Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে পণ্য বর্জন

মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
১৯ মার্চ ২০২৪ ১৪:১৫

জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ১০/২০ বছর আগে অথবা ৫০/১০০ বছর আগে কোনো জিনিসের দাম যা ছিল বর্তমানে সেই জিনিসের দাম অনেক বেশি হবে- এ কথা আমরা সবাই জানি। যুগের চাহিদার সঙ্গে একটু একটু করে কোনো জিনিসের দাম বাড়লে সেটা মানুষের গা সহা হয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ করে কোনো জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি পেলে তার সাথে মানিয়ে নেয়া স্বাভাবিক ভাবে কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আর সেটা যদি হয় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য তাহলেতো কষ্টের সীমা নেই।

বিজ্ঞাপন

একই সঙ্গে সকল জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেলে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করে। মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের জন্য বাড়তি দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জীবনধারণ আরো কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যায়। কেননা হঠাৎ করে জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও হঠাৎ করে তাদের আয় বৃদ্ধি হয় না। যারা বড়লোক, বড় ব্যবসা বা বড় চাকরি করে, যাদের অবৈধ ইনকাম আছে তাদের কথা আলাদা। বেশিরভাগ মানুষেরই আয় নির্দিষ্ট একটি অঙ্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং তা দিয়েই তাদের মাস পার করতে হয়।

বিজ্ঞাপন

নানান কারণেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হতে পারে। প্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন না হওয়া, উৎপাদন বা মজুদ নষ্ট হয়ে যাওয়া, বিদেশ থেকে হঠাৎ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এসবের সঙ্গে মানুষ নৃত্য লড়াই করেই টিকেট আছে। করোনা পরবর্তী সময়ে বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা। দেশীয় বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে- এ কথা যেমন সত্য, তেমনি একথাও সত্য যে, জিনিসপত্রের দাম এখন যে পরিমাণ বেড়েছে তা শুধু করোনার কারণে বাড়েনি।

বেড়েছে আমাদের উৎপাদন, আমদানি ও বিপণন ব্যবস্থা সুষম প্রক্রিয়া না থাকার কারণে। এর জন্য অনেকটাই দায়ী আমাদের দেশের এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। তাই আমরা যখন বুঝতে পারি যে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বৃদ্ধি করছে অথবা পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বৃদ্ধি করছে কিংবা মানুষের অত্যধিক আগ্রহের কথা মাথায় রেখে তারা দাম বৃদ্ধি করেছে। তখন এর জবাব দিতে সংশ্লিষ্ট পণ্য বর্জন করার কোনো বিকল্প নেই।

বিভিন্ন উৎসব, পার্বণেও সংশ্লিষ্ট পণের দাম বৃদ্ধি করা আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের অত্যন্ত বাজে মানসিকতা। অদূর ভবিষ্যতে সকল ব্যবসায়ীরা দেশে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ লাগিয়ে দিতে পারে। কোনো একদিন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের গৃহযুদ্ধ বেঁধে গেলেও অবাক হবো না। এসব মাথায় রেখে অসাধু ব্যবাসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকার ও প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কঠিন আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের ব্যবস্থা নিতে হবে।

অসাধু ব্যবাসায়ীদের অপকৌশল দমনে দেশের সাধারণ মানুষদেরও সচেতন হতে হবে। আমরা যেদিন থেকে বুঝতে পারব, যে সকল পণ্যের হঠাৎ করে দাম বেড়ে যায়, সে সকল পণ্য ক্রয় করা বন্ধ করে দিতে হবে এবং তার বিকল্প হিসেবে অন্য পণ্য ব্যবহার করতে হবে অথবা সেই পণ্য পরিমাণে কম ক্রয় করতে হবে- সেদিন থেকে এ দেশের ব্যবসায়ীরা অসাধু উপায়ে পণ্য মজুদ করে দাম বাড়াতে পারবে না। তারা হঠাৎ করে কোন জিনিসের দাম অত্যধিক বেশি রাখতে পারবে না।

সাধারণ মানুষ ক্রয় করার কমিয়ে দিলেই ব্যবসায়ীরা গুদামের ভেতর লুকিয়ে রাখা রাখা পণ্য বের করতে শুরু করে। দামও কমিয়ে দেয়। আর সেটা যদি হয় পচনশীল কোনো দ্রব্য তখন দাম কমিয়ে রাখা ছাড়া তাদের আর উপায় থাকে না। কিন্তু আমরা হয়েছি উলটো, যে জিনিসের দাম বাড়ে সেটা কিনতে বাজারে হুমড়ি খেয়ে পরি। আর তাই একের পর এক জিনিসপত্রের দাম বাড়তে বাড়তে সব কিছুর দাম এখন আকাশ ছোঁয়া। কোনো জিনিসের দাম বাড়লে সেই জিনিস কেনাকাটা নিয়ে আমাদের এমন আগ্রহের কথা ব্যবসায়ীরা ভালো করে বোঝে বলেই তারা একেক সময় একেক জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয়।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: জিনিসপত্রের দাম নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। মানুষ কিনতে পারছে না, খেতে পারছে না বলে আফসোস করা হচ্ছে। বাজার করতে করতেই মানুষের পকেটের টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে সরকার, প্রশাসন আর ব্যবসায়ীদের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করা হচ্ছে। কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি আসছে ঈদের বাজারে জুতা, কাপড় ও কসমেটিকের মার্কেটে ভিড়ের কমতি হবে না। আমরা যে আসলে কি, তা আমরা নিজেরাই জানি না।

লেখক: সংগঠক

সারাবাংলা/এসবিডিই

অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে পণ্য বর্জন মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর