Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লজ্জা পায়, তারা পায় না

মো. আসাদ উল্লাহ তুষার
২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:১৮

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সাম্প্রতিক দেয়া এক বক্তব্যে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির বর্তমান চিত্র সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। সম্প্রতি পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের এক অনুষ্ঠানে তিনি এই বক্তব্য দেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ভূয়সী প্রশংসা করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে তাকালে এখন আমাদের লজ্জা হয়। শিল্প প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের অসাধারণ অগ্রগতির কারণে বাংলাদেশের দিকে তাকালে আমরা লজ্জা পাই। পাকিস্তানের বহুল প্রচারিত সংবাদ মাধ্যম দ্য ডন’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে একটি অধিবেশন চলার সময় বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিবেদনে বলা হয় ঐদিনের বক্তব্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি যখন বেশ ছোট ছিলাম তখন আমাদের বলা হতো এটি (বাংলাদেশ) আমাদের কাঁধের বোঝা। আজ আপনারা সবাই জানেন সেই বোঝা কোথায় পৌঁছে গেছে। আমরা যখন তাদের (বাংলাদেশ) দিকে তাকাই তখন আমরা লজ্জাবোধ করি।’

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে পাকিস্তানের অর্থনীতিতে ক্রান্তিকাল বিরাজ করছে। মুদ্রাস্ফীতির উর্ধ্বগতি, বৈদেশিক ঋণ এবং ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে অর্থনৈতিক অবস্থা ভঙ্গুর প্রায়। রিজার্ভের অবস্থাও তুলনামূলক বাংলাদেশের চাইতে অনেক কম। বিভিন্ন সুচকে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের জিডিপি ৪৬০ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানের ৩৪৬ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে বার্ষিক মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৯৩ মার্কিন ডলার এবং পাকিস্তানে ১ হাজার ৫৪৩ ডলার।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের বার্ষিক রপ্তানি আয় ৫৫ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানের ৩৯.৪ বিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশে ঘরের বাইরে কাজ করা নারীর সংখ্যা ৩৬ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশে প্রতি হাজারে শিশুমৃত্যু ২১ জন, পাকিস্তানে ৫৯ জন। বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ৭৬ শতাংশ, পাকিস্তানে ৫৯ শতাংশ। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২.৩ বছর,পাকিস্তানে ৬৯ বছর। মাথাপিছু আয় গত এক দশকে বাংলাদেশে দ্বিগুণের বেশি হলেও পাকিস্তানে মাত্র ৫০ শতাংশ বেড়েছে। কাগজে-কলমে এখন পাকিস্তানে বেকার বেশি। বেকারত্বের হার বাংলাদেশে ৬ শতাংশ, আর পাকিস্তানে ১৩.২৫ শতাংশ। শ্রমশক্তিতে তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশে নারীদের অংশগ্রহণ বেশি। বাংলাদেশের ১ কোটি ৮৫ লাখ নারী মজুরির বিনিময়ে কাজ করেন। পাকিস্তানে এই সংখ্যা ১ কোটি ৩৫ লাখ। অর্থাৎ পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে প্রায় ৫০ লাখ বেশি নারী কাজ করেন। প্রায় সব সূচকেই বাংলাদেশ এখন পাকিস্তান থেকে অনেক এগিয়ে। এর আগে পাকিস্তানের আরেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ক্ষমতা নিয়েই যখন তার দেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন তখন অনেক পাকিস্তানি নামিদামি ব্যক্তিবর্গ সুইজারল্যান্ড নয় পাকিস্তানকে বাংলাদেশ বানিয়ে দেয়ার কথা বলেছিলেন। সেসময় তাদের কথায় বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির বর্তমান চিত্র ফূটে উঠেছিল।

অথচ দুঃখের বিষয় বাংলাদেশের এই অভূতপূর্ব উন্নয়ন অগ্রগতি দেশের কিছু রাজনৈতিক দল ও মানুষ দেখতে পায় না। আমাদের দেশের মতো হতে না পেরে অন্যরা যেখানে লজ্জা পায় সেখানে আমাদের এমন উন্নয়ন অগ্রগতিতে গর্ববোধ করতে পারেন না। তাদেরও লজ্জা হয় সে লজ্জাটা দেশের উন্নতি নিয়ে গর্ব করতে না পারার লজ্জা। পাকিস্তানিরা দেশের কাঙ্খিত উন্নতি না করতে পেরে লজ্জা পায় আর আমাদের দেশের পাকিস্তানি এজেন্টরা দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন স্বীকার করতে লজ্জা পায়। তারা নির্লজ্জ বেহায়ার মতো বলে তারা নাকি পাকিস্তান আমলেই ভালো ছিল। তবে তারা এবার অন্য কারণে আরো বেশি লজ্জা পেয়েছে, তা হলো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের বাংলাদেশের উন্নতি নিয়ে দেয়া সাম্প্রতিক বক্তব্যে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সৎ সাহসে তার দেশকে নিয়ে এই বক্তব্য দিতেন না যদি না পাকিস্তানের চাইতে সব বিষয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে না যেতো। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি নিয়ে এর আগেও পৃথিবীর অনেক দেশই ভুয়সী প্রশংসা করেছে। এবার যেহেতু খোদ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফই উন্নয়ন অগ্রগতির ভুয়া প্রশংসা করলেন সেই কারণেই কিনা বাংলাদেশের পাকিস্তানপ্রেমি বিরোধী দলসহ তাদের মতের সুশীলরা একদম চুপ হয়ে গেছে। অপেক্ষাকৃত ‘শত্রু’ রাষ্ট্র পাকিস্তানও এখন বাংলাদেশের প্রশংসা করে। এ লজ্জা রাখি কোথায়! রাত্রিকালীন টকশোতে এই নিয়ে আর কোন কথা নাই। আর এই বদলে যাওয়া দেশের নামই বাংলাদেশ, যার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতির পিতা ও বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার নেতৃত্বে চব্বিশ বছরের লড়াই সংগ্রাম শেষে ৩০ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাকিস্তানিদের পরাজিত করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে শহীদদের আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে। দেশের জন্য তাদের এই জীবন উৎসর্গ কিছুটা হলেও সার্থক হয়েছে।

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেরও এখনো অনেক সমস্যা আছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, যুদ্ধ-বিগ্রহ, অকল্পনীয় করোনা মহামারী ইত্যাদির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির উপরেও ঝড়ো হাওয়ার আচ লেগেছে। দ্রব্য মুল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, অপচয় ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশে এখনো তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছে না। পাকিস্তানি স্টাইলে দেশ দুইবার সামরিক শাসনের জাতাকলে নিষ্পেষিত না হলে, দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ধারাবাহিকতা থাকলে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মম নৃশংসভাবে হত্যা না করলে দেশ আরো অনেক আগেই উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছে যেত। আজকের যে অভাবনীয় উন্নতি বঙ্গবন্ধু যদি আরো দশটি বছর এই দেশ সেবা করার সুযোগ পেতেন তাহলে বাংলাদেশ আজ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতো। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি আজ আইয়ুব -ইয়াহিয়া- ভুট্টোর অপকর্মের ফল। বাংলাদেশিদের প্রতি চব্বিশ বছরের নিপীড়ন নির্যাতন নিগৃহীতের ফসল। এই উপমহাদেশের রাজনীতিতে বাংলাদেশ আজ পাকিস্তানকে হিসেবেই নেয় না। অভ্যন্তরীণ নানা ষড়যন্ত্র চক্রান্ত উপেক্ষা করে বাংলাদেশ আজ শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরালসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যা পাকিস্তানিরা উপলব্ধি করতে পারলেও বাংলাদেশের কিছু মানুষ উপলব্ধি করতে পারছে না। তারা প্রতিনিয়ত দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে।

কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণের লক্ষ্যে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করে দিয়ে যেতে পারলেও তার স্বপ্ন অর্থনৈতিক মুক্তির আগেই ঘাতকরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর একুশ বছর সেই আগের পাকিস্তানি স্টাইলেই এ দেশ পরিচালিত হতে থাকে। সেখান থেকে বের করে এনে দেশকে আজকে যেখানে নিয়ে দাঁড় করিয়েছেন সেই উন্নতি দেখেই পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী লজ্জাবোধ করেন। বর্তমানে দেশের এই অভূতপূর্ব উন্নয়ন অগ্রগতির প্রধান কারিগরই হচ্ছেন জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। বিশেষ করে টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় থাকার কারণে সার্বিকভাবে দেশের বিশাল উন্নতি সাধিত হয়েছে। বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশের অপর নাম শেখ হাসিনা। একজন বঙ্গবন্ধু মুজিব ছিলেন বলেই বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশ হয়েছিল। আর একজন শেখ হাসিনা আছেন বলেই বাংলাদেশের আজ এই অভাবনীয় উন্নতি। যা দেখে পাকিস্তানিরা লজ্জা পায় কিন্তু এদেশের দলকানা পাকিস্তানি এজেন্টরা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে দেশের কাঙ্খিত উন্নতি না করতে পারায় লজ্জা পায় না।

লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ

সারাবাংলা/এসবিডিই

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মুক্তমত মো. আসাদ উল্লাহ তুষার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর