দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মডেল
৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৪৬
ভূমিকা:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম একটি নির্বাচন যা গত ৭ই জানুয়ারী উৎসবমুখর পরিবেশে ২৯৯টি সংসদীয় আসনে অবাধ সুষ্ঠু এবং শান্তিশপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সংসদ নির্বাচনে মোট ২৮টি রাজনৈতিক দলের ১৯৭১ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছে। এই সকল সংসদীয় আসনের ফলাফল ৮ই জানুয়ারী বেসরকারীভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায় যে আওয়ামী লীগ ২২৩টিতে, জাতীয় প্রার্টি(জাপা) ১১টিতে, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টিতে এবং অন্যান্য দল যেমন ওয়াকার্স পার্টি-১, জাসদ-১, কল্যাণ পার্টি-১ টিতে বিজয়ী হয়েছে।
ভোটারদের সমর্থন এবং তাদের সরাসরি ভোটে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বিশ্বাসী স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অতীতের ন্যায় বিপুল ভোটে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছে। এই নির্বাচন নিঃসন্দেহে আগুন সন্ত্রাসীদের মুখে চপেটাঘাত করে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যান্য যেসকল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার মধ্যে এই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এতোটাই অবাধ সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সংঘটিত হয়েছে যার ফলে এই নির্বাচন যে বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের নিকট একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মডেল হতে পারে এবং কেন হতে পারে তা এই নির্বাচনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিকের বিচার বিশ্লেষণ থেকে স্পষ্ট হওয়া যায়। নির্বাচন প্রক্রিয়া যে ভাবে শুরু হয়েছিল:
১. নির্বাচন কমিশন গঠন:
‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি একটি সার্চ কমিটি করে দিয়েছিলেন আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে, যেখানে অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন একজন বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিযন্ত্রক, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান, সাবেক একজন নির্বাচন কমিশনার এবং একজন নারী লেখক এই নির্বাচন কমিশন একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। প্রাথমিকভাবে ৩২২ জনের নাম এসেছিল, তার মধ্য থেকে ১০ জনকে বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর পর চূড়ান্ত নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়।
২. নির্বাচনী তফসীল ঘোষণা, প্রার্থী নির্বাচন ও এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু:
রিটার্নিং/সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তা নিয়োগ, মনোনয়নপত্র জমা ও প্রত্যাহারের তারিখ, মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই, মনোনীত প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত, দলভিত্তিক প্রার্থীদের মাঝে পছন্দের মার্কা বন্টন, প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণবিধি ঘোষণা ও সর্বশেষ নির্বাচন আয়োজন । এখানে উল্লেখ্য এবারের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ২ হাজার ৭১৬ জন প্রার্থী, রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে বাতিল হয়ে যায় ৭৩১ জনের প্রার্থিতা, পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল করে ২৮৬ জন তাদের মনোনয়নপত্র বৈধ করাতে সক্ষম হন, প্রত্যাহার করেছেন ৩৪৭ জনএবং নির্বাচন কমিশন ঘোষিত চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৯৭১ জন।
৩. নির্বাচন আয়োজন ও নির্বাচন সংশিষ্ঠ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) সম্ভাব্য সব রকম প্রস্তুত নিয়েছিল। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী সামগ্রী ক্রয়, প্রশিক্ষণ, অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাতসহ নির্বাচন পরিচালনা ব্যয় হিসেবে বরাদ্দ করেছিল প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সিনিয়র ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইসির মতবিনিময় হয়েছে; মাঠ কর্মকর্তাদের ইসির তরফে দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় এবং পর্যাপ্ত দিকনির্দেশনা। পাশাপাশি নির্বাচন প্রশিক্ষকদের এমন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যেই দেওয়া হয়েছিল যথেষ্ট প্রশিক্ষণ। নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর করতে নির্বাচন কমিশনের প্রয়াসে কোনো ঘাটতি থাকার অবকাশ ছিলো না। নির্বাচনের আগে ও পরে নির্বাচনকালীন নিরাপত্তার লক্ষ্যে ১৩ দিনের জন্য অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনে করা হয়েছিল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৫ হাজারের বেশি সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। এবার প্রয়োজনে তার চেয়েও বেশি সেনা মোতায়েন করার পরিকল্পনা নির্বাচন কমিশন করেছিল এবং মোতায়েনও করেছিল। এভাবেই একটি অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ মডেল নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুুত নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সব ধরনের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত মোকাবেলা করে এমন একটি অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়াটা সত্যিই অকল্পনীয় ছিলো। নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি সব ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে উপেক্ষা করে কিভাবে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সংঘটিত হতে পারে এই দিক চিন্তা করলে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের একান্ত প্রচেষ্টায় অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিঃসন্দেহে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মডেল হতে পারে।
৪. বিদেশি পর্যবেক্ষক দলের পর্যবেক্ষণ:
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কতটা অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে তা বিদেশি পর্যবেক্ষক দলের মন্তব্য থেকে বুঝা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও রাশিয়া থেকে আসা বিদেশি পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, সফল ও বৈধ বলে অভিহিত করেছেন যা গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া বাংলাদেশের ১২তম সাধারণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পর তারা এমন মন্তব্য করেন। রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হওয়া একটি সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য জিম বেটস বলেন, ‘আমি নির্বাচনকে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু বলে মনে করছি।’ সংবাদ সম্মেলনে আরও যেসব বিদেশি পর্যবেক্ষক বক্তব্য দেন তাদের মধ্যে ছিলেন রাশিয়ান ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সদস্য আন্দ্রে ওয়াই শুতোভ, ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সিইও হিশাম কুহাইল, গাম্বিয়া হাইকমিশনের মোহামাদু মুসা এনজি, স্কটিশ এমপি মার্টিন ডে, ওআইসির নির্বাচনি ইউনিটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকির মাহমুদ বান্দার, আরব পার্লামেন্টের সদস্য আবদি হাকিম মোয়ালিয়াম, দক্ষিণ এশিয়া গণতান্ত্রিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালক পাওলো কাসাকা, ভিক্টর ওএইচ ও কানাডার চন্দ্রকান্ত আর্য। সংবাদ সম্মেলনে তারা রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী জেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে যে চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়েছে তার কথা তুলে ধরেন। তাদের এই অভিজ্ঞতার তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশর এই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিঃসন্দেহে একটি অবাধ সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের নিকট একটি মডেল হতে পারে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে নির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য যে সময় নির্ধারণ করা হয় তার তুলনায় বাংলাদেশের নির্বাচনে ভোট গ্রহণের সময় অনেক কম দেওয়া হয়। এই অল্প সময়েও বাংলাদেশের এতো বেশিসংখ্যক মানুষ ভোটে অংশগ্রহণ করে বিদেশি পর্যবেক্ষক দলকে এতোটাই তাক লাগিয়ে দেন যা মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য ও পর্যবেক্ষক জিম বেটসের বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে ওঠে আসে। এত অল্প সময়ে প্রায় ৪১.৮ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি সম্পর্কে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য ও পর্যবেক্ষক জিম বেটস বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে কম। অনেক দেশে ভোট সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্তহয়।’ তার মতে এতো অল্প সময়ে ৪১.৮ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি কোনো অংশেই মুখের কথা নয়। একটি অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে বলেই তা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া আমেরিকান গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিসের সিইও আলেকজান্ডার বিগ্রে এর মন্তব্যে চমৎকারভাবে ওঠে এসেছে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কতটা অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে তা। এই নির্বাচন সম্পর্কে আমেরিকান গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিসের সিইও আলেকজান্ডার বি গ্রে বলেন, ‘আমি নিজের চোখে দেখেছি, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। এটি ভোটার, পোলিং স্টাফ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের পেশাদারিত্ব ও ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে।’ গ্রে ১০টি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের পর তার অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘একজন ভোটারও বা কেউ তার কাছে তাদের উদ্বেগ বা অভিযোগ জানাননি। এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা এবং পেশাদারিত্বের সর্বোচ্চ মান পূরণ করেছে। আমি অত্যন্ত নিশ্চিত, নির্বাচন কমিশন সততার সঙ্গে পেশাদার কাজ করেছে।’ তার এই মন্তব্যে বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে গঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের একটি অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সংঘটনের যে প্রতিশ্রুতি ছিলো তা বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশনের যে প্রয়াস তার বাস্তব প্রমাণ খুব চমৎকারভাবে উঠে এসেছে।
৫. দেশি পর্যবেক্ষক হিসাবে এলকপ দলের পর্যবেক্ষণ:
এলকপ একটি স্বাধীন, অরাজনৈতিক এবং অলাভজনক বেসরকারি মানবাধিকার বিষয়ক চিন্তা ও চর্চার সংগঠন যা প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান কর্তৃক ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় । এলকপ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর্যবেক্ষক সংগঠন হিসাবে অনুমতি প্রাপ্ত হয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের ১১টি জেলার ৩০৪টি ভোট কেন্দ্রে ৩২টি পর্যবেক্ষক দল এলকপের সুপারিশে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হন । এই পর্যবেক্ষক দলের পর্যবেক্ষনে দেখা যায় কেন্দ্রগুলো প্রায় সবগুলো প্রাথমিক/মাধ্যমিক স্কুলে হওয়ায় এবং অবস্থানগত উপযুক্ততা নিয়ে কোন ঘাটতির অপর্যাপ্ততা পরিলক্ষিত হয়নি যদিও প্রাথমিক স্থরের স্কুল অনেকগুলো শতবর্ষে কিংবা আরও আগের প্রতিষ্ঠিত। সেগুলোর ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিশনের নীতিমালা অনুসারেই করা হয়েছে এবং প্রিসাইডিং/সহকারী প্রিসাইডিং/পুলিং অফিসারবৃন্দ তাদেরকে নিদৃষ্টস্থানে বসেই তাদের দায়িত্ব পালন কবতে দেখা গেছে। যে সমস্ত দল তাদের পুলিং এজেন্ট দিয়েছে তাদেরকে নিজ নিজ পরিচয়পত্র বহন করে নির্দিষ্টস্থানে আসন গ্রহণ করতে দেখা গেছে। ইলেকশন সামগ্রী যেমন ভোটার তালিকা, ব্যালট পেপার, কালী, সংরক্ষিত ভোট প্রদানের ঘর সংরক্ষিত ছিল। কোন অনাকাঙ্খিত বহিরাগতকে কেন্দ্রের ভিতরে দেখা যায়নি এবং ভোট প্রদানেচ্ছু অনেককেই সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে সেই প্রতিক্ষিত নিজের পছন্দের প্রার্থীক ভোট প্রদানের ক্ষনটির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। বেশ কিছু কেন্দ্রে অতিশয় বৃদ্ধা, সনাতন হিন্দু ধর্মের অনুসারি ও তৃতীয় লীঙ্গের ভোটারদেরকে ভোট দিতে আসতে দেখা যায়। হয়তো বৃদ্ধাদের জীবনের শেষ ভোটই এটি এবং ভোট দিতে পেরে তারা খুশি। শীতের মৌসুম বলে সকালের দিকে ভোটারদের উপস্থিতি কম হলেও দুপুর থেকে তা বাড়তে দেখা যায়। আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের সতর্ক থাকতে দেখা যায় এবং পরিদর্শক দল যে কেন্দ্র গুলোতে পরিদর্শনে গিয়েছিল সেখানে কোন অপ্রতীকর ঘটনার খবর পাওয়া য্য়নি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ প্রায় সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই নির্বাচনটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্যে রয়েছে। সার্বিক ভাবে আমাদের অবলোকনে নির্বাচন সুষ্ঠ,অংশগ্রহনমূলক ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে সত্যি, এরপরও ভবিষ্যতের জন্য কিছু সুপারিশ করা হয়েছে:
এক. ভোট কেন্দ্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরও সিলেকটিব হওয়া উচিত। কারণ, হাজারীবাগ থানার আওতায় কিছু স্কুল জরাজীর্ণ, সরু,অস্বাস্থ্যকর যেখানে কেন্দ্র করা হয়েছে এবং একটি কমিউনিটি সেন্টার পাওয়া গিয়াছে যেখানে ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে।
দুই. ভোট দেয়ার সময় যখন কোন ভি.আই.পি প্রার্থী/এম.পি/সাবেক এম.পি প্রবেশ করে তখন সাথে আরও সমর্থক কর্মী কেন্দ্রে প্রবেশ করে যা নির্বাচন আচরনবিধির পরিপন্থী। তাই কেন্দ্রের পবিত্রতা রক্ষার্থে শৃঙ্কলা বজায় রাখতে হবে।
তিন. ভোট কেন্দ্রের ভিতরে কাপড় দিয়ে মোড়ানো যে ঘরটি পোলিং বুথ হিসাবে ব্যবহৃত হয় সেটি মোটেই নিরাপদ নয় যার আধুনিকায়ন প্রয়োজন।
চার. লক্ষ্য করা গেছে যে কেন্দ্রের বাহিরে ভেটারদের চাপ কিন্তু ঘরের ভিতরে পোলিং অফিসাররা বসে আছে ভোটারদের অপেক্ষায়। এ বিষয়টিতে সমন্বয় ঘটানো প্রয়োজন।
সবশেষে বলা যায় সংবিধানে আছে বলেই পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন করা সম্ভব। দুনিয়ার সব গণতান্ত্রিক দেশে এই প্রক্রিয়া আছে। সেখানে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এ ধরনের তা ঘটতে দেখা গেছে। নির্বাচনের সফলতা নির্ধারিত হয় জনসাধারণের সুখ-শান্তি নিশ্চিত করা, উন্নততর প্রশাসন ব্যবস্থা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও জবাবদিহির ভিত্তিতে। এসব লক্ষ্য মাথায় রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মডেল কেন?
আভ্যন্তরীণ সকল অপপ্রয়াসকে ব্যহত করে দিয়ে একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সংঘটিত হতে পারে সেইদিক বিচারেও এই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মডেল হতে পারে। আবার বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে গঠিত এই নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণ পরিপূর্ণ আস্থা রেখেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে পুনরায় নির্বাচিত করে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কারিগর, জনগণের সমর্থন ও শক্তিতে বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। এইক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা এবং পেশাদারিত্বের সর্বোচ্চ মান পূরণের দিক চিন্তা করলেও এই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মডেল হতে পারে।
লেখক: গবেষক, অর্থনীতিবিদ
সারাবাংলা/এজেডএস