ভুয়া সাংবাদিক: যেন স্বেচ্ছাচারী খলনায়ক
২২ মার্চ ২০২৪ ২০:০৮
সকল অনিয়ম-দূর্নীতি দূরীকরণে এবং জাতীয় সমস্যা মোকাবেলায় সাংবাদিকরা একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। তবে বর্তমানে ভুয়া সাংবাদিকের দৌরাত্ম্যের বিষয়টিই মূখ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভুয়া সাংবাদিকের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি ও তাদের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি নিয়ে আমাদের যতটা উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা বা সচেতনতা সৃষ্টিতে সোচ্চার হওয়ার কথা ঠিক তা আমরা হচ্ছি না। আমাদের দেশে বিরাজমান কোন সমস্যা থেকেই এই সমস্যাটাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কেননা তারা সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে অর্থ আত্মসাধের পাশাপাশি সমাজে নানান অরাজকতা ও দ্বন্দ্ব-ফাসাদ সৃষ্টি করতে পারে। নগর থেকে বন্দর, শহর থেকে গ্রাম সবখানেই ভুয়া সাংবাদিকের দৌরাত্ম্য লক্ষণীয় এবং তা দিন দিন জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বৃহৎ পরিসরে সাংবাদিকও একজন শিক্ষক। সাংবাদিক সমাজ, দেশ তথা বিশ্ব নাগরিকদের জন্য নানান প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে সর্বক্ষণ তথ্য সরবরাহ করে থাকেন। তাঁদের মাধ্যমেই মানুষের তথ্য লাভের অধিকার নিশ্চিত হয়।
তবে বর্তমানে তীক্ষ্ণ না হোক ভাসা ভাসা দৃষ্টিপাত করলেই দেখা যাবে আমাদের সমাজে সাংবাদিকতার নামে কি অরাজকতা চলছে। বর্তমানে সাংবাদিকের বেশভুষা কিছু অসাংবাদিক যে কর্মকান্ড পরিচালনা করছে তাতে সাধারণ মানুষ তো বটেই সাংবাদিকতা ও সাংবাদিক সম্পর্কে অনেক গুণীজনেরও ভ্রমের উদ্রেক হচ্ছে।
চারদিকে এখন ভুয়া সাংবাদিকের ছড়াছড়ি। যত্রতত্র অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ভুঁইফোর পত্রিকার প্রতিপত্তি। এসব প্রতিষ্ঠানের অসাধু লোকজন সাংবাদিক পরিচয়ে জনসাধারণের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার-হাজার, লাখ-লাখ টাকা। তারা যেন পুরো দেশ জুড়ে ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করতে চায়। যখন যেখানে ইচ্ছে হানা দেয়, ভয় ভীতি দেখিয়ে প্রয়োজন মতো আদায় করে নেয় অর্থ আবার অনেকে কোন অপরাধের তথ্য ব্যবহার করেও অপরাধির কাছে তা প্রকাশ না করার শর্তে- অর্থ গ্রহণ করে থাকে। শুধু যে ভুয়া সাংবাদিকরাই এটা করে তা না অনেক মূলধারার নীতি- নৈতিকতা বিবর্জিত সাংবাদিকও এটা করে থাকে। তাদের আসলে সাংবাদিক বলাটা আর যাইহোক ন্যায়সঙ্গত নয়!
বর্তমানে সাংবাদিকতার মতো সংবেদনশীল একটি পেশা যেন অনেক সহজ হয়ে গেছে। যে যখন ইচ্ছে একটি বুম মাইক্রফোন, মোবাইল বা ক্যামেরা হাতে দাঁড়িয়ে যান, বনে যান নামজাদা জাঁদরেল সাংবাদিক। তার জন্য লাগে না শিক্ষাগত যোগ্যতা, লাগে না কোন বিদ্যা বুদ্ধির জোর। আমরা জানি, একজন সাংবাদিকের থাকতে হবে তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, রুচিবোধ, সততা, বিশ্বাসযোগ্যতা, নিরপেক্ষতা, সহানুভূতিশীল মনোভাব, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা, পরিস্থিতিগত পরিমিতিবোধ, শিক্ষাগত ও পেশাগত যোগ্যতা। সহজ কথায় তিনি হবেন, Jack of all trades, master of one. তবে এইসব গুণাবলী তো থাকা দূরের কথা, নানা ভুঁইফোড় পত্রিকা ও পোর্টালের নামধারী সাংবাদিকরা সঠিকভাবে পড়তে লিখতে পর্যন্ত জানেন না। তাদের মধ্যে অতীতে কেউ ছিলেন হয়তো গার্মেন্টস কর্মী, কেউ দারোয়ান, কেউ আবার মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের সাথে যুক্ত ছিলেন। তারাই সাংবাদিকতার ভুয়া কার্ড বানিয়ে, গাড়িতে স্টিকার লাগিয়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জায়গা দখলসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির করছেন। সাংবাদিকতা একটি শিল্প এবং একেক জন সাংবাদিক একেক জন শিল্পী যাঁরা শব্দের বুননে দ্ব্যর্থহীনভাবে সত্যের প্রকাশ ঘটান। এটা শুধু পেশা নয়, সমাজসেবার একটি আধুনিক মাধ্যমও বটে। তাঁরা জনসাধারণের আস্থাভাজন ব্যাক্তি। তাঁরা জনগণের মুখপাত্র। কিছু নামধারী সাংবাদিকের ফলে সাংবাদিকতার মতো মহৎ একটি পেশার মুখে প্রতিনিয়ত কালিমা লেপিত হচ্ছে। এইসব অসাধু অসংবাদিকদের কারণে অনেক মূলধারার সাংবাদিক খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে নানাভাবে হেনস্তা শিকার হচ্ছেন। সবচেয়ে বড় কথা, তাদের কারণে জনসাধারণের ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। তাঁরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি তাদের দ্বারা নানাভাবে হেনস্থা ও লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। এ সংকট মোকাবেলায় সরকারের উচিত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। অনিবন্ধিত পত্রিকা-পোর্টালগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া এবং নিবন্ধন প্রত্যাশী ও নিবন্ধিত সংবাদপত্র-পোর্টালগুলোর সাংবাদিক কোন অপকর্মের সাথে জড়িত কিনা সে বিষয়েও খেয়াল রাখা উচিত এবং কোন অপরাধের প্রমাণ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া বাঞ্ছনীয়। ভুয়া সাংবাদিকতা রোধে মূলধারার সাংবাদিকদের সাংবাদিকতার নামে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। বোধ করি, তাঁদের চেয়ে ভালো এই দায়িত্ব আর কেউ পালন করতে পারবেন না। কারণ পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন, রেডিওর মাধ্যমে তাঁরা দেশের সর্বস্তরে পৌঁছে যেতে পারেন। সেই সাথে তাঁদের কর্মপরিধি একটি দেশের সর্বোচ্চ স্থান থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত। কাজেই সরজমিনেও তাঁরা এ বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারবেন। তথ্য প্রদানের মাধ্যমে মানুষের জানার অধিকার নিশ্চিত করা পাশাপাশি তাঁদেরকে নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে এবং জনগণকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে এই গুরু দায়িত্বটি পালন করা আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লেখক: শিক্ষার্থী
সারাবাংলা/এজেডএস