Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গাছের উপর এতো অত্যাচার কেন?

রশীদ এনাম
২ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:২৩

চট্টগ্রামে যে কটি বিনোদনের জায়গা আছে, শ্বাস নেয়ার জায়াগা আছে। বিশেষ করে যারা প্রাতঃভ্রমণ করে, বৈকালে হাটে তারা ডিসি হিল, জাতিসংঘ পার্ক, সার্কিট হাউসের পাশে খোলা উদ্যোন, বিপ্লবী উদ্যোন, আউটার স্টেডিয়াম, রেলওয়ে জাদুঘর ও সিআরবিতে নিয়মিত হাটে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় ইতোমধ্যে বিভিন্নকারনে সবকটি জায়গা বন্ধ হয়েগেছে। আহা! চট্টগ্রামে যারা ডায়াবেটিস রোগী, যাদের শরীরে সুগার আছে, যারা নিয়মিত হাটেন তারা রাজধানীর রমনার মতো পার্ক নেই বলে প্রাণ খোলে হাটতে পারছেন না। শিশু-কিশোর তরুণদের খেলার মাঠও আজ গ্রাসের পথে।

বিজ্ঞাপন

সিআরবি (চট্টগ্রাম রেলওয়ে বিল্ডিং বা বোর্ড) আমাদের শেকড় চট্টগ্রামে ঐতিহ্য ও নান্দনিক প্রাচীন স্থাপত্য সবচেয়ে বড় কথা হলো এটি একটা প্রাকৃতিক হাসপাতাল যেখানে গেলে মানুষ নির্মল অক্সিজেনসহ মনের ধাওয়াই বিনা খরচে পেয়ে থাকে। সবুজ অরণ্যঘেরা সিআরবি বিপ্লবী ও একাত্তরের শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বিজড়িত এই এলাকায় রয়েছে শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি। যেখানে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী বইমেলাসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়ে আসছে। সিআরবি, রেলওয়ে পাহাড়তলী ক্লাব, জাদুঘর বিপ্লবীদের স্মৃতিবিজড়িত বৃটিশ আমল থেকে সিআরবিতে শুভা পাচ্ছে প্রাচীন শতবর্ষী রেইন ট্রি, গর্জন, শিরিষ, নানাপ্রজাতির ঔষধিগাছ সহ আরও নানা শতবর্ষী গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে ছবির মতো।

বিজ্ঞাপন

বিশ^কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর বেচে থাকলে হয়ত লিখতেন, “গাছগুলি যে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ওদের মধ্যে যেন একটা না জানা ভাব আছে সেই ভাবনায় বর্ষার মেঘের ছায়ায় নিবিড়ে শীতের সকালের রৌদ্রে উজ্জ্বল হয়ে উঠে। সেই না জানা ভাবনার ভাষায় কচি পাতায় ওদের ডালে ডালে বকুনি জাগে, গান ওঠে ফুলের মঞ্জুরিতে”।

চট্টগ্রামের প্রকৃতি আজ বিপন্ন। একে একে সৌন্দর্যরাণী বন, পাহাড় সব উজাড় করে চলেছে। সম্প্রতি নজরে এসেছে সিডিএ চট্টগ্রাম নগর ও সিআরবি সংযোগ সড়কের উপর থেকে নিচের সড়কে নামার জন্য সিঁড়ির গোড়া পর্যন্ত প্রায় ৪৫০ মিটার দীর্ঘ মাঝের জায়গা ধরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্প (ঢালু পথ) নির্মাণের জন্য সিআরবির শতবর্ষী গাছ কাটতে প্রায় ৪৬টি গাছের গায়ে সাদা রঙ দিয়ে নম্বর দেওয়া হয়েছে। এ যেনো নগরবাসীর উপকারের অপরাধে ফাঁসির আদেশ দেয়ার মতো। ইতোমধ্যে আউটার রিং রোডে প্রায় ২০ হাজার গাছ কাটা পড়েছে। সৌন্দর্যরাণী চট্টগ্রাম শহরের টাইগার পাস এলাকা থেকে পলোগ্রাইন্ড পর্যন্ত ইউসুফ চৌধুরী সড়কটি নগরবাসীর কাছে দুইতলা সড়ক হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। সবুজ অরণ্যে ঘেরা এই দ্বিতল পথটি পাহাড় ঘেঁষে ওপর দিয়ে চলে গেছে। পাহাড় এবং রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন প্রজাতির শতবর্ষী বৃক্ষরাণীরা দাঁড়িয়ে আছে।
চট্টগ্রাম শহরে একসময় বড়ো বড়ো পাখুড় গাছ, বট, রেইনট্রি,কদম, তুলা, নিম, বাদাম গাছ ছিলো গাছগুলোতে ছিল নানা প্রজাতির পাখির বাসা সকাল- সন্ধ্যায় বসত পাখিদের কিচির-মিচির আনন্দ আড্ডা। গাছগুলোর নিচে গেলে কি প্রশান্তি শীতল হাওয়া। এসব গাছের ফলগুলো পাখিদের খুব প্রিয় খাবার। তাছাড়া এসব গাছে নানা রকমের পাখির অভয়ারণ্য বিশেষ করে, টিয়া, ময়না, বুলবুল, বট ঘুঘু, চিঁহি, শালিকসহ নানারকমের পাখির আবাসস্থল বর্ষিয়ান গাছগুলো। একটা গাছ বছরে ১১৮ কেজি অক্সিজেন সরবরাহ করে। বাতাস থেকে শোষণ করে ২৩ কেজি কার্বন ডাইঅক্সাইড। একটি গাছ প্রায় দুজন মানুষের অক্সিজেন জোগায়।

যা থেকে নগরবাসী বিনাপয়সা নির্মল আনন্দ খুঁজে পাই। নগরীর পার্কগুলো বৃক্ষ শুন্য হয়ে পড়ছে। বিদ্যুত বিভাগ, ওয়াশা, সড়ক ও জনপদ কে দেখা যায় বিদ্যুতের লাইন টানার নামে কিংবা সড়ক প্রশস্ত করার নামে রাস্তা কুড়াকুরি করে বর্ষিয়ান গাছগুলোর উপর চড়াও হয়। এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের র‌্যাম্প (গাড়ি ওঠার পথ) নির্মাণ করবে ভালো কথা বর্ষিয়ান গাছ হত্যা করে কেন? গাছ কাটার উদ্যেগের বিরোধিতা করেছেন নগরবাসীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেম সবাই লিখছে শতবর্ষী গাছ কেটে র‌্যাম্পের প্রয়োজন নেই। তাছাড়া শতবর্ষী গাছ কাটলে শহরের এবং পাহাড় ও সড়কের সৌন্দর্য দুটোই নষ্ট হবে। বাংলাদেশে রেলওয়ের কর্মকর্তারা অনুরোধ করেছে অন্যকোথাও র‌্যাম্প করতে। প্রকল্পবাস্তবায়নকারীরা এবং সিডিএ ও বনবিভাগ বলছে, র‌্যাম্প করতে হলে গাছ কর্তন করতে হবে।

সবচেয়ে বড় কথা হলো সিআরবি নগরবাসীর একটি স্পর্শকাতর জায়গা এখানের প্রাণহলো বর্ষিয়ান গাছগুলো। সিআরবির শতবর্ষী গাছ কাটা মানে চাটগাঁবাসীর ফুসফুসে পেরেক ঠুকে দেয়ার মতো। এমনিতে পাহাড় কেটে, নদী- নালা খাল-বিল, পুকুর- দিঘি অবৈদভাবে ভরাট করে ময়লার ভাগাড় ফেলে, দখল করে দালাকোঠাসহ নানা স্থাপনা করেছে অনেকে। গুটি কয়েক মানুষরূপি দানবের হাতে চট্টগ্রামের প্রকৃতি জিম্মি। প্রকৃতিপ্রেমী দ্বিজেনশর্মা প্রকৃতি নিয়ে বলেছিলেন,“মানব সভ্যতা আজ বিপন্ন প্রকৃতি ও মানবের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। মানুষ যেন প্রকৃতিকে বাদ দিয়েই চলতে চায়। মানুষের এই ব্যবহারে প্রকৃতি এখন রূষ্ট। প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে তাতে মানুষের জেতার কোন সম্ভাবনা নেই। এ দেশে আরেকটি নতুন সভ্যতা গড়ে তুলতে হবে। যেখানে মানুষ ও প্রকৃতি সহাবস্থান থাকবে। মানুষ তুমি বৃক্ষের মতো আনত হও সবুজ হও।”

সিটি মেয়র মহোদয় ও সিডিএর চেয়ারম্যান মহোদয় আমরা জানি আপনারা দুজনে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ, আপনারা আমাদের নগরপিতা চট্টগ্রাম আপনাদের শেকড়। শতবর্ষী বৃক্ষ হত্যা নয় চট্টগ্রামকে সবুজায়ন করুন, ফিরিয়ে দিন আমাদের চট্টগ্রামে সবুজ প্রকৃতি।

“প্রকৃতির জন্য সময় বলে কথা” আমাদের প্রধানমন্ত্রী মহোদয় সম্প্রতি নিজ হাতে বৃক্ষরোপন করে বলেছেন, সবাই যেন বনজ ফলজ, ভেষজ কমপক্ষে তিনটি করে গাছ লাগাই। সেখানে কিভাবে র‌্যাম্প নামানোর জন্য সিডিএ অপার সৌন্দর্য বর্ষীয়ান বৃক্ষগুলো নিধন করে চট্টগ্রামে র‌্যাম্প নামাতে চায়? চট্টগ্রামের মানুষ কিছুতে এটা মেনে নিবে না। মানুষ তুমি সবুজ হও, প্রকৃতিকে একটু সময় দিন। সবুজ অরণ্যেঘেরা একচিলতে সৌন্দর্য লিলাভূমি সিআরবিতে চট্টগ্রামের মানুষ সবুজ শ্যামল ছায়ায় শ্বাস নিতে চাই। বিষয়টি চট্টগ্রামের জনপ্রতিনিধিদের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।

লেখক: গল্পকার ও প্রাবন্ধিক

সারাবাংলা/এজেডএস

গাছের উপর এতো অত্যাচার কেন? রশীদ এনাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর