নিত্যপণ্যের দামে আগুন, বাবারা ভালো নেই
১৯ মার্চ ২০২৪ ১৩:৩৫
সেদিন বাবাকে দেখলাম, বাজারের থলিটা হাত থেকে রেখে কেমন জানি হাপাচ্ছেন, বিবর্ণ চেহেরাটা দেখে আমিও জিজ্ঞেস করছিলাম কি হয়েছে বাবা?
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বাবা উত্তর দিল, নারে বাবা কিছুই হয়নি। বাইরে যে রোদ। তাই এ আর কি…
বাবার কথাটিতে কেমন জানি, রহস্য ছিলো! বাজার থেকে ফিরে কপালে বাবার এই চিন্তার ভাজ, হতাশার রেখা, কখনো রোদের তেজে পুড়ে কষ্ট পাওয়ার নয়, বরং ব্যবসায়ীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদীর মূল্যে বাবাদের অসহনীয় যন্ত্রণার প্রতিফলন।
রমজান মাস, তার ভিতরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যে দাম, এতে করে একটা পরিবার চালাতে বাবাদের কতই না কষ্ট করতে হচ্ছে তা কেবল বাবারাই বুঝবে। বাবারা হয়তো পরিবারের সদস্যদের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে যে কষ্টটা করে যাচ্ছেন, তা নিঃসন্দেহে অনেক যন্ত্রণার।
একটা সময়ে যে জায়গায় জিনিসপত্রের দাম ছিলো রমজান মাসে এসে তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। কেমন জানি, রমজান মাস আসলেই ব্যবসীরা এই দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে পেলে। কেন এই নির্বিচার বাবাদের প্রতি, সাধারণ মানুষের প্রতি। ব্যবসীরা কোন উদ্দেশ্য হাসিলের তরে এই কাজ করতে বাধ্য হয়? তা হয়তো সাধারণ মানুষের কাছে অস্পষ্ট নয়। নিশ্চয়ই এর পিছনে রয়েছে, নানা সিন্ডিকেট চক্রের কালো হাত।
অথচ, পরিসংখ্যান দেখলে বুঝা যায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়েছে। কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি কিনতে হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। পাশাপাশি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে সোনালি মুরগি।এছাড়াও সোনালি মুরগির দাম কোথাও কোথাও সাড়ে ৩০০ টাকাও চাওয়া হচ্ছে। এদিকে বাজারে নতুন দামের সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের বোতল এলেও এখনো এক ও দুই লিটারের বোতল পাওয়া যাচ্ছে না। তাতে অনেক খুচরা ব্যবসায়ী নির্ধারিত দর লিটারে ১৬৩ টাকার চেয়ে বেশি রাখছেন। যা খুবই অমানবিক ও নিষ্ঠুরতার।
গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ৬০-৭০ টাকা কেজির বেগুন এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। আলুর দামও কেজিপ্রতি ৫ টাকার মতো বেড়ে ৩৩ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর গত সপ্তাহে কাঁচা মরিচের দাম ১০০ টাকার নিচে থাকলেও এ সপ্তাহে তা শতক ছাড়িয়েছে। দাম লাফিয়ে বাড়ছে লেবুরও। আকারভেদে হালিপ্রতি লেবুর দাম উঠেছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। গত সপ্তাহে যা ছিল ২০ থেকে ৩০ টাকা। এভাবেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। যা হাতের নাগালের বাইরে।
এভাবে চলতে থাকলে পুরোদেশে যেন দুর্ভিক্ষ নেমে আসবে। না খেয়ে মরতে হবে মানুষদের। অথচ, যেখানে বাবারা খাবারটা জোগাড় করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে সেখানে পরিবারের অন্যান্য ভরণপোষণ পূরণ করতে যেন তাদের কষ্টের সীমানা থাকবে না। হয়তো এতে বিত্তশালীদের কোনো অনুভব কিংবা উপহাসের মনে হলেও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সকল বাবাদের খুব অসহনীয় যন্ত্রণার শিকার হতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের এই আচরণ, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আকাশ ছোঁয়া দামে কোনো টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের। এরা মনে করছে তাদের দমানোর কেউ নেই। তারা এই সাহস কিংবা এই নির্ধারণ করার পিছনে কাদের হাত রয়েছে নিশ্চয়ই তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখতে হবে। বলতে গেলে বাজারে সরকারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে সেই উদ্যোগ তেমন দৃশ্যমান হচ্ছে না। যার প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমতো দরদাম নির্ধারণ করছে। তবে এদের দমানোর কি কেউ নেই? এরা এভাবে জিনিসপত্রের দাম নির্ধারণ করে দিলে, ইচ্ছেমতো দরদামে জিনিসপত্র বিক্রি করলে সাধারণ মানুষরা কিভাবে তা কিনে খাবে? এদের চিহ্নিত করা হোক, চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক। পাশাপাশি সিন্ডিকেট চক্রের কালো হাত থেকে রক্ষা করা হোক ব্যবসায়ীদের। তবে বাঁচবে মানুষ, বাঁচবে দেশ। অন্যথায় না খেয়ে মরতে হবে মানুষদের।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই
তৌহিদ-উল বারী নিত্যপণ্যের দামে আগুন- বাবারা ভালো নেই মুক্তমত