মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় প্রথম গ্রেফতার কমিউনিস্টরা
২০ মার্চ ২০২৪ ১৭:১৪
মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় প্রথম গ্রেফতার হন কমিউনিস্টরা ১৯২৯ সালের ২০ মার্চ। ব্রিটিশ বিরোধী ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসে এদিনটি এক অনন্য ত্যাগের কথাই মনে করিয়ে দেয়। অবশ্য এর আগেও কমিউনিস্টরা গ্রেফতার হয়েছেন।
শ্রেণিসংগ্রাম তরান্বিত করার জন্য বিপ্লবের ব্রত ও অঙ্গীকারে ১৯২০ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হওয়ার পর ৯ বছরের মাথায় মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা রুজু হয়। যা এখন ইতিহাস ও গবেষণার বিষয়।
১৭৬ বছর আগে রচিত হয়েছিল ‘কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার’ শীর্ষক ছোট্ট একটি পুস্তিকা। এটি দুনিয়াকে বদলে দেওয়ার শ্রমিক শ্রেণির মতাদর্শের এক অপ্রতিরোধ্য রাজনৈতিক হাতিয়ার। সারা দুনিয়ার কমিউনিস্ট বা ওয়ার্কার্স পার্টিসমূহের মহত্তম দলিল হিসেবে আজও স্বীকৃত। এমন কোনো জ্ঞানপিপাসু মানুষ পাওয়া যাবে না যিনি ইশতেহারের সঙ্গে বোঝাপড়া না করে অগ্রসর হতে পেরেছেন। কমিউনিস্ট বিপ্লবের উদ্দীপনার পেছনে এই গ্রন্থের ভূমিকা আজও সমপরিমাণে অটুট আছে।
ইশতেহার প্রকাশিত হওয়ার পর পরই সারা দুনিয়ায় চিন্তার জগতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। এখনো পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষকে আলোকিত করে চলেছে এই ইশতেহার।
লেনিনের ভাষায়, “এই ছোট পুস্তিকাখানি বহু বৃহৎ গ্রন্থের সমতুল্য। সভ্য জগতের সমগ্র সংগঠিত ও সংগ্রামী প্রলেতারিয়েত আজও তার প্রেরণায় উদ্দীপ্ত ও অগ্রসর।”
কমিউনিস্ট ইস্তেহারের প্রথম ভাগের নাম “বুর্জোয়া ও প্রলেতারিয়েত”। এই ভাগে সামন্ততান্ত্রিক সমাজ থেকে পুঁজিবাদের জন্মের কাহিনী বলা হয়। মার্ক্স পুঁজিবাদের আকাশচুম্বী উৎপাদন ক্ষমতাকে যথাযথ স্বীকৃতি দেন। তবে পুঁজিবাদের ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপ তিনি তার রচনায় উদ্ঘাটিত করেছেন। তার মতে অকল্পনীয় হারে পণ্যোৎপাদন বাড়লেও সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূর হয়নি। তিনি পুঁজিবাদের অন্তর্বিরোধ এবং আর্থিক সংকটের বিশ্লেষন করেছেন। এই ইস্তেহারে ধনতন্ত্রের অন্ধকার দিক দেখিয়ে পরিবর্তে অন্য কোনো সমাজব্যবস্থার কথা বলা হয়নি। তবে বলা হয়েছে, প্রচলিত সমাজব্যবস্থার গতিশীলতা থেকেই ঘটনাক্রমে বিপ্লবাত্মক শক্তির জন্ম হবে।
কমিউনিস্ট ইস্তেহার-এর ভেতর যে মূলচিন্তা প্রবহমান তা এই যে ইতিহাসের প্রতি যুগে অর্থনৈতিক উৎপাদন এবং যে সমাজ-সংগঠন তা থেকে আবশ্যিকভাবে গড়ে উঠে, তাই থাকে সেই যুগের রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিগত ইতিহাসের মূলে। সুতরাং জমির আদিম যৌথ মালিকানার অবসানের পর থেকে সমগ্র ইতিহাস হয়ে এসেছে শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস। আধুনিক বুর্জোয়া সম্পত্তির অনিবার্যভাবে আসন্ন অবসানের কথা ঘোষণা করাই ছিল এই বইয়ের লক্ষ্য।
সমাজ বদলের লড়াইকে অগ্রসর করার তাগিদ থেকে ইশতেহার রচিত হয়েছিল। এর রচয়িতা কার্ল মার্কস ও ফ্রেডরিক এঙ্গেলসের বন্ধুত্ব ছিল বিস্ময়কর ও অতুলনীয়। প্রতিভাদীপ্ত এই দুইজন বিপ্লবীর অসাধারণ বোঝাপড়া, চিন্তা ও অনুশীলনের ঐক্য ইশতেহার রচনার যৌথকাজে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার শীর্ষক ছোট্ট পুস্তিকাটি প্রকাশিত হওয়ার ৭২ বছর, মার্কসের জীবৎকালে কেবল ডাস ক্যাপিটাল-এর প্রথম খণ্ড প্রকাশের ৫৩ বছর, ১৯১৭ সালে কমরেড ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন ও বলশেভিকদের নেতৃত্বে কমিউনিস্টদের সমাজতান্ত্রিক রুশ বিপ্লবের তিন বছরের মাথায় শ্রেণিসংগ্রাম তরান্বিত করার জন্য বিপ্লবের ব্রত ও অঙ্গীকারে ১৯২০ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়েছিল। আমরা যে কমিউনিস্ট উত্তরাধিকার বহন করি তা এ বছর ১৭ অক্টোবর ১০৫ বছরে পদার্পন করবে। যদিও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাকাল নিয়ে ভারতের প্রধান দুটি কমিউনিস্ট পার্টি সিপিআই ও সিপিআই (এম)-এর মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে। সিপিআই (এম) ১৯২০ সালের ১৭ অক্টোবর ও সিপিআই ১৯২৫ সালের ২৬ ডিসেম্বরকে প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে পালন করে।
১৯৫৯ সালের ১৯ আগস্ট অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদকমণ্ডলী ১৯২৫ সালের ২৬ ডিসেম্বরকে সর্বসম্মতভাবে পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে গ্রহণ করেছিল।
এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, গত শতাব্দীর বিশের দশকের শুরুতেই ভারত উপমহাদেশ তথা বর্তমান ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কমিউনিস্ট আন্দোলন অঙ্কুরিত হয়েছিল। সেই বিবেচনায় ভারত উপমহাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলন তার এক শত পাঁচ বর্ষে পা রেখেছে। এ নিবন্ধে ভারত উপমহাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের উন্মেষকাল নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
মার্কসবাদের সাথে ভারত উপমহাদেশবাসীর পরিচয়
১৮৭১ সালের ১৫ আগস্ট প্রথম আন্তর্জাতিকের সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায় কলকাতা থেকে জনৈক ব্যক্তি প্রথম আন্তর্জাতিকের সম্পাদকের কাছে এক পত্রে ভারতবর্ষে আন্তর্জাতিকের শাখা প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা চেয়েছেন। এ সভায় স্বয়ং কার্ল মার্কস ও ফ্রেডারিখ এঙ্গেলস উপস্থিত ছিলেন। ১৯০০ সালে ডন পত্রিকায় ফ্রেডারিখ এঙ্গেলসের একটি বই নিয়ে গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হয়। ১৯০৪ সালে আমস্টার্ডমে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকে যোগ দেন দাদাভাই নৌরজী। ১৯০৭ সালে স্টুটগার্টে আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন ভিকাজী রুস্তম কামা, সর্দ্দার সিং রাওজী রাণা ও বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। ১৯১০ সালে মডার্ন রিভিউ পত্রিকায় একটি প্রবন্ধে ‘কমিউনিস্ট ইশতেহার’ থেকে উদ্ধৃতি দেয়া হয়। ১৯১২ সালে লালা হরদয়াল একই পত্রিকায় Karl Marx-A Morden Rishi নামে প্রবন্ধ লিখেন। ১৯১২ সালেই কে. রামকৃষ্ণ পিল্লাই কার্ল মার্কসের জীবনী গ্রন্থ রচনা করেন। মূলতঃ ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব এবং ১৯১৮-২২ সালের ভারতের শ্রমিকশ্রেণির সংগ্রাম ভারতে মার্কসবাদের উদ্বোধন ঘটায়।
রুশ বিপ্লবের প্রভাব
ভারতীয় জাতীয় বিপ্লবীদের একটি অংশ যারা নানা কারণে দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছিলেন ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব তাদের অনেকের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। জার্মানিতে যারা অবস্থান করছিলেন তারা স্বদেশমুক্তির জন্য বার্লিন কমিটি’ গঠন করেছিলেন। ১৯২১ সালে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের আমন্ত্রণে ইউরোপ থেকে বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, গোলাম আম্বিয়া খান লোহানীসহ মোট নয় জন যোগ দেন। এদের মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দের ছোট ভাই ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত ১৯২৫ সালে দেশে ফিরে এসে মার্কসবাদ প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য যিনি এম এন রায় নামে পরিচিত। তিনি ‘অনুশীলন সমিতি’র সদস্য ছিলেন। ১৯১৫ সালে দলের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করতে বিদেশ পাড়ি দেন। জাপান, চীন হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে মার্কসবাদী সাহিত্যের সাথে পরিচিত হন। আমেরিকান এভেলিনা ট্রেন্টকে বিয়ে করেন। মার্কিন পুলিশের নাজেহালের ভয়ে ১৯১৭ সালের গ্রীষ্মে মেক্সিকো চলে যান। সেখানে তিনি সমাজবাদী চিন্তায় আকৃষ্ট হন এবং সেখানকার সমাজবাদী দল ‘সোশ্যালিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টি’তে যোগ দিয়ে তার সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯১৯ সালে রুশ কমিউনিস্ট নেতা মাইকেল বরোদিনের সাথে এম এন রায়ের পরিচয় হয়। কমরেড বরোদিনের কাছে রায় মার্কসবাদের শিক্ষা লাভ করেন। তিনি সোশ্যালিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টিকেই মার্কসবাদী দলে রুপান্তরিত করেন এবং মেক্সিকোর কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের মধ্য দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে পৃথিবীর প্রথম কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২০ সালের ১৯ জুলাই-৭ আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে প্রচুর শিখধর্মাবলম্বী পাঞ্জাবী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পানামায় গিয়েছিলেন। সেখানে তারা স্বাধীনতার লক্ষ্যে গদর পার্টি সংগঠিত করেন। রুশ বিপ্লবের প্রভাবে তারা মার্কসবাদ-লেনিনবাদে আকৃষ্ট হন। অনেকেই দেশে ফিরে এসে কমিউনিস্ট আন্দোলন সংগঠিত করেন।
প্যান ইসলামিক খেলাফত আন্দোলনে অংশ নেয়া মুসলিম জাতীয়তাবাদী বিপ্লবীরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর হিজরত আন্দোলনে যোগ দিয়ে দেশত্যাগ করে সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্য এশিয়ার প্রদেশসমূহে অবস্থান গ্রহণ করেন। রুশ বিপ্লবের প্রভাবে তাদের অধিকাংশই মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন।
১৯২২ সালে চৌরিচৌরায় পুলিশ হত্যার ঘটনায় গান্ধী কর্তৃক একতরফাভাবে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়ায় স্বাধীনতাকামী জাতীয়তাবাদী সশস্ত্র বিপ্লবীদের একাংশ কংগ্রেস রাজনীতির প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেন এবং রুশ বিপ্লবের প্রভাবে মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে মতাদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন। বাংলায় ধরণী গোস্বামীর নেতৃত্বে তাঁরা ইয়ং কমরেডস লীগের মাধ্যমে নিজেদের সংগঠিত করেন। এ গ্রুপে মণি সিংহ, গোপাল বসাক, গোপেন চক্রবর্তীসহ অনেকে ছিলেন। এছাড়া গণনায়ক পার্টি, সাম্যরাজ পার্টি, কারখানা গ্রুপ, লাল নিশান গ্রুপ ইত্যাদি মাধ্যমে সংগঠিত জাতীয় বিপ্লবীরা কমিউনিস্ট পার্টিতে শামিল হন।
এর পাশাপাশি এ সময়কালে শ্রমিকদের শক্তিশালী লড়াই কমিউনিস্ট আন্দোলনের ভিত্তি গড়তে সহযোগিতা করে। ১৯২০ সালের অক্টোবর মাসে মুম্বাইয়ে অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। পুরো ত্রিশের দশক ভারতের শ্রমিকশ্রেণি বড় বড় সংগ্রাম গড়ে তুলে। শুধু মাত্র বাংলার বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল, আসামের চা বাগান ও বিহারের খনি এলাকায় অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক উভয়বিধ কারণে ১৯২০ সালে ১৩৭টি, ১৯২১ সালে ১৫০টি ও ১৯২২ সালে ৯১টি ধর্মঘট সংগঠিত হয়েছিল।
বিভিন্ন স্থানে কমিউনিস্ট চক্র বা গোষ্ঠীর উদ্ভব
কমিনটার্নের দ্বিতীয় কংগ্রেসের পরই এম এন রায় ১৯২০ সালের ১৭ অক্টোবর তাসখন্দে প্রবাসী ভারতীয় ও দুজন বিদেশিনীকে নিয়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করেন। এরা হলেন ১) মানবেন্দ্র নাথ রায় (এম এন রায়), ২) এভেলিনা ট্রেন্ট রায় (এম এন রায়ের মার্কিন স্ত্রী), ৩) অবনী মুখার্জী, ৪) রোজা ফিটিংগোফ মুখার্জী (অবনী মুখার্জীর রুশ স্ত্রী), ৫) মুহম্মদ আলী (আহমেদ হাসান), ৬) এম প্রতিবাদী বায়াঙ্কার আচার্য (মান্ডায়াম পার্থ সারথি তিরুমারাই আচার্য), ৭) মুহম্মদ শফিক সিদ্দিকী। এই কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হন মুহম্মদ শফিক সিদ্দিকী। ১৯২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় রায়, শফিক ও আচার্য এই তিন জনকে নিয়ে পার্টির ‘কার্যকরী কমিটি’ গঠিত হয়। ১৯২১ সালে এই কমিটি কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯২২ সালের এপ্রিলে এম এন রায়ের বার্লিন গমনের সাথে সাথে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির হেড কোয়ার্টার বার্লিনে স্থানান্তরিত হয়। এম এন রায়ের সম্পাদনায় ১৯২২ সালের ১৫ মে ইংরেজি ভাষায় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম মুখপত্র পাক্ষিক ‘দি ভ্যানগার্ড অব দি ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্স’ প্রকাশিত হয়। মাঝখানে পুলিশের নজরে এড়াতে ‘দি এডভান্স গার্ড’ নামে কয়েক সংখ্যা বের হলেও ১৯২৩ সালের ১৫ মে দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সংখ্যা ‘দি ভ্যানগার্ড’ নামে প্রকাশিত হয়। মাস্টার হেডের নীচে প্রথম বারের মত লেখা হলো ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র’ তার নীচে লেখা থাকতো ‘কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের অঙ্গীভূত’। এ সকল পত্রিকার মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষে অনেক ব্যক্তি কমিউনিস্ট পার্টি ও মার্কসবাদের প্রতি আকৃষ্ট হন।
কলকাতা, বোম্বে (বর্তমানে মুম্বাই), লাহোর, মাদ্রাজ (বর্তমানে চেন্নাই) এ চারটি শহরে প্রথম পার্টি গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পৃথক চারটি শহরে প্রায় একসাথে পার্টি গড়ার কাজের সূত্রপাত হয়েছিল যার মধ্যবিন্দু ছিলেন কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত এম এন রায়। এ চারটি জায়গায় কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের সাথে স্বাধীনভাবে সংযোগ সৃষ্টি হয়েছিল এবং কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকই কোনো কোনো ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের মধ্যে সংযোগ ঘটিয়ে দিয়েছিল। যেমন কোলকাতার মুজাফ্ফর আহমদের সাথে মুম্বাইয়ের শ্রীপাদ অমৃত ডাঙ্গের সংযোগ ঘটিয়ে দিয়েছিল। ১৯২১ সালে ডিসেম্বরের মধ্যেই ভারতবর্ষের অভ্যন্তরীস্থ নবদীক্ষিত কমিউনিস্টদের সাথে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। মুম্বাইয়ে এস এ ডাঙ্গে প্রথম মার্কসবাদে দীক্ষিত হন। ১৯২১ সালে তিনি ‘গান্ধী বনাম লেনিন’ নামে পুস্তক লিখেন। ১৯২২ সালে ‘সোশালিস্ট’ নামে পত্রিকা বের করেন এবং তাকে কেন্দ্র করে একদল তরুণ মাকর্সবাদী সাহিত্য পাঠ শুরু করেন। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন সচ্চিদানন্দ বিষ্ণু ঘাটে। চেন্নাই (মাদ্রাজ) এ কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি আকৃষ্ট প্রথম ব্যক্তি হচ্ছেন শ্রমিক নেতা মায়লাপুরম সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ার। লাহোর (পাঞ্জাব) এ তাসখন্দে গঠিত পার্টির সদস্য মুহম্মদ আলীর প্রভাবে তাঁর বন্ধু পেশোয়ারের এডওয়ার্ডস্ চার্চ মিশন কলেজের অর্থনীতির শিক্ষক গুলাম হুসায়ন চাকুরি ছেড়ে লাহোরে এসে পার্টি গড়ার জন্য রেলওয়ে ওয়ার্কার্স ইউনিয়নে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি ‘ইনকিলাব’ নামে একটি উর্দু পত্রিকা প্রকাশ করেন।
১৯২১ সালের নভেম্বর মাসে মার্কসবাদী সাহিত্য ক্রয়ের মাধ্যমে কমিউনিজমের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ঘটে কলকাতায় বসবাসরত সন্দ্বীপের মুজাফ্ফর আহমদের। তাঁর ক্রয়কৃত বইগুলোর মধ্যে ছিল ‘বামপন্থি কমিউনিজমের শিশুসুলভ বিশৃঙ্খলা’ ও ‘পিপলস্ মার্কস’ (ক্যাপিটেলের সংক্ষিপ্তসার)। ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁর পরিচয় ঘটে এম এন রায়ের প্রেরিত নলীনি গুপ্তের সাথে। যিনি রায়ের নির্দেশে ভারতে এসেছিলেন জাতীয় বিপ্লবীদের সাথে যোগাযোগ করে তাঁদেরকে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি আকৃষ্ট করতে। নলিনী গুপ্তই হচ্ছেন এম এন রায় ও কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের সাথে মুজাফ্ফর আহমদের যোগসূত্র। কমিউনিস্ট আন্দোলনে নেমে মুজাফ্ফর আহমদের সাথে প্রথম সংযোগ হয় জাতীয় বিপ্লবী ভূপেন্দ্রকুমার দত্তের সাথে। দ্বিতীয় আবদুর রাজ্জাক খান এবং তৃতীয় আবদুল হালিম। রাজ্জাক এবং হালিম কমিউনিস্ট পার্টি গড়ায় মুজাফ্ফর আহমদের সহযোগী হলেও ভূপেন্দ্রকুমার দত্ত ফিরে গিয়েছিলেন তাঁর পুরোনো সশস্ত্র রাজনীতিতে। এদের সাথে যুক্ত হন শামসুল হুদা। এরাই বাংলার আদি কমিউনিস্ট।
কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মামলা
উন্মেষকালেই ভারতবর্ষের কমিউনিস্ট আন্দোলনকে ধ্বংস করার জন্য ১৯২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর হতে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে ফিরে আসা কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে পাঁচটি ‘পেশোয়ার ষড়যন্ত্র মামলা’ দায়ের করা হয়।
১৯২৩ সালের মে মাস থেকে সারাদেশে কমিউনিস্টদের গ্রেপ্তার শুরু করা হয়। ১৩ জনের তালিকা তৈরি করা হয়। ১৯২৪ সালের ১৭ মার্চ থেকে মুজাফ্ফর অাহমদ, সওকত উসমানী, এস এ ডাঙ্গে ও নলিনী গুপ্ত এ চারজনের বিরুদ্ধে। ‘কানপুর কমিউনিস্ট ষড়যন্ত্র মামলা’ চালু করা হয়। মুজাফ্ফর আহমদ ও ডাঙ্গের চার বছর কারাদন্ড হয়। যক্ষা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় মুজাফ্ফর আহমদ ১৯২৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মুক্তি লাভ করেন।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কানপুর সম্মেলন
কানপুর কমিউনিস্ট ষড়যন্ত্র মামলার প্রাথমিক অভিযুক্ত ১৩ জনের একজন উত্তরপ্রদেশের সত্যভক্ত ১৯২৫ সালের ২৫-২৮ কানপুরে কমিউনিস্ট সম্মেলন আহ্বান করেন। মাওলানা হসরৎ মোহানী ছিলেন অভ্যর্থনা কমিটির চেয়ারম্যান। ২৫ ডিসেম্বর ছিল উদ্বোধনী পর্ব। ২৬ ডিসেম্বর কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার বিষয় আলোচনা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সিদ্ধান্ত হয় পার্টির নাম হবে ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’। অন্য সিদ্ধান্তে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সম্মেলনে ৩০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়। ১৬ জন সম্মেলনে নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এস ভি ঘাটে ও জে পি বাগেরহাট্টা।
ওয়ার্কার্স এন্ড পেজান্টস্ পার্টি
কমিউনিস্টরা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কার্যক্রমের পাশাপশি সারাদেশে ওয়ার্কার্স এন্ড পেজান্টস্ পার্টি সংগঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেইমতে বাংলায় ১৯২৬ সালের ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি কৃষ্ণনগরে অনুষ্ঠিত প্রথম সম্মেলনে ‘দি লেবর স্বরাজ পার্টি অফ দি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস’র নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় পেজান্টস্ এন্ড ওয়ার্কার্স পার্টি অফ বেঙ্গল (বঙ্গীয় কৃষক ও শ্রমিক দল)। ১৯২৭ সালের ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সম্মেলন অতুলচন্দ্র গুপ্ত সভাপতি ও সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯২৮ সালের ৩১ মার্চ-১ এপ্রিল চব্বিশপরগনা জেলার ভাটপাড়াতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সম্মেলনে সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ওয়ার্কার্স এন্ড পেজান্টস্ পার্টি অফ বেঙ্গল (বঙ্গীয় শ্রমিক ও কৃষক দল)। সম্মেলনে অতুলচন্দ্র গুপ্ত সভাপতি ও মুজাফ্ফর আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ সম্মেলনে ‘কল টু অ্যাকশন’ নামে কর্মসূচি গৃহিত হয়। দলের মুখপত্র হিসেবে প্রথমে ‘লাঙ্গল’ পরে ‘গণবাণী’ প্রকাশিত হয়।
১৯২৮ সালের ২১-২৩ ডিসেম্বর কলকাতার আলবার্ট হলে ওয়ার্কার্স এন্ড পেজান্টস্ পাটির সর্বভারতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পৃথকভাবে গড়ে ওঠা বাংলা, বোম্বে, পাঞ্জাব, যুক্তপ্রদেশের ওয়ার্কার্স এন্ড পেজান্টস্ পার্টির নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধভাবে অল ইন্ডিয়া ওয়ার্কার্স এন্ড পেজান্টস্ পাটি গঠন করেন। পাঞ্জাবের মোহন সিং জোশ ও মুম্বাইয়ের আর. এস. নিম্বকরকে সাধারণ সম্পাদক করে সর্বভারতীয় কমিটি নির্বাচিত করা হয়।
মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা
ব্রিটিশ আমলে সারা ভারতজুড়ে শ্রমিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে ধ্বংস করার চক্রান্তের অংশ হিসেবে ভারতের গভর্নর জেনারেলের নির্দেশে ১৯২৯ সালের ২০ মার্চ সারা ভারতে ৩২ জন বিশিষ্ট কমিউনিস্ট, শ্রমিক-কৃষক পার্টির নেতা, ট্রেড ইউনিয়ন ও কৃষকনেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। যাদের মধ্যে তিনজন ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক। ১৯২৯ সালের ১২ জুন মীরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ‘মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা’ শুরু হয়। ১৯৩৩ সালের ১৬ জানুয়ারি রায় হয়। মামলার রায়ে কমিউনিস্ট নেতাদের যাবজ্জীবন থেকে নানা মেয়াদের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
“মীরাট কমিউনিস্ট ষড়যন্ত্র মোকদ্দমায় বন্দীরাই জিতেছিলেন। ….বছরের পর বছর মামলা চালিয়ে ব্রিটিশ গভর্ণমেন্ট বন্দীদের প্রতি জনগণের ঘৃণা উদ্রেগের পরিবর্তে সারাবিশ্বে সহানুভূতির উদ্রেগ করেছিলো।
জগতের নানা স্থান থেকে মীরাট মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ এসেছিলো।
…. মীরাট কমিউনিস্ট ষড়যন্ত্র মোকদ্দমা হতে ভারতবর্ষে কমিউনিস্ট মতাদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের জেলে ও ক্যাম্পে দন্ডিত ও বিনাবিচারে আটক সন্ত্রাসবাদী বন্দীরা মার্কসীয় সাহিত্যের অধ্যয়ন শুরু করে দেন। আন্দামান জেলেও দন্ডিত বন্দীরা তা-ই করেন। এই ব্যাপারে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কলকাতা কমিটিরও অবদান ছিলো। মুক্তি পাওয়ার পর এ সব বন্দীদের মধ্যে শত শত লোক ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন।”
ব্রিটিশ ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি প্রসারিত করার কাজে অন্যতম বাধা ছিল সরকারী নিষেধাজ্ঞা, আজীবন কারাবাসের শাস্তি অথবা পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো। কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা নিজেদের প্রাণ বাজি রেখেই সেই কাজ করেছিলেন – সারাদেশে পার্টি সংগঠন প্রসারিত করতে বহু বাধার পাহাড় তাদের পেরোতে হয়েছে তবু সেই কাজ একদিনের জন্যেও থেমে থাকেনি। তাই প্রথম থেকেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলন এবং কমিউনিস্ট পার্টিকে অন্যতম বিপদ হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। ১৯২৩-২৪ সালে নর্থ-ইস্ট ফ্রন্টিয়ার এলাকায় পেশোয়ার কমিউনিস্ট ষড়যন্ত্র মামলা এবং ১৯২৪ সালে কানপুর কমিউনিস্ট ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের হয়। ১৯২৮ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে কলকাতায় সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেকগুলি গোষ্ঠী একত্রে ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পিজ্যান্টস পার্টি গড়ে তোলে। অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসেও তখন কমিউনিস্টদের প্রভাব অনেকটাই বেড়েছে। আসন্ন কমিউনিস্ট বিপ্লবের ভয়ে ব্রিটিশ সরকার প্রমাদ গুনেছিল। এই বিপদ থেকে মুক্তি পেতে তারা ১৯২৯ সালে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করেছিল।
ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলনকে ধ্বংস করতে চেয়েই এই মামলা হয়েছিল, কিন্তু ফল হল একশো আশি ডিগ্রি বিপরীত। এই মামলায় অভিযুক্ত কমিউনিস্ট নেতৃত্ব আদালতের কাঠগড়াকেই পার্টির কাজের প্রচার এবং প্রসারের মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করেন। তারা সিদ্ধান্ত নেন পার্টির পক্ষে কেউ নিজের বক্তব্য আলাদা করে না জানিয়ে সম্মিলিত একটি সাধারণ বক্তব্য তুলে ধরা হবে। সেই বক্তব্যই হবে আদালতের সামনে তাদের জবাব, দেশবাসীর সামনে তাদের কর্মসূচী। গোটা দেশে কমিউনিস্টদের খবর ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশ ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির প্রচারের কাজ, বিস্তারের কাজ সরকারী বিধিনিষেধের কারনেই বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছিল – সরকারী প্রাঙ্গণকে সেই উদ্দেশ্যেই অসাধারণভাবে ব্যবহার করলেন কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা। ফ্যাসিস্ত বাহিনীর হাতে বন্দী হয়ে একই কায়দায় জর্জি দিমিত্রভ নিজের বক্তব্য প্রচার করেছিলেন। বিচারাধীন বন্দী হিসাবে আদালতে দাঁড়িয়ে কিউবা বিপ্লবের নেতা ফিদেল কাস্ত্রোও একই পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালীন কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা আদালতের সামনে যে সাধারণ বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন তাকেই “Communists Challange Impearialism From The Dock” শিরোনামে একটি ইংরেজি বই প্রকাশিত হয়। প্রকাশক ন্যাশনাল বুক এজেন্সি। বইটিতে মুখবন্ধ লেখেন কাকাবাবু, কমরেড মুজফফর আহমদ – যিনি নিজেই মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অন্যতম একজন অভিযুক্ত ছিলেন। কমরেড মুজফফর আহমদের লেখা সেই মুখবন্ধের উল্লেখযোগ্য অংশবিশেষ বাংলায় অনুবাদ করে পার্টির রাজ্য ওয়েবসাইটে প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হল।
ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলন, কমিউনিস্ট পার্টি শক্তিশালী করার প্রসঙ্গে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার গুরুত্ব অপরিসীম। একই কারনে ঐ মামলার শুনানি চলাকালীন আদালতে কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা যে সাধারণ বক্তব্য পেশ করেন তাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পার্টির কাজে আরও বেশি সাহস, যুক্তি এবং তথ্যসমৃদ্ধ হতে কর্মী, সমর্থক এবং গবেষকদের বইটির অধ্যয়ন একান্তই প্রয়োজন।
“কলকাতা হাইকোর্টের স্বনামধন্য ব্যারিস্টার মিঃ ল্যাংফোর্ড জেমস’কে ব্রিটিশ প্রশাসন মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় সরকারী উকিল হিসাবে নির্বাচিত করেছিল, কাজে সহায়তার জন্য ব্যারিস্টার ল্যংফোর্ড নিজের অধিনস্ত মিঃ জ্যোতিপ্রকাশ রায়কে জুনিয়র কাউন্সিল হিসাবে নিযুক্ত করেন। ব্রিটিশ সরকার মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সংক্রান্ত কাজে ব্যারিস্টার মিঃ ল্যাংফোর্ড জেমস’কে দিন প্রতি ৮০ গিনি এবং মিঃ জ্যোতিপ্রকাশ রায়কে দিন প্রতি ৫ গিনি খরচ দেবার চুক্তি করেছিল, সেই সময়কার হিসাব অনুযায়ী ১ গিনি = ভারতীয় মুদ্রায় ১৭ টাকা। ঠিক কবে থেকে তারা এই কাজে নিযুক্ত হন এই তথ্য পাওয়া যায় নি।”
“প্রাথমিকভাবে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় ৩১ জনের নামে অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়। আমির হায়দার খান এবং হিউগ লেস্টার হাচিন্সনের নাম কিছুদিন পরে সেই তালিকায় যুক্ত হয়। হিউগ লেস্টার হাচিন্সন একজন ইংরেজ যিনি সাংবাদিক হিসাবে ভারতে কাজ করতে এসেছিলেন, পরে একটি ইংরাজি দৈনিক পত্রিকায় লেখার কাজ করতে গিয়ে বোম্বাইতে কমিউনিস্ট ট্রেড ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হন – তাকে গ্রেফতার করে আদালতে পেশ করা হয়। ব্রিটিশ পুলিশ আমির হায়দার খানকে গ্রেফতার করতে পারে নি। তিনি আমেরিকায় নাবিক হিসাবে পৌঁছান, সেখানে একটি অটোমোবাইল কারখানায় কাজ করার ফাঁকেই ইংরেজি ভাষায় কথা বলা এবং লেখার কাজে নিপুণতা অর্জন করেন। বিমানচালনার লাইসেন্স অর্জন করে একটি পুরানো বিমান অবধি কিনেছিলেন। আমি হায়দার খান আমেরিকার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ অর্জন করেছিলেন, সেই সুবাদেই তিনি প্রশিক্ষনের জন্য মস্কো চলে যান। মস্কোয় কমিউনিস্টদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষন অর্জন করার পরে দেশে ফিরে এসে জেনারেল মোটরস কোম্পানিতে চাকরি নেন এবং ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির কাজে যুক্ত হয়ে যান। এই সময় তার নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী হয়, সেই খবর পাওয়া মাত্র সুকৌশলে গ্রেফতারী এড়িয়ে তিনি ইউরোপে চলে যান। ইউরোপ থেকে ফিরে তিনি মাদ্রাজে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার কাজে নিজেকে সর্বক্ষণের কর্মী হিসাবে নিয়োজিত করেন, আজকের দিনে ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির অনেক নেতৃত্বই তার হাতে প্রশিক্ষিত হয়েছেন। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার একেবারে শেষ লগ্নে পুলিশ তার নাগাল পায়। তাকে মিরাটের আদালতে হাজির করা হলে সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়া আবার প্রথম থেকে চালু করতে হবে বলে ব্রিটিশ সরকার আমির হায়দার খানকে মাদ্রাজ জেলেই বন্দী রাখে, সেখানেই তার বিচার হয় এবং দুবছর ভয়ানক শ্রমযুক্ত বন্দী হিসাবে জেলে থাকার শাস্তি ঘোষিত হয়।”
Convicted of Meerut Conspiracy Case
” এই মামলায় আসামী হিসাবে আমাদের গ্রেফতার করে মিরাট জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। প্রত্যেককেই আলাদা সেলে রাখা হয়, অনেকটা সেল্যুলার ব্যারাকের মতো জায়গায়। সকালে একবার এবং বিকালে একবার কিছুক্ষণের জন্য আমাদের সেল থেকে বাইরে আনা হতো, কেবলমাত্র তখনই আমরা একে অন্যের সাথে কথা বলার সুযোগ পেতাম। আমার ডানদিকের ব্যারাক দুটিতে শওকত উসমানী এবং ডঃ গঙ্গাধর অধিকারীকে রাখা হয়েছিল। এর আগে, ১৯২৪ সালে কানপুর ষড়যন্ত্র মামলায় আমি এবং শওকত উসমানী আসামী হিসাবে জেলে ছিলাম, ডঃ গঙ্গাধর অধিকারীর এই প্রথম জেলে আসা। কানপুর ষড়যন্ত্র মামলাকে বলশেভিক ষড়যন্ত্র মামলা বলে প্রচার করতে ব্রিটিশ সরকার খুবই চেষ্টা করেছিল। সকাল এবং বিকালে কথা বলার সুযোগটুকু কাজে লাগিয়েই আমরা মামলা সম্পর্কে আলোচনা করে নিতাম। এমন আলোচনাতেই আমি ডঃ গঙ্গাধর অধিকারীকে জানাই, সরকার যেভাবে মামলা সাজিয়েছে তাতে আমাদের শাস্তির মেয়াদ দীর্ঘ হবেই, তাই সেশন কোর্টকেই আমাদের রাজনৈতিক প্রচারের মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করবো না কেন ? আমি তাকে বলি যে এর আগে কানপুর ষড়যন্ত্র মামলার সময়েই অনুরূপ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল, সেই সুযোগ আমরা নষ্ট করেছি। ডঃ গঙ্গাধর অধিকারী আমার প্রস্তাবে রাজী হলেন।”
”১৯২৯ সালের ১৪ই মার্চ ইন্ডিয়া ইন কাউন্সিলের গভর্নর জেনারেল কয়েকজন ভারতবাসীর (কমিউনিস্ট বিপ্লবী – অবশ্য যারা গ্রেফতার হয়েছিলেন তাদের মধ্যে এমনও কেউ কেউ ছিলেন যারা কমিউনিস্ট নন) বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২১-এ ধারায় মামলা মুঞ্জর করেন। পরেরদিন, ১৫ই মার্চ মিরাটের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন। এই পরোয়ানার ভিত্তিতে ব্রিটিশ পুলিশ অত্যন্ত তৎপরতার সাথে সারাদেশে ধরপাকড় এবং তল্লাশি শুরু করে। তল্লাশি করার সময় বইপত্র, কাগজ, লিফলেট যা কিছু সম্ভব পুলিশ বাজেয়াপ্ত করে। এমনকি কলকাতায় ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পিজ্যান্টস পার্টির দপ্তরের কাঠের ফলকটিও তারা বাজেয়াপ্ত করে। অভিযুক্ত যারা, সবাইকেই গ্রেফতার করা হয় ঐদিনই। চার বছরেরও বেশি সময় ধরে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার বিচার চলে। সেই থেকে প্রতি বছর ২০শে মার্চ তারিখটিকে সারাদেশে শ্রমিক, কৃষক এবং মেহনতি মধ্যবিত্ত মানুষ মিরাট দিবস হিসাবে পালন করতে শুরু করে।”
“এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি ডঃ স্যার শাহ সুলেইমান এবং বিচারপতি জে ইয়ং-এর রায়ের ভিত্তিতে ১৯৩৩ সালের ৩রা অগাস্ট ভারতের প্রধান বিচারপতি মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার রায় ঘোষণা করেন। এই মামলার রায়ে মুজফফর আহমদকে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরের শাস্তি ঘোষণা করা হয়। এস এ ডাঙ্গে, ফিলিপ স্প্রাট, এস ভি ঘাটে, কে এন যোগলেকর এবং আর এস নিম্বকরের ১২ বছরের জন্য দ্বীপান্তরের শাস্তি হয়। বি এফ ব্রাডলে, এস এস মিরজকর, শওকত উসমানীর ১০ বছরের জন্য দ্বীপান্তর, মির আবদুল মজিদ, সোহন সিংহ যশ, ধরনীকান্ত গোস্বামীর ৭ বছরের জন্য দ্বীপান্তর, অযোধ্যা প্রসাদ, গঙ্গাধর অধিকারী, পূরণ চাঁদ যোশী এবং এম জি দেশাইয়ের ৫ বছর দ্বীপান্তর ঘোষিত হয়। গোপেন্দ্র চক্রবর্তী, গোপাল চন্দ্র বসাক, এইচ এল হাচিন্সন, রাধা রমণ মিত্র, এস এইচ ঝাবওয়ালা এবং কেদার নাথ সেহগলকে ৪ বছরের জন্য সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়, শামসুল হুদা, এ এ আল্ভে, জি আর কাসলে, গৌরি শংকর এবং লক্ষণ রাও কদমকে ৩ বছরের জন্য সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়।”
“এই মামলার পরে ৩৫ বছর কেটে গিয়েছে। আদালতে দাঁড়িয়ে কমিউনিস্টদের সেইদিনের বক্তব্য আজ বইয়ের চেহারায় পড়া যায়। ভারতীয়রা তো বটেই, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষজনও বইটি আগ্রহের সাথে পড়বেন বলেই আমার একান্ত বিশ্বাস। ভারতে আজকের প্রজন্মের কমিউনিস্টদের জন্য বইটি একটি প্রয়োজনীয় দলীল যা অধ্যয়ন করলে তারা বুঝবেন ৩৫ বছর আগে মিরাটে জেলে বন্দী থাকাকালীন কমিউনিস্টরা কি করেছিলেন, কি ভেবেছিলেন।”
-মুজফফর আহমদ
কলকাতা
১২ই ডিসেম্বর, ১৯৬৬
বাংলায় পার্টির বিস্তার
১৯৩৪ সালের মধ্যে ছয়টি জেলা- কলকাতা, হাওড়া, হুগলী, বর্ধমান, যশোর, মেদিনীপুর পার্টির সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়।
১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল এবং ১৯৩২ সালে কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলনের ফলে অসংখ্য জাতীয় বিপ্লবী এবং কংগ্রেস কর্মী কারারুদ্ধ হন। এদের অনেকেই কারাগারে মার্কসবাদ-লেনিনবাদী মতাদর্শ চর্চা করেন এবং নিজেদের কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন। ১৯৩৭-৩৮ সালে তাঁরা মুক্ত হয়ে পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন এবং বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েন। ফলে ১৯৩৯ সালের মধ্যে দার্জিলিং ও কোচবিহার জেলা ছাড়া প্রতিটি জেলায় পার্টির সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়।
চক্র বা গোষ্ঠী স্তর থেকে পার্টি স্তরে উত্তরণ
১৯৩৩ সালের ডিসেম্বর মাসে কলকাতায় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সর্বভারতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেন আব্দুল হালিম, রণেন সেন, সোমনাথ লাহিড়ী। মুম্বাই থেকে উপস্থিত ছিলেন ড. গঙ্গাধর অধিকারী, এস জি পাটকর, নাগপুর থেকে এম এল জয়মন্ত, পাঞ্জাব থেকে গুরুদিৎ সিং, উত্তর প্রদেশ থেকে পি সি যোশী। সম্মেলনে ড. গঙ্গাধর অধিকারী সর্বসম্মতিক্রমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সম্মেলনে উপস্থিত সকলকে নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। বড়লাটের নির্দেশে ১৯৩৪ সালের ২৮ জুলাই কমিউনিস্ট পার্টিসহ সারাদেশে অসংখ্য বামপন্থি সংগঠন বেআইনি ঘোষণা করা হয়। মুম্বাইয়ে সুতাকল শ্রমিকদের ধর্মঘট সংঘটিত করায় ১৯৩৪ সালে ডা. অধিকারীকে গ্রেপ্তার করে বিজাপুরে অন্তরীণ রাখা হয়। অধিকারীর পরে এস ভি ঘাটে সাধারণ সম্পাদক হন। একই বছর ঘাটে কারান্তরীণ হলে এস এস মিরাজকর সাধারণ সম্পাদক হন। এস ভি ঘাটে, এস এস মিরাজকর, সোমনাথ লাহিড়ী এই তিনজনকে নিয়ে পলিটব্যুরো গঠিত হয়। ১৯৩৫ সালে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের সপ্তম কংগ্রেসে যোগদানের জন্য মস্কো যাওয়ার পথে সিঙ্গাপুরে গ্রেপ্তার হন মিরাজকর। তখন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় সোমনাথ লাহিড়ীকে। ১৯৩৬ সালের শুরুতে লাহিড়ী মুম্বাইয়ে গ্রেপ্তার হয়ে যান। এসময় দুই বছর জেল খেটে বের হয়ে এসে পার্টির সদর দপ্তরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন পি সি যোশী। ১৯৩৬ সালে লক্ষ্ণৌ কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় অজয় ঘোষ, ভরদ্বাজ, ড. অধিকারী ও পি সি যোশীকে নিয়ে পলিটব্যুরো গঠিত হয় এবং পি সি যোশী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পার্টির গোপন সদর দপ্তর কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়।
সুপ্রিয় পাঠক, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ১০৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সমাগত। মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় কমিউনিস্টদের গ্রেফতার হওয়ার দিনটিকে উপলক্ষ করে এই নিবন্ধটি লেখা হলেও মহান ও কীর্তিমান বিপ্লবীদের নিয়ে সব সময়ই লেখা যায়। পরিশেষে, সমাজতন্ত্র অভিমুখী অসাম্প্রদায়িক জনগণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রত্যয়ে সমতা-ন্যায্যতার প্রশ্নে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনেই জনগণের নতুন ধারার এক আর্থসামাজিক বৈপ্লবিক ব্যবস্থা প্রবর্তনে বিশ্বজনীন মহান ও কীর্তিমান বিপ্লবীদের রাজনীতি, আত্মোৎসর্গ, জীবন সংগ্রাম, কীর্তি, ইতিহাস, তত্ত্ব ও অনুশীলন সম্পর্কে পাঠ প্রাসঙ্গিক ও জরুরী। কিংবদন্তী বিপ্লবী কমরেড মানবেন্দ্র নাথ রায় (এম এন রায়), কমরেড এভেলিনা ট্রেন্ট রায় (এম এন রায়ের মার্কিন স্ত্রী), কমরেড অবনী মুখার্জী, কমরেড রোজা ফিটিংগোফ মুখার্জী (অবনী মুখার্জীর রুশ স্ত্রী), কমরেড মুহম্মদ আলী (আহমেদ হাসান), কমরেড এম প্রতিবাদী বায়াঙ্কার আচার্য (মান্ডায়াম পার্থ সারথি তিরুমারাই আচার্য), কমরেড মুহম্মদ শফিক সিদ্দিকী, কমরেড মুজফফর আহমদ এবং অবিভক্ত ভারতবর্ষের কমিউনিস্ট পার্টির সকল বিপ্লবীসহ ইতিহাসের নির্মাতা ও চালিকাশক্তি জনগণের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা ও অভিবাদন!
মীরাট ষড়যন্ত্র মোকদ্দমায় কমিউনিস্টরা গ্রেফতার হওয়ার ৯৫তম বার্ষিকীতে সকল কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা! বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।
লেখক: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই
মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় প্রথম গ্রেফতার কমিউনিস্টরা মুক্তমত সৈয়দ আমিরুজ্জামান