Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লোক সংগীতের ভবিষ্যৎ ভাবনা

মাহমুদুল হাসান মিল্টন
১৫ জুন ২০২৪ ১৫:৪২

যুগের আধুনিকায়নে মানব সভ‍্যতায় ঘটেছে আমূল পরিবর্তন। যোগাযোগমাধ‍্যম থেকে শুরু করে খাদ্যাভ্যাস, নিত‍্য জীবনযাত্রার কোথায় নেই আধুনিকায়নের পদচিহ্ন। যে পথ পায়ে হেঁটে বা অন্যকোনো ধীরগতির বাহনে যেতে লাগতো দু থেকে তিনদিন, সেখানে আজ যাওয়া যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। মাত্র কয়েক ঘন্টায়! বোঝা যাচ্ছে মানুষ আধুনিকায়নের সুফল ভোগ করছে।

এই পরিবর্তন আমরা সংস্কৃতিতেও দেখতে চাই। একশো বছর আগেও নাচ গান বা চিত্তবিনোদনের খোরাক যে মাধ‍্যমগুলো মানুষের মনকে প্রফুল্ল করতো, সেখানেও পরিবর্তন ঘটে গেছে। মানুষের মনের স্বাদ পরিবর্তন হয়েছে ব‍্যাপক আকারে। এই পরিবর্তনে আলাদা মাত্রা সংযোজন করলেও তা মূলত পাশ্চাত্য সভ‍্যতা থেকে ধার করে নেওয়া, আমাদের আদি সভ্যতা থেকে নয়। মূলত প্রাচীন ওই সংস্কৃতিই আমাদের জাতির সংস্কৃতিকে পরিচয় করিয়ে দেয় অন্যান্য জাতির কাছে।

বিজ্ঞাপন

এই একটি সংস্কৃতি নিয়ে যদি বলতে চাই প্রথমেই চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ওঠে গ্রাম বাংলার মাটি ও মানুষের কথা বলে ওঠে, সুখ দুঃখের কথা বলা লোকসংগীত। এই লোকসংগীতের কথা বর্তমান প্রজন্মের অনেকেরই অজানা, অচেনা। অজানা হবে নাই বা কেনো, তাদের কাছে কতটুকু তুলে ধরতে পেরেছি আমাদের এই সংস্কৃতিকে? আগেকার দিনে যখন আধুনিক সভ‍্যতার ছোঁয়া এসে পৌঁছায়নি, তখন কিন্তু আমাদের গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ এবং গোয়াল ভরা গরু ছিলো। এখনো আছে, কিন্তু স‍ংখ‍্যাটা কম। জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির কারণে ফসলি জমি যেমন কমেছে তেমনি কমেছে পুকুর। এই পুকুরে গড়ে উঠেছে বসতভিটা। যখন আমাদের গোলা ভরা ধান কিংবা পুকুর ভরা মাছ ছিলো তখন ধান কাটতে বা খেত নিড়ানি, ধান কাটতে কৃষকরা জুড়ে দিতো বিভিন্ন রকমের গান যা মূলত আমাদের লোকসংগীতের একটা বড় পাওয়া। এখন যদিও ক্ষেতে নিড়ানি দেওয়া হয় বটে কিন্তু আর গানের প্রচলনটা নেই। আজকাল মোবাইলে শোনা হয় হিন্দি সিনেমার গান। আরও একটা কারণ আছে বটে। ধানও আজ শ্রমিক দিয়ে কাটা হয় না। আধুনিক যন্ত্রপাতি দখল করেছে তাদের স্থান। যন্ত্র তো আর গান গাইতে পারবে না, বিকট শব্দ করা ছাড়া।

বিজ্ঞাপন

আমাদের এই বাংলার অঞ্চল জুড়ে আগেকার দিনে গবেষকের মতে প্রায় আড়াইশো লোকগানের কথা শোনা যায়। আড়াইশো তো বাদই দিলাম এখন বিশটি গানও প্রচলিত কিনা সন্দেহাতীত। ভাটিয়ালি-ভাওয়াইয়া, জারি-সারি, বাউল-মুর্শিদি, মারফতি, কবিগান, কীর্তন- বাউল এরকম প্রধান কয়েকটি লোক সংগীতের নাম শোনা গেলেও তার চর্চা দুই একটাও ঠিকভাবে হচ্ছে না।

গানের যে প্রচলন সেটা ভাটা পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে পরিবেশ পাল্টানোর কারণে। নৌকার বৈঠা চালানোর সময় যে সুরটা ধ্বনিত হয় সেই ধ্বনিতে মাঝির মন নেচে ওঠে গান করার জন্য। কিন্তু আজকালকার ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের উচ্চশব্দের কারণে কার মনটা সায় দেবে গান গাই বা শুনি! ইচ্ছে হলেও আর মাঝি আব্বাস উদ্দিনের সুরের সাথে সুর ধরে গাইতে পারেন না, ‘নাও ছাড়িয়া দে পাল উড়াইয়া দে, ছল ছলাইয়া চলুক রে নাও, মাঝ দইরা দিয়া’। গরুর গাড়ির প্রচলনে আগে বিয়ে হলে নতুন বর-বৌ আনা-নেওয়া করা হতো, দূরের আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়াতে যেত মানুষ। তখন দীর্ঘযাত্রার কারণে একটু হাওয়া পেলেই গাড়িয়াল গান জুড়ে দিতেন, ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই, কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে’ -এসবের সেই পরিবেশ এখন আর নেই। এভাবেই সভ‍্যতার কাছে পর্যুদস্ত হলো আমাদের এই বহুল প্রচলিত লোকসংগীত।

হারানোর ক্ষেত্রে আমাদের শ্রোতাদেরও কম দোষ নেই। আমরা তাদেরকে দূরে ঠেলে দিয়েছি বলেই ধীরে ধীরে তারা নীরবে দূরে সরে গিয়েছে। নতুন প্রজন্মের কাছে নতুন করে এই গানগুলোকে চেনানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। আশার কথা হচ্ছে বাংলাদেশে বর্তমানে গুটিকয়েক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত বিভাগ চালু করা হয়েছে। এতে পড়ানো হচ্ছে হারানো দিনের লোক সংগীত। এর পরিধি বিস্তৃত করা সময়ের দাবি।

বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার করা হয় লোক সংগীতের গানের অনুষ্ঠান। অন্য টেলিভিশনেও প্রচার হয় তবে সেটা খুব বেশি নয়। সবগুলো টেলিভিশনে বেশি বেশি প্রচার করতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ের শিল্পীদের সুযোগ দিতে হবে, এ নিয়ে গবেষণা হতে হবে বেশি বেশি। গবেষকদের সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো গেলে হয়তো কিছুটা ফিরিয়ে আনা যাবে হারানো ঐতিহ্য।

লেখক: শিক্ষার্থী

সারাবাংলা/এসবিডিই

মাহমুদুল হাসান মিল্টন মুক্তমত লোক সংগীতের ভবিষ্যৎ ভাবনা

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে আগুনে পুড়ল ৫ দোকান
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১২:৩৪

আরো

সম্পর্কিত খবর