মাদকের ভয়াবহতা রুখতে সামাজিক-রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরি
২৬ জুন ২০২৪ ১৯:১৭
২৬ জুন আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও মাদকের অবৈধ পাচার রোধে ১৯৮৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় ২৬ জুনকে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরের বছর অর্থাৎ, ১৯৮৮ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
মাদক বাংলাদেশের জাতীয়জীবনের প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। মাদকাসক্তি একটি নীরব ঘাতক। এটি মানুষকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়। এর করালগ্রাসে ধ্বংস হয় পরিবার, সমাজ ও দেশ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের সর্বত্র মাদকের আগ্রাসন এখন অভিশপ্তের ডালপালায় ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
বাংলাদেশের যুবসমাজের একটা বিরাট অংশ মাদকের করালগ্রাসে নিমজ্জিত। দেখা যায়, যে সন্তান পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করতে পারতো, সমাজ ও দেশের উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত করে, মেধা ও মনন দিয়ে দেশের গর্বে পরিণত হতে পারতো, সেই সন্তান আজ মাদকের স্পর্শে, মাদকের করালগ্রাসে কেবল ধ্বংসই হচ্ছে না, ধ্বংস করে দিচ্ছে একটি পরিবারের কাঙ্ক্ষিত সুখের স্বপ্ন।
একটি সুখী পরিবারের সুখ-শান্তি এমনকি সুন্দর একটি স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করার ক্ষেত্রেও মাদকের অগ্রণী ভূমিকা বিশেষভাবে কার্যকর। আজ মাদকের এই নীল ছোবলে দংশিত দেশের তরুণ প্রজন্ম, যুবসমাজের একটা বিরাট অংশ।
মাদকদ্রব্য হলো একটি দ্রব্য যা ব্যবহারে বা প্রয়োগে মানবদেহে মস্তিস্কের সংবেদনশীলতা হ্রাস পায় এবং শরীরে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
মাদক দ্রব্যের বেদনানাশক ক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকে তন্দ্রাচ্ছন্নতা, আনন্দোচ্ছাস, মেজাজ খিটখিটে, মানসিক আচ্ছন্নতা, শ্বাস-প্রশ্বাস অবনমন, রক্তচাপ হ্রাস, স্মৃতিশক্তি হ্রাস ও বমি, কোষ্টবদ্ধতা ইত্যাদি দেখা দেয়। মাদকদ্রব্যকে সহজভাবে বলা যায়, যা গ্রহণে মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ও যে দ্রব্য আসক্তি সৃষ্টি করে, তাই মাদকদ্রব্য।
মাদকাসক্তি হলো- মানুষের এমন একটি অবস্থা; যা ব্যবহারে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর তা ব্যবহার করতে না পারলে নিজের মধ্যে অশান্তি কাজ করে, তাই মাদকাসক্তি। মাদকাসক্ত ব্যক্তি হঠাৎ মাদক গ্রহণ না করতে না পারলে তাঁর মধ্যে নানান ধরণের উপসর্গ দেখা দেয়। গবেষণায় জানা যায়, মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে সাধারণত ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সের মানুষ, যার হার ৭০ ভাগ। অন্যদিকে মাদক গ্রহণের গড় বয়স ২২ বছর।
বিশেষজ্ঞদের মতে নিম্নোক্ত লক্ষণসমূহ একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির আচরণ, অভ্যাস এবং চলনে দেখা যায়-
হঠাৎ নতুন বন্ধুদের সাথে চলাফেরা শুরু করা। বিভিন্ন অজুহতে ঘনঘন টাকা চাওয়া। আগের তুলনায় দেরিতে বাড়ি ফেরা। রাতে জেগে থাকা এবং দিনে ঘুমের প্রবণতা বৃদ্ধি করা। ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর অস্বাভাবিক আচরণ করা। খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দেয়া এবং ওজন কমে যাওয়া। অতিরিক্ত মাত্রায় মিষ্টি খেতে আরম্ভ করা এবং ঘনঘন চা, সিগেরট পান করা। অযথা টয়লেটে দীর্ঘসময় ব্যয় করা। ঘনঘন পাতলা পায়খানা হওয়া। প্রচুর ঘুমহওয়া অস্থিরতা এবং অস্বস্তি বোধ করা। যৌন ক্রিয়ায় অনীহা এবং যৌন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া। মিথ্যে কথা বলার প্রবণতা। পরিবারের সদস্যদের সাথে সবসময় মনোমালিন্য লেগে থাকা। অকারণে বিরক্ত বোধ করা। হঠাৎ মনমানসিকতা বিরিবর্তন দেখা দেয়া। ঘরে তামাকের বা সিগারেটের টুকরো পড়ে থাকা। যেমন- প্লাস্টিকের বা কাঁচের বতল, কাগজের পুরিয়া, ইনজেকশন, খালি শিশি, পোড়ানো দিয়াশালাই এর কাঠি’সহ নানাবিধ অস্বাভাবিক জিনিস। লেখাপড়া, খোলাধুলো, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সব সময় অনীহা। কাপড়চোপড়ে দুর্গন্ধ বৃদ্ধি পাওয়া ও পোড়াদাগ লেগে থাকা ইত্যাদি একাধিক বিষয় পরিলক্ষিত ব্যক্তি মাদকাসক্ত তা নিশ্চিতভাবেই সন্দেহ করা যায়।
যে হাত কোনো সৃষ্টিশীল কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কথা, সমাজ উন্নয়নের ক্ষেত্র নিশ্চিত করণের কথা, সেই হাতে এখন অতি সহজেই মিলছে মরণনেশা ‘মাদক’।
মাদকসেবী এবং মাদক বিক্রেতারা কেবল সমাজকে ধ্বংস করছে তা নয়; তারা পারিবারিক শান্তিও বিনষ্ট করছে। ধ্বংস করছে সুন্দর সুখী একটা পরিবারকেও। ২০১৩ সালের আগস্টে রাজধানীর চামেলীবাগে পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান এর ইয়াবা আসক্ত মেয়ে ঐশী নেশার টাকার জন্য তার বন্ধুদের নিয়ে বাসায় বাবা-মা একসাথে হত্যা করা তার জলন্ত উদাহরণ। মাদকসেবীর কারণে একটা সুখী-সমৃদ্ধ পরিবার ধ্বংসের আরও ভুরি ভুরি ঘটনা রয়েছে।
অনেক ‘বাবা-মা’ মাদকসেবী সন্তানের অত্যাচারে, অনাচারে এবং নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়ে নিজ সন্তানকে পুলিশের হাতে দিয়ে জেলখানায় বন্দী রাখার ব্যবস্থা করতেও কার্পন্য করেন না।
বাংলাদেশে প্রকৃত মাদকাসক্তের সংখ্যা নিয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান নেই। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ৭৫ লক্ষাধিক। এর মধ্যে ৮০ ভাগের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, অর্থাৎ ৪০ লাখই তরুণ!
মানুষ কেন মাদকে আসক্ত হয়? মাদকে আসক্ত হওয়ার পেছনে একক কোনো কারণ দায়ী নয়। তবে এক নম্বর কারণ যদি ধরা হয় তাহলে মাদকের সহজ প্রাপ্তি হবে এক নম্বর কারণ। আর এ সহজ প্রাপ্তির পেছনে সর্বদা সক্রিয় রয়েছে সংঘবদ্ধ মাফিয়া চক্র যারা সুকৌশলে এবং স্বার্থ-সিদ্ধির জন্য এটিকে বাজারে ছাড়ছে। একজন সমাজ-বিজ্ঞানীর মতে, মাদকাসক্তি হলো বাজার অর্থনীতির কুফল যেখানে একদল স্বার্থান্বেষী কালো টাকা লাভের আশায় কাজ করছে। এছাড়াও এর পেছনে রয়েছে আরও নানাবিধ আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং মনস্তাত্বিক কারণ। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে শহরায়ন ও নগরায়নের ফলে সৃষ্ট জটিলতা, সহিংস ছাত্ররাজনীতিতে ঢুকে পড়ার কুপ্রভাব, রাজনীতিবিদদের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হওয়া, আধুনিকতার নামে উচ্ছৃঙ্খল হওয়া, সন্ত্রাস, হতাশা, দ্বন্ধ ইত্যাদি মানুষকে মাদকাসক্ত হতে সাহায্য করছে। এছাড়া বন্ধু-বান্ধবদের কুসংসর্গ, পারিবারিক, সামাজিক ও মানসিক অস্থিরতা, মাদক পাচারের ট্রানজিট রুট হিসাবে বাংলাদেশ ব্যবহৃত হওয়া মাদকাসক্তি ভয়াবহ রূপে ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হিসাবে মনে করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, স্বচ্ছল পরিবারের ছেলে-মেয়েদের মধ্যেই মাদকদ্রব্য সেবনের প্রবণতা বেশি। ধনীর দুলাল-দুলালীদের কাছে এটি আভিজাত্যের প্রতীক। মাদকদ্রব্যের সম্মোহনে হারিয়ে যেতে এরা ভালবাসে। মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে এরা অনাবিল আনন্দ উপভোগ করতে চায়। রক্ত প্রবাহে মাদকদ্রব্যের জৈব রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া এদেরকে প্রদান করে এক ধরণের উষ্ণতা। এ পুলক, অনুভূতি, স্বপ্নিল তন্দ্রাচ্ছন্নতা ও নষ্ট আনন্দ একসময় এদেরকে আসক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যায়। আমাদের দেশে শিক্ষিত ও সচেতন মাদকাসক্তদের মধ্যে এমন অনেককেই পাওয়া যায় যারা মনে করেন মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে মেধা স্বচ্ছ থাকে, কাজে আনন্দ পাওয়া যায়, ফলে সহজে সাফল্য আসে। মাদকদ্রব্যের গুণাগুণ সম্পর্কিত যুক্তিগুলোর অধিকাংশগুলোই দুর্বল মানসিকতার পরিচয় বহন করে।
মাদকাসক্ত হওয়ার পেছনে যেমন একটি কারণ থাকতে পারে আবার একাধিক কারণও থাকতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাদকাসক্ত হওয়ার পেছনে একাধিক কারণ দায়ী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় পারিবারিক স্নেহ, আদর, ভালোবাসা, মমতার অভাব, পারিবারিক অশান্তি সর্বোপরি অর্থনৈতিক অবস্থা মাদকাসক্ত হওয়ার পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।
ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতীয় পর্যায়ে মাদকাসক্তির প্রভাব ভয়াবহ। মাদকাসক্তি ব্যক্তি, পরিবার, সামাজিক ও জাতীয় জীবনে নানামুখী সমস্যার সৃষ্টি করে। কিশোর বয়সে কেউ মাদকাসক্ত হলে তার সুপ্ত প্রতিভা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়। সমাজের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা, মূল্যবোধ, ধর্মীয় ও নৈতিক আদর্শ ইত্যাদি থেকে বিচ্যুত হয়ে যখন কেউ মাদক দ্বারা প্রভাবিত হয় তখন প্রকৃতপক্ষে সে আত্মহননের পথই বেছে নেয়। সমাজের সম্ভাবনাময় একটি অংশ যখন নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন উন্নত-অনুন্নত যে কোন দেশের জন্যই তা অত্যন্ত ক্ষতিকর।
সমাজ বিশ্লেষকগণ মাদকের কিছু ক্ষতিকর প্রভাব চিহ্নিত করেছেন। যার সংক্ষিপ্তসার এখানে উপস্থাপন করা হলো: (১) মাদকদ্রব্যের ব্যবহার শারীরিক ও মানসিক দিককে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত করে তেমনি নৈতিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে মাদক ব্যবহারকারীকে অপরাধপ্রবন করে তোলে। কিছু মাদকদ্রব্য রয়েছে যা গ্রহণ করলে উঠতি বয়সের তরুণরা নিজেকে অত্যধিক শক্তিশালী অনুভব করে। আর এ ’শক্তি’র সাথে বিভ্রান্তি যোগ হলে ঐ তরুণ যে কোন মারাত্মক অপরাধ ও অসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হতে পারে। এদের কেউ কেউ এক পর্যায়ে ছিনতাই, অবৈধ চাঁদা আদায়, মারামারি-চুরি-ডাকাতি-খুন, কালোবাজারি, দেহ-ব্যবসা ইত্যাদি মারাত্মক ও জঘন্য অপরাধমূলক কাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। (২) মাদক মাদকাসক্ত ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক দিককে ক্রমাবনতির দিকে নিয়ে যায় এবং তাকে অর্থনৈতিক দিক দিয়েও পঙ্গু করে দেয়। সেই সাথে ব্যক্তিকে নিঃসঙ্গ ও মর্যাদাহীনের স্তরে নিয়ে আসে। মাদক নির্ভরতা ব্যক্তির স্বাস্থ্যহানি ঘটায়, রোগ ব্যধি সৃষ্টি করে; ওজনহীনতা, শক্তিহীনতা ও ক্ষুধামন্দায় ভোগায়। এদের কর্মোদ্দীপনা হ্রাস পায়, মতিভ্রম দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যহীন ও কংকালসার হয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। (৩) মাদক মানুষের শরীরে বহুমুখী ক্ষতিসাধন করে থাকে। মদের প্রতিক্রিয়ায় ধীরে ধীরে মানুষের হজম শক্তি নষ্ট হয়ে যায়, খাদ্য গ্রহণের স্পৃহা হ্রাস পায়, চেহারা বিকৃত হয়ে পড়ে, স্নায়ু দুর্বল হয়ে আসে, সামগ্রিকভাবে শারীরিক অক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, মানুষ অকর্মণ্য হয়ে পড়ে, মদ ধীরে ধীরে যকৃৎ, কিডনী সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট করে ফেলে। বর্তমানের মরণব্যাধি এইডস রোগের প্রাদুর্ভাবের সাথেও মাদকের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
মাদকদ্রব্যের অবাধ ব্যবহার ও অবৈধ পাচার একটি জটিল, বহুমাত্রিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যা। মাদকের ব্যবহার ও চোরাচালান দেশ, কাল, ধর্ম-বর্ণ, সমাজ নির্বিশেষে আজ সারা বিশ্বকে গ্রাস করছে। ধনী-দরিদ্র, উন্নত-উন্নয়নশীল কোনো দেশই মাদকের ভয়াবহত থাবা থেকে মুক্ত নয়। মাদকাসক্তি আমাদের দেশের শিক্ষাঙ্গন তথা স্কুল, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যেভাবে বিস্তার লাভ করছে এখনই তার লাঘাম টেনে ধরতে না পারলে ভবিষ্যতে তা নিবারণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে।
মনে প্রশ্ন জাগে, যে ছেলেটি বা মেয়েটি বাবা-মা’র মাথার ঘাম পায়ে ফেলানো হাড়ভাঙা পরিশ্রমের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে নামকরা একটি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে কেন আজ মাদকাসক্ত?
কিন্তু এর পরিবর্তনে কি করা যেতে পারে! মানবিক গুণাবলী সংক্রান্ত বিষয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষার উৎকর্ষ সাধণ করতে হবে যাতে তরুণরা প্রকৃত শিক্ষা লাভ করে ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে এবং চাকুরীপ্রার্থী না হয়ে চাকুরী দাতায় পরিনত হতে পারে।
মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হলে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষকে মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে হবে। তথাকথিত স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের লেজুড়বৃত্তির কবল থেকে ছাত্রসমাজ ও তরুণদের মুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি নানা ধরণের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে যুবসমাজকে বিভিন্ন গঠনমূলক ও বিনোদনমূলক কর্মকান্ডে আগ্রহী করে তুলতে হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের আরও ব্যাপক ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তরুণ সমাজ অনায়াসে এসব কর্মকান্ডে মনোনিবেশ করতে পারে এবং হতাশাগ্রস্ত হওয়া থেকে মুক্তি পায়। এতে মাদক সেবনের মতো ভয়াল থাবা ও সামাজিক অবক্ষয় থেকে অনেকটা রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে।
বিশ্বব্যাংকের এক জরিপে দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের প্রায় ৪৫ শতাংশই কোনো না কোনো সামাজিক অপরাধের সাথে যুক্ত। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলে মাদকাসক্তি। আমাদের দেশে যে হারে তরুণ ও যুব সমাজের মধ্যে মাদকাসক্তির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে তা অত্যন্ত ভীতিকর ও আশংকাজনক। এখনই মাদকের লাঘাম টেনে ধরতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেশে এমন কোন পরিবার পাওয়া যাবে না যে পরিবারে কেউ মাদকাসক্ত নয়।
মাদক একটি জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার মোক্ষম অস্ত্র। তাই মাদকাসক্তি প্রতিরোধে নাগরিক সচেতনতা এবং সামাজিক প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই। আর এজন্য পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
সারাবাংলা/এজেডএস
ইমরান ইমন মাদকের ভয়াবহতা রুখতে সামাজিক-রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরি