Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এই হচ্ছে আসল ইউনূস

পলাশ আহসান
২৮ মার্চ ২০২৪ ১৬:৪৭

ইউনূস সাহেব পুরস্কার পাওয়া নিয়ে যে কাণ্ড করলেন, এই লেখার শিরোনামে আপতত সেটাকে বিভ্রান্তি বলছি। না, কোন সন্দেহ থাকার কারণে নয়। নোবেল নামক পুরস্কারটির প্রতি খানিকটা সম্মাণ দেখাচ্ছি। কারণ এক্ষেত্রে আর যেসব বিশেষণ মূলক ক্রিয়া ব্যবহার করা যেত, তা একজন নোবেল বিজয়ীর সঙ্গে জুড়তে বিব্রত লাগে। পাঠক আপনারা নিশ্চয়ই এরই মধ্যে জেনে গেছেন, ইউনেস্কোর ‘দ্য ট্রি অব পিস’ পুরস্কার পাওয়া নিয়ে ইউনূস সাহেবের ছড়ানো বিভ্রান্তির তথ্য। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের শিক্ষা সাংস্কৃতিক অংশ ইউনেস্কোর ঢাকা অফিস নিশ্চিত করেছ ইউনূস এরকম কোন পুরস্কার পাননি। খোদ শিক্ষামন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তিনি কিন্তু বাংলাদেশ ইউনেস্কো কমিশনের চেয়ারম্যানও।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের গণমাধ্যম ইতোমধ্যে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে একটি ফোরামের অনুষ্ঠানে ইউনূসের হাতে একটি রেপ্লিকা তুলে দেয়ার তথ্য প্রকাশ করেছে। খোঁজ খবর নিয়ে জানিয়ে দিয়েছে ইউনেস্কোর ‘দ্য ট্রি অব পিস’ পুরস্কার এবং ওই পুরস্কারের ইসারাইলি ডিজানাইরের দেয়া রেপ্লিকার পার্থক্য। এমনকি ইউনেস্কোর সদর দফতরও জানিয়েছে, ইউনূস এ ধরনের কোন পুরস্কার পাননি। সুতরাং ইউনূসের প্রতিষ্ঠান ইউনূস সেন্টার তার ইউনেস্কো ‘দ্য ট্রি অব পিস’ পাওয়া নিয়ে যে তথ্য প্রকাশ করেছে তা ঠিক নয়। এটি বাংলাদেশের জন্য অপমানজনকও।

বিজ্ঞাপন

গত ২১শে মার্চ ইউনূস সেন্টার প্রেস রিলিজ এই মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছিল গণমাধ্যমে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে সেটা প্রচার হয়েছিল। এরপর ২৭শে মার্চ বুধবার আবার একের পর এক গণমাধ্যমে আসতে থাকে এই ভুল তথ্য প্রচারের তথ্য। কিন্তু কেন ইউনূস সেন্টার এমন তথ্য ছড়ালো এর কোন ব্যাখ্যা তারা এখনও দেয়নি। আমরা ধরে নিচ্ছি দায়িত্ব নিয়েই তারা কাজটি করেছে। কিন্তু তারা বোঝেননি আজকের এই অবাধ তথ্য প্রবাহের সময়ে কোন তথ্য গেপন রাখা যায় না। এটা ওই সময় নয় যখন ক্ষুদ্রঋণের চাপে হাজার হাজার পরিবার ভাঙার গল্প বাইরে যেতো না। যখন ক্ষুদ্রঋণের চাপে শত শত মানুষ আত্মহত্যা করতো। তখন বন্যার পানিতে দাঁড়িয়েও ঋণের কিস্তি আদায় করা হতো। তখন ব্রিফকেসে ভরে বাংলাদেশের মানুষের দারিদ্র দেশের বাইরে নেয়া হতো। তার পর সেটা নামী দামি স্মম্মেলনে বিক্রি হতো উচ্চ দামে।

কিন্তু এখন দিন বদলেছে। এখন আর মানুষ ক্ষুদ্র ঋণের সফল্য ভিডিও ডুকুমেন্টরিতে দেখেন না। তাই বাকু সম্মেলনে গিয়ে পুরস্কারের ডিজাইনারের কাছ থেকে পুরস্কার নেয়ার মত কৌশলে যেতে হয়। কিন্তু কেন পুরস্কার পেতে এই জীবন-মরণ পণ? কী লাভ? এতে কি পুরোনো ইমেজ সুরক্ষিত হবে? নতুন করে ইমেজ বাড়বে? খুব স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আমি পুরস্কার পাওয়া নিয়ে ভুল তথ্য দেয়ার কারণ খুঁজে পাই না। কেউ কেউ বলতে পারেন সম্প্রতি শ্রম আইনে সাজা পাওয়া ইউনূস পুরস্কার দেখিয়ে আদালত প্রভাবিত করতে পারেন। আবার কেউ বলতে পারেন বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক প্রমাণ করে সরকারকে জুজু বুড়ির ভয় দেখাতে পারেন। কিন্তু এর কোনটিই আমার খুব যুতসই ব্যাখ্যা মনে হচ্ছে না। কারণ একজন নোবেল বিজয়ীর সঙ্গে এসব ক্ষুদ্রতা যায় না।

কিন্তু এই ঘটনার পর একটা বিষয় খুব পরিষ্কার। সেটা হচ্ছে ইউনূস বাংলাদেশের মানুষকে ভাল চেনেন। তিনি ভাল করেই জানেন বাংলাদেশের মানুষ আবেগ প্রবণ। যে কারণে বারবার তিনি আবেগাক্রান্ত মানুষের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করেছেন। এঘটনাটিও এর ব্যতিক্রম নয়। কিছুদিন আগে একটি বিদেশি বার্তা সংস্থার বাংলাদেশি সংস্করণের সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে আমরা দেখেছি কীভাবে তিনি সাধারণ কথা বার্তার চেয়ে মানুষকে আবেগাপ্লুত করার চেষ্টা করছেন। সেখানে তার কথার সারবস্তু ছিল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে আসুক কিন্তু তিনি একজন নোবেল বিজয়ী। কেন এসব অভিযোগ আমলে নেয়া হবে। যে কারণে বিরুদ্ধে আনা কোন অভিযোগই তিনি খুব যুক্তিপূর্ণভাবে খণ্ডন করেননি বা করতে পারেননি। বার বার তিনি নোবেল পুরস্কারটি সামনে এনেছেন। এবারও তাই করেছেন। পুরস্কারটিকে রক্ষা কবচ করতে চেয়েছেন তিনি।

তার প্রসঙ্গে সবচেয়ে ভাল বলতেন প্রয়াত বিএনপি নেতা এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান। তার আত্মজীবনীতে তিনি লেখেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর নানাভাবে নিজের জন্যে অর্জন করতে চেয়েছেন কিন্তু বলেছেন মানুষের কথা। অপ্রিয় সত্য বলার জন্যে এই মানুষটি তার দলের মধ্যেও অজনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু আমার মনে হয় ইউনূস নিয়ে এই সত্যটি সবচেয়ে মৌলিক। এর সঙ্গে এই পুরস্কার কাণ্ডের ধারাবাহিকতা যুক্ত করি। তাহলে দেখা যাবে নিজের সাফল্যের জন্যে সারাজীবন বহু সত্য গোপন করেছেন।

বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনা করতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষের নিঃস্ব হওয়া দেখেছেন, আত্মহত্যা দেখেছেন, কিন্তু ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনায় সংস্কার করেননি। ঋণ নিয়ে মানুষ কী করছে তা দেখেননি। কীভাবে মানুষের একের পর এক ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর হয়েছে তা দেখেননি। বরং তিনি শুধু একটি মডেল পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে গেছেন। এই সাফল্য নিয়ে ভুল তথ্য দিয়েছেন।

এবারের পুরস্কারকাণ্ডে আরো পরিস্কার যে, সত্য বা মিথ্যা ইউনূসের কাছে বড় কথা নয়, বড় কথা প্রাপ্তি। সব শেষ শ্রম আদালতে বিচারের ক্ষেত্রেও দেখেছি আমাদের নোবেল বিজয়ী শ্রমিক কর্মচারি নেতাদের সঙ্গে বার বার আদালতের বাইরে বিষয়গুলো মীমাংসার চেষ্টা করেছেন। এজন্য বাজেটও করেছেন। বিচারধীন একটি বিষয় আদালতের বাইরে নিতে তার নৈতিকতায় আটকায়নি। সব শেষ কথা এই পুরস্কার কাণ্ডের ইউনূস হচ্ছে আসল ইউনূস। আমাদের কিছু সুশীল তাকে যতই সারা বিশ্বের মহা মানব বানানোর প্রলেপ দিন না কেন, মাঝে মধ্যে আসল ইউনূস বের হয়ে পড়বেই।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

সারাবাংলা/এজেডএস

ড. ইউনূস পলাশ আহসান

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর