Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

একবিংশ শতাব্দীর বিস্ময়কর ব্যক্তিত্বের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

সাইদুর রহমান শরিফ
১৭ মে ২০২৪ ০৯:০৫

১৯৮১ সালের ১৭ মে- এদিন বাঙালি জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করেও তিনি মাতৃভূমির টানে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। দেশে ফিরে এসে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার হারাবার কিছু নেই, বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠা করবই। বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করবই।’ বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রধানমন্ত্রী তার কথা রেখেছেন। দু-একটি উদাহরণ দেওয়া প্রয়োজন। মেট্রোরেলে বাংলাদেশ বিশ্বে ৬০ তম,স্যাটেলাইট ক্লাবে ৫৭ তম,সাবমেরিন মালিকানায় ৪১তম এবং পারমাণবিক ক্লাবের তালিকায় ৩৩তম। বাংলাদেশ এখন বৃহৎ অর্থনীতিতে বিশ্বের মধ্যে ৩৫ তম।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে আজকে শত্রুরাও প্রশংসা করতে পিছপা হয়নি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ঢাকার উন্নয়ন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে দেখা যায়, পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্মও বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে বেশ কৌতূহলী। শুধু দেশের উন্নয়ন নয়, আজকে তিনি বিশ্বের নানা ইস্যু নিয়ে নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বরের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। সেকারনে পেয়েছেন নানা পদক। সেগুলোই সংক্ষেপে তুলে ধরছি।

বিজ্ঞাপন

প্রথমেই বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া সম্মাননা গুলোর ফিরিস্তি দেখা যাক _

শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের অ্যালবার্টা ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিবারেল আর্টস পুরস্কার পান। একই বছর তিনি নেতাজী স্মৃতি পুরস্কার গ্রহণ করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং দৃঢ়তার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্রোহ থামিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। এর ফলশ্রুতিতে ইউনেস্কো প্রধানমন্ত্রীকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। ১৯৯৯ সালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি প্রদান করে,ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে দেসিকোত্তামা ডিগ্রি এবং অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি প্রদান করে।

বেলজিয়ামের ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলস তাকে অনন্যা সম্মাননা প্রদান করে ২০০০ সালে। শেখ হাসিনা ২০০৫ সালে রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।

এবার আসা যাক নারী শিশু জলবায়ু ও যুদ্ধ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে _

শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে দেখলেন, দারিদ্র্য পীড়িত দেশটিতে শিশু মৃত্যুর হার বেশ প্রবল। তিনি সেইমাফিক পরিকল্পনা সাজানো শুরু করেন। বলতে গেলে শিশু মৃত্যুহার কমানো ছিলো প্রধানমন্ত্রীর এক অনন্য সফলতা। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এমডিজি) অবদান রাখার জন্য জাতিসংঘের অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। শিশু মৃত্যু, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস করা এবং ক্ষুধা ও দরিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সফলতার রোল মডেল হিসেবে এখন বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে বিবেচিত হয় আর যার কারিগর হচ্ছেন শেখ হাসিনা। এর ফলস্বরূপ তিনি ২০১১ ও ২০১৩ সালে দু’বার সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পেরেছিলেন- বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে নারীদের সুশিক্ষা অর্জনের কোন বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্য পাঠ্যবই সরবরাহ করার সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেকারনে নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য ২০১৪ সালে ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার পান। নারী উদ্যাক্তা তৈরিতেও তিনি অসামান্য ভূমিকা রাখেন যা তাকে গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড এনে দেয়।

এছাড়াও নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধিতে কাজের ফলস্বরূপ লাভ করেন ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার ও ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার।

পাঠক নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন, রোহিঙ্গারা প্রথম নাগরিকত্ব হারায় ১৯৮২ সালে। আরাকানের এই অধিবাসীদের উপর নানা সময়ে চলে নির্যাতন। সর্বশেষ, সামরিক জান্তার অভিযানে ২০১৭ সালে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এসময় প্রধানমন্ত্রী দেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া নিয়ে প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হন। অনেক ঝুঁকি জেনেও শেখ হাসিনা তাদের পরম মমতায় তাদের আশ্রয় প্রদান করেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম প্রধানমন্ত্রীকে আখ্যায়িত করেন মাদার অব হিউম্যানিটি হিসেবে।

এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১৮ সালে স্পেশাল ডিসটিংশন অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশিপ অর্জন করেন।

আপনারা অবগত আছেন, বর্তমানে পুরো বিশ্বের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে জলবায়ুর বিরূপ পরির্বতন। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তিনি উন্নত দেশ গুলোর কড়া সমালোচনা করে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রীর চিরচেনা উক্তি ‘যুদ্ধে নয়, পৃথিবী রক্ষায় অর্থ ব্যয় করুন’।

তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে শেখ হাসিনা অর্জন করেন পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ বৈশ্বিক পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্যা আর্থ’। একই বিষয়ের উপর কয়েক বছর পর পান ‘ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স এ্যাওয়ার্ড-২০১৯’। ২০২৩ সালে কপ-২৮ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী পান ‘এশিয়া ক্লাইমেট মবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার’ অ্যাওয়ার্ড।

নতুন প্রজন্মের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি গর্বিত। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মতো একটি ছোট দেশকে শেখ হাসিনা যেভাবে পরিচিত করে তুলছেন, তাতে আমার কবি সুকান্তের কথা গুলো মনে পড়ে যায়। কবি বলেছেন,
‘সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী
অবাক তাকিয়ে রয়:
জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।’

আর তার সব কিছুর মূলে আছেন একবিংশ শতাব্দীর বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব ও এশিয়ার আয়রন লেডি শেখ হাসিনা।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

একবিংশ শতাব্দীর বিস্ময়কর ব্যক্তিত্বের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন মুক্তমত সাইদুর রহমান শরিফ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর