Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যান্ত্রিক পৃথিবী ছুটছে: আমাকে ছাড়া চলছে

ওমর ফারুক
৩১ মার্চ ২০২৪ ১৮:৪৯

আমাকে ছাড়া সব চলে! সূর্য হারিয়ে অন্ধকার আসে। আঁধার অনুপস্থিত হয়ে পূনরায় আলো আসে। রাস্তায় গাড়িও ঠিকটাক চলে। আমি যে রিকশায় যাইতাম তাঁরাও দেখি সামনের রাস্তা দিয়ে ক্রিং ক্রিং করে যায়। ঘড়িও চলমান থাকে। মুহুর্তের পর মুহুর্ত সময় বলে দিচ্ছে। আকাশে পাখি উড়ে। পক্ষির সুরে কথা বলছে। সাগরের ঢেও আসে। মাঝি নৌকায় পাল তুলছে। মাছ ধরতে ব্যস্তরয়। পাহাড় থেকে পানি সাগরে আসে নিজের পথে। সব গতিশীল। আমি স্থিতিশীল নিজের রুমে। সব চলে আমাকে ছাড়া!

এলাকার ষাটোর্ধ জামিলা বুবু পাহাড়ে যায় লতাপাতা লাকড়ি আনতে। তারপর এসে বিক্রি করে সংসারের জন্য। আহমেদ চাচা গাছ কাটতে দূরবনে গেছে। যেখানে হিংস্র প্রাণীর ভয়। মুবিন ভাই ফসলের মাঠে কাজ করছে। লাল শাক ফেলবে। নজীর কাকা খেজুর গাছে কাজ করছেন। রাখাল গরু নিয়ে সবুজ তৃণভূমিতে যায়। বেসুরা মিশ্রিত ভাষায় গান গায়। বিলের মাঝে খেলা করে। ঝিরির শীতল পানিতে ঝাপ মারে। আবার রোদে এসে শুকায়। গাছের মগডালে গিয়ে আম, জাম, পেয়ারা ও পেঁপে চুরি করে। গভীর বনের বনকাঁঠাল গাছে কোন কাঁঠাল পাকছে দেখে। ঠিক যেভাবে ডাক্তারে রোগী দেখে। সব চলে আমাকে ছাড়া!

স্কুলের যাওয়ার সময় হয়। স্কুলে ক্লাসও হয়। একের পর এক ঘন্টা বাজে। স্যার পড়ায়, গল্প বলে, অঙ্ক করায়, ইংরেজি শিখায় এবং সূত্র ঘুরায়। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আড্ডা হচ্ছে। মজামাস্তি হচ্ছে। হচ্ছে গলা ভাঙা স্লোগান। হচ্ছে শখের রাজনীতি। হচ্ছে থিয়েটারে বৈচিত্র্য নাটক। ইডিপাসে অভিনয় হয়। বাকের ভাইকে দেখায় বিটিভিতে। ধরছে গান সুরে সুরে। হচ্ছে বক্তৃতা ঘুছিয়ে মনে। হচ্ছে মারামারি বিরোধী ভেবে। হচ্ছে প্রেম ভালোবাসা একই হৃদয়ে। মানবের জন্য (সাহায্য) মানব এগিয়ে আসে। উড়ছে টঙের চিপায় সিগারেটের ধোঁয়া। হচ্ছে পুলিশ প্লাজা পঞ্চম ফ্লোরে রেস্টুরেন্টে খাওয়া। সব চলে আমাকে ছাড়া৷

প্রতি স্টেশনে যোগাযোগ বহমান। কি বাস লম্বা ট্রেন ওই যে ভাসমান শিপ অথবা উড়ন্ত প্লেন সব চলে। মইজ্জ্যার ট্যাগে ব্রীজ ব্রীজ করে গলা পাঠাচ্ছে হেল্পার। ঘাটে নৌকা কিংবা ফেরী ভিড়ছে মানুষের আশায়। ওইতো মালবাহী জাহাজও চলে কর্ণফুলীতে। সন্ধ্যায় বিচিত্র আলো জ্বলে শাহ্ আমানত সেতুতে। রেডিসনে পার্টিও চলে। আরো চলে বহদ্দারহাট জ্যামে ফুসকা চটপটি। সিগারেটের ধোঁয়াও আকাশে উড়াচ্ছে। দূর করতে দিনের ক্লান্তি! ওভার ব্রীজে দূর শহরের গাড়ী চলছে। কই আমিতো চলছি না। আমিই রুমে অচল। সব চলমান আমাকে ছাড়া!

চকবাজারে দেখেন! দুনিয়া একদিকে। চকবাজার অন্য দিকে। এখানে ভাইয়া আপুদের জীবন্ত মধুর লেকচার। বিখ্যাত স্যারদের মুখে কুখ্যাত অপরাধীদের ইতিহাস। বিভিন্ন টেকনিক টেকটিক থিয়োরি রিয়েলিটি। রিকশায় ছুটে চলা কাপল। দুইজন দু’দিকে দৌঁড় বাই বলে কোচিং-এ ঢুকা। কতো রঙবেরঙ স্বপ্ন নিয়ে ছুটাছুটি যুদ্ধা তারা। আহ্! তারা জানে আমিও এক সময় ছিলাম এমন! জানে? আমার এক বন্ধু যে সুইসাইড করছে। যার এক সময় চকবাজার মানে স্বর্গ ছিল। চকবাজার নিজের নীড় ভাবতো। চকবাজারে না গেলে গলাকাটা মোরগের মত চটপট করত। জানে নবীন তরুন নয়া নতুন নব্য সেনারা? সব চলে আমাকে ছাড়া।

আমার বন্ধুরা জমায়েত হচ্ছে আড্ডার মহলে। চাকরিতে বেরোচ্ছে সকালে ব্যাগ হাতে। সন্ধ্যায় ফিরছে। খেলা প্রেমী বন্ধু জয় খেলায় মগ্ন। যে প্রেমে বিভোর সাইফুল মিট করছে সমুদ্র সৈকত। ব্লকে বসে কি অনর্গল মিথ্যা বলছে। সামনে সাগরের ঢেও আসছে। ভাসছে কতকিছু। কারো স্বপ্ন, কারো মালামাল, কারো ভালোবাসা, কারো রাজনীতির পদবী, কারো পদোন্নতি, কারো শত কিছুর নেশা আশা বাসা ভাষা রংতামাশা ইত্যাদি। ওও! আমার সুদর্শন বন্ধু আরিফ চুল কাটছে সেলুনে। মিনহাজ জামা কিনছে মার্কেটে। সবতো চলে আমাকে ছাড়া!

লাল ফিতার ফাইল হাতে সকল অফিসে। সমস্ত কাজ চলন্ত নিজ গন্তব্যে। পানির নিচে ডুবন্ত মাছ ঘুরছে। লাল কাঁকড়া শিখার করছে। হাঙর সাগরে শব্দ করে দানবের গতিতে বেগে চলছে। পুলিশ আসামি ধরছে। লাল রশির পুরাতন ফাইলে মক্কেল খোঁজছে। অজ্ঞাত মামলা হচ্ছে। সেদিনও ফয়সাল গ্রেপ্তার হলো। হরেকরকমের জিনিস পত্র বিক্রি হচ্ছে বাজারে। দোকানে ক্রেতা বিক্রেতা কথা কাটাকাটি চলছে৷ ছোট্ট বাচ্চা বৃষ্টিতে বায়ুহীন ফুটবলে লাতি দিচ্ছে। হুহু করে হাসছে। বৃষ্টি উপভোগ করছে। কি আশ্চর্য। সব চলছে আমাকে ছাড়া!

গলিতে কিশোরেরা কাপড়-চোপড় মুড়িয়ে করে ক্রিকট বল বানিয়েছে। বড়ো গাছের একাংশে স্টাম্প হিসেবে ধরে হাতে তৈরীকৃত ব্যাট দিয়ে ক্রিক্রেট খেলছে। ধপাস করে মেরে জেরিন আন্টির জানালা ভেঙে পালিয়েছে। দৌড়াতে দৌড়াতে অন্য পাড়ায় চলে গেছে। সামনে আম গাছ। ঢিল ছুড়ে মারছে গাছে। আম পড়ছে। হাসতে হাসতে তুলে নিচ্ছে আম। বড়ো ঢিল মারতেই উড়ে গিয়ে পড়লো নাদিয়া খালার টিনের চা’লে। যেখানে সুমাইয়া, ইশরাত ও শ্রাবনী নামের উপযুক্ত তিনজন মেয়ে ওনার। তারপর বুঝতে পারছেন! আবারো দৌড় দিল রফিক, শফিক, সাকিব, ও রাকিব কিশোরের দল। কই? তারাও চলে আমাকে ছাড়া!

চলছে স্নায়ু যুদ্ধ বিশ্ব মঞ্চে। রাশিয়া আক্রমণ করছে ইউক্রেনে। আমেরিকা হুমকি দিচ্ছে ইরানকে। ইসরায়েল ফিলিস্তিনে আগুন জ্বলছে। হিমালয়ের বরফ গলছে। নদীর পানি চলছে। আন্তর্জাতিক ম্যাচও চলমান স্টেডিয়ামে। হলিউড বলিউড ডালিউড কলিউড স্যান্ডলউড পলিউড নলিউড সব ইন্ডাস্ট্রিতে সিনেমা প্রকাশ পাচ্ছে। হুমড়ি খেয়ে পড়ছে শ্রোতা। ইন্টারনেটের সব হযবরল কাজ চলছে। উপরে স্যাটলাইট ঘুরছে। তথ্য সংগ্রহ করছে। জগতের সকল পর্যটন এলাকা ভিড় আর ভিড়। মাকড়শা জাল বুনছে। জেলে জাল ফেলছে। সুন্দরী রমণী জাল বিলাচ্ছেন প্রেমে ফেলতে। সব চলছে আমাকে ছাড়া!

জাঁয়েরতলার মস্ত বড়ো হাতী কলা গাছ টানছে। ঝু্ঁমুরগোনায় শজারু কাটা পেলে দৌঁড়াচ্ছে। প্রসান্তের তলদেশে নীল তিমি কাঁপাচ্ছে। এন্টার্কটিকাতে পেঙ্গুইন ছুটছে। আমাজনে বিশাল সাপ ফুসফুস করছে। মঙ্গল নিয়ে গবেষণা চলছে। নীলনদ টাইগ্রিস বুড়িগঙ্গায় পানি শাঁশাঁ করছে। পৃথিবী ঘুরছে। সূর্য আলো দিচ্ছে। সবার ভীড়ে কোনো এক নীড়ে কেউ রশি ভিড়ছে তিন পায়ের ফ্যানে। নিজেকে মুক্তি দিবে বলে। আশ্চর্য! কি আজব! সবই ঠিকই নিজের কাজ নিজে করে যাচ্ছে। সমস্ত কিছু বহমান, চলমান, দ্রুতময়, গতিময়, শ্রুতিময়, উড়ন্ত, ছুটন্ত, দৌড়ান্ত, ঝুলন্ত এবং ফুটন্ত! তবে আমিই কি একমাত্র ডুবন্ত? আমাকে ছাড়া এক ইঞ্চি পৃথিবীর ক্ষতি হচ্ছে না। সবতো চলে আমাকে ছাড়া!

লেখক: শিক্ষার্থী,  ইংরেজি বিভাগ, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম

সারাবাংলা/এজেডএস

ওমর ফারুক যান্ত্রিক পৃথিবী ছুটছে: আমাকে ছাড়া চলছে


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর