Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রধানমন্ত্রীর ভাবনায় গ্রামোন্নয়ন

ড. মিহির কুমার রায়
২০ মে ২০২৪ ১৭:১৪

গত ১৭ মে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২২তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্রামের অর্থনীতি পাল্টে গেছে। যারা একবেলা ভাত খেতে পারতো না, এখন চারবেলা খায়। একসময় গ্রামে হাটবারের বাইরে কিছু পাওয়া যেতো না, এখন সুপার মার্কেট হয়েছে। আমাদের গ্রামের বাজার পাটগাতিতে (পাটগাতি টুঙ্গিপাড়ার একটি ইউনিয়ন) ঈদের আগে ২০০টি ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি যত বেশি মজবুত হচ্ছে, শিল্প-কলকারখানাও তত বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘আমি আজ অর্থনীতি সমিতির প্রোগ্রামে এসেছি। এখানে অনেকের অনেক বড় বড় ডিগ্রি আছে। আমার কিন্তু তা নেই। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেছি। অর্থনীতির সূক্ষ ও জটিল বিষয়াদি আপনাদের মতো আমি বুঝি না। তবে এতটুকু বুঝি, কীভাবে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হয়। কীভাবে মানুষের উপকার হবে।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকেই আমি এগুলো শিখেছি। তিনি তো বেশিরভাগ সময়ই জেলে থাকতেন। যতক্ষণ বাইরে থাকতেন, আমাদের সঙ্গে গল্প করতেন- কীভাবে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চান, কীভাবে গ্রামগুলোকে সাজাবেন।’শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আগামী ৬ তারিখে (৬ জুন) বাজেট দেবো। বাজেট আমরা ঠিকমতো দিতে পারবো, বাস্তবায়নও করবো। দেশি-বিদেশি নানা কারণে জিডিপি কিছুটা হয়তো কমবে, সেটা পরবর্তীসময়ে উত্তরণ করতে পারবো, সে আত্মবিশ্বাসও আছে।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি অর্থনীতিবিদ নই, তবে বুঝি মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে মর্যাদা নিয়ে যেন চলতে পারে সেটাই লক্ষ্য। বর্তমানে গ্রামের অর্থনীতি শক্তিশালী করা হচ্ছে। সেখানকার মানুষ যেন সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে বিশ্বজুড়ে করোনা এবং স্যাংশন পাল্টা স্যাংশনের কারণে সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে, মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এর আগে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা ক্ষমতা ও ভোগ দখল নিয়ে ব্যবস্থা ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর রক্ত নিপীও ৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো কেন বাসন্তীদের অবস্থার পরিবর্তন করতে পারিনি তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বাইরে থেকে হঠাৎ এসে দেওয়া উপদেশ নয়, অর্থনীতিবিদের বৈশ্বিক জ্ঞান আহরণ করে এ দেশের উন্নয়নে মেধা, বিবেক ও অর্জিত অভিজ্ঞতার সর্বোচ্চ প্রয়োগের আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতির ছাত্র না হয়েও তিনি জাতির পিতার দেখানোর পথ ধরেই রাজনীতি, রাষ্ট্রপরিচালনা ও অর্থনীতি এগিয়ে নিচ্ছেন।খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধান উৎপাদনকারী দেশ।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে দারিদ্র্য বিমোচনের পথে যাত্রা শুর হয় নব্বইয়ের দশকে যদিও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনটাই কেটেছে গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে এবং তিনি তার এক ভাষনে বিেছলেন ‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যায়, যদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না আসে, যদি দুঃখী মানুষ পেট ভরে ভাত খেতে না পারে, কাপড় পরতে না পারে, বেকার সমস্যা দূর না হয়, তাহলে মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে আসতে পারে না। দেশের মাটির সঙ্গে, দেশের মানুষের সঙ্গে, দেশের কালচারের সঙ্গে, দেশের শিকরের সঙ্গে, দেশের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত করেই দেশের ইকনমিক সিস্টেম গড়তে হবে। বঙ্গবন্ধু প্রণীত প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাটি (১৯৭৩-১৯৭৮) ছিল স্বনির্ভর অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা যদিও সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও ওই পরিকল্পনায় বিদেশী সাহায্যর উপর নির্ভরশীলতা ৬২ শতাংশ থেকে ১৯৭৭-৭৮ সালের মধ্যে ২৭ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কৃষি ও কলে-কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে তিনি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৬ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিমাবে দায়িত্বভার গ্রহণ পর দশ মাসের মধ্যে একটি সংবিধান প্রনয়ন করেছিলেন যার অধ্যায়ের ১৫-এর ‘ঘ’ অনুচ্ছেদে বলা হয়-‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদনশক্তির ক্রমবৃদ্ধি সাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতিসাধন। এই সংবিধানের চারটি মূল ভিত্তি ছিল সমাজতন্ত্র, গনতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্ম্মনিরপেক্ষতা। বঙ্গবন্ধু তখন সারা দেশের চৌষট্টি হাজার গ্রামে বাধ্যতামূলক সমবায় সমিতি গঠনের ঘোষনা দিয়েছিলেন যা ছিল তখনকার সময়ের জন্য যুগান্তকারী ঘটনা যখন এবং সে সময়ে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের ছেয়েও বেশী । সুদীর্ঘ ৫৩ বছরের পথ পরিক্রমায় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামীলিগ মাত্র ধারাবাহিকভাবে ১৫ বছর এবং সর্বমোট তেইশ বছর দেশ শাসনের সুযোগ পেয়েছে এবং বঙ্গবন্ধুর তিন বছর ছয় মাস শাসন কাল বাদ দিলে ১৯৭৫ পরবর্তি দীর্ঘ ২১ বছরের সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে দেশের জনগণ জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার উপর আস্থা রেখে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়। এই বছর ২৩শে জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃতে জনগনের সরকার গঠিত হলে পরিকল্পনা ও নীতিতে স্থান পায় দারিদ্র্য বিমোচনের খাত গুলো যেমন সামাজিক নিরাপত্তার অংশ হিসাবে বিধাব ভাতা,মুক্তিযুদ্ধা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, গৃহহীন ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য আশ্রয়ণ, ঘরে ফেরা, একটি বাড়ি একটি খামার, সহ আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলো। পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মেয়েদের জন্য বৃত্তি এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ উল্লেখযোগ্য। এই পথ পরিক্রমায় বর্তমান সরকার। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বাপ্ন বাস্তবায়নে করে চলছেন তার মধ্যে রয়েছে গৃীহহিনকে গৃহ দান, আমার গ্রাম আমার শহর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, অষ্ঠম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কর্মসংন্থানের উপর সর্বাদিক গুরুত্বো প্রদাম , কভিড-১৯ এর অভিঘাত থেকে গ্রামীন অর্থনীতিকে রক্ষায় প্রণোদনা প্রদান ,এস,এম,ই খাতের জন্য আলাদা আর্থিক প্রণোদনা,গ্রাম/কৃষি গবেষনায় বরাদ্ধ বৃদ্ধি , সামাজিক নিরাপত্তা ও সামাজিক উন্নয়নের বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত। আমার নেতৃত্বে রূপকল্প-২০২১-এর মূল উপজীব্য হিসাবে ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়ন শুর হলে দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাসে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি ক্রমাগত২০০৯ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তার সাথে পরিকল্পনা ও নীতিতে সংযোজন হয় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সম্প্রসারন যেমন ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশে কাজের বিনিময়ে দুস্থ ভাতাসহ ১২৩টির মতো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চলছে যাতে বাজেট, যা জিডিপি এর আড়াই শতাংশেরও বেশি। টানা চার মেয়াদে সরকার পরিচালনার অভিযাত্রায় সমাজের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে নতুন নতুন কর্মসূচি যোগ হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রার স্মার্ট বাংলাদেশ’ নির্বাচনি ইশতেহার দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে অসামান্য দলিল হিসাবে আবির্ভূত হয়। এ ইশতেহার বাস্তবায়নে সরকার একদিকে অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তরের লক্ষ্যে গ্রহণ করে নানামুখী প্রকল্প, অন্যদিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এগিয়ে নিতে দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাসে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বৃদ্ধি করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এই সুদির্ঘ্য বক্তৃতার পর দুদিন ব্যাপি এই সম্মেলনের শুভ উদ্ভোদন ঘোষনা করেন ’প্রধানমন্ত্রী যার শীরোনাম ছিল পরিবর্তিত বিশ্ব অর্থনীতি ও বাংলাদেশ। অর্থনীতি সমিতির এ বারের সম্মেলনে ৯টি কর্মঅধিবেশনে মোট ১৭০ জন গবেষকের ১০১ টি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়েছে। আলোচনায় অংশগ্রহন করে অর্থনীতিবিদগন বলেন বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব অর্থনীতিতে পরেছে এবং এর প্রভাব দেশের প্রবৃদ্ধিতে পরবে বলে মনে হয়। এখন প্রবৃদ্ধিও ছেয়ে বেশি প্রয়োজন মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রন করা যা আগামী বাজেটে এর ঘোষনা থাকতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কর হার না বাড়ানো ও বেশি সংখক লোককে করজালের আওতায় আনতে হবে। মুল্যস্ফীতিকে বসে আনার জন্য মুদ্রানীতি, রাজস্ব নীতি ও সামাজিক সুরক্ষানীতিকে এক সাথে করে সমন্বয় সাধন করতে হবে। প্রয়োজনে আমদানী শুল্ক কমাতে হবে যাতে আমদানী পণ্যেও দাম সহনিয় পর্যায়ে থাকে। ডলারের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে ও প্রবাসী আয় তথা রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে, আই.এম.এফ কর্তৃক প্রদত্ত সকল শর্ত পর্যায়ক্রমে মেনে লোনের সুবিধা গ্রহন করতে হবে যাতে রিজার্বের স্থিতি বজায় থাকে, ব্যাংকিং খাতে রুপান্তর ঘটাতেএকীভুতকরন প্রকৃয়া শতর্কতার সাথে অবলম্বন করতে হবে যাতে দুর্বল ব্যাংক কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।

দুই দিনের এই সম্মেলন ছিল প্রানবন্ত এই অস্তিরতার সময়ে যেখানে সাধারন মানুষ বাজারের মুল্যবৃদ্ধির চাপে অস্থির রয়েছে। আবার প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি সমিতির বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদেও মধ্যে কিছুটা সস্তির উদ্যেগ ঘটিয়েছে যা প্রসংশনীয়।

লেখক: অধ্যাপক (অর্থনীতি), সাবেক পরিচালক, বার্ড (কুমিল্লা), সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ও এলকপ মনোনীত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষন টিমের সদস্য

সারাবাংলা/এসবিডিই

ড. মিহির কুমার রায় প্রধানমন্ত্রীর ভাবনায় গ্রামোন্নয়ন মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর