Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মশার দাপট চট্টগ্রাম নগরীতে

রায়হান উদ্দিন
৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:৪০

‘মশা মারতে কামান দাগা’ এই বাগধারা ব্যবহার করা হয় তুচ্ছার্থে। অর্থাৎ মশা অতি সামান্য প্রাণী হলেও এত হাঁকডাঁকের কি আছে! কিন্তু সেই মশাই হয়ে উঠছে অতি ভয়ঙ্কর। রমজান মাসে সবাই ভিড় জমাচ্ছে শপিংমল গুলোতে। আর মশা এসে ভিড় জমাচ্ছে মানুষের শরীরে৷ সারা শরীর ঘিরে রাখছে মশা। মশার দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরবাসি। নগরীর রাস্তা-ঘাটে, দোকান-পাঠে, বাসায়-মসজিদে কোথাও বসা যাচ্ছে না। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ জনসাধারণ। দিনের বেলায় মশা চারদিক ভৌঁ ভৌঁ শব্দ করে। ঘুমানো যায় না মশারি ঠাকানো ছাড়া। এমনকি দিনের বেলায়ও মশার যন্ত্রণায় বসা-শুয়া যায় না৷ একটু বসলেই কামড় দিয়ে রক্ত চুষে নেই। রাতে মশার জ্বালায় হাফেজদের কুরআন পড়তে কষ্ট হয়ে যায় তারাবি পড়ানোর সময়। মুসল্লীরা দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা মশার কামড়ে। একটু পর পর কামড় দিতে থাকে। ১০-১২ টা একসাথে ঘিরে রাখে মশা। ঘুমাতে গেলেই একটু ফাঁক পেলেই মশা মশারির ভিতর ডুকে সারারাত কামড়াতে থাকে। অনেক সময় মশার শব্দের কারণে ঘুম ভেঙ্গে যায়। মশারির পাশেই ভৌঁ ভৌঁ করতে থাকে। বিকাল থেকে দরজা জানালা বন্ধ রাখার পরেও মশার কামড় থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ভাত খেতে বসলে ডানহাতে ভাত খেলে বামহাত দিয়ে লেগে যেতে হয় মশা মারার কাজে। পা নাড়াচাড়া না করলে তো আরো শেষ। তাছাড়া মশার যন্ত্রণায় শিক্ষার্থীদেরও পড়ার বেঘাত ঘটছে। পড়ার টেবিলে বসলেই পায়ে কামড়াতে থাকে মশা৷ পড়ার দিকে মনোযোগ দিলেই মশার কামড়ে মনোযোগ বিঘ্নিত হয়। শিক্ষার্থীদের পড়ার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই মশাগুলো। অনেক সময় মশাগুলো গায়ের রক্ত খেয়ে আর নড়াচড়া করতে পারেনা। এতে মারতে সুবিধা হলেও মারতে গেলে হাত লাল হয়ে যায় রক্তে। বইয়ের মধ্যে মশা মারলে রক্তে লাল হয়ে যায় বই-পুস্তক।

নগরীর মানুষের যন্ত্রণার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে মশা৷ ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাসা বাড়িতে কয়েল জ্বালিয়ে মশা মারা বা তাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। কয়েলের উপর মশা ঘুরঘুর করতে থাকে। মশা নিধনে যে ঔষুধ স্প্রে ব্যবহার করে তার কার্যকারিতা নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে নানা প্রশ্ন থেকে যায়। মাঝে মধ্যে দেখী স্প্রে মারতেছে নালার উপরে অলিগলিতে। নালার ভিতরে না মেরে স্প্রে উপরে মারলে কি মশা যাবে নাকি মশা মরবে? কর্তৃপক্ষের কার্যকরী পদক্ষেপের না নেওয়ার কারণে নগর-বন্দর ছড়িয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মশার দাপট চরম আকার ধারণ করেছে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন- যে পদ্ধতিতে দিন-রাত মশক নিধন করা হচ্ছে, সে পদ্ধতিতে কখনো মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। মশা নিধনের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন। এডিস মশা নিধনে সরকার সিটি কর্পোরেশনগুলোতে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে এ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু কোটি কোটি টাকার বাজেটে এডিস মশা নিধন করা সম্ভবপর হচ্ছে না। যার প্রধান কারণ হলো- কার্যকরী ও দীর্ঘস্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ না করা। মশা ও এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে জনসাধারণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, শুধু ডেঙ্গুতেই গত বছর ১ হাজার ৭০৫ জন মারা গেছে। এ বছর সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞরা। তাই কর্তৃপক্ষের শুরু থেকে সতর্ক অবস্থানে থাকাটা জরুরি এবং দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। গণমাধ্যমে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘নগর পরিকল্পনায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে৷ অপরিচ্ছন্ন নগরে মশা জন্মাবে এটাই স্বাভাবিক। মশা নিয়ন্ত্রণে ওষুধের চেয়ে কার্যকর উপায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে পারলে যতটুকু মশা থাকবে তার জন্য লার্ভিসাইট (মশার লাভা ধ্বংস করার ঔষুধ) দিলেই যথেষ্ট।’

রাত-দিন মশা আর মশা। ভৌঁ ভৌঁ শব্দ শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে সাধারণ জনগণ। মশা এখন ঘরের মালিক, মশা এখন শহরের রাজা, মশার রাজত্ব চলছে সারা দেশের মধ্যে। মশা বিস্তারের বেশকিছু কারণ হলো ময়লা আবর্জনা রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় ফেলে রাখা। নালা-নর্দমা, খালে ময়লা পরিষ্কার না করার কারণে এই নালায় ময়লা জমে মশার বংশবিস্তার বৃদ্ধি পাচ্ছে। খাবার হোটেল ও রোস্তোরার পাশে উচ্ছিষ্ট খাবার খোলা জায়গায় পেলে রাখার কারণে মশা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ ডাস্টবিন ব্যবহার তেমন করেনা, যার ফলে মশা আরো বেশি হচ্ছে। বাসা বাড়িতে ফুলের টব, অপরিষ্কার পরিচর্যাহীন ঝোঁপঝাড় ও বিভিন্ন গর্তে জমা থাকা পানিতে মশা বিস্তারের অন্যতম কারণ। মশা নিধনের জন্য চোখে পড়ার মতো কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। দিনের পর দিনের কোটি টাকা খরচ করেও মশার উপদ্রুব কমাতে পারছে না। ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ‘যত বাজেট বাড়ে মশার জন্য, মশাও তত বাড়ে’ জ্যামিতিক হার কেও হার মানাচ্ছে মশা।

মশা ও এডিস মশা নিধনের জন্য সিটি কর্পোরেশনের মশার কার্যকরী স্প্রে মারা জরুরি। এছাড়া বাসা বাড়িতে ঝোপঝাড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ফুলের টবের পানি জমিয়ে রাখা যাবেনা। নালা-নর্দমা পরিষ্কার করতে হবে। বাসা বাড়ির আঙ্গিনা বা আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। কর্তৃপক্ষ যদি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে নগরবাসী স্বস্তি ফিরে পাবে। মশা ও এডিস মশা নিধনে দীর্ঘস্থায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। না হয় দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করবে। আমাদেরও সচেতন হতে হবে। চারদিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে পারলেই মশা, এডিস মশা ও মশাবাহিত রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ

সারাবাংলা/এসবিডিই

মশার দাপট চট্টগ্রাম নগরীতে মুক্তমত রায়হান উদ্দিন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর