আওয়ামী লীগ: তরুণ নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল হয়ে উঠছে
২৮ জুন ২০২৪ ১৭:৩৪
আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এই দলটির অবস্থান শীর্ষ সারিতে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই দলে তরুণদের আধিক্যতা ছিল। আমরা যদি বিশ্লেষণ করে দেখি দেখা যাবে মুক্তিযুদ্ধের চার কি পাঁচ বছর আগে এবং মুক্তিযুদ্ধের পর অন্তত ১৫ বছর যাবত ধরতে গেলে এই বৃহৎ দলটির পদ-পদবীতে তরুণ নেতৃত্ব ছিল শূন্যের কোটায়। আবার ১৯৯০ থেকে একটানা ২০০৮ সাল পর্যন্তও তরুণ নেতৃত্ব ছিল হাতেগোনা। বিশেষ করে ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই সময়ে চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণ নেতৃত্বের দিকে ছুটে বৃহত্তম এই দল। তরুণ নেতৃত্ব হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগের ভাগ্য নিয়ন্তা। তথ্যপ্রযুক্তি এখন তরুণদের হাতের মুঠোয়। বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের সাথে তাল মিলাতে গেলে তরুণদের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। কারণ তরুণরা যেভাবে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিকে কাজে লাগিয়ে সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে সেদিক থেকে প্রবীণ রাজনীতিকরা থাকে অনেকটা পিছিয়ে। যদিও বা তরুণদের চাইতে প্রবীণদের অভিজ্ঞতার ঝুলি অনেক বেশি। তারপরও পারিপার্শ্বিক নানা কারণে তরুণরা হয়ে ওঠে প্রবীণদের ভরসারস্থল। পৃথিবীর এমনকোনো দেশ নেই তরুণদের অংশগ্রহণ ব্যতিত সফলকাম হয়েছে। নবীণ আর প্রবীণের সত্যিকারের মিলিত প্রয়াসে একটি মর্যাদাশীল উন্নত দেশ গড়া সম্ভব। তরুণদের নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি কাজে লাগিয়ে এইভাবে বর্তমান আওয়ামী লীগ এখন সত্যিকার অর্থে তরুণ নেতৃত্বের দিকে ছুটে চলছে তা বেশ লক্ষণীয়। সরকারের ঘোষিত ২০৪১ ভিশন বাস্তবায়নে তরুণদের ভূমিকা থাকতে হবে সবচেয়ে বেশি যেকথাটি জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপলব্ধি করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ’ গড়ার পরিকল্পনার রূপরেখা দিয়েছেন তার সফল বাস্তবায়ন করতে হলে তরুণ ও ছাত্র সমাজের অংশগ্রহণ অপরিহার্য।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি নিপীড়িত নির্যাতীত স্বাধীনতাকামী সংগ্রামী বীরোচিত সৈনিকদের বীরত্ব গাথা সংগঠন। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যার রয়েছে বিস্তৃত পরিচিতি। মানবিক, মানবতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অপর নাম আওয়ামী লীগ। যে নামের পিছনে রয়েছে লক্ষ-কোটি জনতার মহান আত্মত্যাগ। বিপ্লবী আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, সেনা শাসিত স্বৈরাচার সরকার আন্দোলন, গনতন্ত্র উদ্ধার, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অটুট বন্ধন ও মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির ক্ষেত্রে গণ মানুষের মুক্তির ঠিকানা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সেই ব্রিটিশ শাসনামল থেকে বৈরীতার ধানা বাঁধতে বাঁধতে ৪৭ এর দেশ ভাগের পর পাকিস্তান শাসনামলে আওয়ামী লীগের বীজ অঙ্কুরিত হয়। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নাম নিয়ে সংগঠনের যাত্রা শুরু হলেও পরে পূর্ব আর পশ্চিম পাকিস্তান বাংলা আর উর্দু ভাষাভাষি রাজনীতিবিদদের মধ্যে নিজ নিজ অধিকারের কথা বলতে গিয়ে মাত্র দুয়েকবছরের মধ্যে ভাঙনের মুখে পরে পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশ অংশের রাজনীতিকরা মিলিত হয়ে একটি ঐক্যে পৌঁছাতে সেদিন সম্মত হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টানসহ অপরাপর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের সকলকে রাজনীতির প্রতি অকুন্ঠ জনসমর্থন আনয়নের উদ্দেশ্যে তৎসময়ের রাজনীতিবিদগণ সর্বসম্মতিক্রমে পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাতিল করে নতুন সংগঠনের নামকরণ করেন পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। যারা সেদিন এই নামকরণে নিরলস ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে বাঙালি জাতির অকৃত্রিম বন্ধু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম স্মরণীয় বরণীয় মর্যাদায় আজীবন সমুন্নত হয়ে থাকবে। তখন তিনি ছিলেন তরুণ সমাজের প্রতিনিধি। শেখ মুজিব যখন ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের অ্যাসেম্বলি হলে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠায় মূখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন তখন তিনি ছিলেন মাত্র ২৮ বছরের টগবগে তরুণ যুবক। নিজ জন্মস্থান গোপালগঞ্জে স্কুল জীবন শেষ করে কলকাতার ইসলামীয়া কলেজ এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। শিক্ষাজীবন থেকে ব্রিটিশ ও ভারত বিভাজন আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। এতেই বুঝা যায় তৎসময়ে শেখ মুজিবের হাত ধরে তরুণরা ছাত্র রাজনীতির প্রতি গভীর বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন ১৯৮১ সালে ১৭ই মে জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাত্র ৩৪ বছর বয়সে অসীম সাহসীকতার সাথে একজন মহিলা হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরলে তখন বাবার সময়ের মতো ঠিক একইভাবে দলে দলে তরুণ-তরুণীর আগমন ঘটতে থাকে দলে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট স্বপরিবারে জাতির জনকসহ সেদিন বেশ ক’জন তার আত্মীয় পরিজনকে নির্মম গুলির আঘাতে হত্যা করলে বাঙালি জাতি বিশ্ব দরবারে কলঙ্কিত হয়। এমন একজন জাতির পিতার মৃত্যু সেদিন কেউ মেনে নিতে পারেনি। ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ সংবিধানে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর আগে ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আ.স.ম আব্দুর রব শেখ মুজিবকে জাতির জনকের উপাধি প্রদান করেন। শেখ মুজিবের তখন বয়স হয়েছিল মাত্র ৫১ বছর। জাতির জনককে হত্যার পর একটানা প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতায় অরোহন করেন দুই সেনাশাসক। প্রথম বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং পরে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসাইন মুহম্মদ এরশাদ। তারা দুইজনই সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন এবং জোর করে ক্ষমতা গ্রহণের পর রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধুকে ১৫ আগষ্ট হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি হিসেবে অঘোষিতভাবে ক্ষমতায় দখল করেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ। তার স্থায়িত্বকাল ছিল মাত্র ৮১দিন। ১৯৭৭ সালের ২১ শে এপ্রিল ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে সরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দেন সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাকী সময়টি ছিল সেনা শাসকদের দখলে। ১৯৮৭-৮৮ সালের দিকে স্বৈরশাসক এরশাদকে হঠাতে দেশের সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করলে ১৯৯০ সালে ক্ষমতা থেকে সড়ে দাঁড়াতে বাধ্য হন জেনারেল এরশাদ। এই এরশাদকে নামাতে সেদিনও ছিল তরুণ সমাজের তীব্র আন্দোলন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮৮ সালে ২৪ শে জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘির মাঠে এরশাদ বিরোধী এক সমাবেশে যোগ দিতে আসলে উপর্যুপরি একাধিকবার তার ওপর গুলি বর্ষণ করা হয় এসময় পুলিশের গুলিতে প্রায় ৩০ জন তরুণ নেতা শহীদ হন। তরুণরা যেভাবে আত্মত্যাগ করেছে তারা কখনো ক্ষমতা আর নেতৃত্বের পেছনে ছুটেনি, তারা ছিল প্রবীণদের প্রেরণার শক্তি। সেদিক থেকে বলা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যেসব আন্দোলন সংগ্রাম সংগঠিত হয়েছে তার পেছনে তরুণদের ভূমিকা ছিল উল্লেযোগ্য।
তরুণ সমাজ সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছিল ১৯৬৯ এর গনঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর জাতীয় নির্বাচন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যদি তরুণ সমাজ সংঘঠিত না হতো আজকে এই বাংলাদেশের নাম হৃদয়ে লেখা হতো না। পরবর্তীতেও সমস্ত আন্দোলন সংগ্রামে তরুণ নেতৃত্বরা এগিয়ে এসেছেন ভয়হীনভাবে। যুগে যুগে তরুণ নেতৃত্ব এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান যখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন তখন তিনি ছিলেন তরুণ। এরপর আমরা একে একে বলতে পারি বীরমুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কথা, বলতে পারি রাজনীতিবিদ সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক (প্রয়াত), প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী সাজেদা চৌধুরী (প্রয়াত), সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর মতো প্রবল প্রতাপশালী একসময়ের তরুণ নেতৃত্বের কথা। তাদের পথ ধরে তরুণ নেতৃত্ব হিসেবে দেখেছি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে। তিনি ২১ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ , কারাভোগ করেন অল্প বয়সে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। স্কুল জীবনে থাকাবস্থায় ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন। মেধাবী ছাত্র হিসেবে তার খ্যাতি ছিল। একসময় তিনি সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন। এরপর বাংলাদেশের অসংখ্য মেধাবী তরুণ নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের ছায়াতলে এসে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। তাদের মধ্যে আমরা দেখতে পাই-
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিষ্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি ২০২০ সাল থেকে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসন থেকে ২০০৮ সালে ঢাকার ধানমন্ডির আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের শেষে তার জন্ম। তার বয়স এখন- ৫৩ বছর। তাপস, শহীদ শেখ ফজলুল হক মনির ছোট সন্তান। যুব লীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের ছোট ভাই তাপস রাজনীতিতে এসেছেন বড় ভাইয়ের আগেই। তারা দুইভাই এখন আওয়ামী রাজনীতি পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। বঙ্গবন্ধুর মেঝ বোন শেখ আছিয়া বেগমের বড় সন্তান ও বঙ্গবন্ধুর আদরের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি। মনি একাধারে রাজনীতিবিদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ছোট গল্পকার, সাংবাদিক ও কলাম লেখক হিসেবে খ্যাতিমান ব্যক্তি ছিলেন।
১৯৮৩ সালের মধ্যভাগে জন্ম নেওয়া চট্টগ্রামের মেধাবী সন্তান শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি, এই পর্যন্ত তিনি দুইবার চট্টগ্রাম সদর ৯ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার বয়স এখন- ৪২ বছর। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথমবার শিক্ষা উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালে তিনি পুনরায় ২য় বার সাংসদ নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও সফলতার স্বাক্ষর রেেেখছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর পিতা রাজনীতিবিদ আলহাজ্ব প্রয়াত মহিউদ্দীন চৌধুরী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় মেয়াদে ১৭ বছর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এছাড়া তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন দীর্ঘ বছর।
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, তিনি দিনাজপুর- ২ আসন থেকে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত একটানা চারবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সরকারের দুই মেয়াদে তিনি নৌ পরিবহণ মন্ত্রালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। তার জন্ম ১৯৭০ সালে দিনাজপুরে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বয়স এখন- ৫৪ বছর।
১৯৭৩ সালে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়–য়া ইতোপূর্বে বাংলাদেশ টেলিভিশন , প্রেস ইনষ্টিটিউট ও দেশের বিভিন্ন গনমাধ্যমে সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন। কর্ম ও সাংগঠনিক জীবনে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একজন নিষ্টাবান মেধাবী রাজনীতিক হিসেবে নিজের অবস্থান পরিস্কার করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন তার বয়স এখন- ৫১ বছর।
মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা মহানগর- ৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার জন্ম ১৯৭০ সালের মাঝামাঝি সময়ে। ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মেয়র ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য। তার বয়স এখন- ৫৫ বছর। একসময়ের ঢাকার জনপ্রিয় মেয়র মোহাম্মদ হানিফের সন্তান হিসেবে রাজনীতিতে সাঈদ খোকনের আগমন ঘটে। ২০০৪ সালে ২১ আগষ্ট ঢাকায় গ্রেনেড হামলায় তার পিতা মারাত্মকভাবে আহত হন, ২০০৬ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃৃত্যু বরণ করেন।
বর্তমান সময়ে দেশের একজন প্রতিভাবান রাজনীতিক হিসেবে সর্বমহলে প্রশংসিত তরুণদের প্রতিনিধি জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি, বাংলাদেশ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে নাটোর- ৩ আসন থেকে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময়ে জন্ম নেওয়া এই মেধাবী রাজনীতিকের বয়স এখন- ৪৪ বছর।
১৯৭৩ সালে জন্ম নেওয়া তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী প্রফেসর মোহাম্মদ এ. আরাফাত এমপি, তিনি ঢাকা- ১৭ সংসদীয় আসন থেকে ২০২৪ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে সুপরিচিত, অধ্যাপনা করেছেন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে। আরাফাত এমপি ১৯৭৩ সালের মে মাসে রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন, তার বয়স বর্তমানে- ৫১ বছর।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। ১৯৭৮ সালে জন্ম নেওয়া রাসেল ২০০৯ থেকে বর্তমান পর্যন্ত ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার বয়স এখন- ৪৭ বছর। তার প্রয়াত পিতা আহসানউল্লাহ মাষ্টারও গাজীপুর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।
শেখ সারহান নাসের তম্ময় এমপি। তিনি বাগের হাট- ২ আসন থেকে ২০১৮ ও ২০২৪ দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৮৭ সালের জুনে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তার বয়স এখন- ৩৮। তার পিতা শেখ হেলাল উদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপন চাচাতো ভাই। তিনি বাগেরহাট- ১ আসন থেকে এবারসহ একটানা ৬ বার এমপি নির্বাচিত হন।
ব্যারিষ্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন এমপি। তিনি নওগাঁ- ৫ আসন থেকে ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্র্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী প্রয়াত আব্দুল জলিলের সন্তান। জন ১৯৯১ সালের মধ্যভাগে জন্ম গ্রহণ করেন, তার বয়স মাত্র- ৩৪ বছর।
ফরিদপুর- ৪ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন যুব লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুুরী যিনি নিক্সন চৌধুরী নামে সর্বাধিক পরিচিত। তিনি এবারসহ একটানা তিনবার বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ ঘরনার হয়েও সর্বশেষ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৮ সালের প্রথম দিকে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তার বয়স- ৪৭ বছর।
জাতীয় সংসদের হুইপ, নড়াইল ২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ক্যাপ্টেন মেধাবী ক্রীড়াবিদ মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা এমপি, ১৯৮৩ সালের শেষের দিকে নড়াইলে জন্মগ্রহল করেন। বর্তমানে তার বয়স- ৪২।
খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি, চট্টগ্রাম- ২ ফটিছড়ি থেকে ২০১৮ ও ২০২৪ সালে ২য় মেয়াদে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তার বয়স এখন- ৪০। ব্যবসায়ী পরিবারের কন্যা। পিতার নাম রফিকুল আনোয়ার ব্যবসায়ী ছিলেন। তার প্রয়াত পিতা একই আসন থেকে দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক, ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম অলরাউন্ডার হিসেবে সুপরিচিত, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা- ১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য খন্দকার সাকিব আল হাসানের জন্ম ১৯৮৭ সালে। তার বয়স এখন- ৩৭ বছর।
আমার এ লেখায় দেশের মাত্র কয়েকজন তরুণ মেধাবী রাজনীতিকের কথা তুলে ধরেছি যারা রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পূর্বে নিজ নিজ পেশায় অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছেন। দেশের ৩০০ টি সংসদীয় আসনে আরো অসংখ্য মেধাবী রাজনীতিক রয়েছে যাদেরকে এই ছোট্ট লেখায় তুলে আনা সম্ভব হয়নি। আজকের এই লেখায় যে ক’জন জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিককে তুলে এনেছি তারা তরুণ সমাজেরই উজ্জ্বল প্রতিনিধি। তাদের প্রত্যেকের জন্ম মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় ও মুক্তিযুদ্ধের পরে। তারা রাজনীতির ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত নবীন হলেও সত্য যে মেধা, সৃজনশীলতা, সাংগঠনিক প্রজ্ঞা দেশের মানুষের হৃদয়ে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শেখ হাসিনা, তোফায়েল আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক, সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, ওবায়দুল কাদের এর মতো দেশ বরেণ্য রাজনীতিকগণ আওয়ামী রাজনীতির মাইলফলক। তারা যুগে যুগে কালে কালে তরুণদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন বলে আজ আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে তরুণদের উজ্জ্বল উপস্থিতি। তরুণরা আওয়ামী লীগের ভাগ্য বিজয়ের অংশীদার। বাংলাদেশের তরুণ সমাজ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতির পতাকা তলে এসে দেশকে দারিদ্রমুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তর করতে বদ্ধপরিকর। তারা চায় যেখানে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনকের ছোঁয়া লেগেছে, একটি দেশের ঠিকানা দিয়েছে, লাল-সবুজ পতাকা দিয়েছে, তরুণ-ছাত্র সমাজ তার আদর্শকে মনেপ্রাণে ধারণ করতে চায়। জয় বাংলা।
লেখক: সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট
সারাবাংলা/এজেডএস
আওয়ামী লীগ: তরুণ নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল হয়ে উঠছে বিপ্লব বড়ুয়া