বেসরকারি শিক্ষকরা যেন এতিম, অসহায়
৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:৪৫
বেসরকারি শিক্ষকগণ তাদের মৌলিক কিছু আর্থিক দাবীদাওয়া নিয়ে সম্প্রতি আবার সরব হয়ে উঠেছেন। এমপিও ভুক্ত একাধিক বেসরকারী শিক্ষক সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে তাদের এসকল অভিন্ন দাবী নিয়ে আন্দোলনরত আছেন।তথ্যমতে- নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক,কলেজ,কারিগরি ও মাদ্রাসা সমেত দেশে মোট ৩৫ হাজারেরও বেশী বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার মধ্যে এমপিও ভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার ।এগুলোতে পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষক কর্মচারী কর্মরত আছেন। এরমধ্যে চার লক্ষাধিক রয়েছেন শিক্ষক। বলা যায়, নিম্নমাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষাস্তরের সিংহভাগই এই বেসরকারি শিক্ষকদ্বারা পরিচালিত। অর্থাৎ, দেশের তাবৎ শিক্ষাব্যবস্থার সবচেয়ে বৃহৎ অংশ এই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষাস্তর যার প্রায় ৯৭ ভাগেই সেবা দিচ্ছেন বেসরকারি শিক্ষকগণ। উপরন্তু, এই স্তরদ্বয়ের ওপরই নির্ভর করে উচ্চতর শিক্ষাস্তর। এই নিগুঢ় বাস্তবতার নিরিখে একটি উৎপাদনশীল শিক্ষিত জাতি গঠনে কার্যত এই বেসরকারি শিক্ষকগণই সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রাখছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। উল্লেখ্য, সংবিধানের ১৭নং অনুচ্ছেদে শিক্ষাকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসাবে স্বীকৃত দেওয়া হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে, সেই মূলনীতি বাস্তবায়নের সিংহভাগেই এই বেসরকারী শিক্ষকগণ অগ্রণী অবদান রেখে চলেছেন।
বলা বাহুল্য, রাষ্ট্রীয় সেবায় ন্যাস্ত প্রতিটি পেশারই উৎসমূল শিক্ষা; আর এই শিক্ষার নিয়ামক হলো শিক্ষক।এই চিরন্তন ধারায় শিক্ষকতা হলো সবচেয়ে মহান পেশা এবং শিক্ষক হলো সেই পেশার মহান ধারক ও বাহক। এই বাস্তবতা বিবেচনায় পৃথিবীর প্রতিটি দেশই শিক্ষকদেরকে বিশেষ পেশাজীবি গোষ্ঠী হিসাবে মূল্যায়ন করে থাকে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের দেশে বেসরকারি শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এই চিত্রটা বেদনাদায়ক। উল্লেখ্য, ১৯৮০ সাল থেকে বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) চালু হয়। শুরুতেই তাদেরকে জাতীয় বেতন স্কেলের ৫০ শতাংশ দেওয়া হতো। দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে ২০০৮ সাল থেকে মূল বেতনের শতভাগ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে মাধ্যমিক ও কলেজ স্তরের একজন এন্ট্রিলেভেল শিক্ষক মূল বেতন হিসাবে যথাক্রমে ১২৫০০ টাকা ও ২২০০০ টাকা পান। সাথে ১০০০ টাকা আবাসন ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা বাবদ দেওয়া হচ্ছে যা বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় শুধু অবাস্তবই নয়, লজ্জাজনকও বটে। অথচ, এখানও সরকারি শিক্ষকরা ২০১৫ সালের সর্বশেষ বেতনস্কেলের ৪০%, ৫০% ও ৬০ %( উপজেলা ভিত্তিক) হারে আবাসন এবং ১৫০০ টাকা চিকিৎসা বাবদ পাচ্ছেন। বর্তমানে যেখানে সরকারি শিক্ষকদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের শতভাগ দেওয়া হচ্ছে সেখানে বেসরকারি শিক্ষকদের দেওয়া হচ্ছে মাত্র ২৫%। একই বৈশিষ্ট্যের পেশায় একই পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচীর আওতায় আবাসন, চিকিৎসা ও উৎসবের মতো মৌলিক ইস্যুতে এমন বৈষম্য শিক্ষকতা পেশার ক্ষেত্রে শুভকর হতে পারেনা। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি শিক্ষকরা আর্থ- সামাজিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন যা শিক্ষকতার মতো পরম সংবেদনশীল পেশাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিতে পারে। কেননা, এতে বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে হীনমন্যতা জন্ম নিচ্ছে যার নেতিবাচক প্রভাব নীরবে পাঠদান কার্যক্রমের ওপর পরছে এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ক্রমশ: অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
কখনো-কখনো দেখা যায়, বেসরকারি শিক্ষকরা কোনো দূরারোগ্যব্যাধিতে আক্রান্ত হলে নিরুপায় হয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝেও সহযোগিতার হাত বাড়ায়; অনেকে লোকলজ্জার ভয়ে নীরবে নিভৃতে মারাও যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতির কোপানলে পরে সংসার চালাতে ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন এনজিও গুলোতে চড়াসুদে ঋণগ্রস্ত হয়ে পরছেন। আর্থ-সামাজিক বৈষম্য, আর্থিক অনটন এবং ঋণগ্রস্ততায় সৃষ্ট বিষন্নতা তাদের পারিবারিক, সামাজিক এবং পেশাভিত্তিক জীবন কে বেশ দুর্বিষহ করে তুলছে। বলাবাহুল্য, সংখ্যাধিক্যের দিক থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষাস্তর জাতীয় উৎপাদনে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রাখে। সুশিক্ষিত ও সুদক্ষ জনবল সৃষ্টিতে এদের ভূমিকাই অগ্রগণ্য। এমন স্পর্শকাতর স্তরের শিক্ষকদের নিয়ে রাস্ট্র তথা সরকারের উদাসীনতা কখনোই হিতকর হতে পারেনা। উল্লেখ্য, ২০১৬ সাল থেকে সরকারি চাকুরীজীবিরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা পেয়ে আসছেন। এ ক্ষেত্রে একমাত্র শিক্ষকরাই সশরীরে প্রাতিষ্ঠানিক অফিসিয়ালভাবে বাঙালি জাতির এই ঐতিহ্যময় সাংস্কৃতিক দিবসকে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের নিয়ে পালন করে থাকেন। অথচ শিক্ষকদেরই এই বিরাট অংশকে (বেসরকারি) এই ভাতা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল। আন্দোলনে সরব হওয়ার পর অবশেষে ২০১৯ তথা ১৪২৬ বঙ্গাব্দ হতে তাদেরকে দেওয়া শুরু হয়। ২০১৫ সালে ঘোষিত জাতীয় বেতন স্কেলের ৫% ইনক্রিমেন্ট সরকারী চাকুরীজবীবিরা প্রাপ্য হলেও এই শিক্ষকদেরকে বাইরে রাখা হয়েছিল। পরে এভাবে বহু কাকুতি-মিনতির পর ২০১৯ সাল হতে তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি ২০২৩ সালে হতে ৫% প্রণোদনা প্রদানের ক্ষেত্রেও আমলাতান্ত্রিক গড়িমসি করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, সরকারি চাকুরীজীবিদের দুর্নীতি থেকে বিরত রাখার কৌশল হিসাবে ২০১৫ সালে হ্যান্ডসাম পেস্কেলসহ ৫% ইনক্রিমেন্ট চালু করা হয়। পরবর্তীতে দেখা যায়, দুর্নীতি তো কমেইনি বরং এর প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। খোদ তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘যাদের স্বভাব নষ্ট হয়ে গেছে তারা বদলাবে না।’
শিক্ষকতা পেশায় সাধারণত: দুর্নীতির সুযোগ নেই। কালেভাদ্রে দু’চারজন প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালনা কমিটির যোগসাজসে আর্থিক অনিয়ম ঘটলেও তা তাবৎ শিক্ষকতা পেশার মহত্ত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না। আমাদের ভাবা উচিৎ যে, বেসরকারি শিক্ষকদের আর্থিক দাবীগুলো কোনো বিলাসী চাওয়া নয়। আর্থ -সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এগুলো নিতান্তই মৌলিক। মানুষের পরম মৌলিক অধিকার হিসাবে বিশ্ব সভ্যতায় শিক্ষা স্বীকৃত; একইভাবে আমাদের জাতীয় সংবিধানেও। তবে কেন এই পরম গুরুত্বপূর্ণ খাতকে অবহেলিত রাখা হচ্ছে? ইউনেস্কোর গবেষণালব্ধ পরামর্শে বলা হয়েছে-দেশের জিডিপি’র অন্তত: ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা উচিৎ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই চিত্রটা খুবই হতাশাজনক। সর্বশেষ ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৮৮ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা যা একই অর্থ বছরে সামগ্রিক জাতীয় বাজেটে বরাদ্দকৃত মোট জিডিপি’র মাত্র ১.৭৬ শতাংশ। শিক্ষা বিষয়ক গবেষণা সংগঠন ‘গণস্বাক্ষরতা অভিযান’ এর তথ্যমতে বিগত আট বছরে শিক্ষা খাতে বাজেট সর্বনিম্ন পর্যায়ে ছিল যা গভীর উদ্বেগের বটে! যতটুকু বরাদ্দ হয় তারও আবার অনেক কম বরাদ্দ হয় বেসরকারি শিক্ষক -কর্মচারীদের ভরণ-পোষণে। অথচ জাতির পিতা দেশগঠনে শিক্ষা খাতকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সেই আমলেই ২২% পর্যন্ত বরাদ্দ দিয়েছিলেন যা এদেশের শিক্ষার ইতিহাসে এক নজিরবিহীন রেকর্ড! ‘৭৫ পরবর্তী দেশের তাবৎ শিক্ষা সেক্টরের বৃহত্তম এই শাখাটি সবসময়ই উপেক্ষিত হয়ে আসছে। এই উপেক্ষতা শুধু আর্থিক বিষয়েই নয়, শিক্ষা-প্রশাসনিক বিষয়েও পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষা প্রশাসনে তাদের যথেষ্ট নাজেহাল হতে হয়। শিক্ষা প্রশাসনকর্মীরা বেসরকারি শিক্ষকদের ‘শিক্ষক’ মনে করেন না যা অসংখ্য অপ্রীতিকর উদাহরণে জর্জরিত। এমনিতেই সমগ্র কর্মজীবনই আর্থ-সামজিক অবহেলায় অতিবাহিত হয়, তারপরে অবসর পরবর্তী নিজের রক্তঘামে গচ্ছিত আর্থিক সুবিধাদি সরকারী কোষাগার থেকে পেতেও নিদারুণ ভোগান্তির শিকার হতে হয়। ভোগান্তির ভয়াবহতায় অনেকে প্রাপ্তির আগেই মারা যান। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা!
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের প্রণিত প্রবিধান অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষকদের নির্বাচিত(?) পাবলিক পর্ষদ দ্বারা পরিচালিত হতে হয়। কিন্তু অধিকাংশেরও বেশী পরিচালনা পর্ষদ কখনোই শিক্ষা ও শিক্ষক বান্ধব হয়ে ওঠেনা যা বিচিত্র অরুচিকর ঘটনাবলীর মধ্যে দিয়ে দৃশ্যমান হয়। সাধারণত রাজনৈতিক বিবেচনায় যাদেরকে কর্তৃত্ব দেওয়া হয় তাদের অধিকাংশই সমাজে বিতর্কিত ও কালো তালিকাভুক্ত যা কখনোই শিক্ষকতার সৃজনশীলতার সাথে খাপ খায়না। এদের দ্বারা অনেক সময় শিক্ষকদের ব্যক্তিত্ব খর্ব হয়। অনেক সময় প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে এদের কাছে শিক্ষকদের নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত হতে হয়। চাকুরী অথবা বেতন ভাতা হারানোর ভয়ে নীরবে এদেরকে সহ্য করতে হয়; কেননা, তাদেরকে প্রচলিত বিধিতে ব্যাপক ক্ষমতায়ন করা হয়েছে যা জাতীয় সংসদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকেও করা হয়নি। তাদের এই ক্ষমতায়নও প্রশ্নবিদ্ধ। সবচেয়ে বড় বিষয়, শিক্ষকদের মতো এমন উচ্চশিক্ষিত ও স্পর্শকাতর পেশাজীবি শ্রেণির পরিচালনায় এদেরকে কোনো উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়না। এখানেও সরকার ও রাস্ট্রের চরম উদাসীনতা লক্ষণীয়। সার্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায় বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় এমন রুগ্ন দশা পৃথিবীতে প্রায় নজিরবিহীন। শিক্ষকদের বেদনার্ত দুর্দশা যখন আলোচিত হয় তখন শুধু মুখরোচক ও শ্রুতিরোচক কিছু নির্বাচিত স্তুতি বা বন্দনা বাক্য দিয়ে রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজ তাদেরকে সান্তনার জলে ভাসায়। কিন্তু সংকট(!) সমাধানে কেউই বাস্তবসম্মত উদ্যোগী হয়না। সম্প্রতি ডিসি সম্মেলনের মধ্যদিয়ে বেসরকারি শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধসহ শৃঙ্খলাবিষয়ক এগার দফা খসড়া প্রণিত হয়েছে। অধিকাংশ প্রবিধিই শিক্ষা ও শিক্ষক বান্ধব নয় মর্মে সচেতন মহলে সমালোচনা চলছে। এমনকি মৌলিক অধিকার খর্বকারী আইএলও পরিপন্থী হিসাবেও একাধিক দফা চিহ্নিত হয়েছে। অথচ বেসরকারি শিক্ষকদের বহুল আলোচিত দুর্দশাসমূহ লাঘবে অথবা দূরীকরণে আজ পর্যন্ত ডি সি বা আমলাদের মাঝ থেকে কোনো সুপরামর্শ উঠে আসেনি যা সচেতন মহলকে বিষ্মিত করেছে। অথচ এ বিষয়ে তাদেরও পেশাভিত্তিক ও নৈতিক দায় রয়েছে বৈকি। আমাদের মনে রাখা উচিৎ, শিক্ষা যদি হয় জাতির মেরুদণ্ড তবে শিক্ষক হলো সেই মেরুদণ্ডের প্রাণ-মজ্জা। তাহলে, কেন এই শিক্ষক সমাজকে তার মৌলিক অধিকারের জন্য রাজপথে দাঁড়াতে হবে? কেন তাকে এভাবে সামাজিক ও আর্থিক বৈষম্যের শিকার হতে হবে? কেন তাকে বঞ্চনা ও প্রঞ্চনার পেষণ থেকে বাঁচার জন্য অনশনে প্রাণ দিতে হবে? কেন তার মেধা-মননকে বিষন্নতার আগুনে পোড়াতে হবে? রাষ্ট্র ও সরকার এভাবে কেন তার সৃষ্টিশীল সুকুমার বৃত্তিকে সৃজনশীল শিক্ষা সেবার কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে? দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই এই প্রশ্নগুলোর জবাব ও সমাধান দ্রুততম সময়েই খুঁজতে হবে। জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থেই স্বপ্রণোদিত হয়ে রাস্ট্র ও সরকারকে তাদের প্রতি অধিকতর যত্নশীল হতে হবে। অন্যথায় এর সুদুরপ্রসারি খেসারত সকলকেই ভোগ করতে হবে! ইতোপূর্বে বঙ্গবন্ধুর আদর্শপুষ্ট সাবেক ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী এই শিক্ষকদের দুর্দশার সাথে একমত হয়ে তা নিরসনের আশ্বাস দিয়েছেন। সেই আশ্বাসাবলী হিমায়িত হবে না মর্মে শিক্ষকরা গভীর আশায় আজো বুক বেঁধে আছেন। তবে সেই আশা যেন দুরাশার হতাশায় বিপন্ন না হয় সে দিকে তাদের শতভাগ দায়িত্বশীল হওয়া উচিৎ। এটা বললে অত্যুক্তি হবেনা যে, বেসরকারি শিক্ষকদের উচ্চতর আর্থিক উত্তরণ সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত দিয়েই হয়েছে যদিও তা বাস্তবতার নিরিখে অপ্রতুল। স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছরে দেশ বিষ্ময়কর উন্নয়নের সোপানে ধাবমান যার নেপথ্যের কারিগর এই শিক্ষকরাই। উন্নয়নের রুপকল্প অভিযাত্রায় আগামী চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইতোমধ্যে শিক্ষা কারিকুলামকে যুগোপযোগী করা হয়েছে। সেই কারিকুলামের আওতায় একটি সুশিক্ষিত-সুদক্ষ জাতিশক্তি গঠনের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর চিরলালিত সোনার বাংলা গড়নে এই শিক্ষকদেরই সবচেয়ে বেশী অগ্রণি ভূমিকা পালন করতে হবে। কিন্তু শিক্ষকদের জীবন-মান আঁধারে রেখে তা কখনোই সম্ভব নয়। তাই শুধু কথার ফুলঝুড়িতে নয় বরং সমস্যা সমাধানে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে অচিরেই রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক পদক্ষেপ নেওয়া সমীচীন হবে বলে মনে করি।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এজেডএস