অসাম্প্রদায়িক প্রাণের উৎসবে সাম্প্রদায়িক অপচ্ছায়া
১৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:১৫
সর্বজনীন শান্তি, সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধির বারতা নিয়ে ষড়ঋতুর বৈচিত্র্যময় কালপরিক্রমায় বাঙালির জীবনে প্রতিবছর বৈশাখ আসে। সেই ঐতিহ্যিক ধারাবাহিকতায় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ কেও বাঙালি জাতি প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহাসমারোহে বরণ করতে যাচ্ছে। বৈশাখ বাঙালি জীবনের অত্যন্ত আবেগতাড়িত একটি মাস। বাংলা সনের প্রথম মাস হিসাবে বৈশাখ কে বরণ করতে ১লা বৈশাখে বাঙালির হাজার বছরে লালিত বর্ণিল সংস্কৃতির রুপায়ণে যে অসাম্প্রদায়িক মহাঐক্যের উৎসবমুখর সৃজনশীল জাগরণ ঘটে মুলতঃ সেটাকে ঘিরেই এই মাসের বিশেষত্ব নিরূপিত হয়।
১৫৮২ সালের ২৪ শে ফেব্রুয়ারী পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগোরির আদেশে সৃষ্ট সৌরপঞ্জি তথা গ্রেগোরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়। ঐতিহাসিক সূত্র মতে, ১৫৮৪ খৃষ্টাব্দের ১০ মতান্তরে ১১ মার্চ মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সন প্রবর্তন করেন। হিজরি সনের চাঁদের হিসাবে এবং বাংলা সৌর সনকে ভিত্তি করে তখন বাংলা সন গণনা করা হয়েছিল। প্রাকৃতিক ঋতু নির্ভর কৃষি কাজের ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে এই সনটি প্রথমে ‘ফসলিসন’ হিসাবে নামকরণ হলেও পরে তা ‘বঙ্গাব্দ’ হিসাবে পরিচিতি পায়। আকবরের রাজত্বকালে কৃষকরা চৈত্র মাসের শেষ দিন পর্যন্ত সাজ-সাজ রবে ভূস্বামীদের কৃষিজ খাজনা পরিশোধ করতো। ভূস্বামীরা তাদেরকে আঞ্চলিক ঐতিহ্যমন্ডিত মিষ্টি জাতীয় খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করাতো। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলে পরম উৎসবে এই অনুষ্ঠান গুলো উপভোগ করতো।
আবহমান কাল হতে তা অনুসৃত হয়ে এটা এখন বাঙালির অবিচ্ছেদ্য জাতীয় ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। আমাদের বাঙালি জীবনে এই একটি মাত্র দিনই আছে যে দিনে অসাম্প্রদায়িক চেতনার চিরায়ত চেতনে বাঙালি সত্ত্বা সম্প্রীতির মানবিক মেলবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সুকুমার হয়ে ওঠে এবং বছরের বাকি প্রতিটি দিন,মুহুর্ত গুলো এমনই মননশীলতার স্নিগ্ধ ধারায় উজ্জীবিত থাকার শুভ বার্তা দেয়।
বাঙালির জীবন প্রকৃতির বিচিত্র আচরণে প্রভাবিত। কখনো-খড়ায়, বন্যায়, নদীর ভাঙনে জীবন বিষন্ন হয়ে ওঠে; কখনোবা প্রকৃতির অবারিত দয়ায় বিষন্ন জীবন প্রসন্ন হয়ে ওঠে। এভাবে হাজারো বছরের কালে কালান্তরে বাঙালির বৈচিত্র্যময় সুখ-দুঃখ শ্যামল প্রকৃতির কোমল পরশে এক অসাধারণ শিল্পরুপ পরিগ্রহ করে তা এক অনন্য ধ্রুপদী লোকজ সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে। বাঙালির জীবন ও স্বপ্নের অম্ল-মধুর অবিমিশ্র অনুভূতি গুলো এই মায়াবী প্রকৃতির বিমোহিত শ্যামলিমায় অবগাহিত হয়ে সাহিত্য, সঙ্গীত, চারু, কারু এর মতো এক অনন্য সৃষ্টিশীল শিল্পকলার উদ্ভব ঘটিয়েছে। বাউলগান, জারি, সারি, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, কবিয়াল গান, গম্ভীরা, ঘাটু, যাত্রা, পালা, ঝুমুর, জাগের, পুঁথি, গীতিনৃত্য, চারু-কারু, নকশিকাঁথা ইত্যাদি লোকজ শিল্পের মাধ্যমে বাঙালির সুপ্ত মননশীলতার প্রকাশ ঘটেছে। জাতিগত এমন বৈচিত্র্যময় সমৃদ্ধ সংস্কৃতি আধুনিক বিশ্বসভ্যতায় হয়তো আর দ্বিতীয়টি নাই। এমন পরিপুষ্ট সংস্কৃতি কে মানবীয় দর্শনের শৈল্পিক দর্পন বললেও অত্যুক্তি হবেনা।
সংস্কৃতি প্রতিটি জাতির অস্তিত্ব ও পরিচয় বহন করে। এটি ঐশ্বরিক অনুদানও বটে। ভাষা হলো সংস্কৃতির সবচেয়ে শক্তিশালী উপাদান। বর্ণ বা জাত হলো সংস্কৃতির ভিত্তি। তাই ধর্মেও সংস্কৃতি কে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনেও সংস্কৃতিকে সৃষ্টির লীলা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত-“আর আল্লাহ’র নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আসমান ও জমিনের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্রতা;এতে রয়েছে জ্ঞানবানদের জন্য নিদর্শনাবলী” [সুরা-আর রুম,আয়াত-২২] সংস্কৃতি হলো জাতির রক্ষা কবচ। যে কারণে তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার বাঙালি জাতিকে বিপন্ন করার নষ্ট মানসে বাঙালির ভাষা সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানে। প্রাকৃত ও সংস্কৃত ভাষা হতে উদ্ভুত বাংলা ভাষাকে তারা ‘হিন্দুয়ানী’ ভাষা বলে নগ্ন সাম্প্রদায়িক রং লাগিয়ে পূর্ববাংলার সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম বাঙালিদেরকে মাতৃসংস্কৃতি বিমুখ করে বাঙালি চেতনা দূর্বল করার মাধ্যমে নির্ভরশীল দাস (slave) জাতিতে পরিণত করার সুদুরপ্রসারি মনস্তাত্বিক ষড়যন্ত্র এঁটেছিল। এই ঘৃণ্য লক্ষ্যে তারা কবি গুরুর বঙ্গীয় প্রেমার্তের কালজয়ী সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা…(বর্তমানে জাতীয় সঙ্গীত)কেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। সামগ্রিক বাঙালি সংস্কৃতিকে তারা পূর্ববঙ্গীয় ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির যোগসাজশে বিপন্ন এমনকি নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। এটি অনস্বীকার্য যে, ‘৫২ এর ভাষা সংস্কৃতির চেতনাই ‘৬৬ এর স্বাধীকারকে ‘৭১ এর স্বাধীনতায় উন্নীত করেছিল।
স্বাধীনতা উত্তর ‘৭১ এর এদেশীয় পারজিত শক্তি একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ধর্মের মনগড়া বিকৃত ধারনা দিয়ে বিতর্কিত করতে থাকে। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকাশ্য বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলাম প্রকাশ্যে বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তাদের অপপ্রচার অন্যান্য ধর্ম ভিত্তিক গোষ্ঠীকেও প্রভাবিত করে। বঙ্গবন্ধু কে হত্যার পর ‘৭৫ পরবর্তী জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী দীর্ঘ প্রায় তিনদশক ধরে ধর্মীয় ওয়াজের নামে এদেশের গ্রামে গঞ্জে প্রকাশ্যে পহেলা বৈশাখ সহ বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সরল প্রাণ মানুষদেরকে কূটকৌশলে মোটিভেট করে আসছিল। তার এসকল কথিত ধর্মীয় ওয়াজের রেকর্ডগুলো গ্রামে-গঞ্জে আজো বাজানো হয়।
পরবর্তীতে অন্যান্য ধর্ম ভিত্তিক সংগঠন বা গোষ্ঠীরাও তাতে প্রভাবিত হয়ে একইভাবে এই উৎসবের বিরোধিতা করে আসছে। এ লক্ষ্যে, মসজিদ গুলোকেও দীর্ঘকাল ধরে অপব্যবহার করা হচ্ছে। অধিকাংশ মসজিদ গুলোতে ধর্মীয় আলোচনার নামে এই উৎসবের বিরুদ্ধে মনগড়া ধর্মীয় ভ্রান্ত যুক্তি বচন দিয়ে সাধারণ ধর্ম প্রাণ মানুষদেরকে ভুল বোঝানো হয়। এমনকি একুশে ফেব্রুয়ারি,বিজয় দিবস,স্বাধীনতা দিবস,জাতীয় শোকদিবসের মতো জাতীয় অনুষ্ঠানাদিতে শ্রদ্ধা ভক্তি প্রদর্শনকেও তারা ইসলাম বিরুদ্ধ সংস্কৃতি বলে সাধারণ মানুষকে প্রত্যক্ষ- পরোক্ষভাবে জাতীয় চেতনা বিরোধী করে গড়ে তোলার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে যা কখনোই প্রকৃত ধর্মের কাজ হতে পারেনা। উল্লেখ্য, ২০০১ খৃষ্টাব্দে তথা ১৪০৭ বঙ্গাব্দে রমনা বটমূলের বর্ষবরণে জঙ্গিহামলা করা হয় যাতে ১০ জন মারা যায়। দীর্ঘ ২৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আজো বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে!
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অবাধ অপব্যবহারও এসকল জাতীয় উৎসব বিরোধী ষড়যন্ত্রকে আরো ত্বরান্বিত করছে। ফলে, এটা এখন শহরের সিভিল সোসাইটির একটি উল্লেখযোগ্য অংশকেও অনেকটা মোটিভেট করে ফেলেছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় বরাবরই এজাতীয় বিষয়ে যথেষ্ট উদাসীন। আর মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো তো সারসরি এসকল জাতীয় উৎসবের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদেরকে মগজ ধোলাই করে চলেছে। বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসা এ ক্ষেত্রে বেশ বেপরোয়া। শিক্ষা মন্রণালয়ও এই দায় এড়াতে পারেনা।
গত ৯ এপ্রিল ২০২৩ এ ধর্মীয় অজুহাত তুলে মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরোধিতা করে জনৈক আইনজীবী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষবর্গকে লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করেছিলেন যা প্রকারান্তরে জাতীয় চেতনাতে আঘাতের সামিল। কেননা,মঙ্গল শোভাযাত্রা আবহমান বাঙালি সংস্কৃতিরই অধিকতর সৃজনশীল সংস্করণ। বর্তমানে এটি উৎসবে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। ইতোমধ্যে এটি জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ’এর তালিকায় স্থান পেয়েছে। এর মাধ্যমে বাঙালি সংস্কৃতি বিশ্বের দরবারে অধিক মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।
গত ১৩ এপ্রিল ২০২৩ এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মঙ্গল শোভাযাত্রা পালনে সরকারী নির্দেশনা পালনে আবশ্যিকতা চ্যালেঞ্জ করে তা বন্ধের জন্য মনিপুর হাইস্কুল এন্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রীট দায়ের করার প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত কর্তৃক তা স্থগিত করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের ১২ ও ৪১ ধারা মতে নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতার সাথে সাংঘর্ষিক মর্মে উল্লেখ করা হয়। বিষয়টি সুধীমহলে যথেষ্ট প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এখানে ধর্মের সাথে বাঙালি জাতীয়তাবোধকে সাংঘর্ষিক করে ফেলা হয়েছে যা কার্যতঃ সেই পাকিস্তানি ভাবধারারই নামান্তর! এটি একটি অশুভ লক্ষণ! একই রাষ্ট্রে দ্বৈতনীতি রাষ্ট্রের একক মূলনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে বৈকি! এটা মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সরসরি আঘাতের সামিল। এই বিষয় গুলিতে ইসলামিক আলেমদের মতামতের রেফারেন্স টানা হয়। প্রশ্ন জাগে যে তাদের প্রদেয় মতামত সর্বৈব সঠিক কিনা?ইসলামের মধ্যেই বিশ্ব ব্যাপী প্রচলিত একাধিক মতবাদ আছে। যেমন-শিয়া, সুন্নি, সুফী বা তাশাউফ, ওহাবীসহ আরো কিছু।
বাংলাদেশের জাতীয় সংবিধানে ইসলামের কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মতবাদকে চুড়ান্ত করন করা হয়নি। প্রচলিত যারা ইসলামি বিষয়ে সামাজিক স্তরে ফতোয়া বা মতবাদ দেয় অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় সেগুলো মূল ইসলামি দর্শনের সাথে সাংঘর্ষিক। এদের প্রায় সকলেই ওহাবি মতবাদী যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার চরম বিরোধীতাকারী জামায়াতের মওদুদী দর্শনেরই প্রায় সমার্থক।
রমনা বটমূলে ও যশোরের উদীচীতে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর নৃশংস বোমা হামলার বিরুদ্ধে এদেরকে কখনো সোচ্চার হতে দেখা যায়নি। সমাজে সাম্প্রদায়িক বিষোদগার সহ ইসলামের নামে চরম ফিতনাবাজি কর্মকান্ড, রাজনীতি ও ধর্মের নামে অগ্নিসন্ত্রাস সহ সাধারণ মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধনে মওদূদীবাদীদের ধ্বংসযজ্ঞতায় ওহাবীদের বিষ্ময়কর নীরবতা আমরা দীর্ঘকাল ব্যাপী দেখছি। হেফাজতের শাপলা চত্বর এবং বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ইস্যু গুলোতে ইসলামের নামে ইসলামের আদর্শ বিরোধী চরম অরাজকতা সৃষ্টি করতেও আমরা দেখেছি। বিষ্মিত বিষয় হলো, এসকল গর্হিত অপকর্মের কুশীলব বা নেতৃস্থানীয়রা এবং তাদের সমর্থকরাও আলেম বা ইসলামি স্কলার হিসাবে সমাজে এমনকি কখনো-কখনো রাষ্ট্রের ধর্মীয় পলিসিতেও গ্রহন যোগ্য হয়।
রাষ্ট্রে প্রত্যেক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সুচিন্তিত মত প্রকাশের অধিকার সংবিধান সিদ্ধ। প্রশ্ন জাগে যে,ইসলামে একাধিক মতবাদ থাকতে কেন শুধু ওহাবি মতবাদকে সমাজ বা রাষ্ট্র অনুসরণ বা অনুকরণ করবে? ঐতিহাসিক বাস্তবতায়,এদেশে ইসলামের গড়া পত্তন করেন মহান সূফী সাধকগণ। সূফীবাদ ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শান্তিময় দর্শন যা কালান্তরে প্রমাণিত। অথচ গভীর দুঃখের বিষয় যে,মুক্ত মতের অধিকারে সূফী স্কলারদেরকে মিডিয়া গুলিতেও আলোচনায় ডাকা হয়না। ফলে ইসলামের প্রকৃত শান্তিময় সারবস্তুতা সাধারণের মাঝে অজানাই থেকে যাচ্ছে। ইসলামি দর্শনে ‘স্বদেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ’ যা ওহাবিবাদে বিতর্ক থাকলেও সূফীবাদে প্রকটভাবে সমর্থন করা হয়। এটি গবেষণালব্ধ যে,আমাদের লোকজ সংস্কৃতিতে ইসলামের অসাম্প্রদায়িক সূফী দর্শনের যথেষ্ট প্রভাব আছে। এই বিচারে পহেলা বৈশাখ ও মঙ্গল শোভাযাত্রার মতো বাঙালির পরম অনুভূতিশীল তথা স্পর্শকাতর জাতিগত ও স্বদেশীয় ইস্যুগুলো কেন সাম্প্রদায়িক বিকৃতবাদে বিপন্ন হবে তা অবশ্যই ভাববার দাবী রাখে।
আমাদের সংবিধানে বাঙালি জাতীয়তাবাদী অনুভূতিকে আঘাত করে এমন কোনো কর্মকান্ডকে বরদাস্ত করা হয়নি। রাষ্ট্রের চার মূলনীতির মধ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদ অন্যতম। ঐতিহাসিক সূত্রে বৈশাখী উৎসব ধর্ম বর্ণ নির্বেশেষে বাঙালির জাতীয়াতাবাদী চেতনারই এক পরম সৃজনশীল প্রকাশ। তাহলে এটাকে কেন ধর্মীয় অধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক বলে রাষ্ট্রের মূলনীতিতে আঘাত করা হবে?কোনো গোষ্ঠীর মনগড়া অথবা বিকৃত সাম্প্রদায়িকতাবাদনীতি এই রাষ্ট্রের জাতীয়তাবাদী মূলনীতিকে আঘাত করার নুন্যতম অধিকার রাখেনা।
সর্বোপরি, রাষ্ট্রের জাতীয়তাবাদী মূলনীতিকে আঘাত করে এমন আইনের ফাঁক-ফোঁকড় থাকলে তা অচিরেই সংশোধন করা উচিৎ। পাশাপাশি পহেলা বৈশাখ সহ জাতিগত অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে কেউ যাতে আইনি প্রস্তুতির প্রাথমিক সুযোগও না পায় এবং কেউ এহেন অপচেষ্টা চালালেও যাতে আইনতঃ শাস্তি যোগ্য হয় এমনকি কেউ যেন ধর্মকে বিকৃত করে এসকল অনুষ্ঠানাদির বিরুদ্ধে কোনোরকম অপপ্রচার না চালাতে পারে সে লক্ষ্যে আইনের কঠোর প্রবিধান প্রণয়ন অথবা সংযোজন করা এখন সময়ের দাবী। অন্যথায় প্রজন্ম পরম্পরা ভুল চেতনা বোধে নষ্টভ্রষ্ট হয়ে হয়তো বাঙালি জাতিসত্ত্বা একসময় চ্যালেঞ্জের মুখে পরবে; ফলে, অস্তিত্ব সংকটে পরতে পারে বাঙালি জাতিরাষ্ট্র। সময় থাকতে এখনই সতর্ক হওয়া উচিৎ। কেননা, সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়। তা না হলে হয়তো দশ ফোড়েও কাজ হবেনা।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই
অসাম্প্রদায়িক প্রাণের উৎসবে সাম্প্রদায়িক অপচ্ছায়া কাজী মাসুদুর রহমান মুক্তমত