কান যাত্রা ও যাত্রী
১৪ মে ২০২৪ ১৮:১৬
প্রতি বছর কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এই দেশের কজন নির্মাতা অংশগ্রহণের চেষ্টা করেন বা ইচ্ছা রাখেন, কিংবা এ যাবতকাল কজন নির্মাতা পা রেখেছেন কানের লাল গালিচায়? খোঁজ করে রীতিমত হোঁচট খেলাম বলা যায়, হাতে গোনা বাংলাদেশি নির্মাতার পা পড়েছে, বিশ্বের প্রাচীণ আর কুলীন চলচ্চিত্র উৎসবের মাটিতে। সেই তুলনায় বাংলাদেশের শোবিজ সাংবাদিকেরা এর চেয়অনেক বেশি অংশ নিয়েছেন, এ বছর ও নিচ্ছেন, রেশিওটা প্রায় দ্বিগুণের ও বেশি।
সাংবাদিকেরা এই যে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব যাচ্ছেন, দেখছেন, শিখছেন এইটা এক দারুণ ব্যাপার। সেই সাথে এও আমরা দাবি করতে পারি, দাবি করতে চাই, যারা যাচ্ছেন তারা দেশে ফিরে শেয়ার করুন, আন্তর্জাতিক মহলের হালচাল জানান আমাদের। শুধু ‘কান কথা’ বা ‘কানের ডায়রি’ নাম দিয়ে লাস্যময়ীদের ছবি দিয়ে বই করলে হবে না, গ্লোবাল সেলিব্রেটিদের সাথে সেলফি তোলার পাশাপাশি আমরা তথ্য চাই আরও বেশি, যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে উঠুন। বাংলাদেশের সিনে সাংবাদিকেরা কানে যে উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে যান তাদের কিন্তু তার বাইরে আর কোন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তেমনটা দেখা যায় না। এই দেশের বর্তমান আর আগামী তরুণেরা যারা সিনেমা বানাবে , বানাচ্ছে আর কানের মত চলচিত্র উৎসবে পা রাখার স্বপ্ন দেখেন তাদের জন্য এই দায়িত্বটুকু আপনাদের নিতে হবে।
আমরা যারা সিনেমা সংশ্লিষ্ট বিশেষ করে যারা সিনেমা নিয়ে বিশ্বের নানান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করতে চান তাদের জন্য ঠিকঠাক গাইডলাইন খুব কম পাওয়া যায়। আমাদের পুর্বসূরী পরিচালক –প্রযোজক-ক্রিটিকরা তাদের উত্তরসূরীদের জন্য এই সাপোর্ট সিস্টেমটা তৈরি করতে পারেননি, ব্যক্তিগতভাবে অনেকের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি, কেমন জানি উৎসাহের একটা ঘাটতি স্পষ্ট। বর্তমানে দারুণ সব গল্প আর নির্মাণে মেধার স্ফুরণ স্পষ্ট। এই তরুণদেরকে বিশ্ব চলচ্চিত্র উৎসবের দরবারে পৌঁছে দেয়ার যাত্রায় সহযোগিতা দরকার, গাইডেন্স দরকার।
সম্প্রতি কান চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হচ্ছে, এই উৎসবের আদ্যপান্ত আমাদের নির্মাতাদের জানা দরকার, বিশেষ করে যারা একদম ই নতুন, শুধুমাত্র ওয়েবসাইটের তথ্য যথেষ্ঠ না, বাস্তব অভিজ্ঞতার আলাদা গুরুত্ব আর তাৎপর্য আমরা অস্বীকার করতে পারি না। হাতে-কলমে শেখাটা কিন্তু সবচেয়ে বেশি কাজে দেয়। সেই সাথে কুয়োর ব্যাঙয়ের মত নিজের দেশের ইন্ডাস্ট্রির গন্ডিতে বন্দী না থেকে ছড়িয়ে পড়তে হবে বিশ্বব্যাপী। ১০ বছর আগেও কোন কোরিয়ান চলচ্চিত্রকার স্বপ্নেও ভাবেনি তাদের পরিচালকরা শুধু অস্কার জয় করবে না, রীতিমত দুর্দান্তভাবে মেলে ধরবে। এখন আমরা হলিউডের সবচেয়ে বড় ক্যানভাসগুলো কোরিয়ান পরিচালক-অভিনেতা-অভিনেত্রী-টেকনেশিয়ানদের ছড়াছড়ি। এটা সম্ভব করার ক্ষেত্রে কোরিয়ান পরিচালক প্রযোজকদের বিশ্বের নানান চলচ্চিত্র উৎসবে নিজেদের সিনেমা ছড়িয়ে দেয়া শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশে মেধাবী পরিচালক-প্রযোজক-অভিনেতা/অভিনেত্রীর ঘাটতি নেই। আমাদের প্রয়োজন প্ল্যাটফর্মের, আমাদের প্রয়োজন প্রকাশ আর বিচরণের সঠিক ক্ষেত্র। তবেই আমাদের সিনেমা ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বব্যাপী। তখন অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি উন্মুক্ত হবে হাজারো দারুণ সব সম্ভাবনা।
লেখক: স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা, চলচ্চিত্র লেখক, ঔপন্যাসিক
সারাবাংলা/এজেডএস