ঘূর্ণিঝড় রেমাল: দুর্যোগ পরবর্তী ব্যবস্থাপনার গতি প্রকৃতি
৩১ মে ২০২৪ ১৯:৫২
ভূমিকা
ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে দেশের সাত জেলায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া উপকূলীয় ও আশপাশের ১৯ জেলায় পৌনে ২ লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ৪০ হাজার ৩৩৮টি এবং আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫২৮টি ঘরবাড়ি। মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটেছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, চট্টগ্রাম ও পিরোজপুরে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে উপকূল ও আশপাশের ১৯ জেলা। এগুলো হলো সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর। সবচেয়ে বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্থ হয়েছে খুলনা জেলায়। এই জেলায় ২০ হাজার ৭৬২টি ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্থ হয়েছে। বাগেরহাটে বিধ্বস্থ হয়েছে ১০ হাজার ঘরবাড়ি। বাকিগুলো বিভিন্ন জেলায়। এই ঝড়ে দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৬ লাখ। গত ২৬ মে রোববার রাতে বাংলাদেশে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে উপকূল ও আশপাশের ১৯ জেলা। এগুলো হলো সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর। সবচেয়ে বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে খুলনা জেলায়। এই জেলায় ২০ হাজার ৭৬২টি ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্থ হয়েছে। বাগেরহাটে বিধ্বস্ত হয়েছে ১০ হাজার ঘরবাড়ি। বাকিগুলো বিভিন্ন জেলায়। এই ঝড়ে দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৬ লাখ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো–অর্ডিনেশন সেন্টারের দুর্যোগসংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিকাশ
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রধান দুটি উপকূলীয় বিভাগ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ২৬৩টি স্থানে বেড়িবাঁধের ৪১ কিলোমিটার এলাকা বিধ্বস্থ হয়েছে। খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৮৪টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। বরিশাল বিভাগে প্রাথমিক হিসাবে কৃষি খাতে ৫০৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুধু এ দুই বিভাগেই আংশিক ও পুরোপুরি বিধ্বস্থ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭। গৃহহীন মানুষের বাইরেও ১৯ জেলায় আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮৫৮টি ঘরবাড়ি। আর সম্পূর্ণ ঘরবাড়ির সংখ্যা ৪১ হাজার ৩৩৮। উপকূলীয় অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ভেসে গেছে হাজার হাজার মাছের ঘের ও পুকুর। বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা দুই জেলায় যেসব বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেগুলো সংস্কার করতে ২৬ কোটি টাকার মতো খরচ হবে বলে জানিয়েছেন খুলনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। খুলনা বিভাগের মোট ৪৩২টি ইউনিয়ন ও তিনটি পৌরসভা দুর্যোগকবলিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২ লাখ ৬৯ হাজার ১৫৪ মানুষ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে খুলনা জেলায়। এ জেলায় ৭৬ হাজার ৯০৪টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৫২ হাজার ২০০। খুলনা নগরে অসংখ্য গাছ উপড়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ে সাতক্ষীরা জেলায় ১ হাজার ৪৬৮টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্থ হয়েছে। শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালীগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে সাতক্ষীরা শহরেও অসংখ্য গাছ উপড়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড়ে জেলার ১ হাজার ৪৬৮টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্থ হয়েছে। ৪৩ ইউনিয়নের মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় ২ লাখ ২১ হাজার ১৭৬ মানুষ। খুলনা বিভাগীয় মৎস্য অফিস ক্ষয়ক্ষতির একটি তালিকা তৈরি করেছে। তাতে দেখা গেছে, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায় মোট ৬০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় উপড়ে পড়েছে কয়েক হাজার গাছপালা। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা। ১৯ জেলার প্রায় পৌনে তিন কোটি লোক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। বিদ্যুৎ খাতে মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি টাকা। বাগেরহাট জেলায়ও অন্তত ৪৫ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বরিশাল বিভাগে প্রাথমিক হিসাবে কৃষি খাতে ৫০৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বরিশাল জেলায় ক্ষতি হয়েছে ১১০ কোটি ৩৩ লাখ টাকার। বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড়ে বিভাগের ছয় জেলায় কৃষি খাতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ১৮ হাজার ২০৯ হেক্টর জমির ফসল। কৃষিতে বরিশাল জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১১০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। চাইলে এ রকম আরো অনেক পরিসংখ্যান দেয়া যাবে এবং এসব ক্ষতির তালিকা আরো দীর্ঘ হবে সন্দেহ নেই। আবার এসব হিসাব-নিকাশের বাইরেও থেকে যাবে অনেক কিছু। যেমন কক্সবাজার, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, ভোলা, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, ঝালকাঠি প্রভৃতি জেলায়ও ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাত হানার কথা। শেষ সময়ে রেমাল গতিপথ পরিবর্তন করে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলায় আঘাত হেনেছে। কিন্তু এসব জেলায় জলোচ্ছ্বাস ও বাতাসের গতিবেগ অত প্রবল না হলেও বিশেষ করে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, ভোলা, সন্দ্বীপ, হাতিয়া প্রভৃতি উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চিংড়ির ঘের, মাছের ঘের, পানের বরজ এবং লবণমাঠের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষতির পরিমাণ কোটি কোটি টাকা।
দুর্যোগ পরবর্তীকর্মসূচিতে সরকারের অবস্থান
দুর্যোগে সরকারের উদ্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমেছে। যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায়, সরকার দুর্যোগ পূর্ববর্তী প্রস্তুতি গ্রহণে তৎপর থাকায় এবং যথাসময়ে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। যতটা আমরা জেনেছি, সাতক্ষীরা, বরগুনা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, ভোলা ও নোয়াখালীর হাতিয়ায় ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।’ মৃতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে, অনেক চিংড়ি ঘের-ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বিভিন্ন অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। বৈদ্যুতিক লাইন-রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।’ দুর্যোগ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে থাকার আহ্বান জানান কাদের। তিনি আরও বলেন, ‘পটুয়াখালীর আবালীসহ বিভিন্ন জায়গায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। বিধ্বস্থ ও ক্ষতিগ্রস্থ স্থাপনা, রাস্তাঘাট, বৈদ্যুতিক সংযোগ মেরামতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা রাত জেগে দুর্যোগ মোকাবিলার সব প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করেছেন, তদারকি করেছেন। উপকূলীয় এলাকার মানুষের দুঃখ-দুর্দশার খবর নিয়েছেন, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। আবহাওয়ার উন্নতি হলে অতি দ্রুত প্রধানমন্ত্রী ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনে যাবেন।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়সহ যে কোনো দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায়, সরকার দুর্যোগ পূর্ববর্তী প্রস্তুুতি গ্রহণে তৎপর থাকায় এবং যথা সময়ে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। সার্বিকভাবে এ কথা প্রমাণিত, গত ১৫ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সময়োপযোগী পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কারণে বাংলাদেশ আজ দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টে বাংলাদেশের সাফল্য আজকে সারা দুনিয়ায় প্রশংসিত হয়েছে, প্রশংসিত হচ্ছে।’ গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বাংলাদেশের যে বাস্তবতা, ঝড়ে-জলোচ্ছ্বাসে-দুর্যোগে-বন্যায় এসব দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিএনপি বিরোধী দল হিসেবে একটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব পালনে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। ইতঃপূর্বে আমরা দেখেছি, সাহায্যের নামে ফটোসেশন করা। কক্সবাজারে রোহিঙ্গারা স্রোতের মতো এসেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক সাহায্য করেছেন এবং তিনি আমাদের সীমান্তকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন উদারভাবে। যেটা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। তখনো আমরা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রোহিঙ্গাদের পাশে ছিলাম।
এখন করনীয় কী?
গণসচেতনতা বৃদ্ধি
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়টি বৈশ্বিক। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। প্রতি বছরই দেশে ঘূর্ণিঝড়–জলোচ্ছ্বাস, চরম উষ্ণতা, আর্দ্রতা ঝুঁকি, সমুদ্র পানির উচ্চতা বৃদ্ধির মতো দুর্যোগ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় দেশের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বাড়লেও সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। জনগণ সচেতন না হলে শুধুমাত্র সরকারের পক্ষে জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। দুর্যোগ হলো জলবায়ু পরিবর্তনের অনেকগুলো অনুষঙ্গের ফলাফল। বিভিন্ন কারণে দুর্যোগ বেড়েছে। বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, খরা-বন্যা ও বিভিন্ন প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার খবরগুলো গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত হচ্ছে। কিন্তু প্রভাবের ক্ষতিকর দিক এবং উত্তরণে করণীয় বিষয়গুলো গণমাধ্যমে তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। এ বিষয়গুলো গণমাধ্যমে আরও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা প্রয়োজন।
ত্রাণ তদারকি
দুর্যোগ-পরবর্তী অবস্থায় ত্রাণ ও পুনর্বাসন ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে, এবং একটি পদ্ধতিগত বণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালনা করা হোক। অতীত অভিজ্ঞতায় ত্রাণ বিতরণে নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির কথা জানা যায়। তাই রেমাল ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের সুন্দর ও সুষ্ঠু বণ্টন ও বিতরণ ব্যবস্থার দিকে অধিকতর মনোযোগ দিতে হবে।
গণমাধ্যমের ভুমিকা
গণমাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের দিকগুলো নিয়ে প্রতিবেদন কম হচ্ছে। গণমাধ্যমে এগুলো আরও বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জলবায়ু ট্রাষ্ট ফান্ডের তহবিল কিভাবে কোথায় খরচ হচ্ছে–সেটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়টি বৈশ্বিক হলেও দেশের জনগণ সচেতন হলে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন করেছে। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর পরবর্তী সরকারের নানা পদক্ষেপের ফলে আমাদের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতাও অনেকাংশে বেড়েছে। তবে বায়ু দূষণ, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারসহ নানা বিষয় নিয়ন্ত্রণে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। এসব বিষয়ে সরকার ও জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন বনাম উন্নয়ন
জলবাযু পরিবর্তনের সঙ্গে উন্নয়নের একটি সংযোগ রয়েছে। যেসব দেশ উন্নতি করেছে, তারা জলবাযুর ক্ষতি করেই উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করেছে, সুতরাং সেসব দেশের এখন দায়বদ্ধতা খুব বেশি। আগে গ্রামের কৃষকরা বাংলা সনের তারিখ দেখে ফসল বুনতো, এখন ঋতু পরিবর্তন হয়ে গেছে, কৃষকরা এখন আর আকাশের দিকে তাকিয়ে চাষাবাদ করে না। বৈশ্বিক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু দেশগুলো ক্ষতিপূরণ না দিয়ে বরং ঋণ দিতে বেশি উৎসাহী। এ ধরনের ঋণ সার্বিকভাবে কারও জন্যই সুখকর নয়।
লেখক: অধ্যাপক (অর্থনীতি),সাবেক পরিচালক,বার্ড (কুমিল্লা), সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ও এলকপ মনোনীত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষন টিমের সদস্য
সারাবাংলা/এজেডএস
ঘূর্ণিঝড় রেমাল দুর্যোগ পরবর্তী ব্যবস্থাপনার গতি প্রকৃতি ড. মিহির কুমার রায়