Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জলবায়ু সম্মেলন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জন

ড. মিহির কুমার রায়
৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৪২

পটভুমি:

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৮) ৩০ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ১২ ডিসেম্বর এ সমাপ্ত হয়েছে আমিরাতের দুবাইয়ে । জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক এ শীর্ষ সম্মেলনে এবারের মূলত: চারটি বিশেষ পরিবর্তন এর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে যেমন এক : জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে আসার কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত করা;দুই : জলবায়ু অর্থ ব্যবস্থার রূপান্তর; তিন : জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জনগণ তথা প্রকৃতির ভূমিকা এবং চার : নারী, আদিবাসী, স্থানীয় সম্প্রদায়, তরুণদের শীর্ষ সম্মেলনে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা। এই সম্মেলনে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিভিন্ন আঙ্গিকে (গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ, অভিযোজন, অর্থায়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর, সক্ষমতা বৃদ্ধি, ক্ষয়ক্ষতি ইত্যাদি) বর্তমান বাস্তবতা অর্থাৎ এ পর্যন্ত কোন ক্ষেত্রে কী করা হয়েছে ও কতটা অগ্রগতি হয়েছে বা হয়নি এবং বিভিন্ন দেশ ও দেশগোষ্ঠী তাদের অঙ্গীকারগুলো কতটা বাস্তবায়ন করেছে আর কাজগুলো তারা কতটা স্বচ্ছতার সঙ্গে করেছে, এসবের একটি মূল্যায়ন বিবেচনা করা। মূল্যায়িত বাস্তবতায় আগামী সময়ে কী করতে হবে, তা আলোচনা , কোন কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে, আবার কোন কোন বিষয়ে হবে না, পরবর্তী কপ-এ আলোচনার জন্য বা অন্য কোন প্রক্রিয়ায় বিষয়টি বিচার-বিশ্লেষণ করে পরবর্তী কোনো কপ-এ বিবেচনার জন্য রেখে দেয়া । ৩০ নভেম্বর সম্মেলনের শুরুতেই জাতিসংঘপ্রধান অ্যান্ডোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, ২০২৩ সাল বিশ্বের উষ্ণতম বছর। এভাবে চলতে থাকলে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্য পূরণ হবে না। কপ-২৮ সম্মেলন সফল করতে তিনটি বিষয়ের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। প্রথমত, মারাত্মকভাবে নির্গমন কমানো; দ্বিতীয়ত, জীবাশ্ম জ¦ালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ¦ালানির ব্যবহার বাড়ানো, তৃতীয়ত, কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী নয়, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনে ভুক্তভোগী দেশগুলোকে তহবিলের প্রতিশ্রæতি নিশ্চিত করা।তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ২০২৩ সালে বিশ্বেরউষ্ণতম বছর হতে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্য পূরণ হবে না যেমন- ২০০৯ সাল থেকে ঐকমত্য ছিল যে, উন্নত বিশ্ব উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ২০২০ সাল থেকে জলবায়ু অর্থায়ন হিসেবে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবে, কিন্তু প্রকৃত অর্থে বছরে এখন মাত্র ২০-২২ বিলিয়ন ডলারের মতো দিচ্ছে যদিও দাবি করা হচ্ছে যে, তারা বছরে ৮০ বিলিয়ন বা ততধিক ডলার দিচ্ছেন। এভাবেই চলে আসছে এবং আগামী সময়ে হয়তো এভাবেই চলতে থাকবে। আর জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুত খারাপ থেকে খারাপ হচ্ছে। এবার দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ২৮তম জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন রাষ্ট্র/সরকার প্রধানসহ ১৯৭ দেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধিরা; আরো আছেন তেল, কয়লা বা জীবাশ্ম জ্বালানির কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধি। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি বা পার্টির সংখ্যাও এবার অনেক বেশি, ৪ হাজার ৪০৯ জন (রেজিস্টার করেছেন) এবং অন্যান্য প্রতিনিধি ৭০ হাজারেরও বেশি। প্রতিটি কপ সম্মেলনেই অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে, অথচ প্রতিটি সম্মেলনই শেষ হচ্ছে মিথ্যা আশ্বাসের মধ্য দিয়ে এবং পরবর্তী সময়ে তা বিফলতার পর্যায়ে পড়ে যাচ্ছে। এর আগের ২৭টি সম্মেলনে কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানোর যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল এবং ধনী দেশগুলো যারা এ নিঃসরণের প্রধানত দায়ী তারা তাদের কথা রাখেনি। প্যারিসে অনুষ্ঠিত কপ২১-এ যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে (১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা বৃদ্ধি সীমিত রাখা) সব দেশ একমত হয়েছিল তা ক্রমাগতভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। কেউ কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমায়নি কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির সব কোম্পানি তাদেরই। কপ সম্মেলনে তাদের উপস্থিতি এ সিদ্ধানমশ গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির যে আশঙ্কা রয়েছে তা বাস্তবে পরিণত হতে যাচ্ছে। বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে ব্যাপক বিপর্যয় ঘটবে। বাংলাদেশের মতো অনেক দেশের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। এ মহাসম্মেলনকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বের মানুষ অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে জলবায়ুর অভিঘাত থেকে পরিত্রাণ পেতে কী বার্তা আসে সেজন্য। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী অধিক কার্বন নিঃসরণে প্রভাবশালী দেশ তথা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা চীনের রাষ্ট্র-সরকারপ্রধান বা শীর্ষস্থানীয় কেউ এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন নি। কপ-২৮ সম্মেলনের সভাপতি আরব আমিরাতের সুলতান আল জাবের বলেছেন, ‘এখন আসল কাজ শুরু হবে। আমি নিজেই এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহায্য করব এবং বাস্তব ও কার্যকর ফলাফলে ভূমিকা রাখব।’ সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় তেল সংস্থা অ্যাডনকের প্রধান জাবেরও বলেছেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালানির ভূমিকা’ অবশ্যই জাতিসংঘের জলবায়ুু আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।গত বছর মিশরের শার্ম আল-শেখে ৬ নভেম্বর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত কপ-২৭ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ।

বিজ্ঞাপন

কপ(কনফারেন্স অব পার্টিস) -২৮ এর সূচনা :

১৭৬০ সালের ইউরোপের শিল্পবিপ্লবের পর থেকেই মূলত পৃথিবীতে কার্বন নিঃসরণ শুরু হয়, যা বাতাসের উষ্ণতা ও বায়ুদূষণের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শুধু গত এক শতকেই পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, জলবায়ুর এ পরিবর্তনের প্রভাবে ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বেড়ে যাবে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে একবিংশ শতাব্দী শেষে বিশ্ব থেকে অন্তত ৪৩টি দেশ সমুদ্রপৃষ্ঠে হারিয়ে যাবে! বাংলাদেশেরও একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ডুবে যাবে। অথচ যেসব দেশ এজন্য দায়ী, তারা এখনো নির্বিকার। পরিসংখ্যানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও রাশিয়া পৃথিবীব্যাপী ৫৫ শতাংশেরও বেশি কার্বন নিঃসরণ করছে। অন্যদিকে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর দায় একেবারেই নগণ্য। বাংলাদেশের দায় তো এক্ষেত্রে মাত্র ০.৪৭ ভাগেরও কম। জলবায়ুতে মানুষের সৃষ্টি ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় ১৫৪টি দেশ ১৯৯২ সালে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনে স্বাক্ষর করে। এরপর থেকে জলবায়ুবিষয়ক সম্মেলন (কপ) প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়।১৯৯২ সালে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাশের পর ১৯৯৫ সালে জার্মানিতে প্রথম সম্মেলনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। এটিই বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন বা কপ (কনফারেন্স অব পার্টিস) নামে পরিচিত। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে (করোনার কারণে ২০০০ সাল ছাডা), বিভিন্ন দেশে। ইউএনএফসিসিসির (ইউনাইটেড ন্যাশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ) মূল দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছিল গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে আনা বা প্রশমন। এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে অনেক দিন ধরে প্রতিবছর কপ-এ, ২০০৬ সাল পর্যন্ত। তারপর ২০০৭ সালে ১৩তম কপ-এ যুক্ত হয়েছে অভিযোজন, জলবায়ু অর্থায়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর, সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি। অর্থাৎ প্রশমনের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করার জন্য উন্নত বিশ্ব থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থ প্রদান, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ব্যবস্থা গ্রহণ আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত হয় । কিন্তু যখন কপ প্রক্রিযা শুর করা হয়েছিল নব্বইয়ের দশকে তখন জলবায়ু পরিবর্তনের যে পরিস্থিতি ছিল অর্থাৎ পৃথিবীর উষ্ণায়ন এবং ফলে প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগ যেমন ছিল, তা থেকে বর্তমান বাস্তবতা অনেক খারাপ।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন(কপ-২৮) এর কতিপয় ইাতবাচক দিক:

এবারের সম্মেলনের কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্থ দুর্বল দেশগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ-সংক্রান্ত তহবিল চালু করতে সম্মত হয়েছেন বিশ্ব নেতারা। কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ (কপ-২৮) সম্মেলনের শুরুর দিনেই জলবায়ু বিপর্যয় তহবিল গঠন করেছেন প্রতিনিধিরা। দরিদ্র দেশগুলোর জন্য জলবায়ু বিপর্যয় তহবিল গঠন করাকে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন তারা। ইতোমধ্যে বেশ কিছু দেশ অনুদানের প্রতিশ্রæতি দিয়েছে। তাদের মধ্যে কপ-২৮ সম্মেলনের আয়োজক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত ১ হাজার লাখ ডলার, জার্মানি ১ হাজার লাখ ডলার, ব্রিটেন কমপক্ষে ৫১০ লাখ ডলার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৭৫ লাখ ডলার এবং জাপান ১০০ লাখ ডলার অনুদান দেয়ার প্রতিশ্রæতি ব্যক্ত করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অন্তত ১.৬২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে একবিংশ শতাব্দী শেষে পৃথিবীর বুক থেকে প্রায় অর্ধশত দেশ সমুদ্রপৃষ্ঠে তলিয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, বন্যা, খরা, দাবানল বেশি হচ্ছে। চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর লিবিয়ার দারনা শহরে সংঘটিত বন্যা এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। এর ফলে অন্তত ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। জলবায়ুর প্রভাবে ২০২৫ সালের মধ্যেই থেমে যাবে আটলান্টিক মহাসাগরের স্রোত, অ্যান্টার্কটিকার পৃথিবীর বৃহত্তম বরফখন্ড গলে ও সরে গিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে, আমাজন শুকিয়ে যাচ্ছে প্রভৃতি। জলবায়ুর এমন পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের ৮৫ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
জলবায়ু-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিপুল অর্থায়ন শুধু সরকারের তরফ থেকে জোগান দেয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। যেসব জনগণ ও জনগোষ্ঠী সর্বাধিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, তাদের সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে বিদ্যমান তহবিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবহার করতে হবে। জনগণের যদি দুর্যোগের আঘাত সহ্য করার সক্ষমতা বেশি থাকে, বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবে। সর্বোচ্চ নিঃসরণকারীদের প্রতি জরুরি ও জোরালো আহ্বান এই যে, বৈশ্বিক উষ্ণতার হার ১.৫ ডিগ্রি সীমার মধ্যে রাখার লক্ষ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থবহ প্রতিশ্রæতি প্রদান করতে হবে।

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন(কপ-২৮) সংক্রান্ত পূর্বের সিদ্ধান্ত সমূহ :জলবায়ুর এমন পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের ৮৫ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এ শতাব্দী শেষে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ১ বা ২ মিটার বাড়লে এ পরিসংখ্যান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ভাব যায়? ১৯৯৭ সালের কিয়োটো প্রটোকল এবং পরে ২০১৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত কপ ২১ এ ২১০০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ বা সর্বোচ্চ ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়ে ১৯৭টি দেশ প্রতিশ্রতি দেয় যা ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তি হিসাবে গণ্য। সে চুক্তিতে আরও প্রতিশ্রতি ছিল উন্নত দেশগুলো অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্যে বার্ষিক ১০০ মিলিয়ন ডলার প্রদান করবে। যদিও উন্নত দেশগুলো সে প্রতিশ্রতি রক্ষা করেনি। কপ ২৬ (যুক্তরাজ্য ২০২১) এ কিছু উলে­খযোগ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যেমন ১. ২০৩০ সালের মধ্যে বন নিধন বন্ধের জন্য ১১০টি দেশ স্বাক্ষর করেছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিন হাউজ গ্যাস মিথেনের নির্গমন ৩০ ভাগের নিচে রাখতে ৯০টি দেশ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এছাড়া কার্বন নিঃসরণের অন্যতম মাধ্যম কয়লার ব্যবহার শূন্যে কমিয়ে আনতে কিছু দেশ অঙ্গীকার করেছে, যেমন-জার্মানি ২০৪৫ সালের মধ্যে এবং চীন ও রাশিয়া ২০৬০ সালের মধ্যে। ভারত জানিয়েছে তারা ২০৭০ সালের আগে শূন্যে নামিয়ে আনতে পারবে না। আর সর্বশেষ জলবায়ু সম্মেলন কপ ২৭ এ (মিশর ২০২২) গুরংত্বপূর্ণ সফলতা ছিল প্রথমবারের মতো একটি লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল গঠনের বিষয়ে একমত হওয়া। এ তহবিলের উদ্দেশ্য হচ্ছে-জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অধিক বিপদাপন্ন অথবা ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোকে সহযোগিতা করা।বাংলাদেশ ও অন্যান্য জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে মিসরে অনুষ্ঠিত হওয়া ‘কপ-২৭’ এর সাফল্যগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি ‘ক্ষতি ও লোকসান’ তহবিল সৃষ্টি করা; যা অভিযোজন বিষয়ক বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জনের অনুকূল একটি চুক্তি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জলবায়ু প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান কাজে লাগানোয় উৎসাহিত করার জন্য ‘কপ-২৭’ এ একটি নতুন পাঁচ বছরব্যাপী কার্যক্রমনির্ভর কর্মসূচি প্রণয়ন। জলবায়ুর পরিবর্তনে জ্বালানির ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার তীরটা প্রথমে আসে পশ্চিমা বহুজাতিক জ¦ালানি কোম্পানিগুলোর দিক থেকে। তবে এ ক্ষেত্রে আড়ালেই থেকে যায়, জ্বালানিশিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করা শক্তিশালী রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি কোম্পানিগুলো যদিও কপ ২৮ শুরু হতে চললেও এ তহবিল গঠনে উলে­খযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই।

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ও বাংলাদেশের অবস্থান

কপ-২৮ সম্মেলনে স্বল্পোন্নত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অর্ত্যন্ত বিপন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর পক্ষে বাংলাদেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে চায়। এ লক্ষ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিষ্পত্তিতে সমন্বিতভাবে কাজ করার লক্ষ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যগুলো হলো : ১. গ্লোবাল স্টকটেক নির্ধারিত ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কার্যক্রমের অগ্রগতি মূল্যায়ন; ২.ভবিষ্যৎ উচ্চাকাঙ্কা, মাইলফলক নির্ধারণ এবং স্পষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ; ৩. অধিক বিপদাপন্ন উন্নয়নশীল দেশগুলোর লোকসান ও ক্ষতি আমলে নেয়ার লক্ষ্যে কপ-২৮ সম্মেলনে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড’ কার্যকর করা এবং ৪. এর বিস্তারিত কর্মপরিধি ঠিক করা। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘কপ সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান যথাযথভাবে তুলে ধরার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দেশের বিশিষ্ট জলবায়ু বিশেষজ্ঞ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মতামত নিয়ে একটি অবস্থান পত্র প্রণীত হয়েছে। অভিযোজন সংক্রান্ত বৈশ্বিক লক্ষ্য ‘গ্লোবাল গোল অন অ্যাডাপটেশন’-এর কাঠামো প্রণয়ন করা, সদস্য দেশগুলোকে অবশ্যই ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য তাদের এনডিসিতে বর্ণিত ২০৩০ প্রশমন লক্ষ্যমাত্রাকে শক্তিশালী করা এবং এনডিসি বাস্তবায়নের জন্য এলডিসি দেশগুলোর অর্থায়ন বাড়ানো। উন্নত দেশগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি ডলার দেয়া নিশ্চিত করা ও জলবায়ু অর্থায়নের সংজ্ঞা চূড়ান্ত করা। অভিযোজনের অর্থায়ন দ্বিগুণ করা, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং ২০২৫ পরবর্তী সময়ে জলবায়ু অর্থায়নের জন্য ‘নিউ কালেক্টিভ কোয়ান্টিফাইড গোল অন ক্লাইমেট ফিন্যান্স’ আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করা। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যার মধ্যে জলবায়ু প্রভাবের কারণে বাস্তুচ্যুত ৪ হাজার ৪০০ পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম বহুতল সামাজিক আবাসন প্রকল্প নির্মাণ অন্যতম। বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারে এখন মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আগত ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার অবিচ্ছিন্ন জলবায়ু চুক্তি এবং উদ্যোগের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের খারাপ প্রভাবগুলো নিয়ন্ত্রণ এবং সীমিত করার ক্ষেত্রে বিশ্ব নেতৃত্বের মর্যাদায় আসীন হয়েছে। অষ্টম সর্বাধিক জনবহুল দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ বিশ্ব উষ্ণায়ন-প্ররোচিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের শীর্ষস্থানে রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত ১৪ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাব এবং ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাত, জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি, খরাসহ অন্যান্য চরম আবহাওয়ায় আগাম সতর্কতা এবং আগাম পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আজ বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল। বিজ্ঞানভিত্তিক আবহাওয়া ও জলবায়ুর উন্নততর পূর্বাভাস প্রদানের মাধ্যমে ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নে ‘বাংলাদেশ আঞ্চলিক আবহাওয়া ও জলবায়ু সেবা প্রকল্প (কম্পোনেন্ট-এ)’ চলমান রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আবহাওয়া পরিষেবার মান বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনকে প্রাধান্য দিয়ে ১০০ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির কারণে বিশ্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট দুর্যোগও বাড়ছে। দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা ও দৈনন্দিন আবহাওয়া বার্তা জানতে মোবাইলে ‘১০৯০’ নম্বরে টোল ফ্রি সার্ভিস চালু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কৃষি-আবহাওয়া পূর্বাভাস ও পরামর্শ সেবার মান উন্নয়নে সাতটি নতুন কৃষি- আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার স্থাপনসহ কৃষি- আবহাওয়া বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে পাঁচটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার, ৯টি ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র এবং ১৪টি নদীবন্দরে নৌদুর্ঘটনা প্রশমনের লক্ষ্যে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে তিনটি স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন। দুটি আধুনিক ডপলার রাডার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। দেশের ১৩টি উপকূলীয় জেলায় স্যাটেলাইট টেলিফোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গৃহীত এসব পদক্ষেপ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখছে।তার বাংলাদেশে আরও কিছু ভালো উদ্যোগ রয়েছে যেমন-এনডিসি (ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন্স) আপডেট, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট গঠন, ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল, ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন ইত্যাদি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কপ ২৬-এর মূল আলোচনা (হাই লেভেল সেগমেন্ট), ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) ও কমনওয়েলথ উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে প্রভাব সম্পর্কে বলেন যে, প্রায় ৬০ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যার সঙ্গে যোগ হয়েছে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা-যারা বন উজাড় ও পরিবেশদূষণ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের সামগ্রিক ক্ষতির হিসাবে জিডিপির ২ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী সিভিএফভুক্ত দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় অর্থ চাহিদা পূরণের ওপর গুরুত্বারোপসহ কিছু প্রস্তাব রাখেন যেমন-সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য চেকসই, সবুজ এবং প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান অর্জন, প্যারিস চুক্তিতে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুসারে উন্নত দেশগুলোকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্যে বার্ষিক ১০০ মিলিয়ন ডলার সুরক্ষিত রাখা, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে হারানো বিভিন্ন পেশাজীবীদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নেওয়া, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখতে প্রধান নির্গমনকারী দেশগুলোর ওপর চাপ প্রদান, সিভিএফ এবং কমনওয়েলথ সদস্য দেশগুলোর উন্নয়ন চাহিদা বিবেচনা ইত্যাদি। এছাড়া তিনি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফোরামে এসব প্রস্তাাবনা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং জলবায়ু প্রতিঘাত থেকে উত্তরণ সহযোগিতার কথা বলেন। সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো ঢাকা সফরে এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশ বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিল থেকে ১০০ কোটি ডলার অনুদান পাবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন। তারপরও বাংলাদেশেও কিছু শিরোনাম জলবায়ুর প্রতিঘাত বিষয়ে আমাদের উদগ্রীব করে যেমন-তীব্র দাবদাহে কৃষি উৎপাদন ঘাটতি, ঋতুবৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে, শীতকাল সংক্ষিপ্ত হয়ে গ্রীষ্মকাল দীর্ঘতর হচ্ছে ও তাপমাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, অতিমাত্রায় লবণাক্ততা বাড়ায় কৃষি উৎপাদন কমছে, কোথাও অসময়ে বৃষ্টি হচ্ছে আবার কোথাও সময়মতো ও পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষিকাজে ব্যাঘাত ঘটছে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশই নেমে যাচ্ছে, নদী ভাঙনের ফলে নদী পাড়ের মানুষ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত (আইডিপি) যা নগরায়ণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছর সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রার বৃদ্ধির ফলে জনজীবন অতিষ্ঠ ও সাধারণ মানষের জীবিকায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : এশিয়া ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার

জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত কর্মকানেমব সুযোগ্য নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘এশিয়া ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পহেলা ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত COP২৮-এর সাইডলাইনে একটি উচ্চ-স্তরের প্যানেলের সময় এই পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি রাষ্ট্রদূত ডেনিস ফ্রান্সিস এবং International Organisation of Migration( আইওএমের) মহাপরিচালক অ্যামি পোপ উচ্চ পর্যায়ের প্যানেলের সহ-আয়োজক ছিলেন। এবারের ‘এশিয়া ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ডটি’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং জলবায়ু গতিশীলতা এবং এর থেকে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের অব্যাহত সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ।এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বরে COP২৬ সম্মেলনের সময় British Broadcasting Corporation(বিবিসি) শেখ হাসিনাকে ‘The voice of the Vulnerable’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। জাতিসংঘ এবং কমনওয়েলথে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে কমনওয়েলথ ও এসডিজির ভবিষ্যৎ অংশীদারত্বের মূলধারায় নিয়ে আসতে তিনি শক্তিশালী নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে চলেছেন বলে প্রতিয়মান হয়।

উপসংহার:

বাংলাদেশ থেকে সরকারি, রেড ক্রিসেন্ট ও জাতীয়-আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি কপ ২৮ এ অংশগ্রহণ করেছে। সম্মেলনে অংশগ্রণের প্রস্তুতি ও বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করতে গত কয়েক মাস ধরেই অবিভিন্ন সভা ও ফোরামে আলোচনা হয়েছে। কপ ২৮ এ বাংলাদেশের অন্যতম উপস্থাপনা হলে কপ- ২৭ এ জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রস্তাবনা অনুসারে সবার জন্য দুর্যোগের পূর্বাভাস (আর্লি ওয়ার্নিং ফর অল) বিষয়ে প্রস্ততি জানানো। এ বিষয়ে সরকার, রেড ক্রিসেন্ট, জাতিসংঘ ও অন্যান্য জাতীয়-আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে ১৭-১৮ নভেম্বর এক জাতীয় পরামর্শক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যেখানে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা ছাড়াও অন্যান্য দুর্যোগে সবার জন্য সংকেত পূর্বাভাস নিশ্চিত করার বিষয়ে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত ও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে আলোচনা করা হয়। এছাড়া সরকারি প্রতিনিধি ছাড়াও অন্যান্য অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন ইভেন্টে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বিনিময় ছাড়াও পলিসি আলোচনায় অংশগ্রহণ ও অ্যাডভোকেসি করেছে। শুধু প্রতিবছর কপ-এই নয় আলোচনা ও দেনদরবার হচ্ছে জাতিসংঘে, আঞ্চলিকভাবে, বিভিন্ন দেশে এবং দেশে দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। এগুলোর ওপর ভিত্তি করে অসংখ্য রিপোর্টও বের হচ্ছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের গতি বেড়েই চলেছে। পৃথিবীর উষ্ণায়ন জুলাই ২০২৩-এ যতদিন থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে তার মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। ইউরোপে ২০২৩ গ্রীষ্মকাল একইভাবে উষ্ণতম ছিল। উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে। অর্থাৎ ক্রমবর্ধমান হারে বরফ গলছে, সমুদ্রপীঠ স্ফীত হচ্ছে এবং পৃথিবীর সর্বত্র প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে চলেছে। প্রকৃতির দুর্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘূর্ণিঝড়, আনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টি। বাংলাদেশ জলবায়ু ব্যবস্থাপনায় বছরে ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বার্ষিক বাজেট থেকে খরচ করে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল থেকে বছরে এক বিলিয়ন ডলারের মতো পায়। কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনেক গুণ বেশি অর্থের প্রয়োজন, যে পরিমাণ অর্থ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল থেকে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এমতাবস্থায় নিজেদের সম্পদ এবং যা বাইরে থেকে পাওয়া যায়, তাই দিয়ে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে মানুষকে বাঁচানো এবং তাদের সংকট মোচনের জন্য চেষ্টা চালাতে হবে। পাশাপাশি অর্থায়ন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধির জন্য কপ এবং সংশ্লিষ্ট সব ফোরামে আরও সোচ্চার হতে হবে।

লেখক: গবেষক, শিক্ষক ও অর্থনীতিবিদ

সারাবাংলা/এজেডএস

জলবায়ু সম্মেলন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জন