কিংবদন্তি মহাকবি ও নাট্যকার শেকসপিয়র পাঠ বহুমাত্রিক
২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:২২
বিশ্বসাহিত্যের অনন্য কিংবদন্তি, মহাকবি ও নাট্যকার উইলিয়াম শেকসপিয়রের ৪০৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
মৃত্যুবার্ষিকীতে তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও অভিবাদন!
অনেকে বলেন, উইলিয়াম শেকসপিয়র ছাড়া সাহিত্য মাছ ছাড়া অ্যাকুইরিয়ামের মত। বাহিরে থেকে দেখতে এটাকে নিখুঁত এবং সুন্দর মনে হলেও আসলে এটি মৃত।
বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ নাট্যকার ও ইংরেজি ভাষার লেখক উইলিয়াম শেকসপিয়রকে ইংল্যান্ডের জাতীয় কবি এবং ‘বার্ড অব এভন’ হিসেবে সম্মানিত করা হয়েছে। ৩৮টি নাটক এবং ১৫৪টি সনেটের লেখক। তার মৃত্যুর পরেও অনেক বেশি প্রশংসা পেয়েছিলেন। শেকসপিয়রের লেখা নাটকগুলি পৃথিবীর প্রতিটি প্রধান ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে এবং অন্য কোন নাট্যকারের তুলনায় ব্যাপকভাবে প্রচার হয়েছে। স্পষ্টতই, একটি সৃষ্টিশীল ও কীর্তিমান লেখকের এই ধরনের শক্তিশালী প্রোফাইল তার মৃত্যুর পর অনেকবার হুমকির মুখে পড়েছিল।
যেহেতু শেকসপিয়রের জন্ম, জীবন ও মৃত্যুর বিষয়ে কোন উল্লেখযোগ্য তথ্য নেই। তার শিক্ষা এবং তার ‘অনুমিত’ সাহিত্যিক সংযোগ নিয়ে সমালোচকরা বহুবার বিতর্ক করেছেন যে তিনি কাজগুলি অন্য কাঊকে দিয়ে লিখিয়েছেন। তার এই কর্মজীবনে কৌতুক, রোম্যান্স, বিয়োগান্ত নাটক এবং ইতিহাস সহ নানা ধরনের সাহিত্যিক প্রতিভা ছড়িয়েছে। একজন সম্মানিত কবি এবং নাট্যকার, এটি শুধুমাত্র ১৯ শতকে ছিল যে শেকসপিয়রের খ্যাতি জ্যোতির্বিজ্ঞানে ছড়িয়ে পড়ে। তাকে রোমান্টিকতার প্রতিভাবান বলে মনে হলেও, ভিক্টোরিয়ানরা তাকে শ্রদ্ধা করে। এমনকি বর্তমান ২১ শতকেও, বিভিন্ন সংস্কৃতিতে শেকসপিয়রের কাজগুলি অধ্যয়ন ও সম্পাদন করা হচ্ছে। কোনরকম সন্দেহ ছাড়া, তিনি সাহিত্যে বিশ্বের সবচেয়ে বিস্ময়কর এবং লালিত অবদানকারী।
শৈশব
উইলিয়াম শেকসপিয়র জন শেকসপিয়র এবং মেরি আর্ডেন-এর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও তার আসল জন্ম তারিখ জানা যায়নি, প্রথাগতভাবে এটাকে ২৩ ই এপ্রিল, ১৫৬৪ ধরা হয়। চার্চ-এর রেকর্ড অনুযায়ী তাকে ২৬ই এপ্রিল,১৫৬৪ সালে খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করা হয়। তিনি দম্পত্তির ৮টি সন্তানের মধ্যে ৩য় এবং বড় ছেলে ছিলেন।
শেকসপিয়রের ছেলেবেলা এবং পড়াশুনা নিয়ে খুব কমই জানা গেছে। এটা বলা হয়ে থাকে যে, তিনি স্টার্টফোর্ড-এর কিংস নিউ স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন যেখানে তিনি পড়তে এবং লিখতে শিখেন। যেহেতু সকল গ্রামার স্কুল গুলো একই রীতি নীতি অনুসরণ করতো, এটা বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে, তিনি ল্যাটিন ক্লাসিকাল লেখকদের উপর গ্রামারের উপর ভিত্তি করে বিশদ পড়াশুনা করেছিলেন।
নাট্যজীবনের শুরু
যে রেকর্ডে শেকসপিয়রের নাটকীয় ক্যরিয়ার সম্পর্কে জানা যায় তার আগে ১৫৮৫-১৫৯২ সাল পর্যন্ত ৭ বছর এর একটি সময়কাল ছিল, যেটা সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি, বা পাওয়া গেলেও সেটি খুব অল্প। কেউ কেউ বলে এই সময় তাকে চোরা শিকার খেলায় মেতে থাকতে দেখা যায় , আবার কেউ কেউ বলে যে এই সময় তিনি সহকারী স্কুল শিক্ষক হিসেবে চাকুরি করেছিলেন।
যদিও এটা সঠিকভাবে জানা যায়নি যে তিনি কবে থেকে তার লেখার পেশা শুরু করেছিলেন, তবে রেকর্ড অনুযায়ী দেখা যায় যে তার নাটকগুলো প্রথম লন্ডনে মঞ্চস্থ হওয়া শুরু হয় ১৫৯২ সাল থেকে।
ঐ সময়ের মধ্যে বিখ্যাত শেকসপিয়র সমালোচক এবং ভক্ত উভয়েরই দৃষ্টি আকর্ষন করেছিলেন। শেকসপিয়রের অন্যতম প্রধান সমালোচক রবার্ট গ্রিন, শেকসপিয়রকে বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ূয়া লেখকদের সাথে তুলনা করায় বিরক্তি প্রকাশ করেন।
১৫৯৪ সালে, শেকসপিয়রের বেশিরভাগ নাটক ই লর্ড চ্যামবারলাইন’স এর লোকদের দ্বারা অভিনীত হয়েছিল। এই দলটি খুবই অল্প সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌছে যায় এবং লন্ডনের অন্যতম প্রধান নাটক কোম্পানীতে পরিণত হলো, এতে করে ১৫৯৯ সালে তারা তাদের নিজেদের একটি থিয়েটার কিনে ফেলে এবং এটিকে “গ্লোব” নাম দেয়।
এরই মধ্যে শেকসপিয়রের খ্যাতি নাট্যলেখক এবং অভিনেতা হিসেবে এতটাই ছড়িয়ে পড়ে যে তার নামটি একটি শক্তিশালী বিক্রয় কেন্দ্র হয়ে ওঠে। কোম্পানীর সফলতা শেকসপিয়রকেও আর্থিকভাবে প্রবল করে তোলে।
১৬০৩ সালে রাণী এলিজাবেথের মৃত্যুর পর, জেমস ১ এই কোম্পানিকে একটি রাজকীয় অধিকার পুরষ্কার দেয় এবং এর নাম পরিবর্তন করে “কিংস ম্যান” রাখে। দলটি শেকসপিয়রের প্রকাশিত আরও কিছু নাটক দ্বারা ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং বিখ্যাত সাহিত্য হিসেবে নাটকগুলো বিক্রিও হয় ভালো।
উইলিয়াম শেকসপিয়র নিজের এবং অন্যের লিখা বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেছে, যার মধ্যে “এভরি ম্যান ইন হিস হিউমার”, “সেজানাস হিস ফল”, “দ্যা ফার্স্ট ফোলিও”, “এস ইউ লাইক ইট”,”হ্যামলেট” ও “হেনরী ৬” অন্তর্ভুক্ত ।
উইলিয়াম শেকসপিয়র এর ক্যারিয়ার চিত্র ১৬ শতকের শেষের দিকে এবং ১৭ শতকের শুরুর দিকে ক্রমবর্ধমান ছিল। তার লিখা ৩৫টি নাটকের মধ্যে ১৫টি প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি সফল বিক্রির মাধ্যমে প্রচুর সম্পদ অর্জন করেছেন যা দিয়ে তিনি স্টার্টফোর্ডে “নিউ হাউস” নামে একটি বিশাল বড় অট্টালিকা কিনেছেন।
শেকসপিয়র লিজ এ রিয়েল স্টেট কিনতে শুরু করেন, যেটা তাকে ভালো উদ্যোক্তাতে পরিণত করে। এসব বিনিয়োগ ও তাদের থেকে আসা মুনাফা শেকসপিয়রকে আরো সময় দিত তার নাটক লিখার জন্য।
কবিতার মাত্রা
১৫৯৩ এবং ১৫৯৪ সালে থাইল্যান্ডের প্লেগ বন্ধ হওয়ার কারণে শেক্সপিয়ারের কবিতা লেখার চেষ্টা করেছিলেন । তিনি এই সময়ে দুটি কবিতা নিয়ে এসেছিলেন, ‘ভেনাস অ্যান্ড অ্যাডোনাস’ এবং ‘রেপ অব লুক্রেস’, উভয়ই হেনরি উইরিথসলে, সাউথহ্যাম্পটন এর আর্লকে উৎসর্গ করা হয়েছিল।
যেখানে ‘ভেনাস অ্যান্ড অ্যাডোনিস’ এ ভেনাস এর যৌন অগ্রগতি এবং আডোনিসের প্রত্যাখান এর চিত্র তুলে ধরা হয়, সেখানে নামের মত ‘দ্যা রেপ অব লুক্রেস” এ লুক্র্রেসের মানসিক অস্থিরতা তুলে ধরেছে, যিনি টারকুইন দ্বারা ধর্ষিত হয়েছিলেন । উভয় কবিতা চরম জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং প্রায়ই পুনঃপ্রকাশিত হয়।
শেকসপিয়র তারপর ‘এ লাভারস কমপ্লেইন্ট’ এবং ‘দ্যা ফিনিক্স এন্ড দ্যা টারটেল’ লিখেছেন। যেখানে প্রথমটি একজন মহিলার একটি কৌতুক প্রদান করা হয়েছে যে তার স্বামীর দ্বারা প্রলোভোনের প্রচেষ্টার কারণে যন্ত্রণাদায়ক হয়ে আছে, পরবর্তীটিতে ফিনিক্স ও তার প্রেমিকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।
১৯০৬ সালে শেকসপিয়র তার “সনেটস” নামক কাজ নিয়ে হাজির হয়। এটা কবিতার জগতে তার প্রকাশিত শেষ কাজ ছিল। এটাতে ১৫৪টি সনেট আছে। যদিও এই সনেটগুলো লিখার সময়কাল প্রশ্নবিদ্ধ, এটা বিশ্বাস করা হয় যে, শেকসপিয়র তার সারা ক্যরিয়ার জুড়েই এগুলো লিখেছিলেন কিন্তু ব্যক্তিগত পাঠকের জন্য।
এই সনেটগুলোর একটি নিজস্ব স্টাইল আছে যেটা আলাদা ও অস্বাভাবিক এবং ভালোবাসা, আবেগ ও যৌনতাকে উদযাপন করে। এটা গভীর ভাবপূর্ণ এবং প্রজনন, মৃত্যু এবং সময় সম্পর্কে অনেক তথ্য দেয়।
তার কাজসমূহ এবং স্টাইল
উইলিয়াম শেকসপিয়র তার কাজের জন্য ব্যবহৃত স্টাইল সম্পর্কে বলছেন, তিনি অত্যন্ত উদ্ভাবনী ছিলেন। তিনি রূপক এবং অলঙ্কারশাস্ত্র বাক্যে যোগ করে তার নিজস্ব পদ্ধতিতে ঐতিহ্যগত এবং সম্মিলিত স্টাইল তৈরী করতেন । যাইহোক, যোগফলগুলি কখনও কখনও প্লট বা গল্প অক্ষরের সাথে সংযুক্ত করা হত।
তার বেশীরভাগ নাটকগুলিতেই ছন্দোময় প্যা্টার্নের উপস্থিতি আছে, যা আয়াম্বিক পেন্টামিটারের অছন্দিত লাইন বা ব্ল্যাঙ্ক ভার্স এর সমন্বয়ে গঠিত। এছাড়াও এসব নাটকে কিছু অনুচ্ছেদ আছে যা এশব থেকে বিরত এবং কবিতা বা গদ্যের সহজ ফর্ম এ লিখা।
তার লিখার শুরুর দিকে, ১৫৯০ সালের দিকে শেকসপিয়র তার কাজের ধারণা নিতেন ইতিহাস, “রিচার্ড ২”, “হেনরী ৫”, “হেনরী ৬” এবং অন্যান্য থেকে। তার সময়কালের একমাত্র ব্যতিক্রম কাজ ছিল “রোমিও এন্ড জুলিয়েট”।
পরবর্তীতে শেকসপিয়রের অসাধারণত্ব তার ব্যাপক কর্মের সাথে বিভিন্ন ধরণের স্পর্শ করার চেষ্টা করেছিল। যাখানে “এ মিড সামার নাইটস ড্রীম” ছিল হাস্যরসাত্মক রোমান্স, “মার্চেন্ট অব ভেনাস” নেওয়া হয়েছিল রোমান্স এর ভাগফল থেকে।
“মাচ এডো এবাউট নাথিং” বুদ্ধি ও শব্দখেলার গুরুত্ব দেখিয়েছিল যেখানে “এস ইউ লাইক ইট” ও “টুয়েলফথ নাইট” ছিল অসাধারণ কমেডি। এই সময়ের আরো কিছু কাজ ছিল “টিটাস এন্ড্রোকোনাস”, “দ্যা কমেডি অব এররস”, “দ্যা ট্যামিং অব দ্যা স্রেউ”, “দ্যা টু জেন্টলম্যান অব ভেরোনা”।
এরপরের বছরগুলোতে শেকসপিয়র ট্র্যাজেডিতে হাত দেন। তার চরিত্র রূপায়নে শেকসপিয়র মানব ব্যভার এবং কর্মের ভিতরের রূপ তুলে ধরেন। বিভিন্ন মানব অনুভূতি যেমন ধোকা, প্রতিফল, অজাচার, নৈতিক অবনতি ইত্যাদি তার বিভিন্ন কাজ যেমন “হ্যামলেট”, “কিং লেয়ার”, “অথেলো”, এবং “ম্যাকবেথ” এ বিবৃত হয়েছে। এগুলোর বেশীরভাগ এরই শোকাহত পরিণতি হয়েছে এবং তাই অন্ধকার ট্র্যাজেডির অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।
এটা ছিল তার কাজের শেষ সন্ধি যেখানে সে কমেডী ও ট্র্যাজেডিকে একত্রিত করে ট্র্যাজিকমেডি নিয়ে এসেছিল যেখানে, যদিও একটি কষ্টের গল্প থাকতো কিন্তু শেষটা হতো সুখের। “কামবিলিন”, “দ্যা উইনটারস টেইল”, এবং দ্যা টেম্পেস্ট” শেকসপিয়র এর লিখা এই ধরণের কাজের ক্লাসিক্যাল উদাহরণ।
১৬১০ সালের পরে, শেকসপিয়রের লিখিত নাটকের সংখ্যা জ্যোতির্বিজ্ঞানের দিক থেকে বিন্দুতে হ্রাস পায় এবং ১৬১৩ সালের পর তার আর কোন নাটক ছিল না। ধারণা করা হয়, তার শেষ ৩টি নাটক জন ফ্লেচারের সহযোগিতায় লিখা হয়েছিল, যিনি “কিংস ম্যান” থিয়েটার গ্রুপের জন্য শেকসপিয়র এরপর নাট্যকার হিসেবে সফল হয়েছিলেন।
পরিবার
শুরুর দশকের ঐতিহ্য অনুযায়ী, শেকসপিয়র খুব অল্প বয়সেই এনা হেথেওকে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের সময় তার বয়স ছিল ১৮ বছর , যেখানে এনার বয়স ছিল ২৬।
এই দম্পত্তি ৩টি সন্তান দ্বারা আশীর্বাদিত হয়েছিল, বিয়ের ৬ মাস পরে সুসানা নামের একটি কন্যা সন্তান এবং তারও ২ বছর পর যময বাচ্চা, ১টি ছেলে হ্যামনেট ও ১টি মেয়ে জুরিথ জন্ম হয়।
বলা হয়ে থাকে শেকসপিয়র তার শেষ নিঃশ্বাস জন্মতারিখ এই (এটাও ধারণা করা) ২৩ই এপ্রিল, ১৬১৬ তে ত্যাগ করেন। চার্চ রেকর্ড অনুযায়ি , তিনি পবিত্র ট্রিনিটি চার্চের চাঙ্কালের মধ্যে ৫ই এপ্রিল, ১৬১৬ এ প্রবেশ করেছিলেন। তিনি তার স্ত্রী ও ২ কন্যাকে নিয়ে বেঁচে ছিলেন।
পাথরে আবৃত কবরের স্ল্যাবে এই উপাধিটি লিখা আছে, “ভালো বন্ধু, যীশুর জন্য ক্ষ্মা করো, এখানে ধুলিকণা সরানোর জন্য। দন্য সেই লোক, যে এই পাথরগুলিকে এড়িয়ে চলে, এবং অভিশপ্ত হবে সে যা আমার হাড়গুলিকে সরাবে,”
মরণোত্তর, একটি দারুণ স্মৃতিস্তম্ভ তাকে এবং তার কাজকে সম্মান প্রদর্শন করে নর্থ ওয়ালে নির্মান করা হয়েছিল। লেখালেখির ক্ষেত্রে এটি তার অর্ধ-মূর্তি ছিল। উপরন্তু, সাউথওয়ার্ক ক্যাথিড্রাল এবং ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে তাকে নিবেদন করে অনেক স্মৃতিস্তম্ভ আছে।
অধিকন্তু, শেকসপিয়রের স্মৃতিতে বিশ্বের বিভিন্নস্থানে মূর্তি ও স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে, যা এই উর্বর কবি ও নাট্যকারের মহিমান্বিত কাজের জন্য প্রশংসাপত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু শেকসপিয়রের সাহিত্য আসলে দ্বি-ফলার মতো। ইংরেজরা তাকে সাম্রাজ্যবাদী উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করল, কিন্তু সমালোচক কপিলিয়া কানের মতে উপনিবেশিত লোকেরা তার সাহিত্য থেকে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করার উপাদান খুঁজে পেল।
ইংরেজ মহাকবি উইলিয়াম শেকসপিয়র ১৫৬৪ সালের ২৩ এপ্রিল স্ট্রাটফোর্ড-আপন-আভন নামক একটি মফস্বল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার জন্মতারিখটা অনুমান নির্ভর। স্ট্রাটফোর্ড হলি ট্রিনিটি চার্চে ২৬ এপ্রিল তার ব্যাপ্টিজম হয়, সে প্রমাণ নথিতে আছে। ইংল্যান্ডে তখন যে কোনো শিশু জন্মানোর তিনদিন পর তার ব্যাপ্টিজম বা আকিকা হতো। সে হিসেবে শেক্সপিয়ারের জন্মতারিখ ২৩ এপ্রিল ধরা হয়। এ জন্য এটা গুরত্বপূর্ণ যে শেকসপিয়র মারাও যান ২৩ এপ্রিল। সালটা ছিল ১৬১৬।
শেকসপিয়রের সময় ইংল্যান্ডের চার্চের ভাষা ছিল ল্যাটিন। সে জন্য শেকসপিয়রের জন্ম-নিবন্ধকৃত নাম ছিল গুলিমাস ফিলিয়াস জোহান্স শেক্সপিয়ার। অর্থাৎ, উইলিয়াম হলো জন শেকসপিয়রের ছেলে। শেকসপিয়রের মায়ের নাম ছিল মেরি আর্ডেন শেকসপিয়র। শেকসপিয়রের পিতামহ রিচার্ড শেকসপিয়র স্ট্রার্টফোর্ডের পাশের গ্রাম স্নিটারফিল্ডে বাস করতেন। তিনি রবার্ট আর্ডেন নামক জনৈক ধনী লোকের বাসায় ভাড়া থাকতেন। এ আর্ডেনের মেয়ে মেরি আর্ডেনকে বিয়ে করেন শেকসপিয়রের বাবা জন শেকসপিয়র। শেকসপিয়র, তাই, বাবার দিক থেকে সাধারণ কৃষক পরিবারের ছেলে হলেও মায়ের দিক থেকে বনেদী পরিবারের ছিলেন। জন শেকসপিয়র মেরি আর্ডেনকে বিয়ে করার পর স্ট্রাটফোর্ড-আপন-আভনে বসতি গাড়েন।
জন ও মেরির চার ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে শেকসপিয়র ছিলেন তৃতীয় সন্তান ও প্রথম পুত্র। তখন ইংল্যান্ডে প্লেগ রোগে শিশু মারা যেত বেশি। শেক্সপিয়ারের চার ভাইবোন শিশুবয়সে মারা গেলেও বাকি চারজনের মধ্যে শেকসপিয়র সবচেয়ে বেশিদিন বেঁচেছিলেন। এডমান্ড নামে শেকসপিয়রের সবচেয়ে ছোট ভাই তাকে অনুসরণ করে অভিনয় জগতে ঢুকেছিলেন। কিন্তু ১৬০৭ সালে মাত্র আটাশ বছর বয়সে তিনি মারা যান। শেকসপিয়র তখন লন্ডনের বেশ ধনী লোকদের একজন। ভাইয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তিনি বিপুল ভোজের আয়োজন করেছিলেন।
শেকসপিয়রের বাবা জন এক রকমের উচ্চাকাঙ্খী লোক ছিলেন। তিনি দস্তানা বা গ্লাভস তৈরির ব্যবসা করতেন। চর্মরোগের চিকিৎসাও জানতেন তিনি। জায়গা-জমিনের দালালিও করতেন। অননুমোদিত সুদের ব্যবসাতেও ঢুকেছিলেন। রাজনীতিও করতেন, এবং এক পর্যায়ে ১৫৬৮ সালে স্ট্র্যাটফোর্ডের একজন অলডারম্যান বা পৌরজন নির্বাচিত হয়েছিলেন। এটি ছিল সম্মানের পদবী। তার পদবী অনুযায়ী তিনি হাতের বুড়ো আঙ্গুলে একটি বড় আংটি পরতেন, যেটি সম্ভবত শিশু শেক্সপিয়ারের কল্পনাকে আকর্ষণ করেছিল। শেকসপিয়রের অতি হাস্যরসপূর্ণ কিন্তু ঐতিহাসিক নাটক রাজা ৪থ হেনরি-র প্রথম পর্বে ফলস্টাফকে যুবরাজ হাল (রাজা ৫ম হেনরি)-কে উদ্দেশ করে বলতে শোনা যায়, সে যখন ছোট ছিল তখন এত চিকন ছিল যে অনায়াসে সে অলডারম্যানের আংটির ভিতর দিয়ে গলে যেতে পারত।
শেকসপিয়রের বাবা প্রচুর ধার-দেনা করতেন, ফলে একবার দেউলিয়া হয়ে জেলও খেটেছিলেন। হ্যামলেট নাটকে পোলোনিয়াস পুত্র লেয়ারটিসকে উপদেশ দিচ্ছেন: ঋণদাতা বা ঋণগ্রহীতা কোনোটাই হয়ো না (“নাইদার আ বরোয়ার নর আ লেন্ডার বি”)। ইংল্যান্ড শেকসপিয়রের সময় রানি এলিজাবেথের অধীনে প্রটেস্টান্ট খ্রিস্টান রাজ্য বনে গেলেও অনেকে ছিল তখনো ক্যাথলিক ধর্মে বিশ্বাসী। শেকসপিয়রের বাবা গোপনে ক্যাথলিক ধর্মে বিশ্বাস করতেন, এবং শেকসপিয়রের হ্যামলেট-সহ বহু নাটকে পিতৃচরিত্রে তার বাবার ক্যাথলিক ধর্মে বিশ্বাসের ছায়া খুঁজে পাওয়া যায়। বাবার বৃদ্ধ বয়সে শেকসপিয়র তার বহু আকাঙ্খিত পারিবারিক উপাধি (কোট অব আর্মস) এনে দিয়ে তাকে সন্তুষ্টি দিয়েছিলেন।
শেকসপিয়রের জন্মস্থান স্ট্রাটফোর্ড একটি সুন্দর নিসর্গ-শোভিত শহর ছিল। এটার বিশাল বিশাল মাঠ ছিল। চমৎকার আভন নদীটি এখন যেমন তখনো বয়ে যেত, আর রাজহংসীরা এর জলে সাঁতরাত। বেন জনসনের প্রশংসিত শিক্ষক উইলিয়াম কামডেন ১৫৭০ সালে স্ট্রাটফোর্ডকে বর্ণনা করেছেন সুন্দর একটি ছোট বাজার-শহর হিসেবে।
শেকসপিয়র শিশু বয়সে হয়ত “পেটি স্কুল” বা নিম্ন প্রাইমারি স্কুলে গেছিলেন। তারপর “দ্য কিংস নিউ স্কুল” নামক গ্রামার স্কুলে পড়ে থাকতে পারেন। শেকসপিয়রের আমলে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষাক্রম ছিল গ্রিক ও ল্যাটিনভাষা ভিত্তিক। শিশুদেরকে ব্যাকরণ শিক্ষা ও বাক্য নির্মানের ওপর প্রচুর পাঠ দেওয়া হতো। ল্যাটিনভাষা ছিল বাধ্যতামুলক। বস্তুত ওপরের শ্রেণীতে ইংরেজিতে কথা বলা নিষেধ ছিল। শেকসপিয়রের সময় সবচেয়ে পরিচিত পাঠ্যবই ছিল কবি উইলিয়াম লিলি রচিত গ্র্যামাটিকা ল্যাটিনা। আর সে সময়কার খুব নাম করা শিক্ষক, যিনি রানি এলিজাবেথকেও পড়িয়েছিলেন, রজার আসকাম একটি বই লিখেছিলেন যার মধ্যে ল্যাটিন টেক্সটের পাশাপাশি ইংরেজি অনুবাদ ছিল। শেকসপিয়রের সাহিত্য থেকে প্রমাণ পাওয়া তিনি ঈশপের গল্প, আপুলিয়সের গোল্ডেন এ্যাস, এবং ওভিদের মেটাফরসোসিস খুব ভালো রপ্ত করেছিলেন। ইংরেজি ব্যাকরণ নিয়ে তার খুব ঘর্মাক্ত সময় গেছিল বোঝা যায়। মেরি ওয়াইভস অব উইনডসর নাটকে ওয়েলসের অধিবাসী স্যার হিউ ইভানস, উইলয়াম পেইজকে জিজ্ঞেস করছেন, “হোয়াট ইজ ইয়োর জেনিটিভ কেইস প্লুরাল, উইলিয়াম?”
রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের মতো শেকসপিয়রও স্কুলজীবনকে ভালোবাসতে পারেননি। এাজ ইউ লাইক ইট নাটকে তিনি একজন স্কুলগামী ছাত্রের বর্ণনা দিয়েছেন, যে ছেলেটি অনিচ্ছার সাথে শম্বুকগতিতে এগুচ্ছে স্কুলের দিকে: “ক্রিপিং লাইক স্নেইল/আনউয়িলিং টু স্কুল।”
আঠার বছর বয়সে ১৫৮২ সালের নভেম্বরে শেকসপিয়র বিয়ে করেন প্রতিবেশী গ্রাম শটারির নিবাসী, এবং তার চেয়ে ছয় বছরের বড়, অ্যান হাথাওয়েকে। বিয়ের ছ’মাসের মধ্যে তাদের প্রথম কন্যা সুসানা জন্ম নেয়। এর তিন বছর পর অ্যানের জমজ বাচ্চা হয়। মেয়ে সুসানা ও জুডিথ অনেকদিন বাঁচেন, কিন্তু ছেলে হ্যামনেট (মতান্তরে হ্যামলেট) মাত্র ১১ বছর বয়সে মারা গেলে শেকসপিয়র বিরাট ধনসম্পদের মালিক হয়েও পুরুষ-উত্তরাধিকারীবিহীন হয়ে পড়েন। শেকসপিয়রের এ নিয়ে উদ্বেগ ছিল, তাই দেখা যায় ম্যাকবেথ নাটকে ম্যাকবেথ লেডি ম্যাকবেথকে বলছেন, ‘কেবল পুত্রসন্তানের জন্ম দাও’ (‘ব্রিং ফর্থ ম্যান-চিলড্রেন অনলি”)।
১৫৮৫ থেকে ১৫৯২ পর্যন্ত এ সাত বছর শেকসপিয়রের জীবন সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। শেকসপিয়রের জীবনীকার ও গবেষকেরা এই ‘লস্ট ইয়ারস’ নিয়ে নানা তত্ত্ব বের করেছেন, তবে এখন সবচেয়ে বেশি যে ধারণাটা গুরুত্ব পাচ্ছে সেটি হচ্ছে ই. এ. জে হনিগম্যান প্রদত্ত এ তথ্যটি যে শেকসপিয়র ঐ সময়টুকুতে কোন ধনী লোকের গৃহে শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন।
তবে ১৫৯২ থেকে শেকসপিয়রের অস্তিত্ব লন্ডনে জানা হয় রবার্ট গ্রিন নামক এক প্রবীণ নাট্যকারের এক আক্রমণাত্মক প্যাম্ফলেট থেকে। তিনি বলছেন, ‘কে একজন আনকোরা লোক এসে কাক হয়ে (“আপস্টার্ট ক্রো”) ময়ূরের পুচ্ছ ধারণ করে পুরো লন্ডন শহরকে নাচাচ্ছে’। এ ‘নাচাচ্ছে’ বলতে যেয়ে তিনি “শেইক-সিন” শব্দটি ব্যবহার করেন, যার মধ্যে শেকসপিয়রের নামের অনুরণন পাওয়া যায়। গ্রিনের আক্রমণের কারণ হলো সে সময়কার অন্যান্য জনপ্রিয় নাট্যকারেরা যেমন টমাস কিড, ক্রিস্টোফার মার্লো প্রমুখ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারী- যে জন্য তাদেরকে ‘ইউনিভার্সিটি উইট’ বলা হতো, কিন্তু শেকসপিয়রের সেরকম কিছু ছিল না, উপরন্তু তিনি ছিলেন মফঃস্বল থেকে আগত।
তার বাল্যকালে প্রচুর ভ্রাম্যমাণ নাট্যদল স্ট্রাটফোর্ডে প্রদর্শনীতে যেত। নাট্য উপভোগের সে অভিজ্ঞতা শেকসপিয়রের অভিনয় জীবনে কাজে আসল। শেকসপিয়র সম্ভবত প্রথমে ফিলিপ হেনসলোর অধীনে নাট্যজগতে প্রশিক্ষণ শুরু করেন। ফিলিপ হেনসলোর ডাইরি (হেনসলোস ডাইরি) এলিজাবেথিয় নাট্যজগত সম্পর্কে জানার জন্য একটি অন্যতম আকর গ্রন্থ। তিনি ছিলেন ১৫৮৭ সালে স্থাপিত দ্য রোজ থিয়েটারের মালিক। সম্ভবত খুবই প্রাথমিক অবস্থায় দ্য রোজ থিয়েটার হলে শেকসপিয়র যুক্ত ছিলেন। এ দলের শক্তিশালী নাট্যকার ছিলেন ক্রিস্টোফার মার্লো এবং অভিনেতা ছিলেন হেনসলোর জামাতা এডওয়ার্ড এলেইন। এর অল্পসময় পরে (১৫৯৪) শেকসপিয়র জেইমস বারবেজের অধীনে দ্য থিয়েটার (১৫৭৬ সালে স্থাপিত, লন্ডনের প্রথম উন্মুক্ত মঞ্চ) হলে অভিনয়কারী দল “লর্ড চেম্বারলেইনস মেন” দলে যোগ দেন, এবং বন্ধুত্ব হয় জেইমসের পুত্র রিচার্ড বারবেজের সঙ্গে যে কি না অসাধারণ অভিনেতা ছিলেন। হ্যামলেট যখন প্লেয়ার কিংকে বলেন যে হাত পা নাচানাচি করে অভিনয় করা চলবে না (“টিয়ারিং আ প্যাশন টু ট্যাটারস”), অভিনয় করতে হবে বাস্তবের অনুকরণে তখন আসলে শেকসপিয়র এলেইনের অভিনয় রীতির সমালোচনা করে বাববেজের অভিনয়কে প্রশংসা করছিলেন।
শেকসপিয়রের নিজের লেখা এপিটাফে সাবধান করে দেওয়া আছে হাড় চোরেরা যেন তার শবের হাড্ডি চুরি করতে সাহস না করে। তখন কফিন ভেঙে লাশ চুরি ইংল্যান্ডের দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা ছিল।
১৫৯৯ সালে শেকসপিয়রের নাট্যগোষ্ঠী টেইমস নদীর পাড়ে সাউথ ব্যাংক নামক জায়গাটিতে দ্য গ্লোব নামক একটি নতুন থিয়েটার হল প্রতিষ্ঠা করে, যদিও এর কাঠ এবং পাটাতন আসলে ছিল সম্প্রতি ভেঙে ফেলা দ্য থিয়েটারের পুরোনো কাঠ। শেকসপিয়রসহ বারোজন অভিনেতা ও নাট্যকার এর মালিক হন। নাট্যমঞ্চ হিসেবে দ্য গ্লোব অনন্য বৈশিষ্ট্য দ্বারা ঋদ্ধ ছিল। কিন্তু এর কোনো ধবংসাবশেষ পাওয়া যায়নি। তবে হেনরি ফিফথ-সহ বহু নাটকে শেকসপিয়র গ্লোবের পাটাতন মঞ্চের অসরাসরি উল্লেখ করেছেন।
১৬০৩ সালে রানি এলিজাবেথ মারা গেলে পরবর্তী রাজা জেইমস দ্য ফার্স্ট শেকসপিয়রের দলটিকে রাজার একান্ত দল হিসেবে গ্রহণ করেন, এবং দলটির নাম পরিবর্তিত হলো ‘দ্য কিংস মেন’ হিসেবে।
শেকসপিয়র মোট ৩৮টি নাটক, ২টি লম্বা কবিতা ও অন্যান্য কিছু কবিতাসহ ১৫৪টি সনেট লিখেছিলেন। একটা সনেটে রাত জেগে জেগে মোমবাতির আলোয় পরিশ্রম করে লেখালেখির কথা আছে।
শেকসপিয়রের শেষ রচিত নাটক দ্য টেম্পেস্ট, ১৬১১ সালে। এরপর শেকসপিয়র লন্ডন ছেড়ে স্ট্রাটফোর্ডে গিয়ে বসবাস করেন, এবং পেটের অসুখে মারা যান। তার উইলে স্ত্রীকে ‘সেকন্ড বেস্ট বেড’ দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলে, গবেষকেরা এর কোনো কুল কিনারা পাচ্ছেন না ভেবে এমন হলো কেনো। শেকসপিয়রের নিজের লেখা এপিটাফে সাবধান করে দেওয়া আছে হাড় চোরেরা যেন তার শবের হাড্ডি চুরি করতে সাহস না করে। তখন কফিন ভেঙে লাশ চুরি ইংল্যান্ডের দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা ছিল।
১৬২৩ সালে শেকসপিয়রের প্রথম সমগ্র সংগ্রহ (ফোলিও এডিশন) বের হলে মুখবন্ধনী কবিতাতে তার সতীর্থ বেন জনসন লিখেন, শেকসপিয়র শুধু তার নিজের সময়ের কবি নন, তিনি সর্বকালের কবি: “হি ওয়াজ নট অফ অ্যান এইজ, বাট ফর অল টাইম।”
এ বিশ্বাসে ইংরেজরা যখন ভারতবর্ষ শাসনে নামে তারা শেকসপিয়রের সাহিত্যকে সামনে রাখে। আসলে তারা শেকসপিয়রকে তাদের সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্য পূরণের জন্য ব্যবহার করতে থাকে। কিন্তু শেকসপিয়রের সাহিত্য আসলে দ্বি-ফলার মতো। ইংরেজরা তাকে সাম্রাজ্যবাদী উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করল, কিন্তু সমালোচক কপিলিয়া কানের মতে উপনিবেশিত লোকেরা তার সাহিত্য থেকে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করার উপাদান খুঁজে পেল।
আজকে তাই শেকসপিয়র পাঠ মানে হচ্ছে কোনো একক নৈতিক শুদ্ধ মানবতার পাঠ নয়, তার পাঠ মানে হচ্ছে ঐতিহাসিক চেতনা সমৃদ্ধ বহুমাত্রিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য-সমৃদ্ধ পাঠ।
লেখক: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই
কিংবদন্তি মহাকবি ও নাট্যকার শেকসপিয়র পাঠ বহুমাত্রিক মুক্তমত সৈয়দ আমিরুজ্জামান