Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমরা কি বাঙালি হতে পেরেছি

বিপ্লব বড়ুয়া
১৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:৫৯

বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি আদৌ কী সর্বজনীন হতে পেরেছে? আমি এক কথায় বলবো পারেনি। কারণ এখনো বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ঘুরলে দেখা যাবে এই বাঙালিদের মধ্যে কতো রকম ভাষা সংস্কৃতির বিদ্যমান। এটি হচ্ছে বাঙালির ঐতিহ্যের সংস্কৃতি। পৃথিবীর সব দেশে নিজস্ব ভাষাভাষি মানুষেরা তাদের প্রধান দিনকে কেন্দ্র করে কী যে উৎসব-আনন্দের আয়োজন করে, সেটি আমরা আজকাল স্যাটেলাইটের পর্দায় চোখ ফিরালে মুহুর্তে দেখতে পাই। ভাষা ও সংস্কৃতির দিনটাকে কতো রকম বিচিত্র উৎসবের মধ্যে পালন করছে। অথচ, বিশ্বে বাংলা ভাষার জন্মটা এমনভাবে হয়েছে তার মর্যাদা রক্ষায় একসময় বাঙালিরা রক্ত দিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে। কিন্তু সে মর্যাদা বা শ্রদ্ধা কোনোটাই কি আমরা বাঙালিরা অক্ষুন্ন রাখতে পেরেছি। আচ্ছা, আমি ভাষার কথা বাদ দিলাম পহেলা বৈশাখ তো বাঙালির নববর্ষ। বাংলাভাষায় আমরা যারা কথা বলি প্রাণের এই দিনের তাৎপর্যটা আরো ব্যাপকতর হওয়া উচিত নয় কি? শুধুমাত্র পান্তাভাত আর ইলিশ, লাল-সাদা শাড়ি-পাঞ্জাবি পড়লেই কী আমরা বাাঙালি হয়ে গেলাম? এটাই কী বাঙালিয়ানার মহত্ত্বতা? আমরা কী চলাফেরা, আচার-আচরণে, অফিস-আদালতে বাঙালিয়ানা হতে পেরেছি? বছরে এই একদিন বাদে বাংলা মাস, সন ও তারিখের কথা কী মনে রাখে? বাংলা সন ও মাসের প্রতি চরম দৈন্যতা-হীনমন্যতা। বাংলা ভাষা ও বাঙালির উৎসব ঘনিয়ে আসলে দেশের সিটি কর্পোরেশনগুলোকে ঘটা করে ইংরেজি ভাষার সাইনবোর্ড টানাটানি করে নামিয়ে হাজার হাজার টাকা জরিমানা করতে দেখি। সপ্তাহ পার না হতেই আবার যেই সেই। এটি দিয়ে আমাদের কী হচ্ছে? যতদিন না আমাদের হৃদয়ের মানসিকতা পরিবর্তন হবে না, শুধু মাত্র সাইনবোর্ড নামিয়ে কী মানুষের মনের পরিবর্তন করা যাবে? আমি মনেকরি এই পরিবর্তনের জন্য সরকারের সরাসরি পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন। সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনার ওপর তাগিদ বাড়াতে হবে জোরেশোরে। বিশেষ করে সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি চর্চার সাথে দেশের সীমানাজুড়ে যে সব সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো কাজ করছে তাদের প্রতিনিধিদেরকে সম্পৃক্ত করে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের ওপর জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অধীনে দেশব্যাপী যে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় বেশ কয়েক বছর থেকে দেখে আসছি বাঙালির উৎসব আয়োজনে তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারছে বলে মনে হয় না। সেখানে আমলাতান্ত্রিকতার কারণে আয়োজন হয় ঢিলেঢালাভাবে। দেশের প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে যদি সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সাথে জড়িত সংগঠনগুলোর তালিকা প্রনয়ন করে যদি সংগঠিত করা যায় এবং এ বিষয়ে সরাসরি নির্দেশনা প্রদান করা গেলে নববর্ষের সাংস্কৃতিক চর্চার প্রচার ও প্রসার বহুগুণ বেড়ে যেতো বলে মুক্তবুদ্ধির চর্চার সাথে জড়িতরা মনে করেন।

বিজ্ঞাপন

সেদিন আমার হাতে হাইকোর্টের একটি মামলার কপি আসে। আমি দেখেতো অবাক! এটি পড়ে খুব বেশি আত্মস্থ হতে পারিনি। এমনিতে আইন সম্পর্কে অজ্ঞ, তদুপরি সেই আইনের ভাষা প্রয়োগ ও বর্ণনা নিয়ে আমার মধ্যে কিছুটা বিরক্তি আছে। আমরা যেভাবে লিখি, সেরকম কিন্তু আইনের ভাষা লেখা হয় না। আইনের ফাঁকফোকরে পরে নিঃস্ব হয়নি মামলায় যারা একবার জড়িত হয়েছে তারা হারে হারে টের পেয়েছে। আইনের ভাষাগুলো সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্য নয়। আমার কাছে মনে হয় আইনে যেমন মারপ্যাঁচ আছে তাদের লেখা ও ভাষার মধ্যেও যেন প্যাঁচের প্যাঁচের গন্ধ খুঁজে পাই। অবশ্য ২০১২ সালে আমাকে একবার একটি লেখার জন্য মামলায় জড়াতে হয়েছিল। তবে একথা ঠিক যে, আমাকে অতটুকু ঝামেলা পোহাতে হয়নি। যা করেছে আমার এক শ্রদ্ধেয় উকিল বাবুই করে নিয়েছে। তাকে আমি যথাযথভাবে স্মরণ করছি, তিনি এখনো এই আইন পেশায় সততার সহিত নিজের অবস্থান অক্ষুন্ন রাখতে পেরেছেন। চট্টগ্রাম বারের সিনিয়র এডভোকেট দীপক কুমার বড়–য়া’র কাছে যারপর নাই আমি ঋণী। উনার বদান্যতায় সে সময় সমস্ত ঝুটঝামেলা থেকে আমি রক্ষা পেয়েছি। যা হোক, ফিরি আসি মুল প্রসঙ্গে- গত দুই সপ্তাহ আগে হাইকোর্ট থেকে একটি স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার রুল জারি করা হয়। হাইকোর্ট থেকে দেওয়া বিচারপতির রায়টি ছিল ইংরেজিতে। বললাম, এমনি আইনি ভাষা নিয়ে আমার মনে নানা সংশয় সংকট আছে তার ওপর আবার ইংরেজিতে এই রায়টি আমি কোনোভাবে আত্মস্থ করতে পারছি না। এই যে ভাষার সংকট। এগুলো দূর করবে কে? এর জন্য দায়ী কারা! এই যে আইনি ভাষা আবার তার ওপর ইংরেজি লেখা রুলটি সম্পর্কে খুব বেশি জ্ঞাত না হয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া রুলের মধ্যে জোর করে স্থান দখল করে নেয় একটি পক্ষ। পরে বুঝতে পারে তারা রায়ের দেওয়া ইংরেজি নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে পুরোপরো ওয়াকিবহাল ছিলেন না। এরপর তাদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে সেই দিকে আমি আর গেলাম না। এভাবে দেশে ইংরেজিতে দেওয়া রায় নিয়ে কত মানুষ যে সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছে সে খবর কি কেউ রাখেন? বাংলাতে কেন আইনের রায় লেখা হচ্ছে না। বাংলা সংস্কৃতিকে প্রাণের সংস্কৃতি, মায়ের সংস্কৃতি বলে শুধু মুখে আওড়ালে হবে? তার প্রতিকারটা কে করবে? তার ভিত্তিটা যদি মুজবুত না হয় পহেলা বৈশাখের আবেদন কিসের ওপর ঠিকে থাকবে। আসুন, আমরা সত্যিকার অর্থে দেশকে ভালোবাসি, দেশের উন্নয়ন সমৃদ্ধির লক্ষে শপথ নিই, শুধু একদিনের জন্য বাঙালি হওয়ার কথা না ভেবে বছরের ৩৬৫ দিনের জন্য ভাবি, তাহলে দেশে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বৈচিত্রময় সংস্কৃতিতে এগিয়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন

লেখক: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক

সারাবাংলা/এসবিডিই

আমরা কী বাঙালিয়ানা হতে পেরেছি বিপ্লব বড়ুয়া মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর