সাকিব আল হাসান: ক্রিকেট ও বাস্তব জীবনের অলরাউন্ডার
১৫ জুন ২০২৪ ১৫:০২
একটি অন্যরকম ভালো সংবাদ দিয়ে লেখাটি শুরু করছি। ৮ জুন সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটির একটি বলরুমে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের উদ্যোগে বাংলাদেশে ‘সাকিব আল হাসান ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ’ প্রকল্পের জন্য তহবিল সংগ্রহ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাকিব বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তি যার হাত ধরে মাগুরায় হচ্ছে বিশ্বমানের সাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশন ক্যান্সার হাসপাতাল। হুমায়ূন আহমেদ যখন ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছিলেন আমেরিকায়, তখন উনি ভেবেছিলেন সুস্থ হলে বাংলাদেশে একটি বিশ্বমানের ক্যান্সার হসপিটাল উনি করবেন। সাকিব শেষ বয়সের জন্য অপেক্ষা করেন নাই, উনি তরুণ বয়সেই এই কাজটি করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এটাই শাকিবের অনন্যতা। সাকিব এখানে তার ব্র্যান্ড ইমেজকে ব্যবহার করে তার গভীর মানবিক সত্তার পরিচয় দিয়েছেন। তার এই মানবিক সত্তার প্রশংসা দেশের সংবাদপত্র এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া যায় নাই। সাকিবকে নিয়ে যেখানে প্রচুর সমালোচনা করা হয় সেখানে এই কাজের প্রশংসা করতে আমরা কার্পণ্য করছি কেন?
সাকিবের প্রতি দর্শকদের পর্বত সমান প্রত্যাশা নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। আমরা সবাই জানি ক্রিকেট একটি দলগত খেলা। ক্রিকেট বোর্ড থেকে শুরু করে সবারই সমন্বিত প্রচেষ্টাতেই খেলাটিতে ধারাবাহিক সাফল্য আসে। বাংলাদেশের ধারাবাহিক ভালো খেলার ব্যাপারে সাকিব থেকে নিশ্চয়তার প্রত্যাশা করাটাই সম্পূর্ণভাবেই অযৌক্তিক। তাছাড়া পাইপলাইনে যদি প্রচুর ভালো খেলোয়াড় আমরা তৈরি করতে পারতাম তাহলে সাকিবরা ও সব সময় দলে অবস্থান হারানোর ব্যাপারে প্রেসারে থাকতে এবং ফলশ্রুতিতে তারা আরো বেশি প্রফেশনাল হত। পাইপলাইনে ভালো খেলোয়াড় নাই বিধায় দলে তারা রিলাক্স হয়ে যায়। এটা সাকিবদের দোষ না, এটা আমাদের পদ্ধতির দোষ। জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রেই যদি শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকে তাহলে তাহলে পারফরমেন্সের উপরে সেটা প্রভাব পড়বেই। আর পাইপলাইনে যদি ক্রমাগত ভালো খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকতো, তাহলে সাকিব সহ মূল দলের খেলোয়াড়রা আরো বেশি প্রফেশনাল এবং ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলা উপহার দিতে বাধ্য থাকতো। তাই বাংলাদেশের ধারাবাহিক ভালো খেলার ব্যাপারে সাকিবের উপর দায়ভার চাপানোটা খুবই অযৌক্তিক। অনেকেই সাকিবের আচরণ নিয়ে কথা বলেন কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল করবেন কিছু ব্যতিক্রম বাদে যে কোন ক্ষেত্রেই বিশ্ববিখ্যাত সফল ও মেধাবী ব্যক্তিরা আচরণগত দিক থেকে আদর্শ স্থানীয় নয়। বিশ্বে এরকম ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে যে সফল ক্রীড়াবিদরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগ্রাসী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাকিবের শোরুম ওপেনিং নিয়ে অনেক ট্রল হয়। আসেন একটি এনালাইসিস দেখি। সমস্ত ক্রীড়াবিদরাই তাদের খেলোয়াড়ি জীবনে থাকতে থাকতেই বিভিন্ন জায়গায় ব্যবসা-বাণিজ্য করে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে শুরু করে উন্নত বিশ্বে এটাই কমন প্রাকটিস। সাকিব আন্তর্জাতিক মানের তারকা তাই সে ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য ক্রেজি থাকতেই পারে। এটা তার দোষ না এটা তার গুণ। যে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ মেধাবী ক্রীড়াবিদ, তার ভালো মানের ব্যবসায়ী হতে দোষ কোথায়? কারণ একজন খেলোয়াড়ের ফর্ম থাকতে থাকতেই তার ব্যবসার সর্বোচ্চ সুযোগ থাকে, সাকিব সেটা ভালো করেই জানে এবং সেটা খুব ভালো করে ব্যবহার করে।
ইদানিং সাকিবের রাজনীতি নিয়ে দল, দলের ভিতরে ও দলের বাহিরে নিয়ে অনেক কথা হয়। একটা জিনিস খেয়াল করবেন সারাবিশ্বেই জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদদেরকে রাজনীতিতে টেনে নিয়ে আসে দলের ভবিষ্যৎ ভোট ব্যাংক বাড়ানোর জন্য। যতই ঝানু পলিটিশিয়ান থাকুক না কেন একজন সাকিব আল হাসানের সার্বিক ব্র্যান্ড ভ্যালু’র কাছে ঝানু পলিটিশিয়ান ধরা খাবেই। কারণ ঝানু রাজনীতিবিদের ভোট ব্যাংক শুধু তার নিজস্ব এলাকায়, একজন সফল খেলোয়াড়ের ভোট ব্যাংক সারা দেশে। স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের কাছে সাকিব আল হাসান কতটুক জনপ্রিয় সেটা ক্যাশ ইন করাটাই সাকিবের এমপি হওয়ার মূল কারণ। সারা বিশ্বের রাজনীতিবিদরাই এই ধারাটা অনুসরণ করে সেখানে বাংলাদেশ এই ধারাটা অনুসরণ করলে দোষ কোথায়? সাকিব যদি সেই সুযোগটা নেয়, সাকিবের দোষ কোথায়?
সর্বোপরি একজন সাকিব আল হাসানকে একজন মানুষ হিসেবে বিশ্লেষণ করলেই সাকিব আল হাসান সম্বন্ধে আপনি একটা পরিষ্কার ধারণা পাবেন এবং আপনি অবাক হয়ে যাবেন যে সাকিব আল হাসান তাঁর সময়ের তুলনায় কী পরিমাণ অগ্রসর, মানবিক ও বাস্তবসম্মত চিন্তাভাবনা করেন। সত্যিকার অর্থেই সাকিব আল হাসান ক্রিকেট ও বাস্তব জীবনের অলরাউন্ডার।
লেখক: বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক
সারাবাংলা/এসবিডিই
মুক্তমত মো. শামছুল আলম অনিক সাকিব আল হাসান: ক্রিকেট ও বাস্তব জীবনের অলরাউন্ডার