বাজেট ভাবনায় স্মার্ট বাংলাদেশ কতটুকু সফল হবে?
৮ জুন ২০২৪ ১৪:২৩
এবারের বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম করা হয়েছে ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’। এটি হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের প্রথম বাজেট , দেশের ৫৩তম, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলো, সেই লক্ষ্য পূরণকে সর্বাগ্রে জোর দেয়া হয়েছে আগামী বছরের বাজেটে। এবারকার বাজেট পরিকল্পনায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রফতানিপণ্যের বৈচিত্র্র্যকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও প্রান্তিক মানুষের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি এবারের বাজেটে অগ্রাধিকারে দেয়া হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৪ দশমিক ২ শতাংশ । আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। টাকার অংকে যা ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। বাস্তবতা বিবেচনা করে আগামী অর্থবছরে বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ । আর চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার হলো ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। ফলে আগামী বাজেটের আকার চলতি বাজেট থেকে ৩৫ হাজার ১১৫ কোটি টাকা বা চার দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট পাঁচ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের মানুষের মাথাপিছু বরাদ্দ বেড়েছে ২ হাজার ১৭৪ টাকা। একইভাবে আয় বেড়েছে ২ হাজার ৬৭৪ টাকা। তবে মাথাপিছু ঘাটতি কমেছে ৫৯৯ টাকা। আর প্রতিজনে বরাদ্দ ৪৬ হাজার ৯৩৭ টাকা। তবে বাজেটে মোট যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৪ দশমিক ২ শতাংশ।এবার জিডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা । এছাড়াও প্রস্তাবিত বাজেটে মোট আয় ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ হিসাবে মাথাপিছু আয় ৩২ হাজার ১২০ টাকা। চলতি বছরে যা ছিল ২৯ হাজার ৪৪৬ টাকা। এ হিসাবে আয় বেড়েছে ২ হাজার ৬৭৪ টাকা। আগে যা ছিল ২ হাজার ৬৬৯ টাকা। এছাড়াও ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর মাথাপিছু ঘাটতি ১৪ হাজার ৮১৭ টাকা। অন্যদিকে এবার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আর মাথাপিছু বরাদ্দ ১৫ হাজার ৬১৬ টাকা। আগের বছর যা ছিল ১৫ হাজার ৪৮৮ টাকা। আগের বছর যা ছিল ১৫ হাজার ২১৭ টাকা। আলোচ্য সময়ে মাথাপিছু এডিপি বেড়েছে ১১৮ টাকা। চলতি বছরে বেড়েছিল ২৭১ টাকা। এবারের বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে বৈদেশিক উৎস থেকে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা সংস্থান করা হবে। অভ্যনমশরীণ উৎস থেকে আসবে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ টাকা। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। আর সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধের ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক ঋণের সুদ ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ধরা হয়েছে ।
সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছে। এর বাইরেও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন আছে ১৩ হাজার ২৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ধরলে নতুন এডিপির আকার দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা।আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ মোট প্রকল্প থাকছে এক হাজার ৩২১টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প এক হাজার ১৩৩টি, কারিগরি সহায়তার ৮৭টি এবং সমীক্ষা প্রকল্প রয়েছে ২১টি।মোট প্রকল্পের মধ্যে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি থেকে স্থানান্তর হবে এক হাজার ২৭৭টি প্রকল্প। বাকিগুলোর মধ্যে নতুন অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ৬০টি। এছাড়া আগামী অর্থবছরের এডিপিতে নতুন কিন্তু অনুমোদনহীন প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে এক হাজার ৮৯৪টি, বৈদেশিক অর্থায়নের সুবিধার্থে অনুমোদনহীন নতুন ২৫৭টি প্রকল্প এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) প্রকল্প থাকবে ৮০টি। এডিপিতে নতুন এডিপির আকার চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় দুই হাজার কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। এছাড়া সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) তুলনায় ২০ হাজার কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থ মেয়াদের প্রথম বাজেট (২০২৪-২৫ অর্থবছর) সংসদে ঘোষণা করা হয়েছে এতে মধ্যে সবছেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছেছে জনপ্রশাসন খাত। এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি, পরিবহন ও যোগাযোগ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাত। এখন বরাদ্ধেও সংখ্যাতাত্বিক বিবরন হলো : খাতভিত্তিক বরাদ্দে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে জনপ্রশাসন খাত। পরিচালন ও উন্নয়ন বরাদ্দের ভিত্তিতে মোট বাজেটে ২২ দশমিক ১ শতাংশ খরচ হবে এ খাতে। এ খাতে মোট ১ লাখ ৭৫ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।এতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত। মোট বাজেটের ১৪ শতাংশ খরচ হবে এ খাতে, যেখানে বরাদ্দ দেয়াা হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা।তৃতীয় অবস্থানে আছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। এ খাতে বাজেটের ১০ দশমিক ৪ শতাংশ বরাদ্দ দেযাা হয়েছে যা টাকার অঙ্কে ৮২ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা।চতুর্থ অবস্থানে আছে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাত। এ খাতে মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪৭ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা।এবারের বাজেটে পঞ্চম অবস্থানে আছে কৃষি খাত। এতে বাজেটের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এ কৃষি খাতে মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা।এর বাইরে সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, প্রতিরক্ষা খাতে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, স্বাস্থ্য খাতে ৫ দশমিক ২ শতাংশ, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে ৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে মোট ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
এবারকার এডিপিতে নতুন এডিপির আকার চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় দুই হাজার কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। এছাড়া সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) তুলনায় ২০ হাজার কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি।অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তবে মন্ত্রণালয় ভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ ৩৮ হাজার ৮০৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এদিকে সবচেয়ে কম বরাদ্দপ্রাপ্ত খাত হলো প্রতিরক্ষা। এখানে ধরা হয়েছে ৭১০ কোটি টাকা। । এডিপির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ৪০ হাজার ৭৫১ কোটি ৮৬ লাখ এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে শিক্ষা খাত ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অন্যান্য খাতের বরাদ্দ হচ্ছে-গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি ২৪ হাজার ৮৬৮ কোটি ৩ লাখ, স্বাস্থ্যে ২০ হাজার ৬৮২ কোটি ৮৮ লাখ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৭ হাজার ৯৮৬ কোটি ২১ লাখ এবং কৃষি খাতে ১৩ হাজার ২১৯ কোটি টাকা। আরও আছে শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৬ হাজার ৪৯২ কোটি ১৮ লাখ, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে ৪ হাজার ৭৮৬ কোটি ৯২ লাখ, ধর্ম-সংস্কৃতি ও বিনোদনে ৩ হাজার ৪৯২ কোটি, সামাজিক সুরক্ষায় তিন হাজার ৩০৪ কোটি, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষায় ৩ হাজার ৩০৮ কোটি এবং সাধারণ সরকারি সেবা খাতে দেওয়া হচ্ছে দুই হাজার ১৩৩ কোটি টাকা।সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ: আগামী অর্থবছরের এডিপিতে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে ৩২ হাজার ৪২ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ বিভাগ ২৯ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৬ হাজার ১৩৫ কোটি, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ১৩ হাজার ৭৪১ কোটি, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১৩ হাজার ৭২৫ কোটি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। আরও আছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ১১ হাজার ৩৮৭ কোটি, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ৩৭৩ কোটি এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৮ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে ১০ শতাংশের কম শেয়ার ছেড়েছে-এমন কোম্পানিগুলোর আয়করের হার ২৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। তবে শর্ত পরিপালন করলে তা সাড়ে ২২ শতাংশ। এক্ষেত্রে ভাষাগত পরিবর্তন ছাড়া সবকিছুই আগের মতো। উলটো অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর কমানো হয়েছে। এছাড়াও শেয়ার তালিকাভুক্তির বাইরে থাকা কোম্পানিগুলোর বর্তমান কর সাড়ে ২৭ শতাংশ। শর্তপালনে ব্যর্থ হলে তা ৩০ শতাংশ। প্রস্তবিত বাজেটে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর সাড়ে ২৭ শতাংশ। কিন্তু পালন করলে তা ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর মানে হলো, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার প্রায় সমান। এতে নতুন কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত হবে না। কোম্পানির উদ্যোক্তাদের শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে কর বাড়ানো হয়েছে। আগে কোনো কোম্পানির উদ্যোক্তা কাউকে শেয়ার দিতে চাইলে ৫ শতাংশ কর দিতে হতো। প্রস্তাবিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে কেউ ছেলেমেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের শেয়ার দিতে চাইলে কর দিতে হবে না। এদিকে শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্টরাও প্রকাশ্যে কোনো কথা বলতে নারাজ। অন্যদিকে সমবায় সমিতির কর ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে মধ্যমেয়াদি সাতটি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে মূল্যস্ফীতির কথা। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে এ ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন বাজারে বিরাজমান উচ্চ সুদের হারকে। কারণ এই উচ্চ সুদহার বিনিয়োগের গতি শ্লথ করে জিডিপিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।মধ্যমেয়াদি তৃতীয় চ্যালেঞ্জটি কর-জিডিপি অনুপাত, যেটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সন্তোষজনক নয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও মধ্যমেয়াদি চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম। ব্যাংকিং খাততের ঋণ ব্যবস্থাপনাকে পঞ্চম চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিহিত করেছেন অর্থমন্ত্রী। ২০২৬ সালে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতকে মধ্যমেয়াদের ষষ্ঠ ও সপ্তম চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে মধ্যমেয়াদি নীতি বিবৃতিতে। মন্ত্রীর আশাবাদ, এসব নীতিকৌশলের সুফল হিসেবে আগামী অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে, যা মধ্যমেয়াদে (২০২৬-২৭ অর্থবছর) এটি বেড়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে পৌঁছাবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রসঙ্গে বলেছেন, উন্নত বিশ্বের উচ্চ সুদের হার বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। এসব দেশে উচ্চ সুদহার সামনেও অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো কঠিন হতে পারে। রিজার্ভের ওপর চাপ কমানোর লক্ষ্যে সাময়িকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ ও বিলাসী ভোগ্যপণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নন-পারফর্মিং ঋণ ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য কিছু ব্যাংক একত্রীকরণের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়াটির সুফল পেতে কছুটা সময় লাগবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের বাজারের অস্থিতিশীলতা বড় একটি কারণ। এর বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পদক্ষেপ হিসেবে ক্রলিং পেজ পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে। এতে রফতানি উৎপাহ পাবে, অফিশিয়াল চ্যানেলে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়বে। আর্থিক হিসাবে এখনো ঘাটতি থাকলেও তা মধ্যমেয়াদে কমে আসবে। আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়তে শুরুকরবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কিছু সুবিধা কমে যাবে। এ ক্ষেত্রে রফতানি বহুমুখীকরণ, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং ব্যবসায়িক পরিবেশের ওপর গুরুত্বারোপ করার কৌশল নেবে সরকার। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেশের অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য ক্ষতিসাধন করতে পারে উল্লেখ করে এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায় খুঁজে বের করার জন্য সঠিক বিশ্লেষণে গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
লেখক: অধ্যাপক (অর্থনীতি), সাবেক পরিচালক,বার্ড (কুমিল্লা) ,সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ও এলকপ মনোনীত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষন টিমের সদস্য
সারাবাংলা/এসবিডিই
ড. মিহির কুমার রায় বাজেট ভাবনায় স্মার্ট বাংলাদেশ কতটুকু সফল হবে? মুক্তমত