ইসলামিক বক্তাদের ওয়াজ মাহফিলে সতর্ক হওয়া আবশ্যক
৪ মে ২০২৪ ১৮:৫৬
ওয়াজ মাহফিল হলো-ইসলামিক বক্তারা মানুষকে ইসলামিক জ্ঞান দেয়া এবং তাদের কল্যাণের পথে ডাকার একটি মাধ্যম। নবী-রাসুলগণ সাধারণ মানুষকে সত্যের পথে যে আহ্বান করতেন তারই প্রচলিত রূপ। হক্কানি আলেমগণ সে পদ্ধতিকে অবলম্বন করে সাধারণ মানুষকে অপরাধমুক্ত রাখার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন যুগের পর যুগ।
একটা সময় ইসলামিক বক্তার কথা মাথায় আসলেই মনের মধ্যে ভেসে আসত একজন নীতি নৈতিকতা সম্পন্ন এবং সচ্চরিত্রের অধিকারি একজন মানুষের ছবি। গ্রাম-মহল্লায় কোন ওয়াজের আয়োজন হলে মানুষের উপছে পড়া ভিড় চোখে পড়ত। তখনকার ওয়াজের আলোচ্য বিষয় থাকত; মদ,জুয়া, সুদ, ঘুষ এবং নামাজ-রোজাসহ বিভিন্ন ইসলামিক দিক নির্দেশনা। ওয়াজ মাহফিলে মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে হক্কানি আলেমদের বেশ চাহিদা ছিলো। এছাড়াও ক্ষেত্র বিশেষে সুন্দর কন্ঠের আলেমদের ও বেশ কদর ছিলো।
সময়ের সাথে বলদেছে সেই চিরায়ত দৃশ্য। ইসলামিক বক্তাদের নামের আগে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন টাইটেল এবং ভক্তরা দিচ্ছেন বিভিন্ন বিশেষণ। কতিপয় বক্তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার নেশায় ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে নানা রকম অযাচিত এবং অশোভন বক্তৃতা দিচ্ছেন। ফলে নিজেরা যেমন হাসির পাত্র হচ্ছেন তেমনি ইসলামে সৌন্দর্য নষ্ট করছেন।
শহর কিংবা মফস্বলে যেসব ওয়াজ মাহফিল হয় তার একটি বড় অংশই থাকে তরুণ সংগঠনের অর্থায়নে বা হাট বাজারে চাঁদা তোলার মাধ্যমে অথবা মসজি-মাদ্রাসা কমিটির অর্থায়নে । একটি ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করতে বেশ কষ্ট করতে হয় আয়োজক কমিটিকে। মাহফিলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মাহফিল পরিচালনা কমিটি এবং ওয়ায়েজগণ। আয়োজকদের সুন্দর ব্যবস্থাপনা ও বক্তার জ্ঞানগর্ভ আলোচনার মাধ্যমে একটি মাহফিল ‘হেদায়াতের মঞ্চ’ হয়ে উঠে।
পরিশেষে মহান আল্লাহ তায়ালার রহমত ও বরকতে দু’একজন শ্রোতার দীনের পথে উঠে আসার মাধ্যমে একটি মাহফিল পূর্ণতা লাভ করে।
কতিপয় এক ইসলামিক কে দেখলাম কয়েকটি মাহফিলে ১৯৯০ সালে ঘটা ওনার জীবনের কাহিনি বলতে গিয়ে চরম মিথ্যাচার করতে। অন্য এক কথিত ভাইরাল বক্তাকে দেখা যায় সব সময় প্রেম/ হারাম সম্পর্ককে স্বাভাবিকভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে। এছাড়াও অনেকে সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়ার নেশায় এক বক্তা অন্য বক্তাকে উদ্দেশ্য করে নানারকম কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে। আবার অনেককে দেখা যায় ভাইরাল হওয়ার নেশায় এডিটিংয়ের মাধ্যমে মাহফিল মঞ্চ বানিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিতে। এসবের ফলে অন্য ধর্মের মানুষেরকথা মনে ইসলাম সম্পর্কে যেমন ভুল ধারণা জন্ম নিচ্ছে তেমনি সাধারণ মুসলিমরাও সঠিক ইসলামকে জানতে পারছে না।
একজন আলোচক যে বিষয়ে আলোচনা করবেন সে বিষয়ের পরিপূর্ণ ইলম তাকে অর্জন করতে হবে। সেইসাথে ইলম অনুযায়ী আমল থাকাও একজন ইসলামিক বক্তার জন্য আবশ্যক। ইখলাছ থাকতে হবে এবং লিল্লাহিয়াতের উদ্দেশ্যে বয়ান পেশ করতে হবে।
সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- কুরআন-হাদিসে বর্ণিত দাওয়াতের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহর রাসুল সা. উম্মতদের যেভাবে দীনের পথে আহ্বান করতেন, সেই পদ্ধতি অনুসরণ করে হেদায়েতের দাওয়াত দিতে হবে।
দাওয়াত দানের পদ্ধতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন, ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক কর সুন্দর পন্থায়’। (নাহল ১৬/১২৫)
এ আয়াতে দাওয়াতের তিনটি পদ্ধতি উল্লিখিত হয়েছে। যথা- (১) হিকমত তথা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীছ ভিত্তিক দাওয়াত দেওয়া। (২) উত্তম উপদেশ দেওয়া। (৩) উত্তম পন্থায় বিতর্ক করা।
একজন ইসলামিক বক্তার জন্য এই তিন পদ্ধতি অনুসরণ করা অতি আবশ্যক।
মনগড়া ওয়াজ ইসলামের জন্য ক্ষতিকর তাই একজন ইসলামিক বক্তাকে অবশ্যই মনগড়া ওয়াজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ইতিহাস থেকে উদাহারণ দিতে ইতিহাসের বিশুদ্ধ জ্ঞান জানতে হবে। ফিকাহ শাস্ত্রে পারদর্শী হতে হবে। অনেক বক্তাকে দেখা যায় নিজেদের জীবনে ঘটে যাওয়া অলৌকিক ঘটনা বলতে গিয়ে মিথ্যাচার করতে এসব পরিহার করতে হবে। ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম সহজ এবং সুন্দর। ইসলামকে যদি একটি ফুল বাগানের সাথে তুলনা করি তবে ইসলামিক দাঈ’রা হলো ফুল বাগানের মালি। মালির পরিচর্যায় ফুটে উঠে ফুল তথা বাগানের সৌন্দর্য।
লেখক: শিক্ষার্থী
সারাবাংলা/এজেডএস
ইসলামিক বক্তাদের ওয়াজ মাহফিলে সতর্ক হওয়া আবশ্যক মিনহাজ বিন মাহবুব