Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বদ্বীপ পরিকল্পনা ও আমাদের বাস্তবতা

আবু আফজাল সালেহ
২৫ জুন ২০২৪ ১৪:০৮

নদীমাতৃক বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ। তিনটি প্রধান নদী পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীবাহিত পলি মাটি দ্বারা গঠিত দ্রুত বর্ধনশীল এ ব-দ্বীপ অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। নদী ও তার প্লাবন ভূমি এ দেশের ৮০ শতাংশ এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা ও অর্থনীতির নিয়ামক শক্তি। দেশটির নদী জীবন, জীবিকা, অর্থনীতিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। একদিকে বর্ষাকালে প্রচুর পানি ও পলি নদীগুলো দিয়ে বঙ্গোপসাগরে ধাবিত হয় এবং অসংখ্য চরের সৃষ্টি করে, অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যায়। বদ্বীপ অধিবাসীদের বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, নদী ভাঙন, পানি দূষণের মত হুমকি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সালে দেশটির ১৪% শতাংশ এলাকা নিমজ্জিত হবে বলে আগাম ধারণা দিয়েছে পরিবেশ সংশ্লিষ্টরা। তার নেতিবাচক প্রভাবে ৩০ মিলিয়ন লোক জলবায়ু শরণার্থীতে পরিণত হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা, নদীভাঙন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। গঙ্গা অববাহিকায় অবস্থিত বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ছে। কখনও অসময়ে প্রবল বৃষ্টি, বর্ষাকালে অনাবৃষ্টি। লবণাক্ততার কারণে সুপেয় পানির অভাব, শস্য কমে যাওয়া, নদী ভাঙন, ফলহানি ইত্যাদি হচ্ছে। প্রায় প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক লোক গৃহহীন হয়ে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশের জন্য পানিস¤পদ ব্যবস্থাপনা এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। শুধু নদীখনন আর বন্দর উন্নয়ন করলে পরিকল্পনার মূল কাজে অনেক পিছিয়ে পড়তে হবে।

বিজ্ঞাপন

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতেই অতি সম্প্রতি একটি মহা পরিকল্পনা গ্রহণ ও পাশ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনায় বন্যা, নদীভাঙন, নদী শাসন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নগর বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ বা ডেল্টা প্লান-২১০০ নামে পরিচিতি পাচ্ছে। এটি ১০০ বছরের পরিকল্পনা। আপাতত ২০৩০ সাল নাগাদ ৮০টি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে খরচ হবে ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। বর্তমান বাজার ধরে টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি।বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ২০৩০ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বাড়তি দেড় শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। ১০০ বছরে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উন্নয়ন পরিকল্পনা এটি। বদ্বীপ পরিকল্পনা পাসের পর পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ২১০০ সালে বাংলাদেশকে কোন জায়গায় দেখতে চাই, তা বদ্বীপ পরিকল্পনায় বলা হয়েছে। পৃথিবীতে এত দীর্ঘ সময়ের পরিকল্পনা আর কোনো দেশ করেনি। তিনি আরও বলেন, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে পারলে কৃষিতে আর পিছিয়ে পড়বে না বাংলাদেশ। নেদারল্যান্ডসের বদ্বীপ পরিকল্পনাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের বদ্বীপ পরিকল্পনা করা হয়েছে। নেদারল্যান্ডস এই পর্যন্ত ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার নতুন ভূমি পেয়েছে। বাংলাদেশেও নদীবাহিত পলি দিয়ে এমনভাবে ভূমি পেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ছয়টি এলাকাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এগুলো হলো উপকূলীয় অঞ্চল, বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চল, হাওর ও আকস্মিক বন্যাপ্রবণ এলাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নদীবিধৌত অঞ্চল ও নগর এলাকা। এ ছাড়া বদ্বীপ পরিকল্পনায় বৃহৎ পরিসরে তিনটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারির্দ্য দূর করা, ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা অর্জন। বদ্বীপ পরিকল্পনা হল দীর্ঘমেয়াদি, একক এবং সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা। দীর্ঘমেয়াদি বলতে পরিকল্পনার লক্ষ্য ২১০০। একক হল দেশের সব পরিকল্পনার আন্তঃযোগাযোগের মাধ্যমে একক ডেল্টা। সমন্বিত বলতে পানি সম্পর্কিত সকল খাতকে একটি পরিকল্পনায় নিয়ে আসা। বদ্বীপ পরিকল্পনা কৌশল সমূহের টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে ডেল্টা ভিশনে পৌঁছাতে সাহায্য করে। সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত বিপর্যয় থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত, পানি ব্যবহারে অধিকতর দক্ষতা আনয়ন, সমন্বিত ও টেকসই নদী এবং নদী মোহনা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা, জলাভূমি ও জীববৈচির্ত্য সংরক্ষণ এবং তাদের যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত, আন্তঃ ও আন্তঃদেশীয় পানিস¤পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর প্রতিষ্ঠান ও ন্যায়সঙ্গত সুশাসন গড়ে তোলা এবং ভূমি ও পানিস¤পদের সর্বোত্তম সমন্বিত ব্যবহার নিশ্চিত করার বিষয়গুলো বর্তমান আর্থসামাজিক বাস্তবতায় সর্বাধিক গুরুত্বের দাবিদার।

বাংলাদেশে ইতোপূর্বে খাতভিত্তিক স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি কর্তৃক ‘মাস্টার প্ল্যান ১৯৬৪’, ‘ন্যাশনাল ওয়াটার প্ল্যান ১৯৮৬, ন্যাশনাল ওয়াটার প্ল্যান ১৯৯২, ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যান ১৯৯২, ন্যাশনাল ওয়াটার পলিসি ১৯৯৯’ ন্যাশনাল ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান ২০০৪, হাওড় এলাকার মাস্টার প্ল্যান ২০১০, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি উন্নয়নের মাস্টার প্ল্যান ২০১৩’ এবং সাম্প্রতিক সময়ে প্রণীত ‘বাংলাদেশের বৃহত নগরী, শহর ও ছোট শহরগুলোর মাস্টার প্ল্যান’, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও অ্যাকশন প্ল্যান, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্ল্যান ২০১১-২৫ ইত্যাদি। এসব পরিকল্পনার অধিকাংশই একক খাতভিত্তিক হওয়ার কারণে এর সুফল সংশ্লিষ্ট সেক্টরগুলো পেয়ে থাকলেও অন্য খাতে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া কিংবা চাহিদা বিবেচনায় নেয়া হয়নি।

বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুতবর্ধনশীল। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া, স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পানি ব্যবস্থাপনা, খাদ্যনিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করার চ্যালেঞ্জ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এজন্যই কৃষি, খাদ্যনিরাপত্তা, মৎস্য, শিল্প, বনায়ন, পানি ব্যবস্থাপনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, স্যানিটেশনসহ সব খাত বিবেচনায় রেখে সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ একান্ত জরুরি ছিল। বদ্বীপ পরিকল্পনায় অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে দেশের উন্নয়ন প্রাধিকারগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। যেকোনো দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সুশাসন ও সহায়ক কার্যকরী প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো তৈরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০তে এ বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের প্রতিনিধিত্ব ও সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব হ্রাস করে জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনায় রেখে কৃষি, পানিসম্পদ, ভূমি, শিল্প, বনায়ন, মতস্যসম্পদ প্রভৃতিকে গুরুত্ব প্রদানপূর্বক সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুষ্ঠু পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, খাদ্যনিরাপত্তা ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ধাপে ধাপে বাস্তবায়নযোগ্য দীর্ঘমেয়াদি (৫০ থেকে ১০০ বছর) একটি সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের কর্মকৌশল নির্ধারণ করার প্রয়োজনীয়তা থেকেই বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রতিটি ধাপে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গবেষক, একাডেমিক, পেশাজীবী ও সুশীল সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত জাতীয়, আঞ্চলিক ও তৃণমূল পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের অংশীজনের অংশগ্রহণে মোট ২০টি কর্মশালা, আলোচনা সভা ও মতবিনিময় সভা (মোট উপস্থিতি ১২০০ জন) অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই সঙ্গে CEGIS, WARPO, BUET ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিশেষজ্ঞদের এ প্রকল্প প্রণয়নে কাজে লাগানো হবে। কাজেই সবার মতামতের ভিত্তিতে এ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে। ব-দ্বীপ পরিকল্পনার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলো হচ্ছে-১. বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত বিপর্যয় থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; ২. পানি ব্যবহারে অধিকতর দক্ষতা ও পানির পর্যাপ্ততা বৃদ্ধি করা; ৩. সমন্বিত ও টেকসই নদী ও নদী মোহনা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা; ৪. জলাভূমি ও জীববৈচির্ত্য সংরক্ষণ এবং তাদের যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা; ৫. অন্তঃ ও আন্তঃদেশীয় পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর প্রতিষ্ঠান ও ন্যায়সঙ্গত সুশাসন গড়ে তোলা এবং ৬. ভূমি ও পানিসম্পদের সর্বোত্তম সমন্বিত ব্যবহার নিশ্চিত করা।

জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ গুলোকে স্থানীয় মৎস্য ও কৃষিজীবী মানুষের জীবন ধারার সাথে সমন্বয় করার প্ল্যান করতে হবে। উপকূলীয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে বিশেষ নজর দিতে হবে। শহর রক্ষা বাঁধ, সড়ক, রাস্তা, বাজার, আবাসন, স্যানিটেশন, স্কুল, বিদ্যুৎ, জ্বালানীর টেকসই পরিকল্পনা ইত্যাদির বিষয়ে কঠোর হতে হবে। স্যালাইন সহনীয় কৃষি ফসল, সার বীজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আরও ভাবতে হবে এবং শহর রক্ষা, ড্যাম, বন্য নিয়ন্ত্রনের ইন ফস্ট্রাকচারাল কাজ গুলূতে কিভাবে রিনিউএবল এনার্জি সোর্সের সমন্বয় আনতে হবে। উপকূলীয় মানুষের জ্বালানী চাহিদা গুলো মিটানো যায়! সুন্দরবনে জীবিকা নির্বাহী লোকদের বিকল্প কর্ম সংস্থানের পরিকল্পনা করতে হবে। বর্ষায় ভারত বড় বড় আন্তর্জাতিক নদীগুলোর উজানে দেয়া বাঁধের স্লুুইস গেট ছেড়ে দিয়ে অতি স্বল্প সময়ে ফ্ল্যাশ ফ্ল্যাড তৈরি করে, দীর্ঘস্থায়ী বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করে কিংবা বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি করে। ডেল্টা প্ল্যানে এই মৌসুমী বৃষ্টিপাত এবং ভারতের ছেড়ে দেয়া পানির প্রবাহকে কিভাবে সমন্বিত করে দেশের বর্ষাকালীন ফলন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক রাখা যাবে সেগুলো গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ ও প্রাণীর জীবন-জীবিকা, পরিবেশ ও প্রতিবেশের গুরুত্ব দিতে হবে। এগুলো আছে এ মহাপরিকল্পনায়। তবে সরকারকে কঠোরভাবে তদারকি করতে হবে।

নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রকৃতি, জনজীবন, চাষাবাদ প্রায় সবই নদীনির্ভর। তাই বলা হয়, নদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। অর্থাৎ বাংলাদেশের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। অথচ বাংলাদেশ সে পথেই এগিয়ে চলেছে। বহু নদী এর মধ্যেই মরে গেছে। বহু নদী মৃত্যুর পথে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। নদীগুলো ভারত থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে। উজানে ভারতের অংশে নদীগুলোর পানি প্রবাহের গতিরোধ করা হলে কিংবা পানি প্রত্যাহার করে নিলে নদীগুলোর বাংলাদেশ অংশে পানি প্রবাহ কমে যায়। নদী শুকিয়ে যায়। বেশি করে পলি জমে ও চর জাগে। তাতে চাষাবাদ ব্যাহত হয়। বন্ধ হয়ে যায় নৌপরিবহন। ক্রমেই নিচে নেমে যায় পানির সত্র। শুরু হয় মরুকরণ প্রক্রিয়া। কারণ বর্ষায় যত পানিবাংলাদেশের ওপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়ে, তার ৯৫ শতাংশই আসে উজানে থাকা ভারতীয় অঞ্চল থেকে ঢলের আকারে। নদীগুলোর গভীরতা কমে যাওয়ায় তখন বন্যা ও জলাবদ্ধতা অবধারিত হয়ে পড়ে। নষ্ট হয় হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল।

তাই বলা যায়- বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ গুরুত্বপূর্ণ মহাপরিকল্পনা; যা সমন্বিত, সর্বজনীন ও বাস্তবতার নিরিখে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনশীল। দেশের স্থিতিশীল আর্থসামাজিক উন্নয়নে এটি হবে ভবিষ্যতের কার্যকরী দীর্ঘমেয়াদি গাইডলাইন। জাতিসংঘ প্রণীত টেকসই উন্নয়নের সতেরোটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে হলে বদ্বীপ পরিকল্পনার উদ্যোগ সফলভাবে পরিচালিত করতে হবে এবং এই পরিকল্পনাকে আরও সুপরিকল্পিতভাবে সমন্বিত করতে হবে। সরকারি এবং বেসরকারি সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।

লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক

সারাবাংলা/এসবিডিই

আবু আফজাল সালেহ বদ্বীপ পরিকল্পনা ও আমাদের বাস্তবতা মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর