Friday 06 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পোষাককর্মী: ঈদ আনন্দে বাড়ি ফেরা, ফিরতে না পারার বেদনা

অজয় মিত্র
৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:২৪ | আপডেট: ৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৩৪
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বছরে দুইটা ঈদেই মূলত গার্মেন্টেস-এ কর্মরতদের প্রায় জনের উন্মাদনা থাকে বেশী, থাকে উচ্ছাস।

সারা বছরব্যাপী কাজ করে যাওয়া এই মানুষগুলোর সাপ্তাহিক ছুটি ও ১০/১২ দিনের তালিকাভুক্ত সরকারি ছুটি ছাড়া নিরলস শ্রম দিয়ে যেতে হয় সকলের। সবাই তাকিয়ে থাকে রমজানের ঈদ ও কোরবানীর ঈদের ছুটির দিকে। কারণ তখনই মূলত টানা ৫/৭ দিন ছুটি মিলে। ঈদের জন্য সরকারি তালিকাভুক্ত ছুটির সাথে একেক প্রতিষ্ঠান একেক ভাবে অতিরিক্ত ৩/৪ দিন ছুটি দিয়ে থাকে নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিতে। এসবের সাথে সাপ্তাহিক ছুটি আগে পরে করে সাকুল্যে ৭/৮ দিন হয় ঈদের ছুটি, কোথাও কোথাও তা ১৩/১৪ দিনও হয়।

একেক জনের একেক রকম পরিকল্পনাও থাকে এই ছুটিকে কেন্দ্র করে, যার জন্য আগে থেকেই থাকে প্রস্তুতি।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু শেষ মুহুর্তে অনেকের উচ্ছাসে ভাটা পড়ে হিসাব মিলিয়ে টাকায় কুলাতে না পেড়ে ঘরে যেতে না পারার কষ্টে। এই সময় গুলোতেই স্বল্প আয়ের এই মানুষরাই সবচেয়ে বেশী জিম্মি হয়। চট্টগ্রাম শহরে ইপিজেডগুলো ও এর বাইরে বিভিন্ন পোষাক তৈরীর কারখানায় কর্মরত লক্ষ লক্ষ পোষাক কর্মী, কর্মকর্তার বসবাস, স্থানীয় ও নিকট দূরত্ব ছাড়া যার অধিকাংশই উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণ বঙ্গ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের।

অনেকের বেতন বোনাসের সিংহভাগই চলে যায় বাড়ি ফেরা ও আসার যাতায়াত ভাড়ায়। কারণ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নানান তদারকির পরও তখন দূরপাল্লার রুটগুলোতে পরিবহন ভাড়া থাকে স্বাভাবিকের চেয়েও দ্বিগুণ/তিন গুণ। বাড়ি যাওয়া আসায় ফুরিয়ে যায় বেতন বোনাস। না পারে স্বাচ্ছন্দ্যময় নতুন পোষাক কিনতে, না থাকে ঈদের আনন্দ।

ক্রমবর্ধমান ব্যয় বৃদ্ধির জীবন জীবিকায় দ্বিগুণ/তিনগুণ বাড়তি পরিবহন ভাড়ার কারণে অনেকেই ঈদের মৌসুমে বাড়ি ফিরে না সামর্থ্যে কুলাতে না পেরে। কিছু টাকা বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে ৬/৭ দিনের জন্য ছুটি কাটিয়ে আসে। তখন আর বাড়তি ভাড়ার চাপ নিতে হয় না।

একই গন্তব্যের অনেকে আবার একত্রে মিলে বাস রিজার্ভ করে নেই। এতে সঠিক সময়ের যাত্রা নিশ্চিন্তে হলেও জনপ্রতি ভাড়ার হার খুব একটা কম হয় না।

নুন্যতম কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া মহাসড়কে যানজট খুব বেশি থাকে না বলে যান চলাচলে সময় কম লাগলেও ভাড়া গুণতে হয় বেশি। যা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না।

আমি নিজেই প্রায় ১৭ বছর ধরে চট্টগ্রাম ইপিজেডের একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এই ১৭ বছরে ৩২টা ঈদ দেখেছি, যার একটাতেও এর কোন ব্যতিক্রম দেখিনি।

দেখেছি ৫ সদস্যের একটা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি হিসাব করে দেখেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়িতে যাওয়া আসা করলে বেতন বোনাস শেষ হয়ে আরও মাইনাস ফিগারে চলে যাবে টাকার পরিমাণ। অগত্যা নগরীতেই থেকে যায়।

এমনিতেই প্রতি বৃহস্পতিবার নগরী থেকে বিভিন্ন রুটের ভাড়া ২০/৩০ টাকা বেড়ে গেলেও ঈদ মৌসুমে তা অনেকটা অনিয়ন্ত্রিত। নগরী থেকে উত্তর চট্টগ্রাম, দক্ষিণ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম রুটে বাড়তি ভাড়া স্বল্প দূরত্বের কারণে কিছুটা সহনীয় হলেও উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণ বঙ্গের ভাড়া থাকে অনেক বেশি।

পোষাক কারখানাগুলোতে রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নিলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, বগুড়া, পাবনা, নাটোর, জয়পুরহাট, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরিশাল, চাঁদপুর – এসব অঞ্চলের মানুষ তুলনামূলক বেশী। তাই ঈদযাত্রায় তাদের সময় যেমন বেশি লাগে, ভোগান্তিও বেশি।

ঘরমুখো মানুষের স্রোত থাকায় এ নৈরাজ্য রোধে উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপও দেখিনি বিগত ১৬ বছরে অন্তত সিইপিজেড কেন্দ্রীক এলাকাটাতে।

ধর্মভীরুতার এই দেশে মানুষ অতিমাত্রায় ধর্মীয় উন্মাদনায় থাকলেও মানুষ মানুষের প্রয়োজন ও অসহায়ত্বকে পুঁজি করে ঠিকই অসদুপায়ে অর্থ উপার্জন করে চলেছে। অথচ যারা প্রতি সেকেন্ড মিনিট হিসাব করে কাজ করে অর্থ উপার্জন করে, সামর্থ্যের সীমাবদ্ধায় তাদেরই বেশী ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

সিস্টেমের অক্ষমতার এই বাস্তবতা মেনে অনেকে মিলিত হয়ে ছুটি থাকা সত্ত্বেও কর্মস্থলের কাছেই ঈদ উদযাপন করেন।

জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান, সে পুরানো কথা। যাদের শ্রমে, ঘামে, মেধায় এই খাত সম্বৃদ্ধির স্বর্ণদ্বারে পৌঁছেছে, তাদের জীবন মান সাচ্ছন্দ্য যেন অন্যের হাতে জিম্মি। অনেকের সারা বছরের আকাঙ্ক্ষাও পূরণ হয় না, যাদের হয় তাদেরও নাভিশ্বাস উঠে, সয়ে নেয় শুধু নাড়ির টানে ছুটার উন্মাদনায়।

অথচ এই শিল্পকে কেন্দ্র করে চারপাশে যে জন জীবন গড়ে উঠেছে, চারপাশের সুবিধাভোগীরা যেভাবে সম্বৃদ্ধ হচ্ছে, টানা কয়েক প্রতিষ্ঠানগুলোর ছুটি থাকলেই বুঝা যায়, শিল্প ও এর সম্পৃক্ত মানুষগুলো ছাড়া আপাত কোন অস্তিত্বই থাকবে চারপাশের এত আয়োজনের।

তাই, সারা বছরের কথা বাদ দিলেও, ঈদকে কেন্দ্র করে স্বল্প আয়ের এই সাধারণ মানুষগুলোর নাড়ীর টানে ঘরে ফেরার আনন্দকে পুঁজি করে যেন কোন বানিজ্য না হয়, অন্যান্যরা তো বটেই, বিশেষত পরিবহন খাত সম্পৃক্তরাও যেন যার যার ধর্মীয় মূল্যবোধ ও বিশ্বাসে মানবিক হয়, তবেই সকলের অকৃত্রিম উচ্ছাস, আনন্দ…।

লেখক: সংস্কৃতিকর্মী

সারাবাংলা/এসবিডিই

অজয় মিত্র পোষাককর্মী: ঈদ আনন্দে বাড়ি ফেরা- ফিরতে না পারার বেদনা মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

এ কোন রণবীর!
৬ জুন ২০২৫ ১২:৪৫

আরো

সম্পর্কিত খবর