প্রাণিসম্পদ খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তা কর্মসংন্থানে সহায়ক
৩ মে ২০২৪ ১৬:৪৭
বিগত ১৮ এপ্রিল সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাণিজ্য মেলার পুরোনো মাঠে দুই দিনব্যাপী প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই বেসরকারি খাত এগিয়ে আসুক। বেসরকারি খাতকেই উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চাই। তাদের সব রকম সহযোগিতা করতে চাই। এর ফলে আমার দেশের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। আমরা তা-ই চাই।’ এ সময় তিনি খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিজেদের উদ্যোগী হওয়ার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন। সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে যুবসমাজকে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু একটা পাস করে চাকরির পেছনে না ছুটে যুবসমাজ যদি নিজের উদ্যোগে একটু ব্যবসা-বাণিজ্য করে, তাহলে কিন্তু আমরা যথেষ্ট এগিয়ে যেতে পারব। এসব ক্ষেত্রে আমাদের যুবসমাজকে এগিয়ে আসার জন্য আরও উৎসাহিত করতে হবে। যাতে কখনও আমাদের কারও ওপর নির্ভরশীল হতে না হয়। খাদ্যনিরাপত্তার সঙ্গে আমাদের নিজস্ব পুষ্টির ব্যবস্থা আমরা নিজেরাই করতে পারি, সে বিশ্বাস আমার আছে।’
উৎপাদন বৃদ্ধিতে গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের গবেষণা আরও বাড়াতে হবে। আজ আমরা ৪০ ভাগের ওপরে পেঁয়াজ উৎপাদন করতে পারি। আমরা কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে চাই না। প্রতিটি পণ্য আমরা নিজেরাই উৎপাদন করব।’ তার সরকার খামারিদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে উৎসাহিত করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি খাতের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘দেশের চাহিদা মিটিয়ে হালাল মাংস রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ আমাদের রয়েছে। অনেক দেশ হালাল মাংস আমাদের থেকে ক্রয় করতে চায়। সেজন্য আমাদের পশুপাখিগুলোকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে লালন-পালন ও নিয়ম মেনে জবাই করতে হবে এবং প্যাকেটজাত করার ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে হচ্ছে কি না, সে বিষয় আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।’
এক্ষেত্রে পশু জবাইয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেজন্য কিছু আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন বুচার হাউস (কসাইখানা) আমাদের তৈরি করা দরকার। বিশেষ করে, কোরবানির সময় রাস্তাঘাটে যেখানে সেখানে ফেলে পশু জবাই করা আমাদের বন্ধ করতে হবে। সুনির্দিষ্ট একটি স্থান থাকবে, যেখানে পশু জবাই হবে এবং যার যার চিহ্নিত পশু সে সে নিয়ে যাবে। তাহলে পুরো প্রক্রিয়া যেমন স্বাস্থ্যসম্মত হবে তেমনি পশুর পরিত্যক্ত অংশ ও চামড়া যথাযথভাবে কাজে লাগানো যাবে।’ পশুর হাড়, রক্ত, চামড়া এমনকি বর্জ্যও বিভিন্ন কাজে লাগে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা যদি এগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে আমাদের অনেক কাজে আসতে পারে।’ এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। ৪৭০টি উপজেলায় সরকার ভ্রাম্যমাণ পশু চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে জানিয়ে দেশের আটটি বিভাগ ও ৬৪টি জেলায় ভেটেরিনারি ফার্ম, পশু চিকিৎসালয় ও সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার বিষয়েও জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। মৎস্য ও পশুপাখির খাদ্যও যেন নিরাপদ হয় এবং এগুলো যাতে পরবর্তীতে মানবদেহে কোনো রোগের সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতেও আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও জানান, সরকার পরিত্যক্ত চরাঞ্চলে মহিষ, ভেড়া, হাঁস-মুরগি চাষে উৎসাহিত করছে। এমনকি ভাষানচরে যেখানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, সেখানেও প্রচুর ভেড়া ও মহিষ লালন-পালন হচ্ছে। হাঁস-মুরগি প্রতিপালন ও মাছের চাষ হচ্ছে।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের যেটুকু মাটি ও সম্পদ রয়েছে, তা ব্যবহার করেই আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারব। জনগণ মৎস্য, পশু ও হাঁস-মুরগি পালনে আরও এগিয়ে আসবেন এবং আমাদের খামারগুলো আরও উন্নত হবে।’
বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা বিধানে প্রাণি সম্পদ খাতের গুরুত্ব অনস্বীকার্য । গ্রাম বাংলায় লক্ষ বেকার যুবক, ভূমিহীন প্রানিমশক কৃষক গবাদি পশু-পাখি পালনের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য পরির্বনের নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশ ব্যাপী ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিক মুরগীর খামার, গবাদি পশু মোটা তাজাকরণ ও ডেইরী খামার গড়ে উঠা ইত্যাদি এই খাতের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধিয়েই প্রমাণ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি উপাত্তে দেখা যায় দেশের মোট ২ কোটি ৮৭ লক্ষ গৃহস্থালীর কৃষির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সংযুক্ত রয়েছে। এই কৃষির উৎখাত প্রাণি সম্পদ দেশের প্রবৃদ্ধিতে, পুষ্টি উন্নয়নেও খাদ্য নিরাপত্তায় অধিক ভ‚মিকা রাখছে বিশেষত: শ্রমঘন, স্বল্প পূজি ও স্বল্প জমির প্রয়োজন হেতু। বিবিএস এর বৈদেশিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান হতে দেখা যায় যে, সাম্প্রতিক সময়ে এই খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে যথাক্রমে চামড়াজাত পণ্য (২০২৪.১০ কোটিটাক) , মাংস ও মাংজাত (৯.৮৮ কোটি টাকা), দুগ্ধজাত পণ্য (১৫.৯৭ কোটি টাকা), প্রাণিজ উপজাত (১২৬.৮১ কোটি টাকা) অর্থাৎ সর্বমোট ২১৭৬.৭৭ কোটি টাকা। আবার উৎপাদন ১২.৮৩ লক্ষ মেট্রিক টন, মাংস ৭১.৫৪ লক্ষ মেট্রিক টন এবং ডিম ১৪৯৩ কোটিতে দাড়িয়েছে। তারপরও দেখা যায় যে, দেশের বাড়তি জনসংখ্যার কারণে এই সকল উৎপাদন দেশের চাহিদা পূরণে সামর্থ হচ্ছে না এবং এখনও দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে যাদের মধ্যে শিশু ও নারীর সংখ্যাই বেশী। এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে সবার জন্যই পুষ্টি নিশ্চিত করতে হলে প্রাণী সম্পদ উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই।
সম্প্রতিক সময়ে প্রথম আলো আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে খাদ্য নিরাপত্তা তৈরি, সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করণ, কর্ম সংস্থান, নারীর ক্ষমাতয়নসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রাণি সম্পদেও গুরুত্বের কথা উঠে এসেছে। এই বিষয়গুলো জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এস.ডি.জি) এর প্রায় ৯টি লক্ষ্যমাত্রার সাথে সম্পর্কযুক্ত বিধায় এই খাতকে গুরুত্ব দিলে এস.ডি.জি এর দারিদ্য দূরীকরণ ও সুস্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে বিশেষত: ২০৩০ সালের মধ্যে। আবার বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের ভিশন-২০২১ অর্জনে জনপ্রতি দিনে দুধ ১৫০ মিলিমিটার, মাংস ১১০ গ্রাম এবং বছরে ১০৪টি ডিমের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে কাজ করছে দেশের প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর। দেশের কর্মশক্তির ২০ শতাংশ প্রাণীজ সম্পদ খাতের আওতায় রয়েছে আর ৪৪ শতাংশ আমিষ আসছে এই খাত থেকে ।দেশকে মধ্য রেখা উন্নত আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে প্রথম প্রয়োজন মেধা যার সাথে প্রাণিজ আমিষের সম্পর্ক রয়েছে। এই বিবেচনায় সরকার প্রথমে সহ¯্রাদ্ধ উন্নয়ন লক্ষ (এম.ডি.জি) এবং পরবর্তীতে টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট (এস.ডি.জি) এর প্রাণী সম্পদ সেক্টর ৯টি অভিষ্ট ও ২৮টি লক্ষ্য মাত্রার সাথে যুক্ত হয়েছে। এরি মধ্যে এ সকল অভিষ্ট ও লক্ষ্য অর্জনে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে যে গুলোর বাস্তবায়নে প্রয়োজন আইন ও নীতিমালা সহায়তা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, ঋণ সহায়তা বৃদ্ধি, গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সেবার সম্প্রসারণ, প্রাণী সম্পদ বীমা ব্যবস্থার চালু করণ ও বেসরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধি। আবার প্রাণি সম্পদ খাতে এস.ডি.জি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গৃহীত নীতি ও কৌশল সমূহের মধ্যে রয়েছে প্রাণী সম্পদ সেবা সম্প্রসারণ, দুগ্ধ ও মাংস উৎপাদন, পোল্ট্রি উন্নয়ন, কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে জাত উন্নয়ন, পশু-পাখীর রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিকার, প্রাণী সম্পদ গবেষনা ইত্যাদি। এখন ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাণী সম্পদ সেক্টরে এস.ডি.জি অর্জনের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে (১) জনবল সহ প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি (২) পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও বাজার ব্যবস্থার উন্নতিকরণ (৩) পরিবেশ বাজার গবাদিপশু উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা (৪) তথ্য প্রযুক্তির ঘাটতি (৫) খামার পর্যায়ের প্রণোদনার অপ্রতুলতা ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন বিতরণ ও ভোক্তা পর্যায়ে অপ্রতুলতা ও নিরাাপদ খাদ্য উৎপাদন, বিতরণ ও ভোক্তা পর্যায়ে সচেতনতার অভাব। এই সকর চ্যালেঞ্জ গুলোর মোকাবেলায় রাজস্ব বাজেটে ও ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়নের অগ্রগতি সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে এবং আশা করা যায় ২০৩০ সালের আগেই প্রাণী সম্পদ সম্পর্কিত এস.ডি.জি এর লক্স্যমাত্রা অর্জিত সম্ভব হবে। নিরাপদ প্রাণীজ আমিষ উৎপাদন, বিপণন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ সহ গ্রামীণ জনগণকে সার্বিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে।
দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের প্রধান চালিকা শক্তি এখন নারী। বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের শ্রমে ভর করে এগোচ্ছে দেশের গবাদিপশু ও পোলট্রির সম্প্রসারণ কার্যক্রম। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এ খাতে নারীর অংশগ্রহণ ৮৮ দশমিক ২ ও পুরুষের মাত্র ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রতিবেদনটিতে শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭-এর তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, দেশের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ১৪ দশমিক ৫ শতাংশই প্রাণিসম্পদ খাতের ওপর নির্ভরশীল। আর কৃষি খাতের কর্মসংস্থানের মধ্যে প্রাণিসম্পদ খাতের অংশ ৩৫ শতাংশ। এছাড়া দেশের মোট পুরুষ কর্মসংস্থানের মাত্র ২ দশমিক ৪ শতাংশ প্রাণিসম্পদ খাতে কাজ করছে আর নারীদের মোট কর্মসংস্থানের ৪১ শতাংশই প্রাণিসম্পদসংশ্লিষ্ট খাতে। খাতসংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, গ্রামাঞ্চলে বেশির ভাগ পরিবারেই হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু লালন-পালন করা হয়। সাধারণত বাড়ির নারীরাই এগুলোর দেখাশোনা করেন। নারীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হলে সামনের দিনগুলোয় এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে তারা আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন। পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ খাতেও উৎপাদন বাড়বে। গ্রামাঞ্চলে অনেক নারী এখন পশু ও হাঁস-মুরগি পালনের মাধ্যমে পরিবারের সচ্ছলতায় ভূমিকা রাখছেন। তাদেরই একজন রংপুরের মাহিগঞ্জ থানার রোকসানা বেগম। শ্বশুর-শাশুড়িসহ ছয় সদস্যের পরিবার। বাড়িতেই ডেইরির পাশাপাশি হাঁস-মুরগির খামার দেখাশোনা করেন। খামারে মোট আটটি গরু ও ৩০-৩৫টি হাঁস-মুরগি রয়েছে। গরুর দুধ থেকে নিজেই আবার দই উৎপাদন করেন। প্রাণিসম্পদ খাতে নারীর অংশগ্রহণ বেশি থাকলেও এতে মালিকানায় তারা পিছিয়ে রয়েছেন। বাংলাদেশ ইন্টিগ্রেটেড হাউজহোল্ড সার্ভে ২০১৯-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশের বড় আকারের গবাদিপশুর (গরু-মহিষ) ৭২ দশমিক ৪ শতাংশ মালিকানাই রয়েছে পুরুষের হাতে আর নারীর মালিকানায় রয়েছে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ।আবার ছোট গবাদিপশুর (ছাগল-ভেড়া) ক্ষেত্রে পুরুষের মালিকানায় আছে ৫৩ দশমিক ৮ শতাংশ আর নারীর মালিকানায় আছে ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে হাঁস-মুরগির ক্ষেত্রে নারীর মালিকানা ৮৩ দশমিক ৮ ও পুরুষের ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘নারীরা পারিবারিকভাবে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি দেখাশোনা করেন। বাড়ির কাজ যেমন অবৈতনিক তেমনি পারিবারিক গবাদিপশু বা হাঁস-মুরগি লালন-পালনও অবৈতনিক। এটা তাদের সম্পূর্ণ কর্মসংস্থান নয়। বৃহত্তর পারিবারিক কাজের অংশ হিসেবেই তারা এটা করে থাকেন। স্বাবলম্বী করতে হলে নারীদের মালিকানা দিতে হবে। কিন্তু পারিবারিকভাবে দেখাশোনা করলে নারীরা মালিকানা পান না। যত বেশি উদ্যোক্তা হিসেবে নারীদের সম্পৃক্ত করা যায় তত বেশি তারা স্বাবলম্বী হবেন। অর্থাৎ নিজের টাকায় গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি কিনতে হবে।’ প্রাণিসম্পদ খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বেশি থাকলেও তাদের শ্রমমূল্য পাচ্ছেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাড়ির কাজ দেখাশোনার পাশাপাশি গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি দেখাশোনা করেন তারা। এজন্য তাদের শ্রমমূল্য আলাদাভাবে পরিশোধ করা হয় না। কোথাও চাকরি হিসেবে কাজ করলেও শ্রমমূল্য থাকে অনেক কম। রংপুর সিটি করপোরেশনের বাহারকাচনা এলাকার বাসিন্দা মেহেরা বেগম (৫৫)। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। দীর্ঘদিন অসুখে শয্যাশায়ী থেকে মৃত্যুবরণ করেছেন স্বামী। মেহেরা বেগম জানান, আগে স্থানীয় মুরগি খামারে পার্ট-টাইম কাজ করে ৫ হাজার টাকা পেতেন। তা দিয়ে সংসারের খরচ কোনোমতে চালিয়ে নিতেন। স্বামীর অসুস্থতার কারণে কিছুদিন কাজে বিঘ্ন হলেও আবার তিনি নিয়মিত হচ্ছেন। খামার মালিক আরমানুর রহমান জানান, মেহেরা বেগম তার খামারে সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পযন্ত কাজ করেন। কাজ বলতে ডিম সংগ্রহ এবং খামারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। তার খামারে মুরগি আছে ২ হাজার ২০০-এর মতো।
এখন বাংলাদেশের এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী হিমায়িত গরুর মাংস আমদানীর ব্যবাপারে ভিষণভাবে তৎপর রয়েছে এবং ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে দেশে প্রায় ২০টন গরুর মাংস আমদানী হয়েছৈ ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে যাদের মূল্য প্রতি কেজি যথাক্রমে অষ্ট্রেলিয়া (২২৫ টাকা), মালয়েশিয়া (১০৮ টাকা) ও ভারত (১২০ টাকা)। এখানে উলেখ্য যে, আমদানী নীতি ২০১৫-২০১৮ অনুযায়ী দেশে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানীর সুযোগ রয়েছে বিশেষত: প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের অনুমতি ও শর্ত সাপেক্ষে।
এখন প্রশ্নটি হলো দেশের বেশ কয়েক বছর ধরে গরু, ছাগল, মহিষের মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং তুলনামুলকভাবে স্বল্প জমি থেকে বেশী লাভের আশায় যেখানে দেশের অগণিত যুবক শ্রেণী পশু খামারকে ব্যবসায়ী পেশা হিসাবে নিতে আগ্রহী সেই সময়ে সেই আমদানি বাণিজ্য কি কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না? পশু সম্পদ বিশেষজ্ঞদের মতে শিক্ষিত বেকার যুবকেরা গবাদিপশুর খামার করতে খুবি আগ্রহী কিন্তু আমদানী এ ক্ষেত্রে ব্যবসায় বিরোপ প্রভাব ফেলবে বিধায় স্বনির্ভরতার স্বার্থে দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করতে হবে যা অবশ্যি একটি দীর্ঘ মেয়াদি ব্যাপার। এখন একদিকে আমদানিকারক ব্যবসায়ী, অপরদিকে দেশীয় খামারীসহ ভোক্তা তাদের কথা বিবেচনায় রেখে বিষয়টির একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌছতে হবে দেশের সার্বিক স্বার্থে। তা না হলে দেশীয় খামারগুলো ধ্বংসের মুখে পড়বে আর আমদানীকারক ব্যবসায়ীসহ ভোক্তা লাভবান হবে এবং দেশের কর্মসংস্থানের পথটি বন্ধ হয়ে যাবে। এখন হিমায়িত গরুর মাংস আমদানী করে কম মুল্যে শহরের ভ্ক্তোদের সন্তোষ্টি বিধান একটি সাময়িক স্বল্প মেয়াদি ব্যবস্থামাত্র। কারন রপ্তানী কারক দেশগুলো কোন সময় যে তাদেওরবানিজ্য ঘাটতির কারনে আমসানীকৃত দেশগুলোতে মাংস সরবরাহে অপারগ হতে পারে । তাই দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে নিজেদের প্রানীজ সম্পদে স্বয়ংসম্পুর্ণ হওয়া ছাড়া আর কোন গতি নেই। কারন প্রতিবেশী রাষট্র থেকে যেখানে ২০ লাখ গরু অবৈধ পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করত সেই পথ এখন অনেকটা সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ায় দেশীয় উদ্গোক্তারা তাদের ব্যবসার দিক বিবেচনা করে এখন খামার তৈরীতে বেশ মনোযোগী হয়েছে ।
আমরা একটি স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সমৃদ্ধ জতিী হিসাবে মধ্য আয়ের দেশে প্রবেশ করতে চাই আগামী দুই বছরের মধ্যে।তাই তুলনামুলক বিচাওের প্রোটিন গ্রহনে আমরা যে অনেকের ছেয়ে পিছিয়ে আছি( মাত্র ৬৬ গ্রাম মাথাপিছু) তা বাড়াতে হবে। আমাদেরও পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে প্রানিজ প্রোটিনের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে।। তার জন্য সরকারের নীিিত সহায়তা প্রনোদনা প্রয়োজন যার মধ্যে রয়েছে পশু খাদ্য ভর্তুকীম, কম মুল্যে পর্যাপ্ত ওষধ সরবরাহ,উন্নত প্রযূক্তি ববিহার করে নেপিয়ার ঘাস উৎপাদন,পর্যায়ক্রমে প্রানীজ খাদ্য আমদানী হ্রাস করন ইত্যাদি অআমাদের মনে রাখতে হবে বর্তমান কৃষি বান্দব সরকারের কিছু ভ্রান্ত নীতির কারনে যেন দেশের কর্মসংন্থান ও দারিদ্র বিমোচন ব্যাহত না হয়।
লেখক: শিক্ষক ও গবেষক
সারাবাংলা/এজেডএস
ড. মিহির কুমার রায় প্রাণিসম্পদ খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তা কর্মসংন্থানে সহায়ক