Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হিটওয়েভ, বোর ধান ও হাওরের জীবন জীবিকা

ড. মিহির কুমার রায়
৪ মে ২০২৪ ১৭:০২

এখন চলছে বোরো ধান কাটার মৌসুম। এর মধ্যেই টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে প্লাবিত হয়েছে হাওরের নিম্নাঞ্চল। হঠাৎ এই প্লাাবনে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। অপরদিকে হিটওয়েভ বা তাপদাহ এখনো চলছে।। মার্চের শেষ দিন থেকে শুরু হওয়া এই তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে টানা ৩৩ দিন। শুরুতে সীমিত এলাকায় থাকলেও পরে তাপপ্রবাহ ছড়িয়েছে বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে। এপ্রিলজুড়ে বৃষ্টির দেখাও মেলেনি। তবে চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে সিলেট-মৌলভীবাজার অর্থাৎ দেশের দক্ষিণ-পূর্বের সীমান্ত জুড়ে বৃষ্টির সেই অপেক্ষা ফুরিয়েছে। সিলেট অঞ্চলে সীমান্তের ওপারে ভারী বৃষ্টি ঢল হয়ে নামার শঙ্কাও দেখা দিয়েছে হাওরাঞ্চলে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, গত এপ্রিলে ৩৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে। এপ্রিলের শুরু থেকে যে তাপপ্রবাহ দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে, তা চলতি মাসের শুরুতেই শেষ হবে। তাই বলে গরমের অস্বস্তি থেকে একেবারে রেহাই মিলবে না। কারণ, এ মাসেও একাধিক তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে। সাময়িক স্বস্তিদিতে ঝরবে বৃষ্টিও।

বিজ্ঞাপন

পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, উজানে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে। বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। তার প্রভাব পড়বে হাওরাঞ্চলে। অবশ্য সিলেটের জৈন্তাপুরে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে এরই মধ্যে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সারী, বড় নয়াগং ও রাংপানি নদীর পানি বাড়ছে। সরেজমিনে নিজপাট ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে কয়েক হাজার হেক্টর বোরো ধানের জমি তলিয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে নেত্রকোনায় অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কায় হাওরাঞ্চলের বোরো ধান দ্রুত কাটার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। একই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকেও। ৩ মে থেকে দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের অনেক জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। অবশ্য কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এরই মধ্যে হাওরের অধিকাংশ খেতের ধান কাটা হয়ে গেছে।খালিয়াজুরির পুরানহাটি গ্রামের কৃষক আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এখন প্রায় সব ধানই পেকে গেছে। সকাল থেকে মাইকে দ্রুত ধান কাটার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। পানি আসার আশঙ্কায় আমরা ধান কেটে ফেলছি।’জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী ৩ মে থেকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অনেক জায়গায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। তাই হাওরে বোরো ধান দ্রুত কাটার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৮০ শতাংশ খেতের ধান কাটা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

দেশেের উত্তর-পূর্বাঞ্চলরে সাতটি জলো নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উল্লেখযোগ্য অংশ নিয়ে এ বিশাল হাওর এলাকা গঠিত। সাত জেলার ৭৫টি উপজলোয় ৬১টি হাওর অবস্থিত। কালনী-কুশয়ািরা ও সুরমা-বউলাই নদী ব্যবস্থায় আরো ছোট ছোট নদী, স্রোত এবং সেচ-খাল, মৌসুমি পরবর্তি চাষের সমভূমির এক বিশাল এলাকা এবং শত শত হাওর ও বিলসহ জলাভূমির আবাসস্থলের একটি বিস্তৃত মোজাইক। এ অঞ্চলে প্রায় ৪০০টি হাওর ও বিল রয়েছে, যার আয়তন কয়কে হেক্টর থেকে কয়েক হাজার হেক্টর পর্যন্ত। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এ অঞ্চলরে জীববৈচিত্র্য, বাসস্থান, ভূমি বিন্যাস, ভূমির ব্যবহার, ফসল উৎপাদন প্রক্রিয়া, জীবন সংস্কৃতি প্রভৃতি দেশের অন্যান্য অঞ্চলরে চেয়ে একটু ভিন্ন। সংগত কারণেই ধান হয়ে ওঠে এখানকার প্রধান ফসল, তবে জাত ছিল স্থানীয়। হাওরাঞ্চলে একসময় প্রায় ২৩০ প্রজাতির বোরো ধান চাষ হতো। এসব প্রজাতির মধ্যে ছিল টেপি, বোরো, রাতা শাইল, লাখাইয়া, মুরিলা, চেংডি, কালজিরা, সমুদ্রফেনা, কাশয়বিন্নি, দুধবাকি, দুধসাগর, লাটীল, মারতি, তুলশীমালা, আখনাইল, গাছমালা, কন্যাশাইল, বিচবিরো, লোলাটেপী, পশুশাইল, হাসরডেমি, গুয়াশাইল, বেতি, ময়নাশাইল, গদালাকি, বরইি, খলইি, ছরমিইন, আগুনি, গুলটহি ল্যাটা, জগলীবোরোর প্রভৃতি।

আধুনকি ধান চাষ শুরু হয় স্বাধীনতার পরপরই। অধুনা দেশের হাওরাঞ্চল ধানভিত্তিক খাদ্যনিরাপত্তার এ দেশে প্রায় ২০ ভাগ ধান ফসলরে জোগানদাতা এবং বলা হয় ধানই একমাত্র ফসল। আবার বেষ্টিক অর্থনীতির মানদন্ডে হাওর অঞ্চল থেকে যে ধান উৎপাদন হয়ে চাল আকারে দেশের কেন্দ্রীয় স্টকে জমা হতো যার আর্থিক মূল্য ৩ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা যা দেশের জিডিপিতে অবশ্যই একটা প্রভাব ফেলবে নিশ্চয়। কারণ দেশের সার্বিক উন্নয়নে হাওর অঞ্চল থেকে শতকরা ১৮ ভাগ চাউল খাদ্য নিরাপত্তায় সংযোজন হয় এবং শতকরা ২২ ভাগ গবাদি পশু এই অঞ্চলে লালিত পালিত হয়, মৎস্য ভান্ডারে ভরপুর এই অঞ্চল দেশের আমিষের চাহিদা পূরণে এক গুরত্বত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বোরো মৌসুমে হাওড়াঞ্চল দেশের ২০ শতাংশের মতো চালের জোগান দেয়। সাত জেলার হাওড়ে এ বছর বোরো আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে, আর হাওড় ও হাওড়ের বাইরে উঁচু জমি মিলে মোট বোরো আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪০ লাখ টন চাল। এবার বৃষ্টি না হওয়ায় হাওড়ের সব ধান কৃষকের ঘরে উঠবে এবং কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও ইটনা উপজেলায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কয়েকটি হাওড়ে সরজমিনে দেখা গেল, বোরো ধান কাটার এ উৎসবে শুধু কৃষান-কৃষানিই নয়, বাড়ির সব বয়সি মানুষই এসে হাত লাগিয়েছে ধানকাটা, মাড়াই এবং গোলায় তোলার উৎসবে। এদের কেউ ক্ষেত থেকে ধান কাটছে, কেউ কেউ ক্ষেতেরই ফাঁকা স্থানে ‘খলা’ তৈরিতে ব্যাস্থ, ধান কাটা শেষে ইঞ্জিনচালিত ট্রাক্টর দিয়ে তা জমি থেকে খলায় নিয়ে আসা হচ্ছে, খলায় বুংগা মেশিন (মাড়াই কল) দিয়ে চলে মাড়াই, পরে সেখানেই শুকানো হচ্ছে মাড়াইকৃত ধান। তীব্র রোদে শুকানো ধান বস্তাভর্তি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গোলায়, বিভিন্ন উপজেলার হাওড়ে লেগেছে বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম।

এখন আসা যাক নীতি নির্ধারন পর্যায়ের কিছু তথ্য উপাত্ত নিয়ে আলোচনা যা প্রাসঙ্গিক। খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকার এবার বাজার থেকে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টন ধান ও চাল কিনবে। এর মধ্যে ৪ লাখ টন ধান, ১২ লাখ ৫০ হাজার টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে এখন পর্যন্ত হাওরে ৭০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে, এর মধ্যে সিলেটে ৫৫ ভাগ, মৌলভীবাজারে ৭০ ভাগ, হবিগঞ্জে ৬৭ ভাগ, সুনামগঞ্জে ৭৩ ভাগ, কিশোরগঞ্জে ৫৮ ভাগ, নেত্রকোনায় ৭৭ ভাগ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৬৭ ভাগ। কৃষি মন্ত্রণালয় এর তথ্য অনুযায়ী হাওরভুক্ত ৭টি জেলার হাওরে এ বছর বোরো আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে, হাওর ও হাওরের বাইরে উঁচু জমি মিলে মোট বোরো আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪০ লাখ টন চাল। সম্প্রতি ঈদের আগে সুনামগঞ্জের হাওরে বোরো ধান কাটা উৎসবে কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ও সময়মতো ধান ঘরে তুলতে পারলে এ বছর বোরোতে রেকর্ড উৎপাদন হবে। শুধু সুনামগঞ্জেই এক হাজার কম্বাইন হারভেস্টারে ধান কাটা চলছে জানিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, এবার ধান কাটায় কোন সমস্যা হবে না। উল্লেখ্য, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে এ বছর সারা দেশে ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বোরো ধান আবাদ হয়েছিল ৪৮ লাখ ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে, উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ২ কোটি ২ লাখ টন চাল।

কৃষকরা ক্রমাগত বাম্পার ফলন উৎপাদন করেছেন। বাম্পার ফলন মানেই অধিক পরিমাণ ধান বাজারে সহজলভ্য হওয়া। তবে এর অন্য প্রভাব হলো, উৎপাদিত কৃষিপণ্যে মূল্যহ্রাস, যা কৃষকের জন্য সুখকর নয়। বৈশাখের নতুন ধানে ভরপুর কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজারের মোকাম। তবে বাজারে ক্রেতা কম থাকায় দুশ্চিন্তায় ধান বিক্রেতারা। জানা যায়, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ এলাকা থেকে শাহ হোসেন মাঝি ২ হাজার ৪০০ মণ বৈশাখী ধান নিয়ে ভৈরব ঘাটে এসেছেন। এ বছর হাওরে ধানের ফলন অন্যান্য বছরের তুলনায় ভালো হয়েছে। তাই কৃষকরা পাইকারদের কাছে ধান বিক্রি করেছেন। তবে এ বছর ধানের দাম খুব কম। তাই ফসল বেশি পেলেও দাম না পাওয়ায় মন ভালো নেই কৃষকদের।

এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। উচ্চফলনশীল ধান উৎপাদন করে কৃষকের মুখে ফুলকি দেখা যাচ্ছে; কিন্তু সোনালি ফসল ঘরে তোলার সঙ্গে সঙ্গে দুশ্চিন্তা ভর করছে প্রতিটি কৃষকের।

তারা পাচ্ছেন না ন্যায্য মূল্য। উৎপাদন খরচের কম মূল্যে ধান বিক্রি করতে অনেকে বাধ্য হচ্ছেন। কৃষকের হাতে টাকা নাই। পরিবারের ভরণপোষণের জন্য ধানই একমাত্র সম্বল। ধান বিক্রি করতে গিয়ে তারা হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছেন। এখন ভাটি এলাকায় ধান বিক্রি হচ্ছে ৭৬০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা মণ দরে। অথচ তাদের উৎপাদন খরচ আছে ৮০০ টাকার ওপরে। সরকার ঘোষণা দিয়েছে ৩২ টাকা কেজি দরে অর্থাৎ ১২৮০ মণ দরে ধান কিনবে আগামী ৭ মে থেকে। দামের এত ফারাক কেন? সরকারিভাবে প্রতি বছরই নির্ধারিত মূল্যে সরকার চাল সংগ্রহ করে। বেশির ভাগ সময়েই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয় না। এর কারণ প্রধানত বিদ্যমান বাজারদরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হয় না। তা চেষ্টা করা বাস্তব সম্মতও নয়। সরকারি চাল সংগ্রহনীতির প্রধান উদ্দেশ্য হলো কৃষকদের ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা। সরকার ঘোষণা করেছে চলতি বছর বোরো মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে ৫ লাখ টন ধান কিনবে সরকার। গতবার ৩০ টাকা দরে কেনা হয়েছিল। সে হিসাবে এবার প্রতি কেজিতে দুই টাকা বাড়ানো হয়েছে। তা ছাড়া গতবারের চেয়ে এবার এক লাখ টন বেশি ধান কেনা হবে। আগামী ৭ মে থেকে ধান কেনা শুরু হবে ও ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তা চলবে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, বেশি ধান কেনা হবে হাওর থেকে। প্রয়োজনে কৃষকের কাছ থেকে ৫ লাখ টনের বেশি ধান কেনা হবে। ধানের পাশাপাশি এবার ৪৫ টাকা কেজি দরে ১১ লাখ টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হবে। গতবার এটি ৪৪ টাকা কেজি দরে কেনা হয়েছিল। এ ছাড়া ৪৪ টাকা কেজি দরে এক লাখ টন আতপ চাল কিনবে সরকার। ৩৪ টাকা কেজি দরে ৫০ হাজার টন গমও কেনা হবে।

দেশ একটি বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়ন করা হয়েছে, যাতে হাওরাঞ্চলকে প্রায়োগিক উন্নতিতে গুরুত্বের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মূলত একটি অভিযোজনা ভিত্তিক কারিগরি ও অর্থনৈতিক মহাপরিকল্পনা, যা প্রণয়নের সময় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, ভূমির ব্যবহার, পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং এদের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে বিবেচনা করা হয়েছে, এর মূল লক্ষ্য উন্নত ও সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশকে সব মানুেষর জীবনমান সচল রাখা। কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বৈশ্বিক জলবায়ু পরির্তন মোকাবেলায় স্থানভিত্তিক গবষণো ও স্থায়িত্বশীল প্রয়োগ করাই হাওরের জীবনমান উন্নয়নের বাস্তবসম্মত সমাধান। হাওরের উন্নয়ন পরিকল্পনায় হাওরবাসীকেই প্রথম সম্পৃক্ত করা দরকার। তারপর এ অঞ্চলের মূল সমস্যা আকস্মিক বন্যা মোকাবেলোয় কার্যকর পন্থা দরকার, যাতে পানির পরিমাণ জানা আছে এখন তার উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণ দরকার, সে ক্ষেত্রে প্রথম দরকার নদীর পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রবাহ সচল রাখা। পাশাপাশি আগাম সর্তকীকরণ ব্যবস্থা ফসলহানি কমাবে। ফসলের জাত উন্নয়নে স্থানীয় জাতের উচ্চ ফলনশীল সংরক্ষণ প্রবর্তন করা সমীচীন। তা না হলে ধানের উচ্চ ফলনশীল ব্রি ধান ২৮ ও ব্রি ধান ২৯-এর অবস্থা হবে। হাওরে এ দুটো আধুনিক জাত ব্যাপক চাষ হচ্ছে অথচ বারবার প্রমাণ পাওয়া গেছে এগুলোর ফলন-সময় স্থানীয় জাতের তুলনায় বেশি, কিন্তু হাওরাঞ্চলের আকস্মিক বন্যা এড়াতে পারছে না। তাই ফসলের নিবিড়তা বাড়াতে বিভিন্ন স্থানীয় জাতের উন্নত সংস্করণ প্রবর্তন করা প্রয়োজন। আবার শুষ্ক মৌসুমে পানির দেশে পানির আকাল হয়, সে ক্ষেত্রে মাঝারি উঁচু জমিতে ধান ব্যতীত অন্য ফসলের চাষ বাড়ানো দরকার, এতে পানির ব্যবহার বাড়বে, ফসলের বৈচিত্র্য যেমনি বাড়বে, পাশাপাশি পুষ্টিনিরাপত্তা উন্নত হবে। হাওরাঞ্চল হলো এর সূতিকাগার, এটিকে সারা পৃথিবীতে ব্র্যান্ডিং করা যেতে পারে। এভাবে প্রতিটি প্রাকৃতিক সম্পদের প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান বের করে তার মূল্য সংযোজন পন্থা বের করা দরকার। তাই ২০৪১ সালরে মধ্যে উন্নত দশে গড়ার পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের জন্য জলবায়ুর আগাম তথ্য, জনমানুষের জীবনমানের উন্নয়নের পাশাপাশি হাওরাঞ্চল উপযোগী নতুন নতুন ফসল, জাত, প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ হবে এবং এ বিশেষ হাইড্রোলজিক্যাল সম্ভাব্যতার উপযুক্ত সমাধান হবে।

লেখক: অধ্যাপক (অর্থনীতি), সাবেক ডিন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

সারাবাংলা/এজেডএস

ড. মিহির কুমার রায় বোর ধান হাওরের জীবন জীবিকা হিটওয়েভ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর