ব্ল্যাকমেইল: আইনি প্রতিকার ও পদক্ষেপ
২৭ জুন ২০২৪ ১৮:১৭
বর্তমান সময়ে ব্ল্যাকমেইল শব্দটির সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। ব্ল্যাকমেইল শব্দের অর্থ আমরা যেটা বুঝি সেটি হচ্ছে এমন একটি অপরাধ যেখানে কেউ অন্য কাউকে তার গোপন তথ্য বা দুর্বলতাগুলো প্রকাশ করার হুমকি দিয়ে অর্থ, সম্পদ বা অন্য কোনো সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করা। এই ধরনের হুমকি সাধারণত ব্যক্তিগত, পেশাগত, বা সামাজিক ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে করা হয়। ব্ল্যাকমেইল নানা ভাবে হতে পারে যেমন শারীরিক ব্ল্যাকমেইল, মানসিক ব্ল্যাকমেইল, সাইবার ব্ল্যাকমেইল, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল, আর্থিক ব্ল্যাকমেইল। শারীরিক ব্ল্যাকমেইলে ব্যক্তির শারীরিক ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, কারো কাছে অর্থ বা সম্পদ দাবি করে এবং না দিলে তাকে বা তার পরিবারকে শারীরিক ক্ষতি করার ভয় দেখানো হয়। মানসিক ব্ল্যাকমেইলে ব্যক্তির মানসিক দুর্বলতাকে কাজে লাগানো হয়। এতে সাধারণত কোনো গোপন তথ্য ফাঁস করার হুমকি, সামাজিকভাবে হেয় করার হুমকি, বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের মাধ্যমে মানসিক চাপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি কারো কোনো গোপন তথ্য ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে কিছু দাবি করে, তাহলে তা মানসিক ব্ল্যাকমেইল হিসেবে গণ্য হয়। সাইবার ব্ল্যাকমেইল বলতে যেটি বুঝায় সেটি হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে কাউকে ব্ল্যাকমেইল করা। যেমন, কারো ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও বা তথ্য চুরি করে তা ইন্টারনেটে প্রকাশ করার হুমকি দেওয়া। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলে ব্যাক্তির ইমোশন বা আবেগকে কাজে লাগিয়ে কাউকে ব্ল্যাকমেইল করা। যেমন, নানা ধরনের আবেগিক কথা বলে সম্পর্ক করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা।
সাইবার ও ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল সাধারণত শারীরিক ও মানসিক ব্ল্যাকমেইলের কাতারে পড়ে। কারণ এতে ব্যাক্তির শারীরিক ও মানসিক উভয়ভাবে ক্ষতি হয়। বর্তমানে সাইবার ব্ল্যাকমেইলের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তরুণ-তরুণীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে অপরের প্রেমে পড়ে এবং প্রেমের এক পর্যায়ে একে অপরকে অন্তরঙ্গ ছবি বা ভিডিও পাঠায়। পরবর্তীতে প্রেমের সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে, সংগ্রহে থাকা অন্তরঙ্গ ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল শুরু করে। এসব ব্ল্যাকমেইলের কারণে ঘটে আত্মহত্যার মতো ঘটনা। তেমনই কিছু ঘটনার তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে সংগ্রহ করে তুলে ধরা হলো।
গেল ২৪ ফেব্রুয়ারি বহুল প্রচারিত একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে ‘স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা, প্রেমিকের বিরুদ্ধে প্ররোচনার অভিযোগ’ শিরোনামে নামে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত সংবাদ উল্লেখ করা হয়, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে স্কুলছাত্রী শাহারিয়ার জান্নাত ছোঁয়ার (১৬) আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায় প্রেমিক রায়হান কবীর মজিদের বিরুদ্ধে প্ররোচনার অভিযোগ ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থী, স্বজন ও স্থানীয়রা। উক্ত সংবাদে উঠে আসে, প্রেমিক রায়হানের সঙ্গে ছোঁয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিভিন্ন সময়ে রায়হান চাপ প্রয়োগ করে ছোঁয়ার কাছ থেকে টাকা নিত। সর্বশেষ সে টাকা ও বিভিন্ন সময় তাদের দুজনের ঘনিষ্ঠ কিছু সময় কাটানোর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিত। এতে ধারণা করা হচ্ছে, আপত্তিকর কোনো ছবি কিংবা ভিডিও দেখিয়ে ব্লাকমেইল করে সে টাকা নিত।
২০ জুন ২০২২, দেশের বহুল প্রচারিত একটি গণমাধ্যমে ‘ব্ল্যাকমেইলের শিকার’ যুবকের আত্মহত্যা ‘ শিরোনাম একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। উক্ত সংবাদে উল্লেখ করা হয়, পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় ‘ব্ল্যাকমেইলের শিকার’ হয়ে রমেন ঘরামি নামে ২৮ বছরের এক যুবক বিষপানে আত্মহত্যা করে। বিষপানে মৃত্যুর আগে ধারণ করা রমেনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। স্থানীয় সূত্র জানায়, গোলখালী সড়কে বিষপান করে মাটিতে লুটিয়ে রমেন চিৎকার করে বলতে থাকেন, প্রতিবেশীর এক ছেলে এক নারীর সঙ্গে তার অশ্নীল ছবি-ভিডিও তুলে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এরপরও টাকার জন্য তাকে ও তাঁর পরিবারকে চাপ দিচ্ছে। এ কারণে তিনি বিষপান করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
আরেকটি গণমাধ্যমে ০৫ জুলাই ২০২১ ‘ ঢাকায় প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল, স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদে, ১৪ বছর বয়সি একটি মেয়ে রাজধানীর বাসাবোতে নানাবাড়িতে থেকে স্থানীয় একটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। তার বাবা-মা থাকেন ধলপুর এলাকায় একটি বস্তিতে। প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওই স্কুলছাত্রীর অশ্লীল ছবি ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করছিল এক যুবক। একপর্যায়ে পরিবারের লোকজন বিষয়টি জানতে পারলে মেয়েটিকে শাসন করে। পরবর্তীতে মেয়েটি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রকাশিত সংবাদগুলোর ভিত্তিতে পরিলক্ষিত হয় যে ব্ল্যাকমেইলে কতটা মারাত্মক আকার ধারণ করে একজন ব্ল্যাকমেইলে শিকার হওয়া ব্যাক্তির জীবনে। বর্তমানে প্রযুক্তির অপব্যবহার করে কিছু চক্র স্কুল-কলেজপড়ুয়া মেয়েদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইনস্ট্রগ্রাম আইডি থেকে ছবি সংগ্রহ করে তা আপত্তিকরভাবে এডিট করে বিভিন্ন ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ নানাভাবে ব্ল্যাকমেইলিং করে। যেটি থেকে মুক্তি পেতে এক পর্যায়ে ওই স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মেয়েরা আত্মহত্যা পথ বেঁচে নেয়।
ব্ল্যাকমেইল যে করে তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে এ সুযোগের কথা প্রায় অনেকের কাছেই অজানা যার কারণে বেঁচে নিতে হয় আত্মহত্যার মতো পথ। কেউ ব্ল্যাকমেইলের শিকার হলে তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনানুসারে কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটি উল্লেখ করা যাক।
দেশের প্রচলিত আইন সম্পূর্ণরূপে ভিকটিমের পক্ষে। বাংলাদেশে ফৌজদারী অপরাধ সংক্রান্তীয় দণ্ড দান করার জন্য প্রধান আইন হচ্ছে দণ্ডবিধি- ১৮৬০ আইনটি। উক্ত আইনের ৩৮৩ ধারা অনুযায়ী, যে কোন ধরণের ব্ল্যাকমেইলকে এক্সটরশন বা চাঁদাবাজির আওতায় ফেলা যাবে। উক্ত আইনের ৩৮৪ ধারা অনুযায়ী এর শাস্তি সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড, সেটি জরিমানাসহ বা ব্যতীরেকে। অর্থাৎ ভিকটিম যদি ব্ল্যাকমেইলকারীর বিরুদ্ধে মামলা করে তাহলে দন্ডবিধি আইনের উক্ত ধারানুযায়ী ব্ল্যাকমেইলকারী শাস্তি ভোগ করবে।
এছাড়াও ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে যদি কোনো ব্যক্তি কারো মানহানি করে যেমন কারো আপত্তিকর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে তার মানসম্মানে আঘাত হানলে সেটি উক্ত ব্যাক্তির মানহানি হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে।
আক্রান্ত ব্যাক্তি তার মানহানির জন্য দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে।
১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারামতে, কোনো ব্যক্তি যদি অন্য কোনো ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে কথিত বা পঠিত হওয়ার জন্য কথা বা চিহ্ন বা দৃশ্যমান কল্পমূর্তির সাহায্যে সেই ব্যক্তি-সম্পর্কিত কোনো নিন্দাবাদ প্রণয়ন বা প্রকাশ করেন, তবে সেটি মানহানি হয়েছে বলে পরিগণিত হবে। উদ্দিষ্ট ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট হবে জেনে বা সুনাম নষ্ট হতে পারে বলে বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্ত্বেও যদিও কেউ নিন্দাবাদ প্রণয়ন ও প্রকাশ করেনও তাহলেও সেটি মানহানি বলে গণ্য হবে। উক্ত আইনের- ৫০০ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির মানহানি করে, তবে ওই ব্যক্তি দুই বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদে বিনা শ্রম কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন, বিচার ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়নকল্পে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ প্রণয়ন করা হয়।
উক্ত আইনটিও সম্পূর্ণ ব্ল্যাকমেইল ও ব্ল্যাকমেইলকারীর বিরুদ্ধে। উক্ত আইনের ধারা ২৫ এর উপধারা(১) এ বলা হয়েছে যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক জানা সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন সহজ কথায় ব্লাকমেইল করার উদ্দেশ্যে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করেন তাহলে তিনি ধারা ২৫(২) অনুযায়ী অনধিক ৩ বছরের কারাদণ্ড এবং অনধিক ৩ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে এবং এই অপরাধ পূণরায় করলে অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ড অথবা ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হবেন। এই আইনের ধারা ২৯ অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে কোন মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, তাহলে তিনি অনধিক ৩ বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এবং যদি কোনো ব্যক্তি এই অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ৫ বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এগুলো সব ই জামিন অযোগ্য অপরাধ অর্থাৎ অপরাধের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর অপরাধী জামিন পাবে না কারণ অপরাধীর দ্বারা সংঘটিত অপরাধ জামিন অযোগ্য অপরাধ।
দেশের প্রচলিত আইন ব্ল্যাকমেইলের বিরুদ্ধে এবং এটি আইনের চোখে দণ্ডনীয় অপরাধ। ব্ল্যাকমেইলের শিকার হওয়া ব্যক্তি দেশের আইনানুযায়ী ব্ল্যাকমেইলকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।
ব্ল্যাকমেইলের শিকার হওয়া ব্যক্তি যেসব পদক্ষেপ নিতে পারে :
১। প্রথমে ভিকটিমকে মনে রাখতে হবে তিনি অপরাধী নন, ভিকটিম।
২। ব্ল্যাকমেইলকারীরা প্রায়শই তারা ভিকটিমের উপর ক্ষমতার অবস্থানে থাকার ভান করে, কিন্তু তাদের আসলে তেমন শক্তি নেই। সুতরাং, ভিকটিমকে ভয় না পেয়ে শান্ত থাকতে হবে।
৩। ব্ল্যাকমেইলকারীরা সাথে অনলাইন বা অফলাইন উভয়ভাবে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে হবে যাতে করে পুনরায় ব্ল্যাকমেইল করতে না পারে।
৪। ব্ল্যাকমেইলের শিকার হওয়ার পর পরিবারের মা-বাবা, ভাই-বোন অথবা পরিবারের সদস্যদেরকে ব্ল্যাকমেইল ও ব্ল্যাকমেইলকারীর সম্পর্কে জানানো উচিত। অনেক সময় দেখা যায় পরিবারের সদস্যেদের বকাবকি করবে এই কারণে ভিকটিম ব্ল্যাকমেইলের ব্যাপারে পরিবারের সদস্যদের জানাতে দ্বিধাবোধ করে যেটি অনুচিত।
৫। দেশের প্রচলিত আইন সম্পূর্ণরূপে ভিকটিমের পক্ষে। কাজেই, ব্ল্যাকমেইলে শিকার হওয়ার পর ভিকটিম ব্ল্যাকমেইলকারীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, ভিকটিম মানসম্মান হারানোর ভয়ে থানায় মামলা করে না যার কারণে ব্ল্যাকমেইলকারী ভিকটিমকে আরো ভয় দেখায়। সুতারাং ভিকটিমকে ভয় না পেয়ে ব্ল্যাকমেইলকারীর বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে এবং এর মাধ্যমেই ভিকটিম পরিত্রাণ পেতে পারে।
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ফেনী ইউনিভার্সিটি
সারাবাংলা/এজেডএস