিতেই করোনার কশাঘাতে চাকরিহারা, বেকার ও আয়-রোজগার কমে যাওয়া জনগোষ্ঠী দৈনন্দিন খরচের টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন, তার ওপর মূল্যস্ফীতির চাপে বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছে অনেক পরিবার। এ অবস্থায় যে কোনো উপায়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার না পারলে মুদ্রার বিনিময় হার, আমদানি ও রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে । বস্তুত করোনা কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসার পর বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী সবকিছুর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। । মূল্যস্ফীতি বাড়লে ধনী আরও ধনী হবে যার ফলে সরকারি পর্যায়ে বেশকিছু নীতি পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়বে; যেমন ব্যাংকের সঞ্চয় সুদ ও ঋণের হার পরিবর্তন ইত্যাদি।

রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ব্যবস্থা নেওয়াসহ প্রধানমন্ত্রী ১৫ নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে দেশের সব পৌরসভার মেয়র ও প্রশাসককে চিঠি পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। । চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সরকারের বর্তমান মেয়াদের প্রথম মন্ত্রিসভা বৈঠকে সবার প্রতি প্রধানমন্ত্রী কতিপয় নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন নিয়মিত পাঠানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। এতে উল্লেখ করা হয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাওয়া আধা-সরকারি পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, গত ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সরকারের বর্তমান মেয়াদে প্রথম মন্ত্রিসভা-বৈঠকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত সকলের প্রতি প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন : ১) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এবং অংশীজনের সঙ্গে সমন্বয় করে মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, ২) পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, ৩) নির্বাচনী ইশতেহার ২০২৪-এ বর্ণিত প্রতিশ্রুতি গুলো বাস্তবায়নে সকলকে আন্তরিকতার সঙ্গে সমন্বিতভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।মন্ত্রণালয় বা বিভাগগুলো জাতীয় বাজেট প্রণয়নকালে নির্বাচনী ইশতেহার ২০২৪ বিবেচনায় রাখবে, ৪) কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য পণ্য সংরক্ষাণাগার নির্মাণে অগ্রাধিকার দিতে হবে, (৫) স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চারটি স্তম্ভ স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্মার্ট জনগণ নিশ্চিত করতে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় বা বিভাগে করণীয় চিহ্নিত করে তা বাহমশবায়ন করবে, ৬) নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রকল্পের উপকারিতা বা দেশের জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিদেশী ঋণ বা সহায়তা গ্রহণকালীন যথাযথভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। এছাড়া, চলমান প্রকল্পগুলো বিশেষ করে যেগুলোর বাস্তবায়ন সর্বশেষ পর্যায়ে রয়েছে সেগুলোর প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমাপ্ত করতে হবে, ৭) সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।দুর্নীতি প্রতিরোধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করতে হবে, ৮) সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রকৃত উপকারভোগীর কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে, ৯) সরকারের শূন্য পদগুলোতে দ্রংত জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, ১০) নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে, ১১) রপ্তানি বহুমুখীকরণ, নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধান ও প্রবেশে সহায়তা করতে হবে, ১২) গার্মেন্টস সেক্টরের মতো চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং কৃষিজাত পণ্য বিষয়ক শিল্প বিকাশে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, ১৩) শিক্ষাকে কর্মমুখী করার লক্ষ্যে আইসিটি শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে, ১৪) যুব সমাজকে খেলাধুলা এবং শিল্প সংস্কৃতি চর্চায় উৎসাহ দেওয়ার মাধ্যমে তাদের মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে বিরত রাখতে হবে এবং ১৫) অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতার বিরুদ্ধে সমন্বিতভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। বিগত ২৮ ফেব্যুয়ারি জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজমের প্রশ্নের লিখিত জবাবে সরকার প্রধান বলেন নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ।এই লক্ষ্যে সরকার নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সবধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিকে অনেকাংশে সংযত করার চেস্টা অব্যাহত রয়েছে, তবে, বিশ্ববাজারের কয়েকটি পণ্য যেমন জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, গম, সারসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়া দেশে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে। আসন্ন রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য-সামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণসহ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে।’

এসবই ইতিবাচক উদ্যোগ কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, বাজারে এর প্রভাব খুবই কম বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর আগে গঠিত টাস্কফোর্স দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তেমন প্রভাব রাখতে পারেনি। বাজার পরিদর্শন আর কিছু ব্যবসায়ীকে জরিমানা করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, যা অতীতে দেখা গেছে। এক্ষেত্রে যথাসময়ে পণ্যের জোগান নিশ্চিত করার মাধ্যমে কারসাজি বন্ধ করা সম্ভব। এবারে গঠিত উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্সের কার্যক্রম দৃশ্যমান হওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে যা করা প্রয়োজন তা হলো এক: চাল ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্য উৎপাদনের যে হিসাব দেয়া হয়, তা বাস্তবের সঙ্গে কম সংগতিপূর্ণ যার জন্য বার্ষিক কী পরিমাণ চাল ও অন্যান্য পণ্য আমদানি করতে হবে সে ভাবেই আমদানির ব্যবস্থা করা দরকার , মজুদদারির বিষয়ে কড়া তদারকি বজায় রাখতে হবে এবং বাজারে মূল্য নির্ধারণ ও তা স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারেও সরকারি নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে হবে ;দুই: । সামনের দিনগুলোয় আরো বেশি পণ্যসামগ্রীর উচ্চমূল্য ঘটতে পারে। কারণ মূল্যস্ফীতি এখন একটা বৈশ্বিক বাস্তবতা হয়ে উঠেছে। বিশ্বে সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হয়েছে, দেশে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে, কাঁচামালের দাম বাড়ছে, বিশ্বের নানা প্রান্তে যুদ্ধ হচ্ছে বা হবে হবে অবস্থা চলছে, তেলের দাম বাড়ছে, আমদানিকারকদের আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছে। বিশ্বে গত ৩০ বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি এখন ওপরের দিকে। একসময় প্রায় ‘শূন্য মূল্যস্ফীতি ছিল ও বৈশ্বিক এ প্রবণতার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। কারন এরই মধ্যে বাংলাদেশে যে মূল্যস্ফীতি ঘটে গেছে, এ পরিস্থিতিটা কীভাবে মোকাবেলা করা হবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে নিচের দিকের মানুষের আয় বৃদ্ধির সুযোগ সীমিত যারা অনেকে সঞ্চয়ের ওপর নির্ভর করে কোনো রকমে চলছে যার অর্থ হচ্ছে অর্থনীতিতে যে পরিমাণ আয় উৎপাদন হচ্ছে, তার সঙ্গে সমাজের এই শ্রেণীর মানুষের কোনো সংযুক্তি নেই। এখন মূল্যস্ফীতির কারণে তাদের দুর্ভোগ কীভাবে কমানো যায় সেদিকে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের করণীয় হচ্ছে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি আরো বাড়ানো যেমন উপজেলা , ইউনিয়ন সহ গ্রামগঞ্জের , পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা চাঁদা বাজার তদারকি কার্যক্রম শক্তিশালী করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া দরকার। পণ্যের সরবরাহ যাতে যথেষ্ট থাকে, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। একচেটিয়া প্রভাব খাটিয়ে বা পণ্যের অবৈধ মজুদের মাধ্যমে কেউ যাতে কোনো পণ্যের বাজার অস্থির করতে না পারে, সেজন্য নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ।বাজির শিকার না হন সেদিকে নজর দিতে হবে।; তৃতীয় : একটি গবেষনার ষলাষলে দেখা গেছে যে বর্তমান বাজার ব্যবস্থাপনায় সমস্যা রয়েছে যার জন্য বাজার তদারকি কার্যক্রম শক্তিশালী করতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, একচেটিয়া প্রভাব খাটিয়ে বা পণ্যের অবৈধ মজুদের মাধ্যমে কেউ যাতে কোনো পণ্যের বাজার অস্থির করতে না পারে, সেজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে; চতুর্থত : একটা বাজার কারসাজি বন্ধ করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ হচ্ছে বাজার কারসাজির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া। কিছুদিন আগে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে হাইকোর্টে একটি রিটে হাইকোর্ট বলেছেন, কখনো কোনো কারসাজির ঘটনার বিরুদ্ধে লক্ষণীয় আইনি পদক্ষেপ দেখা যায় না।আসলে এ দেশে যখনই দ্রব্যমূল্যের কারসাজি করে বিরাট অঙ্কের টাকা লোপাট করা হয়েছে, তখনই তার হিস্যা পৌঁছে যায় বহুদূর। তাই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে এ দেশে । সর্বশেষে: সবশেষে বলতে চাই, যে সময় সাধারণ মানুষের আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে এবং দারিদ্র্যহারে উল্লম্ফন ঘটেছে, সেসময় মূল্যস্ফীতি তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে। বিশেষ করে গরিব ও অতি গরিবরা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। তাই মূল্যস্ফীতি হ্রাসসহ সাধারণ মানুষের আয় বৃদ্ধির জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া জরুরী ।

লেখক: গবেষক, অর্থনীতিবিদ

সারাবাংলা/এজেডএস

ড. মিহির কুমার রায় বাজার ব্যবস্থাপনায় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর