বাড়িওয়ালাদের নতুন এক চরম সাম্প্রদায়িক ট্রেন্ড
২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:২৪
ঢাকা ও সিলেট শহরে মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তদের বাসা ভাড়া নেওয়া এক মহান পীড়া। বাড়িওয়ালা জানান দেন, উনি রাজা- ভাড়াটিয়ারা উনার প্রজা। সময় অসময় নেই, উনি চাইলে যে কোনও ভাড়াটিয়ার কক্ষে যেতে পারেন। দুপুর রাতে এটা ওটা দেখার নামে বেডরুমে। ইচ্ছে হলেই ভাড়াটিয়াদের জিজ্ঞেস করতে পারেন- রাতে ফরজ গোসল করেছেন কি না! ভদ্র কিংবা নরম মনের কেউ হলে তো, ব্যস! পেয়ে বসেছেন। কোনও কথা নেই। ভাড়াটিয়া হয়ে যান জ্বী হুজুর, জ্বী হুজুর করা চাকর বাকর।
কে কী করে, কীভাবে ঢাকা শহর হয়ে বিভাগীয় শহরে ফ্ল্যাট-প্লট-বাড়ি করেছেন; তা কিন্তু কারোরই অজানা নয়। বিশেষ করে ঢাকা শহরে। দু’নম্বরী ছাড়া বাড়িওয়ালা খুঁজে পাওয়াই দুস্কর। কিংবা প্লট-ফ্ল্যাটওয়ালা অনেকেরই বুকের পাটা নেই যে, চিৎকার করে বলতে পারবেন- আমি সৎ। নৈতিকতার মানদণ্ডে শতভাগ সৎ কামাই করে ঢাকা শহরে বাড়ি করেছি।
এই বাড়িওয়ালারই আবার এক ধাপ এগিয়ে নতুন করে চালু করেছেন এক নতুন চরম সাম্প্রদায়িক ট্রেন্ড। হিন্দুদের বাসা ভাড়া দেওয়া যাবেনা। দয়া করে কেউ বাসা ভাড়া দিলেও শর্ত জুড়ে দেন, পূজো করা যাবে না,করলেও করতে হবে চুপিসারে। পূজোর সময়ে কাঁসা শঙ্খধ্বনি উলুধ্বনি দেওয়া যাবে না। হঠাৎ বাসা ভাড়া বাড়িয়ে দেন কয়েকগুণ বেশি। একবিংশ শতাব্দীর মধ্যলগনে এসে শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভয়াবহভাবে গড়ে উঠেছে এমন অসহিষ্ণু হিংসা বিদ্বেষ ধর্মীয় কিংবা সামাজিক বাণিজ্যিক ট্রেন্ড। মানুষ মানুষকে সাম্প্রদায়িক যাঁতাকলে ধর্মের বিভাজন করাতকলে শারীরিক মানসিকভাবে কেটে টুকরো টুকরো করছে দিনের পর দিন।
বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার কমিশনগুলো নামকাওয়াস্তে কাগুজে বাঘ। তাদের অনেকেরই কাজ হলো, চিঠি চালাচালি অনর্থক বাগাড়ম্বরগিরি দুর্বলদের হুমকি ধমকি তাপানুকুল কুঠুরিতে বসে সরকারি টাকার শ্রাদ্ধ সেরে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া। মানবাধিকার কমিশনের সরকারি টাকার টেলিফোনগুলো পর্যন্ত বিজি রাখেন সারাক্ষণ। তারা টেলিফোনে কর্কশ ভাষা ব্যবহার করে অভিযোগকারীর মনোবল ভেঙে দেন। প্রেম বিরহ গিন্নি বাচ্চাকাচ্চা স্কুলটিচার সেরে আন্টি খালার সাথে গল্প সারেন অনেকেই। অফিস শেষে সরকারি তাপানুকুল গাড়িতে বাসা ফিরে আবার এসি ছেড়ে শীতের দেশে হারিয়ে যান। তারা দেশে দেশে ভয়ঙ্কর মানবিক বিপর্যয় সংকটাপন্ন অসহায় মানুষের ন্যূনতম মানবিক আইনী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তা-ও হাতে গোনা। দেশে ঊন মানুষের গল্পের ভীড়ে কাঁদছে কবর-শ্মশান! বিশ্বের ঊন মানুষের বীতশ্রদ্ধ ভাবনার নিত্য নিতান্তই জিজ্ঞাসা- সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র কী এবং কেমন?’
বিশ্বময় মানবাধিকার সার্বজনীন ঘোষণাপত্র অধিকার কাগজে-কলমে বিপর্যয় বয়ে আনছে দিনের পর দিন। কবির কলমের ভাষায়- ‘মানুষ হয়ে জন্মানোর দুঃসাহস তোমার কী আছে?’
লেখক: প্রাবন্ধিক, কবি ও সরকারি কর্মকর্তা
সারাবাংলা/এসবিডিই
বাড়িওয়ালাদের নতুন এক চরম সাম্প্রদায়িক ট্রেন্ড মুক্তমত রাজীব কুমার দাশ