Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অপ্রদর্শিত সম্পদ ও কালো টাকা বৈধ করার প্রসঙ্গ

ড. মিহির কুমার রায়
৮ জুন ২০২৪ ১২:৫৪

জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অপ্রদর্শিত সম্পদ বা কালো টাকাকে বৈধ করার সুযোগ রেখে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী প্রস্তাব করেন অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা সাদা করতে সরকারকে কর দিতে হবে মাত্র ১৫ শতাংশ। সেক্ষেত্রে আয়ের উৎস নিয়েও আর কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। আর প্রদর্শিত বা বৈধ আয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ করহার হবে এর দ্বিগুণ বা ৩০ শতাংশ। এ বিষয়ে বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে ‘দেশের প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন, কোনো করদাতা স্থাবর সম্পত্তি যেমন ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ও ভূমির জন্য নির্দিষ্ট করহার এবং নগদসহ অন্যান্য পরিসম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করলে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকারের প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না।’

বিজ্ঞাপন

তাত্বিকভাবে কালো টাকার বিষয়টিকে অর্থনীতির চর্চায় তেমনভাবে গুরুত্ব দেয়া হয় না বিশেষত: শিক্ষা কিংবা গবেষণা কার্যক্রমে । অখচ অর্থনীতিতে এটি জিডিপির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে রয়েছে যা উৎপাদনশীল খাতে ব্যয়িত হলে দেশের উৎপাদন ও কর্মসংন্থান উভয়টি বৃদ্ধি পেত । তাই প্রশ্ন স্বভাবতই আসে বিষয়টি কী? কালো টাকার একটা নিজস্ব ধারণা রয়েছে যেমন দেশের কর আইনে কালো টাকার সংজ্ঞা না থাকলেও অপ্রদর্শিত আয় কথাটি উল্লেখ আছে বিধায় যে ব্যক্তি তার আয়কর রিটার্নে তার আহরিত আয় প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয় সেই টাকাকেই কালো বলে ধরা হয়; যদিও এই আয় অবৈধ পথে নাও হতে পারে।এখন অনেকে বলছে অপ্রদর্শিত আয় দুই রকমের যথা: (১) বৈধ অর্জন কিন্তু আয় রিটার্নে প্রদর্শিত হয়নি; (২) অবৈধ উপায়ে অর্জন; যার ওপর আয়কর দেয়া হয়নি। এখন নির্দিষ্ট পরিমাণ কর জরিমানাসহ প্রদান সাপেক্ষে অর্থনীতির মূলধারায় কালো টাকাকে সম্পৃক্ত করার প্রচেষ্টাকে কালো টাকা সাদা করা বলা হয়। অর্থনৈতিক দর্শনে কালো টাকাকে বিভিন্নরূপে দেখানো হয়েছে। যেমন- ধুসর, নিমজ্জিত, অনানুষ্ঠানিক, সুপ্ত, সমান্তরাল ইত্যাদি। যার মূল উৎস অনৈতিকতার ছাপে আবদ্ধ বিভিন্ন রূপে যেমন- ঘুষ, মানুষ পাচার, স্বর্ণ পাচার, চাঁদাবাজি, জমি কেনা-বেচার দালালি ইত্যাদি। যার গতিময়তা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে বেশি যা কোন নিয়মের ছকে আবদ্ধ করা যায না।

বিজ্ঞাপন

আয়কর আইনের ১৯(ই) ধারায় ৩(ঘ) উপধারা অনুযায়ী বেআইনি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্জিত আয় যথাযথ আয়কর এবং ১০ শতাংশ হারে জরিমানা দিয়ে টাকা সাদা করা যাবে না, যা নৈতিকতা ও সংবিধানে পরিপন্থী; যা সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে। বণিক বার্তায় একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছে কালো টাকা সাদা টাকা উভয়ই মানি সার্কুলেশনের অন্তর্ভুক্তি হলেও অর্থনীতিতে প্রথমটির প্রভাব নেতিবাচক; যা সরকারের হিসাবের মধ্যে থাকে না, বিশৃঙ্খল গতিতে চলতে থাকে, আর্থ-সামাজিক পথে ক্ষত সৃষ্টি করে; যা প্রকারান্তরে ব্যাষ্টিক সামষ্টিক অর্থনীতিতে অবক্ষয়ের রাস্তাকে প্রশস্থ করে। আবার এই কালো টাকা প্রচলিত আইনকে ফাঁকি দিয়ে জনপদে বিচরণ করে এবং ন্যায়সঙ্গত শ্রমের চেয়ে প্রাপ্তি বেশি থাকায় এ টাকা ব্যয়ের সময় অর্থনীতির নিয়মকানুন মেনে চলা হয় না। নোবেল বিজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য কুমার সেন বলেছিলেন সভ্যতার গোড়া থেকে সাদা ও কালো পরস্পরকে হাত ধরাধরি করে আসতেছে; যা পৃথিবীর সব দেশেই কম-বেশি রয়েছে একটি নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে যেমন পশ্চিমা বিশ্ব, মধ্যম আয়ের দেশ লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার কিছু দেশে যেখানে অফশোর হিসাব বলে একটি কার্যক্রম প্রচলতি আছে। যেখানে বিষেশায়িত অঞ্চলে কালো টাকা বিনিয়োগ করলে কোন প্রশ্নের মোকাবেলা করতে হয় না; যা অর্থনীতিতে বিনিয়োগের একটি বৃহৎ অংশ দখল করে রয়েছে।

বৈধ আয়ের ওপর আরোপিত সর্বোচ্চ করহার কালো টাকা সাদা করতে প্রয়োজনীয় করহারের দ্বিগুণ। এ পদক্ষেপ দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জনকে আরো উৎসাহিত করতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, বাজেটে বিশেষ গোষ্ঠীর অপ্রদর্শিত আয় বা কালো টাকাকে বৈধ করার সুযোগ রাখা হলেও দেশের সাধারণ মানুষকে মূল্যস্ফীতিসহ বিদ্যমান সংকটগুলো থেকে বের করে আনার মতো বিস্তৃত দিকনির্দেশনা তেমন একটা নেই। বাজেটে গৃহীত পদক্ষেপগুলো জনগণের মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে পর্যাপ্ত নয়। বরং এতে জনগণের ভোগান্তি আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘এ বাজেটের মাধ্যমে ‘কালচার অব ক্রনি-ক্যাপিটালিজম বা অসদুপায়ে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে বিশাল সম্পদ গড়ে তোলার প্রবণতা পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই। সে-সংক্রানমশ কোনো ঘোষণাও এ বাজেটে নেই। ঘোষণা থাকলেও আমরা কিছুটা হয়তো আশ্বহমশ হতাম, সেটিও নেই। ব্যাংক খাত নিয়ে কোনো কথা বলা হচ্ছে না। সেটির প্রভাব সবার ওপর পড়ছে। আমাদের সুদহার বাড়ছে। আমাদের ব্যক্তি খাতের ঋণের প্রবাহ কমে যাচ্ছে। ব্যাংক খাতে সরকারের নির্ভরশীলতা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেই হিসেবে ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এই যে একটা ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়েছে ব্যাংক খাতে; চাহিদা বাড়ছে কিন্তু তাদের সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। সেটা কিন্তু অ্যাড্রেস করা হয়নি। কাঠামোগত কোনো সমস্যাকে এ বাজেটে মেনশন করা হয়নি বলে আমার ধারণা। উদারীকরণ ও সুদহার বেড়ে যাওয়ার কিছু প্রভাব হয়তো মূল্যস্ফীতিতে দেখা যাবে। তবে জনসাধারণের দুর্ভোগ সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়তেও পারে। কারণ বিদ্যুৎসহ কিছু পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হবে। কাজেই দুর্ভোগ কমবে না।’

এখন নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানটা কী তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। কারণ বাজেট আসলেই এ বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের উক্তি করতে দেখা যায়। বিশেষত বিশ্লেষকদের কাছে যা ছদ্মবেশে বিষয়টি রয়েই যায়; যা কর্তৃপক্ষ সরাসরি বলতে বা ঘোষণায় কিছুটা রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির আশ্রয় নেয়। কারণ বিষয়টি অনেকটা অনৈতিক দার্শনিক শাস্ত্রের মানদন্ডে-অনৈতিক। ১৯৭১ সাল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পরিচালিত রাষ্ট্র-কাঠামোতে কালো টাকা সাদা করার বিতর্কটি ছিল না। কিন্তু পঁচাত্তরপরবর্তী সামরিক সরকারগুলো এ বিষয়টিকে নিয়ে আসে বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং বাজেটের আগে-পরে এ বিষয়টি হালে পানি পায় এই যুক্তিতে, যা জিডিপির একটি বড় অংশ; যা অর্থনীতির মূল ধারায় নিয়ে আসতে না পারলে উন্নয়ন অনেকাংশে ব্যাহত হবে। বাস্তবে দেখা গেল এই প্রক্রিয়ায় সাড়া খুব একটা পাওয়া যায় না তিনটি কারণে যথাক্রমে: এক. জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) হয়ত নির্ধারিত ২০% (১০% কর ও ১০% জরিমানা) নিয়ে আযকর রির্টার্নের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার ব্যবস্থা করল কিন্তু ভয়টা হলো ভবিষ্যতে এই রেকর্ড ধরে কালো টাকার মালিক কোন হয়রানির স্বীকার না হয়? যেমন বর্তমান সরকার ধারাবাহিকভাবে ১৫ বছর যাবত ক্ষমতায় রয়েছে এবং গত দুটি/তিনটি নির্বাচনের আগে তার চির প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী দলের নেতৃত্বকে বলতেন ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্তএবং ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কত কালো টাকা সাদা করেছে; যা একটি রাজনেতিক বিতর্ক; দ্বিতীয়. দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়টি নিয়ে ভরিষ্যতে কোন প্রকারে ঝামেলা করবে কিনা এবং যদি করে তবে দেশের প্রচলিত অইনে তাকে শাস্তি পোহাতে হবে। কারণ দেশের প্রচলিত আইনে এর কোন সুরক্ষার কথা বলা নেই; তৃতীয়ত. সামাজিক মর্যাদার ভয় রয়েই গেছে। কারণ বাংলাদেশের রক্ষণশীল সমাজে কালো টাকার মালিক যদি আয়কর রিটার্নের মাধ্যমে কোন মামলায় জড়ায় তবে তা বংশপরম্পরায় যাতনা বইতে হবে; যা মানসিক অশান্তির কারণ হতে পারে। এখন আসা যাক অর্থনীতিতে কালো টাকার পরিমাণ কত এবং এখন পর্যন্ত কত টাকা সাদা করা হয়েছে এই হিসাবে। বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০১১ সালের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায় যে, ২০০৯ সালে অর্থনীতিতে ৬২.২ শতাংশ কালো টাকা ছিল, যার পরিমাণ ৫ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা; যা সে সময়ের ঘোষিত বাজেটের চেয়েও বেশি। বাংলাদেশে ১৯৭৫ পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা সাদা করা হয়েছে এবং সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা; যার জন্য এ সুযোগটা রাখা হয়েছে ষোষিত-অঘোষিতভাবে। এখন প্রশ্ন থাকে এই আদায়কৃত কত টাকা শর্তমতে উৎপাদন খাতে ব্যায়িত হয়েছে? বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি তার গবেষণায় উল্লেখ করেছেন, দেশে অপ্রদর্শিত কালো টাকার পরিমাণ ৭ লাখ হাজার কোটি টাকার উপরে; যার কোন প্রভাব দৃশ্যত অর্থনীতিতে দেখা যাচ্ছে না। এই কালো টাকার উপস্থিতির কারণে অর্থনীতিতে যেসব সমস্যা দৃশ্যমান তা হলো (১) ধনী-গরীবের আয়ের বৈষম্য সৃষ্টি; (২) দ্বৈত অর্থনীতি (কালো বনাম সাদা); (৩) জাতীয় আয়ে তত্ত্ব বিভ্রাট; (৪) সরকার কর্তৃক রাজস্ব হারানো; (৫) সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভাটা; (৬) বাহুল্য ব্যয় বৃদ্ধি; (৭) দুষ্প্রাপ্য সম্পদের ওপর বাড়তি চাপ যা বাজার ব্যবস্থায় মূল্য বাড়ায়; (৮) সমাজের নৈতিক মানদ- নষ্ট হয়; (৯) উৎপাদন ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ইত্যাদি।এসব সমস্যার সমাধানকল্পে একটি স্বল্প-দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন; যা বাজেট বক্তৃতায় তেমন উল্লেখিত হয়না। তবে র্দীর্ঘমেয়াদি কালো টাকার অনুশীলন কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়; যা এখন থেকেই সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন- :প্রখ্যাত জার্মান অর্থনীতিবিদ ডেভিড মোরিলের বক্তব্যের আলোকে কালো টাকার পরিমাণ নির্ধারণসহ বাহকদের চিহ্নিত করতে হবে; যাতে অর্থনীতির অনুকূলে ইতিবাচক কার্যক্রম নেয়ার পথ সুগম হয়; দ্বিতীয়ত. প্রখ্যাত আরও একজন সমাজ বিশ্লেষক কার্ল মার্কসের উক্তি হলো কালো টাকা ছাড়া কোন পুঁজি গঠিত হয় না এবং তা যদি সত্য হয়, তা হলে দেশের ভিতরে যে কালো টাকা রয়েছে তা দিয়ে গঠিত পুঁজি দেশের বড় বড় খাতের বিনিয়োগের মাধ্যমে উন্নয়ন ঘটাতে হবে, যার ফলে বিদেশি নির্ভরতা কমবে; তৃতীয়ত. দেশের ভিতরে কালো টাকার উৎপাদনের ক্ষেত্রগুলো বন্ধ করতে হবে ক্রমান্বয়ে। কাজটি যেহেতু অপ্রদর্র্শিত অর্থনীতির অংশ, তাই এর প্রশাসনিক কাঠামো এমন হওয়া উচিত যেখানে অবৈধভাবে যেন অর্থ উপার্জনের সুযোগ না থাকে। একজন দার্শনিক বলেছিলেন কেহ যদি বিপুল সম্পদের মালিক হয় তা রক্ষার জন্য পাহারাদার রাখতে হবে, সে যদি জ্ঞানের মালিক হয় তবে এই জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হয়েই তার জীবন রক্ষা হবে, যার জন্য কোন বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হবে না। সর্বশেষে বলা যায়, এই কালো টাকা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সময় ব্যয় না করে এর একটি স্থায়ী সমাধানের দিকে যাওয়া উচিত; যার দিকে নীতি-নির্ধারকদের মনোযোগ দিতে হবে।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দুর্নীতি সহায়ক, বৈষম্যমূলক, অসাংবিধানিক (টিআইবি )। বিবৃতিতে বলা হয়, মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার এমন সুবিধা সৎ ও বৈধ আয়ের করদাতাকে নিরুৎসাহিত করার সংস্কৃতি গড়ে তোলার পাশাপাশি এর আওতায় ঘোষিত অর্থ ও সম্পদের ব্যাপারে কোনো কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন করার সুযোগ না রাখা দেশে দুর্নীতি সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। একইসঙ্গে, এই সুযোগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভূক্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার যে অঙ্গীকার, যা প্রায়শই সরকার প্রধানসহ দলের শীর্ষ নেতারা পুনরাবৃত্তি করে থাকেন, সেই অঙ্গীকারকে প্রহসনে পরিণত করেছে। এমন বাস্তবতায় কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বাতিল করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে টিআইবি। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘ডেটা ভেরিফিকেশন সিস্টেম বা ডিভিএস’ চালু করার ফলে অপ্রদর্শিত অর্থ ঘোষণায় আইনি জটিলতা এবং করদাতাদের অজ্ঞতার দোহাই দিয়ে যেভাবে ‘অপ্রদর্শিত অর্থে’ ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট বা জমি কেনা বৈধ করার ঢালাও সুযোগ দেওয়া হলো- তা সত্যিই হতাশার। কালো টাকাকে সাদা করার এমন সুযোগ দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়ার মাধ্যমে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জন করতে যেন সরকারিভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সহজ করে বললে, সরকার দায়মুক্তির নিশ্চয়তা দিয়ে প্রকারন্তরে নাগরিককে দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। রাজস্ব বাড়ানোর খোঁড়া যুক্তিতে দুর্নীতি ও অনৈতিকতার গভীর ও ব্যাপকতর বিকাশকে স্বাভাবিকতায় পরিণত করা হচ্ছে। দুর্নীতিকে লাইসেন্স দেওয়ার এই প্রক্রিয়া চিরতরে বন্ধ হবে, এটাই প্রত্যাশিত।’ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রদানের দীর্ঘদিনের অসাংবিধানিক চর্চা বন্ধ করার এখনই উপযুক্ত সময় মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘শুভবুদ্ধি, দূরদৃষ্টি, সংবিধান ও আইনের শাসনের প্রতি সরকার আনুগত্য দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রত্যাহার করে নেবে-এমনটাই আশা। একইসঙ্গে, কালো টাকার মালিকদের সম্পদের উৎস অনুসন্ধানের মাধ্যমে কার্যকর জবাবদিহিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে দুর্নীতির মহোৎসবের রাশ টেনে ধরা যায়।’

লেখক: অধ্যাপক (অর্থনীতি),সাবেক পরিচালক, বার্ড (কুমিল্লা), সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ও এলকপ মনোনীত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষন টিমের সদস্য

সারাবাংলা/এসবিডিই

অপ্রদর্শিত সম্পদ ও কালো টাকা বৈধ করার প্রসঙ্গ ড. মিহির কুমার রায় মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর